স্পোর্টস ডেস্ক: হেড কোচ ইগর স্তিম্যাচের কোচিং’এ অষ্টম বারের জন্য ভারত সাফ কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, নেপালের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জিতে। এবার হেড কোচ ইগর স্তিম্যাচের কাছে পাখির চোখ ভারতীয় যুব দলকে AFC U23 এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করানো।
এআইএফ এফের ওয়েবসাইটে নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে ভারতীয় U23 দলের হেড কোচ ইগর স্তিম্যাচ বিতর্ক উস্কে দিয়ে বলে ফেলেন,”প্রত্যেক দেশেরই প্রতিভাবান তরুণ এবং অনূর্ধ্ব -২৩ খেলোয়াড় যারা ইতিমধ্যে নিজের দেশের হয়ে সিনিয়র পর্যায়ে খেলছে, এবং আমরাও তাই। কিন্তু আমাদের এই দলে ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে।”
লেলেংমাওয়িয়া এবং সুরেশ সিং আর জুনিয়র নয়। AFC U23 এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের জন্য দুবাইয়ে থাকা U23 জাতীয় দলের স্কোয়াডে হঠাৎ করেই তাদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। তাদের কাঁধে সিনিয়র দলের ব্যাজ রয়েছে, এবং সম্প্রতি, তাদের গলায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ স্বর্ণপদক ঝুলেছে। এই তালিকাতে নাম রয়েছে রহিম আলী এবং ধীরাজ সিং’র। আর এই বিতর্কে যুব ভারতীয় দলের সদস্যরা নিজেদের ভিতরে থাকা ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ভারতীয় যুব দল অর্থাৎ U23 দলের হেড কোচ ইগর স্তিম্যাচ।
হেড কোচ ইগর স্তিম্যাচের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দুবাই’তে থাকা যুব ভারতীয় দলে তীব্র আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। ইগর স্তিম্যাচের বক্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন যুব ভারতীয় দলের ফুটবলারেরা ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে। ফলে অস্বস্তির মুখে পড়েছে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। কেননা ২৪ অক্টোবর থেকে ভারত শুরু করতে চলেছে AFC U23 এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ। তার আগে এই বয়স নিয়ে বিতর্ক টিমের ফোকাসড টলিয়ে দিতে পারে, ম্যাচের পারফরম্যান্সে ছাপ পড়তে পারে। ইতিমধ্যে দল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে। “একেবারে না, ”আমরা এখনও জুনিয়র। সুরেশ সিং ওয়াংজ্যাম মন্তব্য করেন, “আমরা এখনও U17 বিশ্বকাপ দলের সদস্য।” পাশে থাকা লেলেংমাওয়িয়া মাথা নেড়ে সমর্থন জানায়।
এই জুটি সিনিয়র স্কোয়াডের পেশাদারিত্ব এবং শৃঙ্খলাকে U23 দলে নিয়ে এসেছে। বর্তমান সতীর্থরা যাদের অধিকাংশই তাদের সঙ্গে ছিল U17 বিশ্বকাপ দলে, এবং ইন্ডিয়ান Arrows টিমে থাকার সময়ে তারা যেভাবে মনপ্রাণ দিয়ে ফুটবল খেলেছিল,সেই সুযোগ ভোলার নয়।
মালদ্বীপে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল একটি বিশাল শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। একজন ফুটবলারের জীবনে মাঠে যা করা হচ্ছে তা সবটা নয়, বরং খেলা বন্ধ রাখা এবং এটি জীবনেরবড় অংশ’ এইভাবে লেলেংমাওয়িয়া নিজের ফুটবল বোধ প্রকাশ করেছেন।
সাফ কাপে ১০ জনের বাংলাদেশকে পেয়েও ১-১ গোলের ড্র আর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের ফুটবল মহলে বিস্তর কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছিল। কোচ ইগর স্তিম্যাচের ফুটবল বোধ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছিল। সাফ কাপ ফাইনালে ভারত ৩-০ গোলে নেপালকে হারিয়ে অষ্টম বারের জন্য সাফ কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনালে নেপালের বিরুদ্ধে ৫০ মিনিটে সুরেশ সিং ওয়াংজ্যাম গোল করেন, ভারতের হয়ে দ্বিতীয় গোল। আর ৯০ মিনিটের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর বদলি হিসেবে নামা সাহাল আব্দুল সামাদ তিন নম্বর গোল করে।
এই প্রসঙ্গে ফুটবলার সুরেশ সিং ওয়াংজ্যাম বলেন, “আমরা ভালো শুরু করতে পারিনি, এবং চারদিকে হতাশা ছিল। এটা আমাদের জন্য কর বা মর পরিস্থিতি ছিল, সবাই আমাদের নিয়ে লিখছিল। সেখান থেকে যখন আমরা পয়েন্ট টেবিল ঘুরিয়েছিলাম – সবাই একসাথে মিলে – সিনিয়র খেলোয়াড়রা, আমরা ফুটবলার, টেকনিক্যাল এবং সাপোর্ট স্টাফ এবং অবশ্যই কোচ।” সুরেশের কথায়, “টিম স্পিরিট, একতাবদ্ধতা, আত্মবিশ্বাস আমাদের জিততে সাহায্য করেছে। আমরা ওই অভিজ্ঞতা চিরকাল বহন করে চলবো।”
U17 বিশ্বকাপের জন্য গোয়ায় AIFF একাডেমি প্রকল্পে তাদের সকলের যাত্রা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। জীবন কখনোই গোলাপের পাপড়ি বিছানা ছিল না, বিশেষ করে সেই (টেন্ডার এজড) শিশু বয়সে পরিবার থেকে দূরে থাকা, সেই বয়সেও স্লটের জন্য বিশাল প্রতিযোগিতার কথা ভুলে যাওয়ার নয়। কিন্তু দুজনেই প্রতিটি মুহূর্তকে প্রাণবন্তভাবে মনে রাখি।
নিজের ফুটবল জীবনের শুরুর দিনের স্মৃতিচারণায় লেলেংমাওয়িয়া বলেন, “আমরা বাচ্চা ছিলাম, শুধু আমাদের দুজন নয় – পুরো ব্যাচ। আমরা শুধু ফুটবল খেলতে চেয়েছিলাম। আমরা চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম, এবং খেলার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম, এবং খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। একমাত্র প্ল্যাটফর্ম ছিল এআইএফএফ-এ একাডেমি স্থাপন, এবং এইভাবে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে এখানে আসা একটি স্বপ্ন ছিল, ”সুরেশ যোগ করেন। “এক্সপোজার আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। এবং এটা ভাল শুরু হয়েছে যখন সিনিয়র দলের সাথে সাফ জেতার জন্য। আমি ফাইনালেও গোল করেছিলাম, ”এই কথা বলতেই সুরেশের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
“যখন আমি ছোট ছিলাম, অথবা আমরা সবাই বাচ্চা ছিলাম, তখন আমরা সিনিয়র টিমের খেলা দেখতে টেলিভিশনের সামনে একত্রিত হতাম। সুব্রত পাল, জেজে লালপেখলুয়া এবং অন্যান্যদের সাথে সুনীল ছেত্রী ছিলেন আমাদের আদর্শ। এখন আমরা সিনিয়র দলের যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি এবং সুনীল-ভাইয়ের সাথে একই ড্রেসিংরুম ভাগ করাটা সত্যি কারে আশ্চর্যজনক বলে মনে হচ্ছে, ”রহিম আলির কথায় ফুটে উঠলো।
“আমাদের একটি স্বপ্ন ছিল – আমরা সবাই। আমরা এখনও সেই স্বপ্ন লালন করি। আমরা এর একটি অংশই অর্জন করেছি এবং এটি আমাদের আরও এবং আরও বেশি স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করে, ” বলেন গোলকিপার ধীরাজ সিং। ২৪ অক্টোবর AFC U23 এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে ভারত ওমানের মুখোমুখি হবে, এরপর যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে।বৃ্হস্পতিবার থেকে ভারতীয় যুব ফুটবল দলের অনুশীলনে নামার কথা।