বিশেষ প্রতিবেদন: তিনি বস নন। তিনি ইউনিভার্সাল বস। সময় পেরোয়, কিন্তু তিনি সেই একইরকম। মাঠের মধ্যে চির যুবক। ব্যাট করতে নামলে চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া বুড়ো ব্যাটসম্যানকে আজও ভয় পায় বোলাররা, কারণ তিনি ক্রিস গেইল (Chris Gayle)।
আরও পড়ুন অধিনায়কোচিত মনোভাবের অভাব, বিরাটের বিরুদ্ধে নালিশ গেল শাহের কাছে
চল্লিশে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই সাজঘরে তুলে রাখেন নিজের জার্সি, কিট। কিন্তু তিনি তা মনেই করেন না। তিনি যে চির যুবক। ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল , দ্য ইউনিভার্স বস তিনি সেদিনও ছিলেন, আজও আছেন, পরেও থাকবেন।
তাঁকে শুধু টি-টোয়েন্টির রাজা বললে ভুল হবে, কারণ তাই যদি হয় তাহলে ৪২ গড়ে ১০০র বেশি টেস্ট খেলে রান ৭২১৫ রান করা যায় না। ১৫টা টেস্ট সেঞ্চুরি এমনি এমনি হয় না সঙ্গে আবার দুটো ট্রিপল সেঞ্চুরি। একদিনের ক্রিকেটেও ১০হাজার ৪৮০ রানে রয়েছে ২৫টি সেঞ্চুরি। হ্যাঁ, টি টোয়েন্টি ক্রিকেট তাঁকে অন্যমাত্রা দিয়েছে। কিন্ত তা বলে ধুমধারাক্কা মারমার কাটাকাট ক্রিকেট খেলেন বলেই তিনি টি-২০ ক্রিকেটার, এই তকমাটা দিয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এটাও বাস্তব যে, ২০ ওভারের ক্রিকেটে তিনি ১৩ হাজার রান করেছেন। ধারের কাছেও কেউ নেই। এর মধ্যে ছয় হাজার রানের বেশি এসেছে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে ছক্কার সংখ্যাই এক হাজারের বেশি। এই ফরম্যাটে চারও আছে তাঁর এক হাজারের ওপর।
কেন তিনি এই ফরম্যাটের রাজা তা বোঝা যায় এই পরিসংখ্যান থেকেই। ও সব ছুটে, খেটেখুটে রান বানানোয় তিনি বিশ্বাসী নন। বল আসবে, তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে দেবেন। কখনও কখনও মাঠের বাইরে ফেলে দেবেন। মিস টাইম শট ছয় হয়ে যাবে। মারতে শুরু করলে ছেলেখেলা শুরু করবেন বোলারদের নিয়ে। এটাই তার বসিং স্টাইল ক্রিকেট।
বয়সের সাথে সাথে স্ট্রাইক রেটে কম হয়েছে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মালিকরা তাঁকে মাঝে মাঝে বসিয়ে রাখেন। প্রিয় ওপেনিং স্লট থেকে সরিয়ে তিন নম্বরে নামিয়ে নিয়ে আসে ম্যানেজমেন্ট। এসব দেখে তিনি মনে মনে হাসেন। তারপর যেদিন সুযোগ মেলে, বিপক্ষকে খুন করে ফেরেন সাজঘরে। ফেরেন ঢিমে তালে, রাজার হালে… কেন এখনও ‘বস’ গেইল? বিশেষজ্ঞদের সহজ ব্যাখ্যা, মাঠে নেমে কিছু করে দেখানোর খিদেটা এখনও কমে যায়নি গেইলের।
ওই স্পার্টান আজও তাঁর হাতে যেন খাপখোলা তরবারি, দানবীয় শরীর, হিমশীতল দুই চোখ আজও বোলারকে খুন করার জন্য তাকিয়ে থাকে। চল্লিশোর্ধ্ব ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল আজও মেরুদণ্ডে ভয়ের শীতলতা আনতে সক্ষম।
তার প্রমাণ দিচ্ছে তাঁর রেকর্ড বুকও
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪ জন ব্যাটসম্যান দু’বার করে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। যার মধ্যে গেইল একজন। বাকিরা হলেন ডন ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা এবং বীরেন্দ্র সহবাগ। ৫০ ওভারের ওয়ার্ল্ড কাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও তিনি হাঁকিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের বিপক্ষে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে তিনি ১৩৮ বলে ২১৫ রান করেছিলেন, যা একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম ডবল সেঞ্চুরি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরিটি এসেছিল বসের ব্যাট থেকেই। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরূদ্ধে করা বিস্ফোরক মাত্র ৫৭ বলে ১১৭র রেকর্ড কোনও দিন কেউ ভাঙতে পারবে না। গেইল বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান যার টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেঞ্চুরি রয়েছে। তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন।
What better way to celebrate Chris Gayle's 42 birthday than to watch this again, and again, and again !!🎉🎂#ChrisGayle #Gayle #IPLinUAE#HappyBirthdayChrisGayle #IPL2021 pic.twitter.com/4wIXM1ljaR
— ABDULLAH NEAZ (@AbdullahNeaz) September 21, 2021