সাইবার হামলার আশঙ্কা! RBI ও NPCI-কে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা

কাশ্মীরের পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা ও ভারতের পাল্টা সামরিক পদক্ষেপের পর ভারতে সাইবার হামলার আশঙ্কা বাড়তে থাকায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের…

কাশ্মীরের পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা ও ভারতের পাল্টা সামরিক পদক্ষেপের পর ভারতে সাইবার হামলার আশঙ্কা বাড়তে থাকায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI), বড় বড় ব্যাঙ্ক এবং ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI)-সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার মানিকন্ট্রোল-এর একটি প্রতিবেদনে উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, “হ্যাঁ, আমরা এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত পরামর্শ জারি করেছি,” বলে জানিয়েছেন এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা।

এই পরামর্শে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, দেশের আর্থিক পরিকাঠামো—বিশেষ করে কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম, পেমেন্ট গেটওয়ে, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেম (RTGS) এবং ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (UPI)—এর সুরক্ষা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ভারতে প্রতি মাসে ১৭–১৮ বিলিয়ন ডিজিটাল লেনদেন হয় যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৪ লক্ষ কোটি টাকা। ফলে এই ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে তা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

এই সাইবার সতর্কতা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এই ঘটনার পর ভারত ব্যাপক সামরিক জবাব দেয়। ৮ মে রাতে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামক অভিযানে ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত ৯টি সন্ত্রাসবাদী লঞ্চ প্যাডে এয়ারস্ট্রাইক চালায়।

এছাড়া, ৮ মে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী জম্মু, পাঠানকোট, উধমপুর সহ একাধিক সেনা ঘাঁটির উপর পাকিস্তানের তরফে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রতিহত করে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার পরিকাঠামোর সুরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা উপলব্ধি করে কেন্দ্র সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

অর্থ মন্ত্রকের এই নির্দেশনার পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম (CERT-In) এবং RBI পৃথকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। CERT-In তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা মনিটর করে।

আরও এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, ন্যাশনাল ক্রিটিকাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোটেকশন সেন্টার (NCIIPC)—যা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (NTRO)-এর অন্তর্ভুক্ত—তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল পরিকাঠামোর নিরাপত্তা তদারকি করছে।

সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও বড় ধরণের সাইবার হামলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে “প্রোঅ্যাকটিভ ডিফেন্স” বা আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই প্রয়োজন। কারণ এই সময়ই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত সাইবার আক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান বা এর মদতপুষ্ট গোষ্ঠী সাইবার মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং বা আর্থিক লেনদেনের পরিকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। যেমনঃ ফিশিং, ম্যালওয়্যার, ডিডস (DDoS) আক্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে UPI বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটানো যেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে NPCI ইতোমধ্যেই UPI এবং অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেনকারী ব্যাঙ্ক ও পরিষেবা প্রদানকারীদের বাড়তি নজরদারি চালাতে বলেছে। সব ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেন, লগ-ইন প্যাটার্ন, ও সন্দেহজনক ট্রাফিকের উপর নজরদারি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের তরফে সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৪x৭ মনিটরিং চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জরুরি সাইবার প্রতিক্রিয়া দলের (Cyber Incident Response Teams) প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়াতে বলা হয়েছে।

বিশেষ করে ছোট এবং মাঝারি ব্যাঙ্ক ও NBFC গুলিকেও বড় আর্থিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও দুর্বল লিঙ্ক সিস্টেমকে বিপন্ন না করে।

এদিকে, জনগণকেও ব্যক্তিগত ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় রাখা, এবং অজানা লিঙ্কে ক্লিক না করার মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত যে সাইবার যুদ্ধের সম্ভাবনাকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে, তা এই সরকারি নির্দেশনায় স্পষ্ট। আর্থিক পরিকাঠামোর সুরক্ষা শুধুই অর্থনীতির প্রশ্ন নয়, এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার অঙ্গ।