KMC Election: ‘ছাপ্পা’-বোমায় রক্তাক্ত পুরভোটের গণনায় মমতা নিশ্চিন্ত

নিউজ ডেস্ক, কলকাতা: শান্তি-অশান্তি। এই দুইয়ের চাপানউতরে রবিবার শেষ হয়েছে কলকাতা পুরসভা নির্বাচন (KMC Election)। ইভিএম বন্দি হয়েছে ৯৫০ জন প্রার্থীর ভাগ্য। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের…

KMC Election: Kolkata pre-poll count on Sunday

নিউজ ডেস্ক, কলকাতা: শান্তি-অশান্তি। এই দুইয়ের চাপানউতরে রবিবার শেষ হয়েছে কলকাতা পুরসভা নির্বাচন (KMC Election)। ইভিএম বন্দি হয়েছে ৯৫০ জন প্রার্থীর ভাগ্য। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিরোধীদের পুনর্নির্বাচনের দাবি নস্যাৎ করে কমিশন জানিয়েছে নির্ধারিত সময়ই হবে গণনা। এখন ছোট লালবাড়ি দখলের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কার মুখের হাসি চওড়া হয়, তা জানতে ভোটগণনার দিকে তাকিয়ে রাজ্য-রাজনীতি। ভোটের ফল ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আমজনতা।

সমীক্ষা বলছে, একুশেও কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে কিস্তিমাত করবে তৃণমূল। এবার ১৪৪টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বিজেপিও প্রতিটি আসনের প্রার্থী দিলেও পরে দুটি ওয়ার্ডের প্রার্থী নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। কলকাতার পুরভোটে বিজেপি লড়ছে ১৪২ টি ওয়ার্ডে। বাম-কংগ্রেস বিধানসভার মতো সরাসরি জোটে না গিয়ে উভয়পক্ষই কিছু আসন ছেড়ে ভোটে লড়েছে। পুরভোটে নির্দল প্রার্থী ৩৭৮ জন। কলকাতা পুর নির্বাচনে ভোট-যুদ্ধ চতুর্মুখী হলেও হাড্ডাহাড্ডির লড়াই যে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেই, তা বললে অত্যুক্তি করা হবে না।

সমীক্ষানুযায়ী, একুশের পুরসভা ভোটে ১৩৭ থেকে ১৪১টি আসন পেতে পারে তৃণমূল। ভোট শতাংশে ঘাসফুল শিবির অর্জিত ভোট হতে পারে ৬৯ শতাংশ ভোট। অপরদিকে, শতাংশের বিচারে পদ্মশিবির পেতে পারে ১৫শতাংশ ভোট। অর্থাত্ সারা কলকাতায় বিজেপি সর্বোচ্চ ৩টি আসন পেতে পারে বলে বলছে সমীক্ষা। বামেদের ঝুলিতেও পড়তে পারে ১৫ শতাংশ ভোট। কলকাতা পুরসভা দখলের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ ৩টি আসন পেতে পারে বামশিবির। কংগ্রেস পেতে পারে ১টি আসন। ভোট শতাংশ ৫। শহরের বিভিন্ন গণনাকেন্দ্রে সোমবার দিনভর চলেছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, হেস্টিংস হাউস, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, বরিশা বিবেকানন্দ কলেজ সহ ১১টি কেন্দ্রে মঙ্গলবার ভোটগণনা।

হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সব গণনাকেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত সিসিটিভির নজরদারি ব্যবস্থা রেখেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রয়েছে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কমিশন সূত্রের খবর, ১৩ থেকে ১৬ রাউন্ড পর্যন্ত ভোট গণনা হবে। ফলে মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই ১৪৪ টি ওয়ার্ডের ফলাফল ঘোষণা হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছ। কমিশন সূত্রের খবর, বিভিন্ন গণনাকেন্দ্রে প্রতিটি হলে জাল লাগানো আলাদা কাউন্টার করা হয়েছে। কাউন্টিং রুমে দুজন করে আধিকারিক থাকবেন। জালের অপরদিকে প্রার্থীর কাউন্টিং এজেন্টের বসার জায়গা করা হয়েছে। কাউন্টিং হলের সামনে একজন করে সুপারভাইজার থাকবেন। গণনা কেন্দ্রগুলিতে গণনাকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের কোভিডবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে বলে কমিশনের নির্দেশ।

গণনাকেন্দ্রে থাকবে মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং থার্মাল গান দিয়ে শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখেই মঙ্গলবারও দলীয় কর্মী সমর্থকদের বিজয় মিছিল করতে নিষেধ করেছে তৃণমূল। রবিবারের পর ফলাফল ঘোষণার দিনও অশান্তি রুখতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। বিজয় উল্লাসের নামে কোনও বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না বলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছে জোড়াফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একাধিক বিধিনিষেধ-আশ্বাস আর কড়া পুলিশি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পুরভোটে অশান্তি ঠেকানো যায়নি। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর। দু জায়গায় বোমাবাজি। ঝরেছে রক্ত।

শাসকদলের বিরোধিতায় বড়তলা থানার সামনে একসঙ্গে অবস্থানে বসেছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোমবার প্রতিবাদে মিছিল করে পদ্ম শিবির। সেই মিছিলকে কেন্দ্র করে কার্যত ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় মুরলীধর সেন লেনে। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। এখন ভোটের ফল ঘোষণার দিন কলকাতার ছোট লালবাড়ি কার দখলে যায়, সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি শহরে কোনও অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয় কি না, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।