নিউজ ডেস্ক, লখনউ: আর মাস দু’য়েকের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election) । সেই নির্বাচনের আগে লখিমপুর (Lakhimpur) খেরির ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (Special Investigation team) বা সিটের রিপোর্টে বড় ধাক্কা খেল যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) সরকার।
অক্টোবর মাসে লখিমপুর (Lakhimpur) খেরিতে এক বিজেপি নেতার ছেলের গাড়ির চাকায় চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনার তদন্ত করছিল সিট। মঙ্গলবার সিটের পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, লখিমপুরের ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। মঙ্গলবারই সিট লখিমপুরের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্ট থেকেই চাঞ্চল্যকর এই তথ্য সামনে এসেছে। এই রিপোর্ট নিঃসন্দেহে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে চাপে ফেলে দিল।
উল্লেখ্য, লখিমপুরের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আশিস এবং তার কয়েকজন বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। যদিও মন্ত্রীপুত্র ও তার বন্ধুদের দাবি, লখিমপুরের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। তবে ঘটনার দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন সে প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর মেলেনি। অন্যদিকে কৃষকরা পাল্টা জানিয়েছেন, লখিমপুরে যে গাড়ি কৃষকদের পিষে দিয়েছে সেই গাড়িতেই ছিলেন আশিস।
উল্লেখ্য, মোদি সরকারের আনা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা। অভিযোগ, কৃষকদের ওই নিরীহ অবস্থান বিক্ষোভে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আশিসের গাড়ি চার কৃষককে পিষে দেয়। এমনকী, গাড়ির ভিতর থেকে কয়েক রাউন্ড গুলিও
চালানো হয়। মুহুর্তের মধ্যে গোটা এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। লখিমপুর খেরির ঘটনায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতার ছেলেকে গ্রেফতার করতে প্রথম থেকেই গড়িমসি করছিল বিজেপি সরকারের পুলিশ। শেষ পর্যন্ত দেশ জুড়ে প্রবল সমালোচনা এবং সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ে আশিসকে গ্রেফতার করে যোগীর পুলিশ।
কৃষকদের ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ দমন করতে যোগী সরকার লখিমপুরের ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে।
সেই তদন্তকারী দলের রিপোর্টেই জানানো হয়েছে লখিমপুরের কৃষক মৃত্যুর ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। রীতিমতো পরিকল্পনা করেই কৃষকদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেদিন। পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলির ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টও যোগী সরকারকে চাপে ফেলেছে। কারণ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, লাইসেন্সড আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই গুলি চালিয়েছিল অভিযুক্তরা। তবে সেদিনের ঘটনায় কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। কৃষকরা একাধিকবার অভিযোগ করেছিলেন, মন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর সঙ্গীরাই গুলি চালিয়েছিল। যদিও মন্ত্রীর ছেলে ও তার বন্ধু অঙ্কিত কেউই গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেননি। তবে ফরেনসিক রিপোর্টে এটাই প্রমাণ হল যে, কৃষকরাই সঠিক কথা বলেছেন। তদন্তকারী অফিসার দিবাকর বিদ্যারামের রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হল, লখিমপুরের ঘটনা ছিল একেবারেই পূর্বপরিকল্পিত।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দাবি করেছিল, লখিমপুরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয়কে বরখাস্ত করতে হবে। কিন্তু তাদের সেই দাবিতে কর্ণপাত করেনি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সিটের এই রিপোর্ট বিরোধীদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যা বিধানসভা নির্বাচনের আগে অবশ্যই যোগী সরকারকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেবে।