Special Correspondent, Kolkata: কথিত আছে বঙ্গদেশে বর্তমানে প্রচলিত কালী মূর্তির প্রথম রূপদান করেছিলেন নবদ্বীপের কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। পূর্বে মূর্তি গড়ে কালীপুজোর প্রচলন ছিল না..দেবীর পুজো হোত ঘটে, যন্ত্রে। আবার শাস্ত্রে যে মহাকালের সাথে বিপরীত রতাতুরা উগ্রা কালীমূর্তি আছে তাও তো সাধারনের অবোধ্য। তন্ত্রসার এর রচয়িতা সুপণ্ডিত আগমবাগীশ মহাশয় চাইছিলেন এমন এক কালী যিনি হবেন খুব কাছের, যাকে নিজে হাতে খাওয়ানো যাবে, পাশে বসিয়ে দুটো মনের কথা বলা যাবে। আকুল প্রার্থনা জানালেন দেবীর কাছে। দেবীরও বোধ হয় সাধ হয়েছিল শ্মশান ছেড়ে বঙ্গজীবনের দাওয়ায় এসে বসার। আগমবাগীশ স্বপ্নাদেশ পেলেন, পরদিন প্রত্যুষে ঘর থেকে বেড়িয়ে প্রথম যে নারীমূর্তি দেখবেন, সেই মূর্তিই হবে তাঁর আকাঙ্খিত কালী।
সে রাত্রে উৎকণ্ঠায় ঘুম আসলো না। আলো ফুটতেই বেরোলেন গঙ্গাস্নানে..ব্রাহ্মমুহূর্তে যেতে যেতে দেখলেন এক গোপবধূ ডান পা একটি টিলার উপর রেখে,দেওয়ালে ঘু্ঁটে দিচ্ছেন.. বাম হাতে গোবরের তাল ধরা আর ডান হাতটি ঘুঁটে দেওয়ার উদ্দেশ্যে উপরের দিকে ওঠান। নিম্নবর্গীয় কন্যা, গায়ের রঙ কালো, মাথার ঘন চুল অবিন্যস্ত কপালের সিঁদুর ধেবড়ে গেছে..গায়ে কাপড় প্রায় নেই বললেই চলে..এই কাকভোরে আচমকা রাস্তায় পরপুরুষ কৃষ্ণানন্দকে দেখে লজ্জায় জিভ কেটেছেন। এই তো কৃষ্ণানন্দ পেয়ে গেলেন তাঁর আরাধ্য দেবীকে। বাড়ি ফিরে মূর্তি গড়লেন..গোপবধূ যে টিলার উপর ডান পা রেখেছিলেন সেটাই হলো শবরূপী শিবের বুক।
গোবরের তাল যে হাতে ধরেছিলেন তা হলো কর্তিত মুণ্ড..আর যে হাত ঘুঁটে দেওয়ার জন্য উপরে তুলেছিলেন তা হলো অভয়মুদ্রা। এর সাথে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রূপ দিলেন মহাকালের উপর দন্ডায়মানা চতুর্ভুজা কালীর..বাংলার প্রথম দক্ষিণা কালী মূর্তি।
তবে গবেষকদের মতে আগমবাগীশের কয়েকশো বছর আগেও একইরকম কালীমূর্তি পাওয়া গেছে। তাই আগমবাগীশের মূর্তিই প্রথম কালী মূর্তি কিনা সেটি তর্কসাপেক্ষ হলেও এটা বলাই যায় তিনি যে ভাবময়ী মাতৃমূর্তি নবদ্বীপের মাটিতে পুজো করেছিলেন পরবর্তীতে সেই কালীই রামপ্রসাদের বেড়া বেঁধেছেন, কমলাকান্তের শ্যামাসংগীতে সুর হয়েছেন, আবার দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরকে নিজে হাতে খাইয়েছেন।