Special Correspondent: সিবিএসসি (CBSC) বোর্ডের বাংলা পড়ানোয় অনীহা দেখা দিচ্ছে। এমনটাই যেন স্পষ্ট হচ্ছে তাদের সিলেবাস থেকে। প্রশ্নটি সিবিএসসি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার জন্যে তাদের জারি করা বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা সূচিকে কেন্দ্র করে বাংলায় অনীহার প্রশ্ন আরও প্রকট হয়েছে।
বাংলা শিক্ষাবিদরা অনেকেই বলছেন, গতবছর পর্যন্ত বাংলা বিষয় হিসাবে যেখানে ‘মেজর সাবজেক্ট’ বা গুরুত্বপূর্ন বলে গণ্য হত, এবার নতুন সূচিতে দেখা গিয়েছে তারা বাংলা সহ সমস্ত আঞ্চলিক ভাষাকে ‘মাইনর সাবজেক্ট’ বা স্বল্প গুরুত্বপূর্ন বিষয় হিসাবে তালিকাবদ্ধ করেছে। এখানেই ওই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা যে সমস্ত প্রশ্ন আরও স্পষ্ট হয়েছে সেগুলি হল –
১) আগে বাংলাকে যে বিষয় হিসাবে নির্বাচন করেছিল মেজর সাবজেক্ট হওয়ায় তাতে পাস না করলে সে সামগ্রিকভাবে ফেল করত, এখন বাংলায় পাশ না করলেও অসুবিধা নেই। ছাত্রদের কাছে বাংলা ভাল করে পড়ার প্রয়োজন আর থাকল না।
২) মেজর সাবজেক্ট না হওয়ায় পরবর্তীতে কোথাও কোথাও শিক্ষার জন্য ভর্তি হতে গেলে বা চাকরির ক্ষেত্রে বাংলার প্রাপ্ত নম্বরকে আর গণ্য করা হবে না। বাংলা পড়ে সেটার নম্বর যদি মোট নম্বরের হিসাবের মধ্যে সেসব ক্ষেত্রে ধরা না হয় তবে কোন ছাত্র সেই বিষয় পড়ে নিজের কেরিয়ারের ক্ষতি করবে?
৩) মেজর সাবজেক্ট না হওয়ায় কোন স্কুল দ্বাদশ শ্রেণীতে বাংলা নাও পড়াতে পারে কারন সে তখন ছাত্র না থাকার অজুহাত দেখিয়ে একটি বাড়তি বিষয়ের শিক্ষকের খরচ কমাবে। এমনিতেই এরাজ্যের বহু সিবিএসি স্কুলে বাংলা পড়ার সুযোগই রাখা হয়নি। শিলিগুড়ি শহরেই বহু স্কুল যেমন – জিডি গোয়েঙ্কা, রয়েল অ্যাকাডেমী, টেকনো ইন্ডিয়া, বিড়লা দিব্যজ্যোতি, অলিভিয়া, ডিএভি, শ্রী কৃষ্ণ প্রনামি বিদ্যা নিকেতন ইত্যাদি বহু স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীতে বাংলা পড়ানোই হয় না। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়েরা তো কোন শ্রেণীতেই বাংলা পড়ায় না। সিবিএসি বোর্ডের এই নতুন নির্দেশিকার ফলে বাকি স্কুলগুলিও যে সুযোগ পেয়ে গেল দ্বাদশ শ্রেণী থেকে বাংলা উঠিয়ে খরচ বাঁচানোর তা বলাই বাহুল্য।
৪) ইংরাজি মাধ্যম হলেও কোন ছাত্রের পরবর্তীতে মনে হতেই পারে যে সে বাংলা নিয়ে পড়তে চায়, সেক্ষেত্রে তার কিন্তু সুযোগ রইল না বললেই চলে। কারন মাইনর সাবজেক্ট হিসাবে বাংলা পড়ায় উচ্চ শিক্ষায় সুযোগের ক্ষেত্রে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে হিন্দির গুরুত্ব কমানো হয়নি, তাকে মেজর হিসেবেই পড়ানোর বন্দোবস্ত পাকা করেই রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় বাংলা যখন আজ সিবিএসসি র কাছে অপ্রয়োজনীয় ঠিক সেসময়ে আশ্চর্যজনকভাবে হোম সায়েন্স, শরীর শিক্ষা, মনোবিদ্যা, সমাজবিদ্যার মত বিষয় কিন্তু মেজর হিসাবে গুরুত্ব পেয়েছে
তাঁরা বলছেন, “পুরো বিষয়টি থেকে এটা স্পষ্ট যে বাংলার ভবিষ্যৎদের কাছ থেকে তাদের মাতৃভাষা শেখার সুযোগ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে সে ভাষার গুরুত্ব কমিয়ে এবং তাকে অপ্রয়োজনীয় বানিয়ে। সিবিএসসি বোর্ড প্রমান করল যে তারা শুধু শিক্ষা দান করে না, সঙ্গে সঙ্গে সেই রাজ্যের ভাষা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে তাকে ইংরাজি ও হিন্দি সংস্কৃতিতে দীক্ষিতও করে। অবিভাবক তার সন্তানকে ইংরাজি ভাষা শিখতে ইংরাজি মাধ্যমে পাঠায়, নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিতে নয়। দেশের আঞ্চলিক ভাষা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অধিকার কি কোন বোর্ডের আছে? বহুত্বের ভারতে এই প্রশ্ন কিন্তু অনিবার্য।”