নিউজ ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চিন পশ্চিম মরুভূমিতে তার পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রকে দ্রুত সম্প্রসারণ করছে। স্যাটেলাইটে ধরা পড়া একটি নতুন ছবিতে তা স্পষ্ট হয়েছে৷ সেই ছবিতে দাবি করা হয়েছে, চিন তার পারমাণবিক পরীক্ষা স্থানের কাছে একটি নতুন টানেল খনন করছে। শুধু তাই নয়, এই সাইটটি নতুন রাস্তার সঙ্গেও যুক্ত হচ্ছে। ১৯৬৪ সালের ১৬ অক্টোবর চিন এই স্থান থেকে প্রথম 22 কিলোটনের পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে। তারপর থেকে চিন এখন ওপর্যন্ত এই স্থানেই মোট ৪৫ টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।
বড় প্রশ্ন – চিন কীভাবে এই টানেল ব্যবহার করবে?
প্রাইভেট জিওস্পেশিয়াল অ্যানালাইসিস ফার্ম অলসোর্স অ্যানালাইসিস প্রথম স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে এই টানেলটি সন্ধান পায়। পরে মার্কিন এনজিও মিডিয়া এনপিআর -এর সঙ্গে কথা বলে অ্যালসোর্স অ্যানালাইসিসের বিশ্লেষণ ও অপারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিনি বাবিয়ার্জ বলেন, এটি এমন একটি নতুন নির্মাণ যেখানে এমন এলাকা আছে যেখানে অতীতে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, এই টানেলগুলি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
১৯৯৬ সালের পর চিন পুরোপুরি পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। এই সময়ে বিশ্বের অনেক বড় পরমাণু শক্তিচালিত দেশ নিজেরাই তাদের নতুন পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছিল। তবে এরপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও রাশিয়া সময়ে সময়ে পরমাণু অস্ত্রের অ-পারমাণবিক অংশ পরীক্ষা করে চলেছে। অনেক সময় এই পরীক্ষাগুলি ভূগর্ভে পরিচালিত হয়েছে৷ যাতে বিশ্বের অন্যান্য কেউ জানতে না পারে।
এই টানেল সম্পর্কে এনপিআরে প্রশ্ন তোলায় ওয়াশিংটনে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গিউ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন যে, চিন পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি মার্কিন অভিযোগের বিরুদ্ধেও আপত্তি তুলেছেন৷ তার বক্তব্য, চিন সরকারকে যেকোনও উপায়ে কমপ্রিহেনসিভ টেস্ট নিষিদ্ধ চুক্তিকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷।
নতুন টানেলের খবরটি চিনের দুটি পৃথক অংশে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি নির্মাণের মাঝে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন জিনজিয়াং প্রদেশের হামি শহরের কাছে মরুভূমিতে ১১০ টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো তৈরি করছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হ’ল হত্যাকারী ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো ভারত থেকে মাত্র ২০০০ কিলোমিটার দূরে। চিনের এমন অনেক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যার পরিসরে পুরো ভারত চলে আসে। একটি সাইলো হ’ল এক ধরণের স্টোরেজ ধারক যার ভিতরে দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র রাখা হয়।
এর আগে চিনের উত্তর-পশ্চিম শহর ইউমানের কাছে মরুভূমিতে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ১০০টি নতুন সাইলো তৈরির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল। ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টস সর্বশেষ চিত্রের ভিত্তিতে বলেছে যে, চিন আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো খুঁড়তে শুরু করেছে। আমেরিকান বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই সম্প্রসারণ চিনের পারমাণবিক আক্রমণ শক্তি অনেক বাড়িয়ে দেবে। হামি এবং ইউমান উভয়ই চিনের এমন জায়গা, যেখানে আমেরিকা তার প্রচলিত ক্রুজ মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকা তাদের ধ্বংস করতে একচেটিয়াভাবে তার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যবহার করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এই বছর মিসাইল সাইলো নির্মাণ শুরু হয়েছে। বহু বছর চুপ থাকার পরে চিন এখন বিশ্বকে তার শক্তি প্রদর্শন করতে শুরু করেছে৷