নিউজ ডেস্ক, শ্রীনগর: কাশ্মীরে ফের সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে শহিদ হলেন এক সেনাকর্তা এবং এক জওয়ান। বৃহস্পতিবার রাতে পুঞ্চ জেলায় এই সংঘর্ষ হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই খবর জানানো হয়েছে। আফগানিস্তান তালিবানের দখলে যাওয়ার পর কাশ্মীরে জঙ্গিদের সক্রিয়তা বেশ বেড়েছে। পাঁচদিন আগেই জঙ্গিদের গুলিতে এক শীর্ষ সেনাকর্তা-সহ ৫ জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই ফের একই ঘটনা ঘটল।
কাশ্মীরের বেড়ে চলা জঙ্গি কার্যকলাপের কারণে রাজ্য জুড়ে চলছে চিরুনি তল্লাশি। এই তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় বৃহস্পতিবার রাতে পুঞ্চ-রাজৌরি জঙ্গলে সেনার সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ বাধে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে পুঞ্চ জেলার মেনধার মহকুমার নারখাস জঙ্গলে সেনাবাহিনী তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও পাল্টা জবাব দেওয়া হয়।
কিন্তু রাতের অন্ধকারে জঙ্গিদের দিক থেকে ছুটে আসা গুলিতে এক সেনা কর্তা ও এক জওয়ান গুরুতর জখম হন। তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কাশ্মীরকে আরও সুরক্ষিত রাখতে মোদি সরকার ভূস্বর্গের উপর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেয়। কিন্তু মোদি সরকারের ওই সিদ্ধান্তে কাশ্মীরে সুরক্ষা তো দূরের কথা বরং জঙ্গি কার্যকলাপ আরও বেড়েছে। মোদি সরকারের ওই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল সেটাই যেন প্রমাণ করতে চাইছে জঙ্গিরা।
উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর পুঞ্চ জেলাতেই জঙ্গিদের গুলিতে এক সেনা আধিকারিক -সহ ৫ জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকেই জুম্মু-পুঞ্চ জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জঙ্গিদের সন্ধানে গোটা কাশ্মীর জুড়ে চলছে জোরদার তল্লাশি। সেই তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দু’জনকে প্রাণ হারাতে হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করছে, কাশ্মীরে জঙ্গিদের সক্রিয়তার পিছনে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান তালিবানকে সমর্থন করে জঙ্গিদের উৎসাহ জুগিয়ে চলেছে। এমনকী, তালিবানের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান কাশ্মীরে নাশকতা চালাতে চাইছে।
পাকিস্তানের দাবি, কাশ্মীরের মানুষ কষ্ট রয়েছে। তাদের উদ্ধার করতে হবে। সে কারণেই তারা জঙ্গিদের সাহায্য নিচ্ছে। তবে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের এই ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে হুমকি দিয়েছেন, তারা ছায়াযুদ্ধ চালানো বন্ধ না করলে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হতে পারে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যতই হুমকি দিক না কেন, পাকিস্তান সেই আগের জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে। তারা দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে জঙ্গিদের মদত জুগিয়ে চলেছে। জঙ্গিদের অর্থ-সহ সব ধরনের সাহায্য করছে। এই কাজ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ইসলামাবাদ একঘরে হয়ে পড়লেও তাদের যেন কোনও মাথাব্যথা নেই। পাকিস্তানের একটাই লক্ষ্য, কাশ্মীর তথা ভারতে অস্থিরতা তৈরি করা।
সম্প্রতি তাদের এই কাজে দোসর হয়েছে চিন ও তালিবান। বেজিং সরকার নিয়মিত লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশের মত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে চিনের বিবাদ রয়েছে। দু’দেশের ১৩টি বৈঠকের পরেও এখনও মেটেনি সীমান্ত সমস্যা। ভারতের কোন প্রস্তাবই মানতে রাজি নয় বেজিং। তাই ভারতকে বিপাকে ফেলতেই চিন, পাকিস্তান ও তালিবান এই তিন মিত্রশক্তি একযোগে উঠে-পড়ে লেগেছে। তারই ফলশ্রুতিতে কাশ্মীরে বেড়েছে জঙ্গিদের সক্রিয়তা।