নিউজ ডেস্ক: প্রবল বন্যায় কেরলের মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৪। এখনও বেশ কয়েকজন মানুষের খোঁজ মিলছে না। প্রশাসনের আশঙ্কা, নিখোঁজ ব্যক্তিরা জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছেন। তাই তাঁদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার সম্ভাবনা খুবই কম।
সোমবার সকাল থেকে অবশ্য কেরলে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কেরলে বৃষ্টি কমলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক রাজ্যে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টি ও ভূমি ধসের কারণে উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। এখনও পর্যন্ত এই রাজ্য থেকে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলছে।
গত তিনদিনের একটানা প্রবল বর্ষণে কেরলের বেশিরভাগ নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ১১ টি বাঁধের ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে লাল সর্তকতা। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কেরলে বৃষ্টি চলবে। ইতিমধ্যেই কেরলে দুর্গতদের উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কর্মীদের সব ছুটি বাতিল করে দিয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে দুর্গতদের উদ্ধারে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেরলের ইদুক্কি, পালাক্কাদ, এর্নাকুলাম, ত্রিচূড়, আলাপ্পুঝা, মালাপ্পুরাম, পাত্থানমিঠা, কান্নুর জেলার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ভেসে গিয়েছে। বহু ঘরবাড়ি মিশে গিয়েছে নদীর গর্ভে। ভেসে গিয়েছে গবাদি পশু। বেশ কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রায় সবকটি জেলাতেই বিদ্যুতের খুঁটি উপরে পড়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
দু’দিনের একটানা প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের একাধিক জেলাও। দু’দিনের মেঘভাঙা বৃষ্টি, প্রবল বন্যা ও ভূমিধসের কারণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলছে। বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। জলবন্দি হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। ভেসে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি ও গবাদি পশু। দুর্গতদের উদ্ধারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে রাজ্য পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উত্তরাখণ্ড ও কেরলে বন্যায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এরই মধ্যে সোমবার মৌসম ভবন জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের উপর একটি নিম্নচাপ রয়েছে। যা ক্রমশ উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে সরে উত্তরপ্রদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই নিম্নচাপের পাশাপাশি পূবালি হাওয়া ও পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সংঘাতে উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। আগামী কয়েকদিন মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, উত্তরাখাণ্ড, হিমাচল প্রদেশে কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে।
উত্তরাখণ্ড সরকার জানিয়েছে, গত দুদিনের অঝোর বর্ষণে, দেরাদুন, পিথোরাগড়, চামোলি, নৈনিতাল, শ্যামলাতাল, রামগড়ের মত বহু এলাকা সম্পূর্ণ জলবন্দি হয়ে পড়েছে। পৌরি জেলার পাহাড়ি এলাকায় ধর্ষণে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে আসা জলের প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। ঋষিকেশে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা। রাস্তাঘাট জলের নিচে চলে যাওয়ায় উদ্ধার কাজেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। প্রবল বর্ষণের কারণে ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চারধাম যাত্রা। রবিবার রাত থেকেই দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, তেলেঙ্গানায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে।