খেলার ছলে অত্যাচারি ম্যাজিস্ট্রেটকে মেরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এই বিপ্লবী

Special Correspondent, Kolkata: এ যেন এক সিনেমার চিত্রপট। হচ্ছিল ফুটবল খেলা। তার মাধ্যমেই স্পষ্ট হল বিপ্লব। নিকেশ অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রাণ দিলেন এই যুবককও। তরুণ বিপ্লবী…

Anathbandhu panja

Special Correspondent, Kolkata: এ যেন এক সিনেমার চিত্রপট। হচ্ছিল ফুটবল খেলা। তার মাধ্যমেই স্পষ্ট হল বিপ্লব। নিকেশ অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রাণ দিলেন এই যুবককও। তরুণ বিপ্লবী ইংরেজ অফিসার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ হত্যার অন্যতম কারিগর। ম্যাজিস্ট্রেটকে মেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন। তিনি অনাথবন্ধু পাঁজা।

অনাথবন্ধু পাঁজার জন্ম হয়েছিল ২৯ অক্টোবর ১৯১১ সালে মেদিনীপুর জেলার জলবিন্দুতে। তার বাবার নাম ছিল সুরেন্দ্রনাথ পাঁজা। মেদিনীপুরের গোপন বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন অনাথবন্ধু। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে যুক্ত হয়ে রিভলবার চালানোর শিক্ষা গ্রহণ করেন। রিভলভার চালনা শেখার জন্য তিনি কলকাতায় যান। তার সঙ্গে ছিলেন- মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়। অনাথবন্ধু পাঁজা ও তার বাকি সঙ্গীরা রিভলবার চালানো শিক্ষাশেষে মেদিনীপুরে ফিরে যান। সঙ্গে নিয়ে আসেন পাঁচ পাঁচটি রিভলবার।

বিপ্লবীদের হাতে ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট পেডি ও ডগলাস নিহত হবার পর বার্জ নামে এক ইংরেজ মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন। বার্জ ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসার পর বিপ্লবীদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করেন। এবার বিপ্লবীদের লক্ষ্য যে করেই হোক বার্জকে পৃথিবী থেকে সরাতেই হবে। এই দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, ঠিক হয় অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়। 

অনাথবন্ধু পাঁজা ও তাঁর বাকি চারজন সঙ্গী মিলে জীবনের নতুন অধ্যায়ের অভিযানে পা রাখেন। দিনটি ছিল ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ সাল, মেদিনীপুর কলেজ মাঠের দিকে রওনা দেয় তরুণ যুবক। সেদিন ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ মেদিনীপুর কলেজ মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং-এর বিরুদ্ধে মেদিনীপুর ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে নামেন। অনাথবন্ধু ও মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত ধীরে ধীরে খেলার ছলে মাঠে প্রবেশ করেন। বল বার্জ সাহেবের দিকে নিয়ে যান দুই তরুণ যুবক। বার্জ সাহেবের কাছে পৌঁছতেই অনাথবন্ধু ও মৃগেন্দ্রনাথ তার উপর আক্রমণ করেন।

অনাথবন্ধু পাঁজা ও মৃগেন্দ্রনাথ দত্তের আক্রমনে বার্জ সাহেব মারা যান ও জোন্স নামে একজন আহত হন। পুলিস প্রহরী দুজনের উপর পাল্টা গুলি চালায়। এতে তারা দুজন নিহত হন। ঘটনাস্থলেই অনাথবন্ধু পাঁজা মারা যান অপর সঙ্গী মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত পরের দিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাকি সঙ্গীরা পলায়ন করতে সক্ষম হন। এই ঘটনার পর ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন, সনাতন রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা হয়। বিচারে ব্রজকিশোর, রামকৃষ্ণ ও নির্মলজীবনের ফাঁসি হয়। নন্দদুলাল, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন এবং সনাতন রায়-এর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়।