কাশীশ্বরী স্কুলের ‘আগুনপাখি’ হাসান আজিজুল হক জীবনভর ‘বর্ধমানিয়া’

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: দেশভাগ হয়ে গিয়েছিল। তবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যাতায়াত বেশ চলছিল। বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে। দেশ দ্বিখন্ডিত হওয়ার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিবার পাড়ি জমায় পূর্ববাংলায়।…

legendary bangladeshi writer Hasan Azizul Huq diad

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: দেশভাগ হয়ে গিয়েছিল। তবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যাতায়াত বেশ চলছিল। বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে। দেশ দ্বিখন্ডিত হওয়ার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিবার পাড়ি জমায় পূর্ববাংলায়। ‘৪৭ সালের অনেক পরেও আরও অনেকে গিয়েছেন। তেমনই ওপার থেকে এসেছেন বহু। প্রয়াত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তেমনই এক ‘বর্ধমানিয়া’।

সোমবার রাতে (১৫.১১.২০২১) বাংলাদেশের নন্দিত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হলেন তাঁর বাসভবন রাজশাহীর ‘উজান’ ভবনে। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি মহল। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য মহলেও শোক ছড়িয়েছে। প্রয়াণকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি।

legendary bangladeshi writer Hasan Azizul Huq diad

হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন বর্ধমান জেলার (এখন পূর্ব বর্ধমান) মঙ্গোলকোটের যবগ্রামে। সেই সুবাদে তিনি জীবনভর ‘বর্ধমানিয়া’। জীবদ্দশায় ভিটের টানে নাড়ির টানে বারবার এসেছেন পৈত্রিক ভিটে যবগ্রামে। কিংবদন্তি সাহিত্যিক ছিলেন এই জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মহারানী কাশীশ্বরী বিদ্যালয়ের ছাত্র। জেলার কাটোয়া, মঙ্গোলকোটের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল।

১৯৫৪ সালে কাশীশ্বরী বিদ্যালয় থেকেই হাসান আজিজুল হক ম্যাট্রিক পাশ করেন। এর পরেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। সেখানেই খুলনা ও রাজশাহী থেকে পরবর্তী শিক্ষাজীবন। তারপর রাজশাহীতেই থিতু হন তিনি।

বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার লড়াই শুরু করে। সেই ঝঞ্ঝাময় রাজনৈতিক পরিবেশে হাসান আজিজুল হকের কলম পাকিস্তানের সামরিক আইন ও দমননীতির বিরুদ্ধে সচল হতে থাকে। বাঙালি মনন চিন্তনের উপর যে আঘাত তৎকালীন পাকিস্তান সরকার নামিয়েছিল তার বিরুদ্ধেই সরব ছিলেন হাসান আজিজুল হক। তবে যে উপন্যাসের কারণে তিনি স্মরণীয় সেই আগুনপাখি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে।

আগুনপাখি লেখকের সঙ্গে বর্ধমানের কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবনের সংযোগ ছিল নিবিড়। সেই টানেই পুরনো জীবন খুঁজতে বারবার এসেছেন বাংলাদেশের এই নন্দিত লেখক।

<

p style=”text-align: justify;”>১৯৭০ সালে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পান। ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বচ্চো অসমারিক পুরষ্কার একুশে পদক পান। তাঁর প্রয়াণে শেষ হলো বাংলা সাহিত্য মহলের একটি পর্ব। এই তালিকায় কাজী নজরুল ইসলামের পর বর্ধমানিয়া হিসেবে তিনিই সম্ভবত শেষ ব্যক্তিত্ব।