বিশেষ প্রতিবেদন: মনের জোর আর অদম্য সাহস থাকলে যে কি করা যায় তার উদাহরণ রুস্তম নাবিয়েভ। (Rustam Nabiev) নেপালের ভয়ঙ্কর মানসলু পর্বত শৃঙ্গে আরোহণ করলেন এমন একজন যুবক যিনি ৬ বছর আগে দুটি পা-ই খুইয়েছেন!
রাশিয়ার বেপরোয়া রুস্তম নাবিয়েভ অশেষ কষ্ট স্বীকার করে, মূলত দুজন বিশ্বস্ত সহযোগীর সাহায্যে, এই অসাধ্য সাধন করলেন গত শনিবার সকাল ১০ টায় ৮,১৬৩ মিটার উচ্চতার মানাসলু পর্বত শৃঙ্গে পৌঁছে। কেবল হাত দুটো ব্যবহার করে বিশ্বের অষ্টম উঁচু আর অপেক্ষাকৃত খাড়া শৃঙ্গটাতে আরোহণ করেন ২৮ বছরের রুস্তম। প্রসঙ্গত গত বছর ইউরোপের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ এলব্রুস-এ সফলভাবেই আরোহণ করতে সক্ষম হন রুস্তম।
২০১৫ সালের ১২ জুলাই এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত্যুমুখে পড়েছিলেন রুস্তম। কোনক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন যদিও, পা দুটো শরীর থেকে বাদ দিতে হয়েছিল রুস্তমকে। এখানে উল্লেখ করতেই হয় যে, এই পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে বেশ কিছু দুঁদে পর্বতারোহী বিফল হয়েছেন আর বেশ কয়েকজন কে মৃত্যুমুখে পড়তে হয়েছে। এসব মাথায় রেখে রুস্তম কে শুধু অভিনন্দন নয়, স্যালুট জানাতেই হয়।
সম্প্রতি এমনই দুঃসাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন চন্দননগরের মেয়ে পিয়ালী। সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি (৮,১৬৭ মি.) শৃঙ্গে আরোহন করেন পিয়ালি বসাক। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ৮ হাজার মিটারের একটি শৃঙ্গের চূড়া স্পর্শ করেন। এবং নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রথম বাঙালি যিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন (সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ৮,০০০ মিটার পিক)। এই সাফল্য ঐতিহাসিক, ভারতীয় পর্বতারোহনের ইতিহাসে পিয়ালী চিরস্থায়ী হল। শুক্রবার সকালে কাঠমান্ডুর পর্বতারোহণ আয়োজনকারী সংস্থা পায়োনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে।
ধৌলাগিরি পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ। আরোহণের নিরিখে আট হাজার মিটারের অন্যান শৃঙ্গের অনেকগুলির তুলনায় যথেষ্ট দুর্গমও। তা জয় করেছে চন্দননগরের এই মেয়ে। ২০১৮ তে পিয়ালী ভারতের প্রথম অসামরিক মহিলা হিসেবে মানাসলু শৃঙ্গ আরোহণ করেন। আর্থিক অনটনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা অভিযানে। সাফল্য আসেনি। একই কারণে ২০১৯তে একদম শেষ মুহূর্তে এসে ওঠা হয়নি এভারেস্টের শীর্ষে। সমস্যা করেছিল ট্রাফিকও। শেরপা নিয়েও অনেক বিতর্ক হয়েছিল পিয়ালির। ক্রাউড ফান্ডিং করে এভারেস্ট অভিযানে শিখরের সামনে থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল পিয়ালিকে। এবার এসেছে সাফল্য। ধৌলাগিরি পর্বত এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন সামিট করেছেন, যার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া হয়েছে। অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া সমস্ত আটহাজারীই অত্যন্ত কঠিন শৃঙ্গ, যে কারণে অনেক পর্বতারোহীই অক্সিজেনকে ড্রাগ বলে মনে করে থাকে।
তাঁর এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছে তাঁর বাংলাদেশের এক পর্বতারোহী বন্ধু। মানস বালা জানিয়েছেন , “মার্চে যেভাবে অর্থসংকটে নেপাল থেকে ফিরে আসা, ১৫-২০ লক্ষ টাকার লোন মাথায় নিয়ে, পর্বতারোহণে কতটা প্যাসনেট হলে মানুষ সবকিছু পেছনে ফেলে সেপ্টেম্বরে আবার এক্সপেডিশনে যায় এবং প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি সামিট করে। সত্যিই আপনার মানসিক দৃঢ়তা এবং পর্বতারোহণের প্যাশন অকল্পনীয়।বাংলাদেশ থেকে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা”।