প্রসেনজিৎ চৌধুরী: নিচে কাবুল (Kabul) নগরী। মোগল সম্রাট, কাবুলের শাসক বাবরের তৈরি চমকদার বাগান ‘বাগ এ বাবর’ এর উপর দিয়ে পুরো আফগান (Afghanistan) রাজধানীর উপর শেষ চক্কর কাটল আমেরিকান যুদ্ধ বিমান। সেনারা (US army) বিমানের গোল গোল জানালা দিয়ে দেখলেন অধিকৃত জমিন ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্ত। কেউ হয়ত বলেছে গুড বাই কাবুল! ভেরি ব্যাড মর্নিং।
কথা রেখেছে আমেরিকা। কাতারের রাজধানী দোহা শহরে তালিবান (Taliban) জঙ্গি ও আমেরিকা সরকারের কূটনৈতিক শান্তি বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে ৩১ আগস্ট ২০২১ টানা কুড়ি বছর সর্বাধিক খরচের সামরিক অভিযান শেষ করে কাবুলকে মাথা কেটে নেওয়ৈর মারাত্মক তালিবান শাসনের হাতে তুলে দিয়ে চলে আসার মুহূর্ত এমন॥
১৯৭৫ সালে এমনই এক সকালে সরাসরি যুদ্ধে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে পরাজিত হয়ে ভিয়েতকং গেরিলা যোদ্ধাদের সামনে দিয়ে আমেরিকার সেনা সায়গন শহর ত্যাগ করেছিল। সেই সায়গন ত্যাগের কালো ছায়া বরাবর লম্বা হয়ে পড়ে বিশ্ববিখ্যাত সাদা বাড়ি-হোয়াইট হাউসের উপরে এখনো।
সায়গন ছেড়ে পালানোর পর কাবুল ছেড়ে চলে যাওয়ার মাঝে পার্থক্য- ‘৭৫ সালের সায়গন ছিল কুড়ি বছর ভিয়েতনামে মার্কিনি আধিপত্যের শেষ। ভিয়েতনামি জনগণের জয়। আর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে কুড়ি বছরের সামরিক অভিযান শেষ করে আমেরিকান সেনার চলে যাওয়া কূটনৈতিক উপায়ে নিজেদের তৈরি তালিবান জঙ্গিদের জন্য খোলা মাঠ তৈরি, তাদের বিশ্বজনীন স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা।
আজ মঙ্গলবার। আজ তালিবানি শাসনে দ্বিতীয়বার চলে যাওয়া আফগানি জনতার একলা হওয়ার দিন। আজ মঙ্গলবার আজ থেকে নির্বিচারে মাথা কাটার দিন। কুড়ি বছরের সর্বব্যাপী সামরিক অভিযান শেষ। আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্তভাবে সরে গেল আমেরিকা। মঙ্গলবার খুব ভোরে কাবুল বিমান বন্দর থেকে উড়ে গিয়েছে মার্কিন সেনার বিমান। কাবুল সহ পুরো আফগানিস্তানে এখন তালিবান শাসন শুরু হবে। মঙ্গসবারের পর থেকে তালিবান জঙ্গিদের দ্বিতীয় সরকার ঘোষণার দিকে বিশ্ব।
আফগানিস্তান এখন জঙ্গি দখলে। আমেরিকান সেনা নিয়ে শেষ বিমান উড়ে যাওয়ার পরেই কাবুল জুড়ে শুরু হয়েছে তালিবানদের বিজয় পালন। চিরাচরিত আফগান রীতিতে আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুঁড়ে উল্লাসে মত্ত জঙ্গিরা।আফগানবাসী ঘরবন্দি। তালিবান শরিয়া আইন চালু হচ্ছে। যে কোনও সময় মাথা কাটা যাবে।
প্রথম তালিবান সরকার তৈরি হয় আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল ফৌজ সরে যাওয়ার পর নির্বাচিত সরকারের প্রেসিডেন্ট ড নাজিবুল্লাহকে খুন করে। সম্পূর্ণ আমেরিকান মদতে তালিবান দখল করেছিল আফগানিস্তানের কুর্সি। তারপরেই তাদের বন্ধু জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার বাড়বাড়ন্ত। ২০০১ সালে আল কায়েদার হামলায় আমেরিকা সর্বাধিক নাশকতার কবলে পড়ে। ভয়াবহ ৯/১১ হামলার পরেই আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিল আমেরিকান সেনা।
২০০১-২০২১ এই কুড়ি বছরে আমেরিকা তাদের সর্ববৃহৎ সামরিক অভিযান সংঘটিত করেছে আফগানিস্তানে। এই অভিযান শেষের চূড়ান্ত মুহূর্ত কাতারের রাজধানী দোহা শহরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তালিবান উপপ্রধা মোল্লা আবদুল বারাদারের মধ্যে শান্তি আলোচনায় তৈরি হয়। আফগানিস্তানের পুতুল সরকারের পক্ষে কিছুই করার ছিলনা। একপ্রকার পতন বুঝেই যায় আফগান সরকার।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতো আমেরিকা সেনা সরাতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রদেশের দখল নেয় তালিবান। ন্যুনতম প্রতিরোধ করে আফগান সেনা পালাতে থাকে। অবশেষে গত ১৫ আগস্ট কাবুলে আফগান সরকারের পতন হয়। প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশত্যাগ করেন।