নিউজ ডেস্ক: সর্বশেষ সংবাদ এসেছে কোনও যোগাযোগ নেই। পঞ্জশির বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের তালিবান কব্জার বাইরে পঞ্জশির এখনও অটুট। তবে সেখানকার শাসক আহমেদ মাসুদের (জুনিয়র মাসুদ) সঙ্গে তালিবান কর্তৃপক্ষের সন্ধি হয়েছে। বৈঠকে স্থির হয় পঞ্জশির থাকবে মাসুদের হাতেই।
রবিবার রাত থেকেই পঞ্জশিরের সঙ্গে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন। স্বাভাবিকভাবেই পঞ্জশিরে ক্ষমতাসীন নর্দান অ্যালায়েন্সের আশঙ্কা তালিবান হামলার পূর্ব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তারা কোনওভাবেই সন্ধি মানবে না।
লাল তারিখ ৩১ আগস্ট। কী হবে ?
এই দিনই মার্কিন সেনা পুরোপুরি আফগানিস্তান মিশন শেষ করবে। টানা কুড়ি বছরের এই মিশন শেষ হলেই আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় পাকাপাকিভাবে বসবে তালিবান জঙ্গিরা-দ্বিতীয়বারের মতো। গত ১৫ আগস্ট তারা কাবুল দখল করে। পঞ্জশির আর একটি ক্ষুদ্র অংশ বাদে পুরো আফগানিস্তানই তালিবান দখলে।
পঞ্জশিরে যা যা ঘটার সম্ভাবনা
১. পঞ্জশির দখলের জন্য তালিবান অভিযান শুরু হবে ৩১ আগস্টের পরেই।
২. পঞ্জশির উপত্যকাবাসী প্রবল লড়াই করবেন। গত তালিবান সরকারের আমলেও এই এলাকা ছিল জঙ্গি মুক্ত এলাকা।
৩. পঞ্জশিরের পতন হতে পারে। শাসক আহমেদ মাসুদ হয় পলাতক অথবা মারা যেতে পারেন। আহমেদ মাসুদের পিতা আহমেদ শাহ মাসুদ পঞ্জশিরের সিংহ বলে পরিচিত। সুপরিচিত তালিবান বিরোধী নেতা ছিলেন।
আড়াই হাজার বছর ধরে অজেয় পঞ্জশির
পঞ্জশির উপত্যকা হাজার হাজার বছর ধরে অজেয়। মহাবীর আলেকজান্ডার, গজনীর সুলতান মামুদ, পাঞ্জাব কেশরী শিখ সম্রাট রণজিৎ সিং, ব্রিটিশ, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল সেনা কেউ এই আফগান উপত্যকা দখল করতে পারেনি। এমনকি প্রথম তালিবান সরকারের আমলেও এই এলাকা ছিল জঙ্গি মুক্ত। দ্বিতীয় তালিবান সরকারের আমলেও চরিত্র ধরে রাখল পঞ্জশির ২৫০০ বছর ধরে অজেয় চরিত্র। এও এক নজির।
এই পঞ্জশির নিয়ে তালিবানের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। ৩১ তারিখের পর তালিবান সরকার ঘোষণা করেই পঞ্জশির অভিযান করতে মরিয়া। বিবিসি জানাচ্ছে, পঞ্জশিরের শাসক মাসুদ সব দিক খতিয়ে দেখেছেন। তাঁর বাহিনি প্রস্তুতি শেষ করেছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়েছে মাসুদের নর্দান অ্যালায়েন্স রক্ষীরা। যারা তালিবানদের মাথা কাটার জন্য সুপরিচিত।
তালিবান জঙ্গিরা দুবার তারা আফগান ক্ষমতার কেন্দ্রে। কাবুলের নিকটস্থ হিন্দুকুশ পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা বিখ্যাত পঞ্জশির এলাকা দখল করতে পারেনি তারা। পঞ্জশির দখলে শত শত জঙ্গি পাঠালেও, এখানকার তাজিক বংশজাত যোদ্ধারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত আলোচনার কৌশল নেয় জঙ্গিরা। আফগান সংবাদ মাধ্যমের খবর পঞ্জশিরের শাসক আহমেদ সন্ধির প্রস্তাব দেয় তালিবান জঙ্গিরা। বৈঠকে স্থির হয় পঞ্জশিরে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না তালিবান জঙ্গিদের। এই এলাকায় তালিবানি শরিয়তি আইন চলবে না, এমনই কড়া শর্ত দেন জুনিয়র মাসুদ। তবে আলোচনার আগে রাশিয়া সরকারে প্রতি বার্তা দিয়েছিলেন পঞ্জশিরের শাসক মাসুদ। তিনি বলেন, মস্কো যেন তালিবানকে বোঝায়। এবার পঞ্জশিরে ইন্টারনেট বন্ধের ইঙ্গিত সন্ধি ভাঙতে চলেছে।
বৈঠকের আগে তালিবান হুমকি দিয়েছিল, আলোচনায় ব্যর্থ হলে বলপ্রয়োগ করে পঞ্জশিরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে আহমেদ মাসুদ জানিয়েছিলেন, উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ তালিবানের হাতে কোনওভাবেই ছেড়ে দেবেন না।