অনুভব খাসনবীশ: কয়েক দশক পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা পেয়েছে তালিবানরা (Taliban)। ১৫ আগস্ট কাবুলে আসরাফ ঘানি সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতা কায়েম করেছে। আফগানিস্তানের নাম বদলে নাম রেখেছে ‘ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান’। এই সমস্ত ঘটনার পেছনে অন্যতম নাম আবদুল গণি বরাদার (Abdul Ghani Baradar)।
টাইমস গোষ্ঠী (Time Magazine) বুধবার ‘বিশ্বের মোট ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি’ (‘most influential people of 2021’) এর বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন তালিবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বরাদার।
Time Magazine-এর ওয়েবসাইটে বরাদারের প্রোফাইল লিখেছেন বিখ্যাত পাকিস্তানি সাংবাদিক আহমেদ রশিদ। তিনি লিখেচেন, “বরাদার তালিবানদের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, একজন সামরিক নেতা এবং একজন ধার্মিক ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্তর্বর্তীকালীন তালিবান সরকারে, তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে।”
কে এই আবদুল গণি বরাদার ?
কয়েক দশক পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা পেয়েছে তালিবানরা। ১৫ আগস্ট কাবুলে আসরাফ ঘানি সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতা কায়েম করেছে। আফগানিস্তানের নাম বদলে নাম রেখেছে ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান। এই সমস্ত ঘটনার পেছনে অন্যতম নাম আবদুল গণি বরাদার।
১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফগানিস্তানের এক পুস্তুন (আফগান উপজাতি) পরিবারে জন্ম। মুজাহিদদের হয়ে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। তারপর মহম্মদ ওমারের সঙ্গে প্রতিষ্টা করেন তালিবান গোষ্ঠী।
১৯৯৬ সাল নাগাদ দ্রুত উঠতে থাকে তালিবানিরা। দখল করতে থাকে একের পর এক রাজ্য। সে সময়েই উল্কা গতিতে উত্থান হয় বরাদারেরও। পরবর্তী ২০ বছর তালিবানদের হয়ে যুদ্ধবাহিনী পরিচালনা এবং কুটনৈতিক দিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, আইএসআই।
Good news
The Times magazine has announced the Deputy Prime Minister of the Islamic Emirate, Mullah Abdul Ghani Baradar, in the list of the 100 most influential people in the world for the 21st year. https://t.co/yReS3TVo1c— AhmadKhan (@Oumari313) September 15, 2021
দোহা চুক্তি এবং বরাদার
গ্রেফতারের আট বছর পর দোহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে বরাদারকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জালম্যে খালিজাদ। পাকিস্তান তার অনুরোধ মেনে নিলে দু’বছর পর দোহায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানদের হয়ে চুক্তি করেন তিনি।
মাসুদ আজহারের মুক্তি এবং বরাদার
কয়েক দিন আগে মাসুদ আজহার “মার্কিন সমর্থিত আফগান সরকারকে” হটিয়ে ক্ষমতা দখল করায় তালিবানদের প্রশংসা করেছিলেন। জইশ-ই-মহম্মদ নেতা “মঞ্জিল কি তারফ” (গন্তব্যের দিকে) শিরোনামের একটি নিবন্ধে আফগানিস্তানে “মুজাহিদিনের সাফল্যের” প্রশংসা করেছেন। পাকিস্তানের বাহওয়ালপুর মারকাজে জইশ-ই-মহম্মদ কর্মীদেরও তালিবানদের বিজয়ের আনন্দে অভিনন্দন বিনিময় করতে দেখা গিয়েছে।
১৯৯৯ সালে মাসুদ আজহারের মুক্তির পর থেকেই জইশ-ই-মহম্মদ জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে শুরু করে। কাঠমান্ডু থেকে লখনউ যাওয়ার পথে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আইসি-৮১৪ হাইজ্যাক করে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীরা। এরপর ফ্লাইটটি আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যাওয়া হয়, সেসময় আফগানিস্তান শাসন করছিল তালিবানরা। ফলে চাপে পড়ে মাসুদ আজহারকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল ভারত সরকার। অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, গোটা প্ল্যানের পেছনে ছিল বরাদারের মস্তিষ্ক।
কাশ্মীর ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়: তালিবান
আফগানিস্তান দখল করার কয়েকদিন পরেই তালিবানরা কাশ্মীরের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। সরকারীভাবে জানিয়ে দেয়, এটি একটি “দ্বিপক্ষীয়; এবং ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়”।
ইন্ডিয়ান ইনটেলিজেন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী তালিবানদের কাবুল দখলের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাস এবং দেশের গুরুত্বপূর্ন অঞ্চলে নাশকতার সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে। মাসুদ আজহারের গলাতেও কাশ্মীর দখলের সুর শোনা গিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল ‘পাকিস্তান তহেরিক-ই-ইনসাফ’-এর জনপ্রিয় নেত্রী নীলম ইরশাদ শেখও বলেন, ”তালিবান বলেছে ওরা আমাদের সঙ্গে আছে। এবং কাশ্মীরকে স্বাধীন করতে আমাদের সাহায্যও করবে।” আফগানিস্তান্মে তালিবানরা ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এর পিছনে মদত রয়েছে পাকিস্তানের। নীলমও জানান যে তালিবানের পাশে পাকিস্তান যেভাবে দাঁড়িয়েছে তাতে আফগানিস্তানের তালিবান নেতৃত্ব খুব খুশি। তার প্রতিদানেই কাশ্মীর দখলে পাকিস্তানকে সাহায্য করবে তারা।
প্রথমে কাশ্মীরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে নিজেদের সরকারীভাবে সুরক্ষিত করা এবং কাশ্মীর সমস্যাতে পেছন থেকে অনুঘটক হিসেবে কাজ করা, সমস্ত ঘটনার পেছনেই রয়েছে আফগানিস্তানের সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির মস্তিষ্ক।
টাইম ম্যাগাজিনের এই তালিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, প্রাক্তন মার্কিণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও রয়েছেন। এছাড়াও Times-এর প্রকাশ করা এই নতুন তালিকায় রয়েছেন জাপানের টেনিস খেলোয়াড় নাওমি ওসাকা, রাশিয়ান বিরোধী কর্মী আলেক্সি নাভালনি, সঙ্গীত আইকন ব্রিটনি স্পিয়ার্স, এশিয়ান প্যাসিফিক পলিসি অ্যান্ড প্ল্যানিং কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুশা পি কুলকার্নি, অ্যাপলের সিইও টিম কুক, অভিনেতা কেট উইন্সলেট এবং ‘প্রথম আফ্রিকান এবং প্রথম মহিলা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান’ Ngozi Okonjo-Iweala।