Bangladesh 50 – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com Stay updated with Ekolkata24 for the latest Hindi news, headlines, and Khabar from Kolkata, West Bengal, India, and the world. Trusted source for comprehensive updates Mon, 10 Jan 2022 04:08:23 +0000 en-US hourly 1 https://ekolkata24.com/wp-content/uploads/2024/03/cropped-ekolkata24-32x32.png Bangladesh 50 – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com 32 32 Bangladesh 50: পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন রবীন্দ্রনাথের গানই হবে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-ex-diplomat-sasanka-sekhar-banerjee-re-calling-historic-journey-with-mujibur-rahaman Mon, 10 Jan 2022 04:08:23 +0000 https://ekolkata24.com/?p=18637 পঞ্চাশ বছর আগে এক ঐতিহাসিক বিমান যাত্রার সাক্ষী ছিলেন ইংল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি। বাংলাদেশের (Bangladesh 50) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডন থেকে নয়াদিল্লি এসেছিলেন।

ইংল্যান্ড সরকারের বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুর সেই ১৩ ঘণ্টার সফর ছিল চরম কৌতূহলজনক। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির মুজিবুর রহমান দিল্লিতে আসেন। তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় ভারত সরকার।

একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই পাকিস্তান সরকার বন্দি করেছিল বঙ্গবন্ধুকে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয় পাক সরকার।

সেই ঐতিহাসিক বিমান যাত্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে রবীন্দ্রনাথ রচিত “আমার সোনার বাংলা…”।

ভারতের ততকালীন রাষ্ট্রদূত শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জির স্মৃতিকথা:
“ফ্লাইটে নানা কথার মধ্যে হঠাৎ বঙ্গবন্ধু বললেন, ব্যানার্জি তুমি গান গাইতে জানো? অবাক হয়ে বললাম, আমি তো গানের গ-ও জানি না। তিনি বললেন, আরে তাতে কী! তুমি আমার সঙ্গে ধরো। বলেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। বেশ পেছনে বসা ড. কামাল হোসেনদেরও দাঁড়াতে বললেন এবং তার সঙ্গে গান ধরতে বললেন। তিনি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ খুব দরদ দিয়ে গাইতে থাকলেন আর তখন তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকল। একজন মহান নেতার গভীর দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি পরম ভালোবাসা আমাকে আবার মুগ্ধ করল। গান গেয়ে তিনি যখন বসলেন, তখন আমি আমার কূটনৈতিক প্রথা ভেঙে একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু, আপনাকে আমি প্রণাম করতে পারি? তিনি কিছু বলার আগেই আমি তার চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করলাম।’ কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, এটি হবে আমার স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত।”

]]>
Bangladesh50: পূর্ব দিগন্তের সূর্য…ভারতে ‘হাতবদল’ নার্গিসের ঘরে ফেরার গল্প https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-humam-rights-worker-experience-of-west-bengal Thu, 16 Dec 2021 10:07:57 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15119 Suraj Das

সূরজ দাশ (মানবাধিকার কর্মী, পশ্চিমবঙ্গ)

সূরজ দাশ (মানবাধিকার কর্মী, পশ্চিমবঙ্গ): সালটা ২০০৫ । সবে আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচারচক্র প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছি। ওপার বাংলার (বাংলাদেশ-Bangladesh) নানান মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে তৈরি হয়েছে সুসম্পর্ক।

রাজশাহী, যশোর, ঢাকা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বাংলাহিলি, এইসব জায়গায় প্রচুর মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। কার কথা ছেড়ে কার কথা বলব! ওপার বাংলার বাংলাহিলিতে জাহিদুল ইসলাম দাদা, ঢাকাতে দীপ্তি বল দিদি, তারিকুল ইসলাম দাদা, নাটোরে আজাদ ভাই, রাজশাহীতে রিপন সরকার, বগুড়াতে মাজেদ রহমান, জিয়া শাহিন, দিনাজপুরে অমিত দা, জয়পুরহাটের এনামুলদা, পাঁচবিবিতে আয়েশা আক্তার আপু, সহ আরো অসংখ্য মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের হাত দিয়েই আমি চিনে ফেলি ওপার বাংলার জল মাটি আকাশ। এই মানবিক মানুষগুলোর চোখ দিয়েই বাংলাদেশের সবুজ হৃদয় আমাকে জয় করে ফেলে। এই মানুষগুলো আছেন বলেই বাংলাদেশে এখনও সবুজ, সুজলাং সুফলাং শস্যশ্যামলাং।

প্রতি বছর ভারত- বাংলাদেশ শূন্যরেখায় অমর একুশে–আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন হয়ে আসছে দক্ষিণ দিনাজপুর ও বাংলাদেশের সীমান্ত চেকপোস্ট হিলিতে। এছাড়াও নানান সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান আমাদের বরাবর আবেগে ভাসিয়ে দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কথা লেখার আছে, অনেক আবেগ আছে, সে কথা কখনো বলবো অন্যত্র। এখানে একটা বাস্তব জীবনের গল্প আপনাদের সামনে রাখছি । যে গল্পের একটা অংশ আমি নিজে । গল্পের চরিত্রটির নাম বদলে রাখা আছে এখানে।

ঘরে ফেরার গল্প:
নার্গিস ! ১৭ বছর বয়স ! প্রকৃত বাপ-মায়ের পরিচয় জানে না সে । ওর বাড়ি যশোর। বড় হতে হতে একদিন দুম করে অনেক বড় হয়ে গেল নার্গিস । তারপর স্বপ্নের রাজপুত্তুরের সন্ধান। রকি ! গোপালগঞ্জে বাড়ি। নার্গিস স্বপ্নে বিভোর। রকির কাছে জানতে পারে সে সুখের রাজপ্রাসাদ তৈরি আছে ভারতের মুম্বাই শহরে। তার হাত ধরে পেট্রাপোল-বেনাপোল হয়ে সটান একদিন মুম্বই।

নার্গিস হাতবদল হয়ে গেলো। ৬০,০০০ টাকা লেনদেন। সে এখন অন্যের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। প্রাসাদ জুড়ে কেবল হাহাকার। এরকম কপাল ছিল, ভাবতেই পারেনি সে। বুক চাপড়ায়। দুঃখ যন্ত্রণাকে প্রতিদিন গলা টিপে হত্যা করে সে। গ্রামের কথা মনে পড়ে তার। ছোট ভাইবোনগুলোর কথা মনে পড়ে। বর্ষাকালে গুঁড়োমাছ। ভাইয়ার চপের দোকানের গন্ধ। পাড়ার নানি, আরও কতকার কথা মনে পড়ে। কি এক অচেনা জগতে চলে এলো! ফেরার রাস্তা জানা নেই। দুবছর হয়ে গেল। গতর আর চলে না।
“হে আল্লাহ্‌, কার ওপর আর ভরসা রাখব!” বয়স এখন কুড়ি। যৌবন কি তবে ফুরিয়ে এলো? কত হাঙর, কুমীর এলো গেলো…”।
“রাকেশ, তুম ক্যায়া মুঝে অপনা দেশ বাপস ভেজ সকতে হো? মেরি আঁখোকি তরফ দেখো,… … দেখতে পাচ্ছ আমার পদ্মার ঢেউ ???”
রাকেশ মুম্বাই থেকে হাওড়াগামী ট্রেনে চাপিয়ে দিল নার্গিসকে ।
“যশোর, তুমি কতদুর? খুলনা ভালো আছো? বরিশালে বড় আপা থাকেন। ভালো আছেন আপা? আমি আইতেসি।”

সাপ-খোপ, ব্যাঙ-টিকটিকির বেড়াজাল ছিঁড়ে হাওড়া থেকে শিয়ায়লদা হয়ে বালুরঘাট। দুদিন সেখানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রয়ে। তারপর সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে নার্গিস পৌঁছে যায় মাটির কাছে।
সীমান্ত প্রহরীর নল উপেক্ষা করে হিলি রেলষ্টেশনে আনন্দে কাঁদছে নার্গিস। এ এক অন্য অনুভুতি । অন্য স্বাদ ।

আকাশের দিকে বারবার তাকিয়ে বলছে, “কত কি দেখলাম আল্লাহ্‌, আর কিছু দেখতে চাই না। কেবল আমি রকির মতন জহ্লাদদের ফাঁসি চাই আল্লাহ্‌… এই সামান্য মেহেরবানিটুকু করো, হে আল্লা।”

]]>
Bangladesh 50: অতীশ দীপঙ্করের বাংলায় বঙ্গবন্ধুর খুনি বিশ্বাসঘাতকরা সক্রিয়, সতর্ক থাকুন বেগম হাসিনা https://ekolkata24.com/uncategorized/50-years-of-bangladesh Thu, 16 Dec 2021 08:57:23 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15104 Pranab bhatttacharya

প্রণব ভট্টাচার্য
(ইতিহাস গবেষক, পশ্চিমবঙ্গ)

প্রণব ভট্টাচার্য (ইতিহাস গবেষক, পশ্চিমবঙ্গ): প্রথমত আমি বাংলাদেশকে (Bangladesh) আলাদা দেশ বলে ভাবতে পারিনা। আমার বাঙালি সত্তা কোথাও যেন আপত্তি জানায়। আমি ভারতীয় বাঙালি না বাঙালি ভারতীয় আজও বুঝে উঠতে পারিনি। আমাকে ভারতীয় মহা জাতি সত্তার মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে হবে। আমার আলাদা আইডেন্টিটি থাকবে না!

বাঙালি হিসাবে গর্ব অনুভব করি যাঁদের জন্য তাঁরা তো প্রায় সবাই ওপারের-ই। কত নাম আর বলব। অতীশ শ্রীজ্ঞান দীপঙ্কর থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত। বিজ্ঞানীকুলের সব আচার্য্যরা। রত্ন প্রসবিনী আমার সেই ‘বৃহৎ অবিভক্ত বঙ্গ’।
‘ হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন।’ ‘ বঙ্গ আমার ; জননী আমার ; ধাত্রী আমার ; আমার দেশ।’
কলঙ্ক কাঁটাতারের বেড়া। বাঙালির পরাজয়। বাঙালি সত্তার পরাজয়। ধূর্ত ইংরেজ বাঙালিকে হীনবল করার চক্রান্ত করেছে ধীরস্থির ভাবে। দীর্ঘদিন যাবৎ। সহায়তা করেছে এদেশের নানা শক্তি।

একবার মাত্র গেছি বাংলাদেশে। বেনাপোল সীমান্তের ওপারে পা দিয়েই এক আলাদা অনুভূতি। প্রণাম যশোর। কপোতাক্ষ তীরে যে আমার মধুকবি। “জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার করুন ডাঙায়” হেঁটে চলেছেন আমার জীবনানন্দ।

বিপুলা পদ্মা পার হয়ে ভায়া ঢাকা কুমিল্লা পর্যন্ত। আমার সৌভাগ্য আমি রাত্রে গিয়েও দাঁড়িয়েছি ” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ” ভাষা শহীদ স্তম্ভের সামনে। নুয়ে আসে মাথা। একটা জাত জেগে উঠেছিল ভাষা কে কেন্দ্র করে। ভাষা আন্দোলন পরিণতি পেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। এই প্রাপ্তির জন্য একটা জাতকে মুখোমুখি হতে হয়েছে নারকীয় গণহত্যার। অসম লড়াইয়ে হারাতে হয়েছে লক্ষ তাজা প্রাণ। লুঠ হয়েছে হাজারো মা বোনের ইজ্জত। ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার সাথে লড়াইয়ে হার মানতে বাধ্য হয়েছে বর্বর পাক বাহিনী। সমর্থন করেছি প্রাণমন দিয়ে সেই উজ্জ্বল ভূমিকাকে। ইন্দিরাজীর সাহসী নেতৃত্বকে।

আমি ক্ষমা করতে পারিনা চিন বা আমেরিকার সেদিনের ভূমিকা। আবার ভুলতে পারিনা ভারতের স্বাভাবিক মিত্র সোভিয়েতের বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের সহযোগিতার কথা।

আজ বাংলাদেশের ৫০ বর্ষ পূর্তিতে স্মরণ করি সেদেশের জাতির নেতা মুজিবুর রহমানকে। আবার মাথায় রাখতে হয় তাঁকেও প্রাণ দিতে হয়েছে বিশ্বাসঘাতক বাঙালির হাতেই।

আজও সক্রিয় অত্যন্ত বিপজ্জনক সেই মৌলবাদী শক্তি। যারা সেদিন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। আজও করছে। তবুও বাংলাদেশ বেগম হাসিনার নেতৃত্বে অনেক এগিয়েছে। আরও উন্নতির পথে বাংলাদেশ।

ঢাকার আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাসের সেই স্মৃতি- এখানে এসে ইলিশ খাওয়া হয়নি শুনে এক বয়স্ক ভদ্রলোক দাওয়াত দিলেন। ” আবার আসেন ভাই। আমার বাসায় ওঠেন ঢাকায়। পদ্মার ইলিশ খাওয়াব “। কি আন্তরিকতা! আহা। এইই বাঙালি।

ঢাকার আলোঝলমলে রাস্তায় বাংলায় সাইনবোর্ড দেখে বা ওষুধের স্ট্রিপে বাংলায় ওষুধের নাম দেখে আমার হৃদয় যে উদ্বেলিত হয়। “আ মরি বাংলা ভাষা ; মোদের গরব ; মোদের আশা”। এই ভাষাই তাকে বেঁধে রাখবে অচ্ছেদ্য বন্ধনে। কাঁটাতারের বেড়া আটকাতে পারবেনা তার ব্যাকুল হৃদয়।

বাঙালি এক আলাদা জাতিসত্তা। সে স্বতন্ত্র। তার জাতীয়তা উদার। সে বিশ্বপথিক। আন্তর্জাতিকতা তার রক্তে।

]]>
Bangladesh 50: আশা রাখব সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও দৃঢ় হবেন https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-new-bangladesh-must-maintain-security-of-minorities Thu, 16 Dec 2021 08:39:19 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15101 শবনম হোসেন (শিক্ষিকা, পশ্চিমবঙ্গ): ডিসেম্বর , বাংলা অঘ্রান মাস আসলে বিশ্ব ইতিহাসে মাথা উঁচু করা এক জাতি বাঙালির বিজয় মাস। বাংলাদেশ পালন করছে তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর অর্থাৎ বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী।
সেই দিনটা ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। পদ্মার ওপারের খুশির ঢেউ স্বাভাবিক ভাবেই এপারেও আছড়ে পড়েছিল। বাঙালি হৃদয়ে লেগেছিল আনন্দ দোলা।

বয়স তখন আমার সবে পাঁচ বছর। বাবা কাকাদের আবেগ, উত্তেজনা, চোখে মুখে খুশির রেশ। যুদ্ধ কী বোঝার বয়স হয়নি তবে আনন্দটুকু উপলব্ধি করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের তথা বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক হলেন।

মনে পড়ে, এক দুপুরে বিদ্যালয়ে শিক্ষিকাদের মধ্যে চাঞ্চল্য। ঘোষণা করা হল, প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের জাতীয় কবি আর নেই। শোকের ছায়া নেমে আসে সর্বত্র। তাঁর ই সৃষ্ট কবিতা- গানে কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

কবির জন্মস্থান বর্ধমান (এখন পশ্চিম বর্ধমান) জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ও সারা পশ্চিমবঙ্গে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। পরে জেনে ছিলাম ১৯৭২ সালের ১৩ই জানুয়ারি বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া কবির ‘ চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানটি রণসঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এই গান আমাদের বিদ্যালয়ে নেতাজির জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবসে নিয়মিত গাওয়া হতো এবং এখনও প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা গেয়ে থাকে। মানুষে মানুষে ধর্ম বৈষম্য হানাহানি থেকে মুক্ত করতে তিনি সাম্যের গান শুনিয়েছেন। সমাজকে ধর্মের নামে বজ্জাতি থেকে কলুষমুক্ত করতে চেয়েছেন। তিনি ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা, ধর্মের নামে কুসংস্কার শোষণ ইত্যাদির বিরোধিতা করে লিখেছেন ‘ জাতের নামে বজ্জাতি ..’

অথচ আঁধার রাতে আজও আমরা হানাহানি করি। এবার দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নজরুলের দেশে, এ বড়ো লজ্জার, এ বড়ো কষ্টের, বড়ো দুঃখের। আজ ও আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে পরস্পরের প্রতি নাড়ির টান অনুভব করি। পরস্পর ক্ষমা চাইতে যেন লজ্জাবোধ না করি।

কবি বলে গেছেন ‘ মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।’
যে জাতি নিজের মাতৃভাষাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছে রক্তের বিনিময়ে সেই দেশে মানব সভ্যতাকে পিছিয়ে দেওয়ার এই দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টা আমাদের রুখতেই হবে।
হাজার বছরের সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অসাম্প্রদায়িক কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন ‘গাহি সাম্যের গান ..’। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ‘মানবতা’-কে স্থান দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় উৎসবের ৫০ বছর পালনের পাশাপাশি আমরা আশা করব বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার সরকার তথা প্রশাসন সদা জাগ্রত থাকবেন , ভবিষ্যতে যাতে যাতে কোন দূর্বৃত্ত এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং নিজ ধর্ম পালন তাদের মৌলিক অধিকার এবং তা সুনিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকার নয় প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

এই শুভ দিনের প্রাক্কালে আমরা সবাই সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করার শপথ নিই। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে ভারতের বিজয় দিবস ও বাংলাদেশ তৈরির সুবর্ণজয়ন্তী পালন করি।
শুভেচ্ছা প্রত্যেক বাঙালিকে।

]]>
‘নিয়াজি-র আত্মসমর্পণ’ সেই মন্দ্র কণ্ঠ ‘দিস ইজ অল ইন্ডিয়া রেডিও, নিউজ রেড বাই সুরজিৎ সেন…’ https://ekolkata24.com/uncategorized/50-years-ago-16-december-memory-this-is-all-india-radio-news-read-by-surajit-sen Thu, 16 Dec 2021 08:11:05 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15088 sourav-senসৌরভ সেন: ১৯৭১। আমার কিশোরবেলা। তখন এ-বাংলায় রাজনৈতিক কারণে হানাহানি ও অস্থিরতা আমাদের দ্রুত ‘বড়’ করে তুলছে। কাগজে রাজনৈতিক খবর পড়ায় বেশ আগ্রহ। আগের বছর, মানে ১৯৭০-এ স্কুলে হাফ-ইয়ারলি, অ্যানুয়েল কোনও পরীক্ষাই হতে পারেনি। সরাসরি পরের ক্লাসে। ‘মন্থর বিকেলে শিমুল তুলোর ওড়াউড়ি’র মতন সোডার বোতল ছোড়াছুড়িও সহজ, ছন্দোময় হয়ে উঠেছে। চোখের সামনে পেটো পড়া-ও তখন দৃষ্টি বা শ্রুতিতে গ্রাহ্য। এধার-ওধার থেকে খুনের খবর আসে। পাড়ায়-পাড়ায় সিআরপি-র রুট মার্চ কিংবা কুম্বিং অপারেশনে বাড়িতে ঢুকে মাঝরাতে পুলিশের খানাতল্লাশি তখন নগরজীবনের অঙ্গ।

এহেন সময়ে স্বাধীন বাংলা-র হিল্লোল! পাক-বাহিনীর বর্বরতার ছবি কাগজে-কাগজে, হত্যালীলার বিবরণ। গুলিতে হত্যা, বেয়োনেটে খুঁচিয়ে হত্যা— কত যে প্রকার! ইয়াহিয়া খান একটা আস্ত জল্লাদ, এমন একটা ছবি মনে আঁকা হয়ে গেছে। অনেক পরে শিল্পী কামরুল হাসান-চিত্রিত জল্লাদের (জানোয়ার) ছবিটি দেখে অবাক হই। মনে-আঁকা ছবির সঙ্গে প্রায় মিলে যাচ্ছে! লক্ষ-লক্ষ শরণার্থীর স্রোত। প্লাস্টিক ছাউনিতে, কংক্রিটের পাইপে তাদের আস্তানা। ধু-ধু সল্ট লেক তখন সবে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। সেখানেও ৭২ ইঞ্চি পাইপের মধ্যে বসতি। ইতিমধ্যে লোকসভা ভোটে জিতে ইন্দিরা গান্ধী নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব আরও পোক্ত করে নিয়েছেন। দেশে-দেশে তাঁর দৌত্য, ছুটোছুটি কাগজে পড়ছি। নিক্সন, কিসিঞ্জার— এসব নাম শুনলে গা রি-রি করে। অন্য দিকে মনে পড়ছে— সেনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে ঘুরলেন। কাগজে প্রথম পাতায় বিবরণ। শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য বিপুল খরচের বোঝা ভারত সরকারের কাঁধে। খবরের কাগজ, সিনেমার টিকিট— এসবের ওপর অতিরিক্ত মাশুল চাপল। চিঠিপত্রে ডাকমাশুল বাড়ল ৫ পয়সা। একটি অতিরিক্ত স্ট্যাম্প সাঁটতে হত। প্রথম-প্রথম ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের ডাকটিকিটে ‘রিফিউজি রিলিফ’ ছাপ মারা হত, পরে নতুন টিকিট ছাপা হল।

bangladesh liberation war

মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি চলেছিল আরেক যুদ্ধ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের— যাকে অনেক পরে গোটা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘ওআরএস’ বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন। তখন সীমান্ত-অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরগুলোয় কলেরা ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক ভাবে। এপারের ডা. দিলীপ মহলানবিশ, ওপারের ডা. রফিকুল ইসলাম ওআরএস-এর সফল প্রয়োগ শুরু করলেন। এছাড়াও, নলজাতকের স্রষ্টারূপে চিরস্মরণীয় ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় শরণার্থীদের অপুষ্টি-রোধে বানিয়েছেলেন ‘ফিশ প্রোটিন কনসেনট্রেট’।

মুক্তিযুদ্ধের খবর আসছে। ছবিও ছাপা হচ্ছে। ‘রাজাকার’, ‘আল বদর’ নামগুলো জানতে শুরু করেছি। এপারের অনেক সাংবাদিক ওপারে গিয়ে জীবন্ত বিবরণ আনছেন। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে অন্তর্বর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়ে গেছে, মুজিবনগরে। টিভি তো তখন আসেনি। আকাশবাণী কিন্তু এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল! নিয়াজি-র আত্মসমর্পণের ছবিতে প্রথম সারিতে দিল্লির সংবাদপাঠক সুরজিৎ সেন! কানে শুনতে পাচ্ছি সেই মন্দ্র কণ্ঠ— “দিস ইজ অল ইন্ডিয়া রেডিও, নিউজ রেড বাই সুরজিৎ সেন…”। কলকাতা কেন্দ্রের প্রণবেশ সেন, উপেন তরফদার, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা স্মরণে থেকে গেছে। ‘সংবাদ-বিচিত্রা’য় গ্রাউন্ড লেভেলের সরাসরি রিপোর্ট। রেডিও-য় শুনে-শুনে প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা— “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…”। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’। কলকাতারই এক ঘাঁটি থেকে চলত সম্প্রচার। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ অধিবেশন শুরু হত, যদ্দূর মনে পড়ছে। ও-বাংলার সময়ানুযায়ী বেলা একটা নিশ্চয়ই। শুরুতেই বাজানো হত গান : “জয় বাংলা, বাংলার জয়…”।

তারপর তো ডিসেম্বরের তিন তারিখে পাকিস্তানের বোমাবর্ষণ, ভারতের যুদ্ধঘোষণা। পুব ও পশ্চিম রণাঙ্গন। মার্কিন সপ্তম নৌবহর আসছে! কী হয়, কী হয়! রসিকজনের রটনা কিনা জানা নেই, তবে ছড়িয়ে গেল— আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবনবাবু নাকি অক্লেশে বলেছেন : আমাদেরও আই এনএস বিক্রান্ত্ আছে! বিক্রান্ত্ ছিল তখন ভারতের একমাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। তবে সপ্তম নৌবহরের কাছে নস্যি! যা হোক, বিক্রান্ত্ কিন্তু খুলনা থেকে চট্টগ্রাম অবধি নাগাড়ে পাহারা দিয়ে গেছে। সেই বিক্রান্ত্-কে বছর-আষ্টেক আগে লোহার দরে বেচে দেওয়া হল। দু’ ফোঁটা চোখের জল কেউ ফেলেছিল কি?

যুদ্ধ চলছে। ফেনি, আখাউড়া, ঝিনাইদহ, হিলি, বয়রা, ঝিকরগাছা ইত্যাদি নামগুলো ম্যাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে নিচ্ছি। পালাতে গিয়ে পাক-সেনারা সেতু, রেলপথ, ভবন সব নষ্ট করে দিচ্ছে। পদ্মার ওপরে সুবিখ্যাত সারা (হার্ডিঞ্জ) ব্রিজের একটা গার্ডার ধ্বংস করা হল। বয়োজ্যেষ্ঠরা হায়-হায় করে উঠলেন। কলকাতায় ব্ল্যাক-আউট চলছে। সন্ধের পর বাইরে কুপকুপে অন্ধকার। ঘরের মধ্যে আলো না-ঠিকরানো বিশেষ ল্যাম্পশেড। একচিলতে আলোও বাইরে গেলে পুলিশে সতর্ক করে যায়। আকাশে প্লেনের আওয়াজে হামলার আশঙ্কা। টালা ট্যাঙ্ক, হাওড়া ও বালী ব্রিজ নাকি ‘দুশমনে’র পয়লা নিশানা!

অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়। যুদ্ধ শেষ। জন্ম নিল স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। সারা দেশে উচ্ছ্বাস। এ-বাংলায় অন্য এক উন্মাদনা। দেয়ালে-দেয়ালে লিখন। দু’ দেশের জাতীয় পতাকার ছবি। তবে তখন কিন্তু বাংলাদেশের পতাকা আঁকা ছিল বেশ ঝঞ্ঝাটের! কারণ মধ্যিখানে ছিল সে-দেশের মানচিত্র। সেটি নিখুঁত আঁকা বেশ কষ্টসাধ্য। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নামের আগে জুড়ে গেল বিশেষণ ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য’, যা এ-বাংলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরবর্তী কয়েক বছর ব্যবহৃত হয়েছে।

’৪৭-এ ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভাষার জোর এতটাই যে ধর্মকে পরাভূত করে সেই রাষ্ট্রের জঠর থেকে নতুন এক রাষ্ট্র জন্ম নিল দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনন্য নজির।

মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয় এ-বাংলার শিল্পসাহিত্যেও দাগ রেখে গেছে। গান, কবিতা ও অন্যান্য সৃষ্টিতে মাতোয়ারা হয়েছিল মানুষ। আজ ইচ্ছে করলে সেসবের আস্বাদ নেওয়া যায়। বৈদ্যুতিন তথ্যভাণ্ডার এখন অতি সমৃদ্ধ। শুধু একটি গানের হদিশ পেতে ব্যর্থ হয়েছি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ‘পারাপার’ :
আমরা যেন বাংলা দেশের/ চোখের দুটি তারা।/ মাঝখানে নাক উঁচিয়ে আছে—/ থাকুক গে পাহারা।/ দুয়োরে খিল/ টান দিয়ে তাই/ খুলে দিলাম জানলা।/ ওপারে যে বাংলাদেশ/ এপারেও সেই বাংলা।।

<

p style=”text-align: justify;”>পঞ্চাশ বছর আগে এটি গান হিসেবে গাওয়া হত। সুরারোপ কার জানা নেই। আমি নিজে অনুপ ঘোষাল-কে অনুষ্ঠানে গাইতে শুনেছিলাম। ছোট্ট গান, জমজমাট সুর, এখনও দিব্যি মনে আছে। তবে কোনও মাধ্যমেই আর শুনি না, খোঁজ পাই না। পুনরুদ্ধার করা যায় কি?

]]>
Bangladesh50: পাকিস্তান ‘দ্বিখণ্ডিত’, পাঁচ দশক পর কালচক্র ফেরাল ঐতিহাসিক বৃহস্পতিবার https://ekolkata24.com/uncategorized/new-country-bangladesh-was-formed-on-the-historic-thursday-after-the-break-up-of-pakistan Thu, 16 Dec 2021 07:56:37 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15084 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: তারিখ-বার আবর্তিত হয় দিনপঞ্জির নিয়ম মেনে। সেই কালচক্র পঞ্চাশ বছর পর ফিরিয়ে দিল ঐতিহাসিক ‘বৃহস্পতিবার’। পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হওয়ারও ৫০ বছর আজ অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ সাল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিনও বৃহস্পতিবার! সেই দিন অখণ্ডতা খুইয়ে দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তানের মানচিত্র তৈরি হয়েছিল। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর বিশ্ব থেকে সরকারিভাবে মুছে গেছিল পূর্ব পাকিস্তান নাম। নতুন ভূখন্ড বাংলাদেশ (Bangladesh)।

১৯৪৭ সালে ভারত হয় দ্বিখণ্ডিত। তৈরি হয় পাকিস্তান। নবগঠিত পাকিস্তানের দুই অংশ। একদিকে পশ্চিম পাকিস্তান অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান। মাঝে বিশাল ভারত। একদিকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা অন্যদিকে দেশটির রাজধানী করাচি (পরে ইসলামাবাদ)।

দেশভাগের যে যন্ত্রণা নিয়ে অখণ্ড ভারতবাসী ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে নিজ নিজ ভূখণ্ড ভারত ও পাকিস্তান বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের সামনে আরও একটি ভাঙন অপেক্ষা করেছিল। পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার ২৪ বছরের মধ্যে দু টুকরো হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বহু দেশ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। আবার সংযুক্ত হয়েছে। এই ভাঙা-গড়ার খেলায় পাকিস্তানের দু টুকরো হয়ে যাওয়ায় সর্বাধিক প্রভাব পড়ে ভারতে। যে দেশ ১৯৪৭ সালে রক্তাক্ত পরিস্থিতির মাঝে টুকরো হয়েছে আগেই।

পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে দেশটির পূর্বাংশ বা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিজ ভাষা বাংলার উপর খবরদারি করার কাজটি করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এসেছিলেন স্বয়ং পাক জনক মহম্মদ আলি জিন্না। বাংলাভাষী অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানে এসে তাঁর ঐতিহাসিক উক্তি বাংলা নয় উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় ভাষা এই মন্তব্যই দেশটি টুকরো হবার প্রথম শুরুয়াত।

তারপর কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় ‘রক্তনদী কল্লোল্লিত’ হয়েছে বহুবার।মেঘনা, পদ্মা, ধানসিড়ি, কপোতাক্ষের স্রোত বেয়ে কালচক্রের টানে হাজির ১৯৫২, ঐতিহাসিক ভাষা অধিকার রক্ষার বিজয় বছর। রক্তাক্ত আন্দোলনে বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পাক সরকারের। পরবর্তী সময়ে পাক সামরিক আইনের দমননীতির প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রক্তাক্ত সময় পেরিয়ে হাজির ১৯৭১ সাল।

বজ্রকণ্ঠে হুঙ্কার এলো পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। মুজিব ভাষণের উন্মাদনায় ভেঙে পড়েছিল পাক শাসনের সামরিক দম্ভ দেয়াল। জলে-জমিতে লাউমাচা ধানক্ষেতের আড়ালে সেই মুক্তির সংগ্রামের নয় মাসের পর্ব পরিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিক হয়ে গেল।

এই ইতিহাসের সমান অংশীদার ভারত। বাংলা ভাষার দেশের জন্ম ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় লেখা আছে ভারতের নাম।

]]>
Bangladeh 50: পাকিস্তানের আতঙ্ক কিংবদন্তি গেরিলা বাঘা সিদ্দিকী দিলেন সরস্বতী পুজোর চাঁদা https://ekolkata24.com/uncategorized/when-legendary-bangaldesh-guerrilla-commander-tiger-siddique-lived-in-bardhaman Wed, 15 Dec 2021 18:43:13 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15035 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: নাম তাঁর ‘টাইগার’। দুনিয়া জুড়ে যত গেরিলা যুদ্ধের কাহিনী আছে তার অন্যতম এক তারকা। এহেন অকুতোভয় টাইগার ওরফে বাঘা সিদ্দিকী তাঁর বাহিনী পাকিস্তানি সেনার কাছে আতঙ্কের কারণ ছিলেন। পাক সেনা হোক বা কমান্ডাররা মনে প্রাণে চাইত যদি আত্মসমর্পণ করতেই হয় তাহলে টাইগারের কাছে নয়, এর চেয়ে ভারতীয় সেনা অনেক ভালো। অন্তত তারা যুদ্ধবন্দি আইনে মেরে ফেলবে না। মুক্তিযোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকীর হাতে পড়লে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হবে। তাঁর এই ভয়াবহ রূপ বিশ্বজুড়ে আলোচিত। যেভাবে তিনি পাক সেনাদের মারতেন সেই ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন ফেলেছিল।

গেরিলা কমান্ডার বাঘা সিদ্দিকীর আসল নাম আবদুল কাদের সিদ্দিকী। বাঘের মতো হিংস্র হামলায় পটু তাই নাম হয় ‘বাঘা’। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর উপলক্ষে এই প্রতিবেদনে বাঘা সিদ্দিকীর একটি বিরল মুহূর্ত তুলে ধরা হলো।

Tiger-siddique

বাঁ-দিকে মুক্তিযুদ্ধে ভয়ঙ্কর রূপ, ডানদিকে বর্ধমানের শ্রীপল্লীর বাড়িতে টাইগার

ফিরে যাওয়া যাক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে:
৫০ বছর আগের কথা। তখন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল পাক শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীর একটি সমান্তরাল গেরিলা দল ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। ১৯৭১ সালের এই মুক্তিযুদ্ধে বাঘা সিদ্দিকীর বাহিনী পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে প্রত্যাঘাত শুরু করে। টাঙ্গাইল থেকে শুরু হয়েছিল সেই হামলা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় প্রথম ভারতীয় সেনার তৎকালীন মেজর জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগরার পাশাপাশি বাঘা সিদ্দিকী তাঁর বাহিনী নিয়ে ঢুকেছিলেন। বাংলাদেশ তৈরির পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। উপাধি পান ‘বঙ্গবীর’।

এই বাড়িতে থাকতেন বাঘা সিদ্দিকী। ছবি: আব্দুস সবুর।

এহেন বাঘা সিদ্দিকীকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেনা অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুনের পর প্রত্যাঘাতের সুযোগে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঘা সিদ্দিকী। ১৯৭৫-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই প্রবাস পর্বের দীর্ঘ সময় কেটেছিল বর্ধমান শহরে। বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর শহর বর্ধমান।

এক বিরল মুহূর্তের বাঘা সিদ্দিকী:
বর্ধমানের অতি পরিচিত সাংবাদিক আব্দুস সবুর। তিনি শহরের ‘নতুন চিঠি’ সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত। আব্দুস সবুর তখন তরুন। তিনি বলেছেন, একদিন ক্লাবের সবাই মিলে সরস্বতী পুজোর চাঁদা তুলতে বেরিয়েছি। সদরঘাট রোডের পৌরসভা কসাইখানার কাছে যে বাড়িতে বাঘা সিদ্দিকী থাকতেন সেখানে গেলাম। উনি আমাদের দেখে বেরিয়ে এলেন। আমি বললাম ক্লাবের সরস্বতী পুজো কিছু চাঁদা দিন। উনি বললেন, কেন দেব না। বলেই দু টাকা দিলেন। তখনকার দিনে দু টাকা মানে বিরাট।

abdur-sabur

সাংবাদিক আব্দুস সবুর

সাংবাদিক আব্দুস সবুরের স্মৃতিতে আজও ভাসে কিংবদন্তি গেরিলা যোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকীর সেই চেহারা। তিনি বলেছেন, ছয় ফুট লম্বা, ধবধবে ফর্সা হাসি হাসি মুখ। উনি হাসতে হাসতে সরস্বতী পুজোর চাঁদা দিলেন। আমি বললাম রশিদে কী লিখব? বাঘা সিদ্দিকী বললেন, মা’য়ের পুজো তাই মা’কে দিলাম লিখে দাও।

মুক্তিযোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকীর বর্ধমানে থাকার স্মৃতি এই শহরের বহুজনের কাছে উজ্জ্বল। তবে তাঁর এই বিরলতম মুহূর্তের গুটিকয়েক সাক্ষীর একজন সেদিনের তরুণ আজকের প্রৌঢ় আব্দুস সবুর।

মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীর উপলক্ষে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক মৈত্রী সম্পর্কেরও ৫০ বছর পালিত হচ্ছে। সাংবাদিক আব্দুস সবুর চান সুসম্পর্ক আরও গাঢ় হোক।

]]>
Bangladesh 50: পচা লাশ পেরিয়ে ঢুকলাম আগরতলায়, স্মৃতিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কন্যা https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladeh-50-first-prime-minister-of-bangladesh-tajuddins-daughter-simeen-hussein-recall-her-experience-of-liberation-war Wed, 15 Dec 2021 16:20:42 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15010 News Desk: এই প্রতিবেদন মূলত স্মৃতিকথা ভিত্তিক। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ত্রিপুরায় এসেছিলেন। ৫০ বছর  (Bangladesh 50) আগে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু শরণার্থীর মতো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় এসেছিলেন কিশোরী অবস্থায়। ত্রিপুরা ছিল বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম ঘাঁটি। জীবন হাতে করে আগরতলা পৌঁছনোর দীর্ঘ যাত্রা কেমন ভয়ানক ছিল, সেটাই জানিয়েছেন।

সিমিন হোসেন রিমির (Simeen Hussein) পিতা তাজউদ্দিন আহমদ (first prime minister of Bangladesh Tajuddin)। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুন করা হয়। সেই সামরিক অভ্যুত্থানে তাজউদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুজিব সহযোগী তাজউদ্দিন সহ চার শীর্ষ নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে গুলি করে খুন করা হয়। ভয়াবহ মুহূর্তগুলো জীবন স্মৃতিতে দগদগে হয়ে আছে সিমিন হোসেনের।

bangladesh Tajuddin's daughter Simeen Hussein recall

মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় সফর করা তাজউদ্দিন আহমদের স্বাক্ষর

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের সেই পরিস্থিতি আমরা তুলে ধরলাম।

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতের পর থেকে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকার এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের বাড়ি দরদরিয়া পৌঁছাই আমরা। চারিদিকে অগুন্তি লাশ। পচে যাওয়া দেহ কাক কুকুরে খাচ্ছিল। ভয়াবহ পরিস্থিতি। গ্রামের বাড়িতেও হামলার ঠিক আগের মুহূর্তে গভীর রাতে নদী পথে অনির্দিষ্ট যাত্রা শুরু হলো।

bangladesh Tajuddin's daughter Simeen Hussein recall

তিনি লিখেছেন, তারপর কত এলাকা, কতপথ ঘুরে কুমিল্লা হয়ে শরণার্থী আমরা ভারত সীমান্ত পার করি। আগরতলার বক্সনগর দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলাম। পথে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কা। পাক সেনার মুখোমুখি হবার প্রবল ভয় নিয়ে পচা লাশে ঢেকে থাকা বাংলাদেশের জমি ছেড়ে ঢুকলাম ইন্ডিয়াতে। পুরো সীমান্ত জুড়ে তখন হাজার হাজার শরণার্থী। সেই শরণার্থী স্রোতের সাথে সীমান্ত ধরে ২৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সীমান্ত ঘেঁষা ত্রিপুরার সোনামুড়ায় পৌঁছাই। সেই সময় সোনামুড়ার মহকুমা প্রশাসক ছিলেন হিমাংশু মোহন চৌধুরী।

স্মৃতিতে সিমিন হোসেন লিখেছেন, সোনামুড়ার যে টিলার ওপর হিমাংশু মোহন চৌধুরী যে বাড়িতে থাকতেন, সেই সরকারি বাড়িটি এখনও একই রকম আছে। শুধু বাড়ির পাশে দেয়াল হয়েছে।

পঞ্চাশ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গিয়ে সিমিন হোসেন রিমি লিখেছেন, সেই সবুজ ঘাসের উঠান, টিনের চালা ঘর। আমরা ৪ ভাইবোন চার জায়গায় আছি। আম্মা নেই। আজ আমি যখন ঘরের ভেতর ঢুকলাম, আমি তখন ছোট বেলার আমি। আমি অবাক হয়ে দেখছি আশপাশ। আমি আমার পঞ্চাশ ছয় মাস বছর আগের স্মৃতিকে স্পর্শ করলাম ৯ ডিসেম্বর ২০২১সালের বৃহস্পতিবার। মনে মনে বলছিলাম চোখ তুমি ভিজে যেওনা। কিন্তু গড়িয়ে পরতে থাকল আনন্দ বেদনার মিলিত অশ্রু।

bangladesh Tajuddin's daughter Simeen Hussein recall

ত্রিপুরা স্টেট মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে একটি কক্ষ আছে। সংরক্ষিত ছবি, খবরের কাগজ ইত্যাদি দেখছিলাম আর পড়ছিলাম গভীর মনোযোগে। যে দিন (১৫ অক্টোবর ১৯৭১) প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন, তাঁদের হাতের লেখা দেখলাম। জাদুঘরে ছবি তোলা নিষেধ। কিউরেটর অভিভূত হলেন পরিচয় জেনে। শুধু বাংলাদেশের ওই অংশের ছবি তুলতে দিলেন।

বাবা ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর বিপ্নবী সাথী। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পকিবারকে যে অপশক্তি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে, তারাই আমার বাবাকে বন্দি করে খুন করেছে। তবুও তারা সফল নয়। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী অটুট থাকবেই।

<

p style=”text-align: justify;”>(আগরতলার সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার ও সিমিন হোসেন রিমির স্মৃতিকথা তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।)

]]>
Bangladesh 50: ‘প্রিয় আবদুল্লাহ…আপনার দূত পাঠান’, চিরকুটে লিখলেন মেজর জেনারেল নাগরা https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-a-letter-writen-by-general-nagra-to-pakistani-general-neazi-is-a-symbol-of-psychological-war Wed, 15 Dec 2021 07:51:56 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14941 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: সৈনিক জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপেক্ষা করা সমীচিন নয়। পাকিস্তানি সেনার ঘেরাটোপে থাকা ঢাকা দখলের প্রথম গৌরবের হাতছানি। সবমিলে প্রবল মানসিক টানাপোড়েনে রয়েছেন ভারতীয় সেনার মেজর জেনারেল নাগরা। অপরপক্ষে তাঁর ‘বন্ধু’ এখন প্রতিপক্ষ ‘শত্রু’ পাকিস্তানি লেফট্যানেন্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। যুদ্ধ দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মাঝে একটি সেতু। বিখ্যাত মিরপুর ব্রিজ।

তৎকালীন সময়ে তো বটেই এখনও ঢাকা মহানগরীর অন্যতম একটি সেতু। এই সেতুর দুই মুখে পজিশন নিয়েছে দু পক্ষ। একদিকে ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ সেনা অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনা।

Mirpur bridge dhaka

ঢাকার বিখ্যাত মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি বর্ষণ বন্ধ হয়েছিল। উত্তেজিত জেনারেল নাগরা ডেকে নিলেন তাঁর সহকারি অফিসারদের। তাঁর বাহিনীকে পুরো সহযোগিতা করছে কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর (বাঘা সিদ্দিকী) কাদেরিয়া বাহিনী।

৫০ বছর আগে মিরপুর সেতুতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর টানা দুটো দিন ঘটেছিল সেই নাটকীয় মুহূর্তের প্রথম পর্বটি। এই সেতুর এক প্রান্ত থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সেনা কমান্ডার নিয়াজির কাছে একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন ভারতীয় সেনা কর্তা গন্ধর্ব সিং নাগরা।

Bangladesh liberation war Witness to surrender

কী লিখেছিলেন মেজর জেনারেল নাগরা?
“My dear Abdullah, I am here. The game is up, I suggest you give yourself up to me and I will take care of you, Nagra”
(প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর ব্রিজে। ঘটনার পরিসমাপ্তি হয়েছে। পরামর্শ হচ্ছে, আপনি আমার কাছে আত্মসমর্পণ করুন। সেক্ষেত্রে আমরা আপনাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেব, শীঘ্র আপনার প্রতিনিধি পাঠান। নাগরা)

নাগরা ও নিয়াজি পরস্পর পরিচিত। দুই দেশের দুই শীর্ষ সেনা কর্তা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দুজনকে ঐতিহাসিক চরম মুহূর্তে টেনে এনেছিল।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা ‘আমি বিজয় দেখেছি’ বইতে নাগরা ও নিয়াজির সম্পর্ক লিখেছেন এম আর আখতার মুকুল। তিনি তৎকালীন মুজিবনগর সরকার (প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার) এর তরফে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কর্তা। তিনি লিখেছেন, ‘ বছর কয়েক আগে জেনারেল নাগরা যখন ইসলামাবাদে ভারকীয় দূতাবাসে মিলিটারি এট্যাচি হিসেবে চাকরি করতেন, তখন থেকে নিয়াজীর সঙ্গে তার পরিচয়’ (বানান অপরিবর্তিত)

<

p style=”text-align: justify;”>সেদিন নাগরার চিরকুট পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেনা কর্তা আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি (এ এ কে নিয়াজি)। ঢাকার পাক সেনা কার্যালয়ের সেই গুমোট ভয়ানক পরিবেশের বর্ণনা দিয়েছেন পাকিস্তানি আমলা সিদ্দিক সালিক তাঁর লেখা ‘Witness to surrender’ (আত্মসমর্পণের সাক্ষী) বইতে।
তিনি লিখেছেন, নাগরার বার্তা হাতে নিয়ে পড়ার পর নিয়াজির চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তিনি কোনও কথা না বলে চিঠিটা অন্যদের পড়তে দিলেন। সবাই বার্তাটা দেখলেন। মিনিট কয়েক জন্য সেখানে কবরের নিস্তব্ধব্ধতা নেমে এলো।

]]>
Bangladesh 50: বায়ুসেনার বোমা বৃষ্টিতে পাক গভর্নর কাঁপছিলেন, যেমন ছিল ঐতিহাসিক পদত্যাগ মুহূর্ত https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-story-of-50-years-ago-end-of-the-last-government-of-east-pakistan Tue, 14 Dec 2021 09:55:37 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14806 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: “That was the end of the last government of East Pakistan.” (পূর্ব পাকিস্তান সরকার শেষ হয়ে গেল)। ভারতীয় বিমান হামলা ও প্রবল বোমা হামলার মাঝে কোনওরকমে নিজেকে বাঁচিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক গাভিন ডেভিড ইয়ংয়ের পাঠানো সংবাদটির বিখ্যাত সেই বাক্যটি দিয়ে ৫০  (Bangladesh 50) বছর আগের ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের কথা শুরু করলাম।

আক্ষরিক অর্থেই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শেষ হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানি শাসন। ঢাকার গভর্নর জেনারেল ড. আবদুল মোতালেব মালিক (ড. মালিক) কাঁপা কাঁপা হাতে পদত্যাগ পত্রে দস্তখত করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান সরকার পতনের ঐতিহাসিক মুহূর্তটির সাক্ষী লন্ডনের ‘The Daily Observer’ সংবাদপত্রের ঢাকা প্রতিনিধি ডেভিড ইয়ং (Gavin David Young)।

East Pakistan

বোমা হামলায় গভর্নর হাউসের ছাদ ভাঙার পর

মুক্তিযুদ্ধ পরিস্থিতির সংবাদ সংগ্রহ করতে ১৪ ডিসেম্বর পাক সেনা পরিবেষ্টিত গভর্নর হাউসে (এখনকার বঙ্গভবন) ঢুকেছিলেন ডেভিড ইয়ং। ভিতরে চলছিল পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ড. মালিকের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। পদত্যাগ নাকি যুদ্ধ চলবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গভর্নর দ্বিধান্তিত ছিলেন। সেই বৈঠক চলার মাঝেই ঢাকার আকাশ জুড়ে ভারতীয় যুদ্ধ বিমানের চক্কর কাটা শুরু হয়। অলি গলি, বিভিন্ন বাড়ির ছাদে জীবন হাতে রেখে উঠে এসে ঢাকাবাসী চিৎকার শুরু করলেন জয় বাংলা আ আ আ…।

Indian airforce

ঢাকার আকাশে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্যারাট্রুপার অপারেশন শুরু

গভর্নর হাউসে রাষ্ট্রসংঘ প্রতিনিধি ও রয়টার্স সংবাদ সংস্থার সঙ্গে হাজির ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ইয়ং সংবাদে লিখেছেন, বৈঠকের মাঝে শুরু হয়ে গেল ভারতীয় বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণ। বৃষ্টির মতো বোমা পড়তে শুরু করেছে। পরপর বোমা হামলায় গভর্নর হাউসের বিখ্যাত দরবার হলের ছাদ হড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল।

জীবন বাঁচাতে পাক গভর্নর ড মালিক দৌড়ে বাগানে ট্রেঞ্ঝের ভিতর ঝাঁপ দিলেন। এমনই সংবাদ ছিল রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ইয়ং লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের সরকার থাকবে না পদত্যাগ করবে এই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিল ভারতীয় বিমান হামলা। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে অফিসের একটা বাতিল সাদা কাগজে বল পয়েন্ট পেন দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পদত্যাগ পত্র লিখলেন গভর্নর ড. মালিক।
পদত্যাগ পত্র লেখার আগে গভর্নর ড.মালিক ধর্মীয় কিছু নিয়ম পালন করেন। বোমা হামলার মাঝেই তিনি এসব করেছিলেন। সংবাদে এমনই লিখেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ইয়ং।

Bangabhaban

বর্তমান বঙ্গভবন

পঞ্চাশ বছর আগের ১৪ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের পতন হয়ে গেছিল। গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেই ড. আবদুল মোতালেব মালিক রাষ্ট্রসংঘ প্রতিনিধির সাহায্যে আশ্রয় নিলেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস অধীনস্ত যুদ্ধনিরপেক্ষ স্থান ঢাকার বিখ্যাত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। শেষ হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তানের শাসন।

ঢাকার সেই গভর্নর হাউস বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বাসভবন। বঙ্গভবন হিসেবে সুপরিচিত। এই ঐতিহাসিক ভবন ঘিরে বারবার সেনা বাহিনীর বন্দুক বিতর্কিত মুহূর্ত তৈরি করেছে। বিশেষত ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনের পর বঙ্গভবন ঘিরে সেনাবাহিনীর দু পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান-ক্ষমতা দখলের রোমহর্ষক মুহূর্ত।

]]>
Bangladesh 50: ঘাড়ের কাছে ভারতীয় সেনা, পরাজয় বুঝে বাঙালি বুদ্ধিজীবী খুন শুরু পাকিস্তানের https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-50-years-of-bangladesh-1971-killing-of-bengali-intellectuals Tue, 14 Dec 2021 07:54:09 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14769 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: মাথার উপর চক্কর কাটছিল ভারতীয় বিমান বাহিনী। গোলা বর্ষণে ঢাকা বিধ্বস্থ। ঢাকা ঘিরছিল ভারতীয় ও বাংলাদেশি (Bangladesh) মুক্তিবাহিনী। পরাজয় নিশ্চিত। এটা বুঝেই পাকিস্তান জেনারেন রাও ফরমান আলি তার ডাইরিতে লেখা নামগুলো তুলে দিলেন সেনাবাহিনীর হাতে। নাম মিলিয়ে শুরু হল খুন। ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। ঠিক ৫০ বছর আগের কথা। এই কাজে পাক সেনার মদত দিল আলবদর ও আলসামস সহ কিছু পাকপন্থী রাজাকার গোষ্ঠী।

উপমহাদেশের ইতিহাসে এত বড় মাপের বুদ্ধিজীবী খুনের কারণ কী? গবেষণায় উঠে এসেছে, পাকিস্তান সরকার চেয়েছিল যে ভূখণ্ড হাতছাড়া হতে চলেছে তাদের সরকার যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। মেধাশূন্য জাতি হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করুক।

Bengali intellectuals killing

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সংঘর্ষ শুরু থেকে টানা নয় মাসের পুরো সময়ে পাকিস্তানি সেনা পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করেছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।

জেনারেল রাও ফরমান আলির পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করল অভিযান। কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, শিল্পী, কলাকুশলী, নাট্যকার, যাকে যেমন পারল তুলে আনল পাক সেনা। এর পর শুরু হয় গণহত্যা। তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত দেহ ঢাকার রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পরে মিলেছিল। অনেকের দেহ শনাক্তও করা যায়নি। বহুজন এখনও নিখোঁজ।

১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বরের এই গণহত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের পর নবগঠিত বাংলাদেশের সরকার পাক জেনারেল রাও ফরমান আলির নোটবুক বাজেয়াপ্ত করে। সেই নোটবুকেই লেখা ছিল বহু নাম।

]]>
Bangladesh 50: ‘দখলদারের থেকে প্রতিবেশীর পয়সা অনেক ভাল বাবু’ https://ekolkata24.com/uncategorized/50-years-of-bangladesh-liberation-war-memory-of-jesore Mon, 13 Dec 2021 05:32:57 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14629 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: “এক কাপ চায়ের দাম দশ পয়সা, তার জন্য একটা দশ টাকার নোটের ভাঙ্গানী চাওয়া…। উপায় নেই, পকেট থেকে নোটটা বের করে ওর সামনে ধরলাম। বললাম, আমার কাছে তোমাদের দেশের খুচরো নেই, সবগুলোই দশ টাকার নোট। তুমি যদি একটু কষ্ট করে ভাঙ্গিয়ে দাও-
-কেন আপনার কাছে ভারতীয় পয়সা নেই? দোকানদার অপকটে বললো।
-তোমাদের এখানে ভারতীয় পয়সা চলে? আমি বিস্মিত।
-দখলদারের থেকে প্রতিবেশীর পয়সা অনেক ভাল বাবু। আজকাল ঐ চাঁদ তারা মার্কা পয়সাগুলো ছুঁতেও ঘেন্না করে। মনে হয় ওগুলো আমাদের ভেংচাচ্ছে। ওগুলোও একটা খুদে ইয়াহিয়া। …. একটা ভারতীয় দশ পয়সা ওর হাতে তুলে দিয়ে মকবুলের মোটরের দিকে এগোলাম। ” (বানান অপরিবর্তিত)

মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে সীমান্ত পেরিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের যশোরে ঢুকেছিলেন কলকাতার সাংবাদিক শ্যামল বসু। তাঁর স্মৃতিকথা বা যুদ্ধের ডাইরি ‘আমি মুজিবর বলছি’ বইতে সীমান্ত এলাকার কথা বর্ণনা করেছেন।

পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত শহর যশোর। যুদ্ধ চলছিল বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা বনাম পাক বাহিনীর। শ্যামল বসু লিখছেন, ‘গাড়ী আমাদের প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলেছে। দূরে আবছা মতো দেখা যাচ্ছে যশোর শহর। দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ প্রতাপাদিত্যের-“যশোহর”।… হঠাৎ কামানের গোলার আওয়াজ। আমরা থেমে গেলাম। গাড়ী প্রায় মিউনিসিপ্যাল এলাকার মধ্যে প্রবেশ করেছে।
কু়ড়ি বাইশজন মুক্তিযোদ্ধা সামনের চৌরাস্তায় বাঁদিক থেকে ডানদিকে ছুটে গেল। তাদের হাতে উদ্ধত রাইফেল, বোধহয় কারো কারো হাতে স্টেনগানও আছে।
আবার গোলাবর্ষণের শব্দ।
মকবুল তার পাশে বসা দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্দেশ দিলো, তোমরা নেমে পড়। চাঁদমারির মোড়ে পজিশন নাও। আমি এগোচ্ছি।
গাড়ী ষ্টার্ট দিল।’
সাংবাদিক শ্যামল বসুর ডাইরিতে লেখা- “আমরা সহরে মাঝে এসে পড়েছি। রাস্তাঘাট ফাঁকা, যেন শ্মশান। দোকান পাট কিছু খোলা নেই। প্রতিটি বাড়ীর জানলা দরজা বন্ধ। রাস্তায় একটা কুকুর-তাও চোখে পড়ছে না। মাঝে মধ্যে দ্রুতবেগে এক একটা জীপ গাড়ী ছুটে যাচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের তিনরঙ্গা পতাকা। কলকাতায় সাধারণ হরতালের দিন পার্টির পতাকা লাগিয়ে রাজনৈতিক দলের গাড়ীকে যেমন ছুটোছুটি করতে দেখা যায়-এগুলো তেমনই। শুধু তফাৎ, এরা পোষাকে সৈনিক, সংকল্পে অটল।” (বানান অপরিবর্তিত)

৫০ বছর আগের কোনও এক মুক্তিযুদ্ধের দিনের কথা লিখেছেন সাংবাদিক শ্যামল বসু। ১৯৭১ সালের এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের যশোরে সর্বপ্রথম পাক সেনার পরাজয় হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় যশোর।ভারতীয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে টিকতে না পেরে যশোর সেনানিবাস থেকে খুলনায় পিছিয়ে যায় পাক সেনারা। যশোরের মাটিতে উড়ানো হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। মানুষের গগনবিদারি চিৎকার ‘জয় বাংলা’।

গুলি চলল লুটিয়ে পড়লেন চারুবালা

মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শপথ যশোরে নেওয়া হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। যশোর কালেক্টরেটের সামনে পাক পতাকা নামিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে যশোরবাসী যুদ্ধের শপথ নেন। শহরের রাজপথে বের হয়েছিল মিছিল। মিছিলটি যশোর শহরের কেশবলাল রোড (এখন শহীদ সড়ক) পৌঁছলে পাক বাহিনী গুলি চালালো। গুলি লেগে লুটিয়ে পড়লেন চারুবালা ধর। চারুবালার দেহ নিয়েই শহরে মিছিল চলে। এরপর থেকেই যশোরে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্রজনতার সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

]]>
Bangladesh 50: গেরিলাদের সঙ্গে বেলেঘাটায় গোপন বৈঠকে জ্যোতি বসু, সশস্ত্র ঘাঁটির পরিকল্পনা https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-guerilla-movement-suported-by-jyoti-basu-a-hidden-history-1971-bangladesh-liberation-war Sat, 11 Dec 2021 14:57:41 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14474 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: একটা স্কুলের ঘর। চারদিকে পাহারা দিচ্ছে যারা তাদের কাছে বোমা ও ছুরি আছে। এলাকাটা নকশালপন্থীদের হামলায় ব্যাতিব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে জ্যোতি বসুর নিরাপত্তা দিয়েছিল তাঁর দল সিপিআইএম। তিনি এলেন। বৈঠক শুরু হল। আর ছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের (Bangladesh 50) সময়ে এই মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ প্রাক্তন মন্ত্রী ও ওর্য়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন।

সেদিনের বৈঠকে পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বামমনস্ক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংগঠন তৈরি হয়েছিল। ‘বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’ এই সংগঠনটির কথা সত্তরের দশকে সংবাদপত্রগুলিতে আলোচিত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রায় বিস্মৃতির আড়ালেই চলে গিয়েছে। গোপনে এই সংগঠন ১৯৭১ সালে সীমান্তের ওপারে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র পথ নেয়। যদিও কূটনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে বিষয়টি নিয়ে নীরবই ছিলেন জ্যোতি বসু। পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে তেমন আলোচনা চালাননি।

Haider Akbar Khan Rono, Rashed Khan Menon

Haider Akbar Khan Rono, Rashed Khan Menon

৫০ বছর আগের বেলেঘাটার রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি ছিল। একাত্তরের কলকাতা যেমন উত্তপ্ত। তেমনই গরম পশ্চিমবঙ্গ। নকশালপন্থী, সিপিআইএম ও কংগ্রেসের যুব বাহিনীর মধ্যে এলাকা দখলের সশস্ত্র ঘাত প্রতিঘাত মুহূর্ত দেখেছেন রাজ্যবাসী। একই সময়ে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে চলছিল বাংলাদেশি গেরিলাদের মরণপণ মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন কিংবদন্তি দুই মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আকবর খান রনো ও রাশেদ খান মেনন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন দেশটির কমিউনিস্ট নেতা হায়দার আকবর খান রনো। বর্ষীয়ান মুক্তিযোদ্ধার কলমে ধরা রয়েছে ভারতের কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতিবাবুর কিছু অজানা দিক।২০১০ সালে কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসুর প্রয়াণ হয়। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হায়দার আকবর খান রনো একটি প্রবন্ধ লেখেন। ‘ইতিহাসের মহানায়ক কমরেড জ্যোতি বসু’ শিরোনামে প্রবন্ধটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্লগ ও বাংলাদেশের সংবাদপত্র, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সেই বছরেই।

Bangladesh, liberation war

সেই প্রবন্ধে হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন, ‘জ্যোতি বসু সর্ম্পকে কিছু লিখতে হলে অবশ্যই ১৯৭১ সালে তাঁর এবং তাঁর পার্টির ভূমিকার কথা স্মরণ করতেই হবে। সেই সময় ১ ও ২ জুন কলকাতার বেলেঘাটার এক স্কুলে কয়েকটি বামসংগঠন এক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করেছিল “ বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।” এই সংগঠনটি বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে মেনে নিয়েই দেশের অভ্যন্তরে স্বতন্ত্রভাবে যুদ্ধ করেছিল (ছোট বড় ১৪টি সশস্ত্র গেরিলা ঘাঁটি যাদের ছিল) এবং ভারতে অবস্থিত মুক্তিফৌজের ভেতরে থেকেও যুদ্ধ করেছিল। সিপিআই (এম) তাদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল। প্রধানত সাহায্য করেছিল বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের। তখন বামপন্থীদের বিশেষ করে যারা চীনপন্থী বলে পরিচিত ছিলেন, তাদের ভারতে চলাফেরা বেশ অসুবিধাজনক ছিল। এক্ষেত্রে সিপিআই (এম) এবং তার নেতা জ্যোতি বসু বাংলাদেশের বামকর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান ও অন্যান্য সহয়তা প্রদান করেছিলেন।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট নেতা রনো লিখেছেন- “প্রসঙ্গক্রমে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে একবার আমাকে ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার লোক আগরতলা থেকে ধরে নিয়ে শিলং এ নিয়ে যান। সেখানে ভারতের সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেনারেল সুব্রাহ্মনিয়াম আমাকে দুদিন ইন্টারোগেট করে পরে সসম্মানেই প্লেনে করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। ঘটনাটি আমাকে বেশ বিচলিত করেছিল। কারণ কোন ধরনের গোয়েন্দা সংস্থার সংস্পর্শ আমার পছন্দীয় নয়।

কোলকাতায় এসে বিষয়টি কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্ত ও কমরেড জ্যোতি বসুর কাছে বিবৃত করলাম। আমার মানসিক অবস্থা থেকে জ্যোতি বসু একটু হেসে…সুলভ ভঙ্গিতে বললেন “বিপ্লব করতে হলে তো কত রকম সংস্পর্শে আসতে হবে। এতে ঘাবড়ানোর কি আছে।” তিনি বলেছিলেন যে, “আমরা বাংলাদেশের বামপন্থীদের একমাত্র অস্ত্র দেয়া ছাড়া সবরকম সাহায্য করবো। কারণ অস্ত্রের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের।” অবশ্য একথা মনে করার কোন কারণ নেই যে, জ্যোতি বসু সংকীর্ণতাবাদী ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথমে চাইতেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সফল হোক। একই সঙ্গে অবশ্যই তিনি কামনা করতেন সঠিক লাইন গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের মাধ্যমে কমিউনিস্টরা সামনে আসুক। এটাই তো স্বাভাবিক।”

<

p style=”text-align: justify;”>১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পশ্চিমবঙ্গ ছিল রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ রাজ্য। ১৯৭৭ সালে সরকার পরিবর্তন হয়। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসেছিল। টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা জলবন্টন চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বাংলাদেশেই জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাসস্থান। সেটি এখন সেদেশের জাতীয় সম্পত্তি ও কিংবদন্তি নেতার নামে গ্রন্থাগার।

]]>
Bangladesh 50: আরতি মুখার্জীর গানেই ‘সংকেত’, পাক জাহাজ ধ্বংসে ঝাঁপালেন আত্মঘাতী গেরিলারা https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-50-years-of-opetation-jackpot-by-bangaldeshi-guerillas Fri, 10 Dec 2021 16:53:53 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14386 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: মধ্যরাতের তারা ঝিকমিক করছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেটির কাছে বঙ্গোপসাগরে উপর নির্দিষ্ট জাহাজগুলির দিকে লক্ষ্য রেখে কয়েকজন সাঁতরে যাচ্ছিলেন। এদের লক্ষ্য পাকিস্তানি জাহাজ বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া। ঘড়ির কাঁটা ধরে ধরে চলছিল অপারেশন ‘জ্যাকপট’।

অভিযানের সংকেত আকাশবাণী রেডিও তরঙ্গে চলে এসেছে। বাংলাদেশি (Bangladesh) মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা তাঁর গান শুনে এই অভিযান করবে সেটা কী করে জানবেন সুধাকন্ঠী গায়িকা আরতি মুখার্জী? তাঁর জানার কথাও না।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের কাছে একটি নির্দেশ গেছিল…রাত ১০টা বেজে ৩০মিনিট থেকে ১১টার মধ্যে শোনাতে হবে আরতি মুখার্জীর গাওয়া গানটি। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে আকাশবাণী সম্প্রচার করল আরতি কণ্ঠে জনপ্রিয় গান-
“আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি
পাল্কি চেপে বরের সাথে আনন্দ যে ভারি…”

৫০ বছর আগের সে রাতে আকাশবাণীর অনুষ্ঠান তন্ময় হয়ে শুনছিলেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতা। তরঙ্গ স্রোতে আরতি কণ্ঠে বহুশ্রুত গান শুনেই মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা কমান্ডাররা বুঝলেন অপারেশন জ্যাকপট শুরুর নির্দেশ চলে এসেছে। এর পরের ঘটনা রোমহর্ষক।

পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের একের পর বন্দর। পাক নৌ বাহিনী এই ভয়াবহ হামলায় সম্পূর্ণ হতচকিত হয়ে যায়। নীরবে নিঃশব্দে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা ‘পুতুল কে শ্বশুরবাড়ি’ পাঠিয়ে এসেছিলেন। আরতি মুখার্জীর গানে ‘পুতুল’ অর্থাৎ মাইন সঙ্গে নিয়ে আত্মাঘাতী গেরিলা, আর ‘যাবে শ্বশুরবাড়ি’ অর্থাৎ বিস্ফোরণ ঘটানো!

50 years of Opetation jackpot

সে রাতের ঘটনা:
রেডিওতে আরতি মুখার্জীর গান বাজানো শুরু হতেই ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা মাঝ রাত পেরিয়ে ১৬ আগস্ট শুরু হতেই চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা জাহাজ ধংসের জন্য যাত্রা করেন। রাত ১টা বেজে ১৫ মিনিটে আত্মঘাতী গেরিলারা জাহাজের উদ্দেশ্যে সাঁতরানো শুরু করেন। টার্গেট করা জাহাজগুলোর গায়ে মাইন লাগিয়ে চলে এলেন। রাত ১টা বেজে ৪০ মিনিট- প্রথম বিস্ফোরণে কেঁপে গেল চট্টগ্রাম বন্দর। তারপর একে একে সব মাইন বিস্ফোরণ হতে থাকে। চট্টগ্রামে নোঙর করা বিস্ফোরক বোঝাই তিনটি পাকিস্তানি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হল। ১৬ আগস্ট সকালে এতবড় গেরিলা অভিযানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোড়িত।অপারেশন সাকসেস। পুতুল পৌঁছে গেছে শ্বশুরবাড়ি!

ঘটনার আরও কিছু বাকি আছে। খবর আসতে থাকে শুধু চট্টগ্রাম নয়, পূর্ব পাকিস্তানের নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর নদী বন্দরে গেরিলা হামলা হয়েছে। একই রাতে এই দুটি বন্দরেও পুতুলকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছে মুক্তিবাহিনী।

বেলা বাড়তে আরও ভয়াবহ ছবি:
সেদিন ভোরে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ মংলা বন্দরে। গেরিলারা ৬টি বিদেশি জাহাজে মাইন বিস্ফোরণ ঘটায়।৩০,০০০ হাজার টন গোলা বারুদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সহ একটি সোমালীয়, একটি আমেরিকান, ২টি চিনা, ১টি জাপানি ও একটি পাকিস্তানি জাহাজ পুরো ডুবে যায়।

আরও পড়ুন: Bangladesh 50: কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামের সেই ফুটবল ম্যাচ, বিশ্বে প্রথম গেরিলা যোদ্ধাদের গোল

<

p style=”text-align: justify;”>বিশ্ব নৌ যুদ্ধ ও গেরিলা হামলার খতিয়ানে অপারেশন জ্যাকপট অত্যন্ত সফল অভিযানের তকমা পেয়েছে।মোট চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল এই অভিযান। ৬০ জনের ২টি দল এবং ২০ জনের আরো ২টি দল। গোপনে দীর্ঘসময় তাদের অনুশীলন হয় নদিয়া জেলায়। বিখ্যাত পলাশী যুদ্ধের আম বাগানের কাছে ভাগীরথী গঙ্গায়। অভিযানের পূর্ণ সহযোগিতা করে ভারতীয় নৌবাহিনী।

]]>
Bangladesh 50: কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামের সেই ফুটবল ম্যাচ, বিশ্বে প্রথম গেরিলা যোদ্ধাদের গোল https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-50-years-of-shadhin-bangla-football-team-football-match-guerillas-of-bangladesh Thu, 09 Dec 2021 12:53:12 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14246 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বাঁশি বাজল। শুরু হয়ে গেল বল নিয়ে গোল করার খেলা। কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে তিল ধারণের জায়গা নেই। গ্যালারি থেকে চিৎকার জয় হিন্দ-জয় বাংলা। কে কোন দলের সমর্থক বোঝার উপায় নেই।

পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধ চলছিল পূর্ব পাকিস্তানের মাঠে ঘাটে।এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের এক পর্বে ফুটবলের বাঁশি বেজেছিল। বাঙালির রক্তে মিশে থাকা খেলা।

ফিফা মানেনি, মেনেছে কোটি কোটি হৃদয়…
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই। ফুটবল ইতিহাসে এক স্বর্ণালী দিন। বিশ্বে প্রথম এমন ম্যাচ যাতে সরাসরি গেরিলা যোদ্বারা খেলেছিলেন। ফিফা স্বীকৃত না হলেও এই ফুটবল ম্যাচ হয়েছে গবেষণার বিষয়। একটি দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে জড়িয়ে আছে বল দখলের খেলা।
সেদিন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ কৃষ্ণনগর স্টেডিয়াম। নদিয়া জেলা প্রশাসন কর্তাদের ঘুম উড়ে গেছে। যে সে ব্যাপার নাকি! এতজন গেরিলা যোদ্ধা খেলতে নেমেছে। আজ খেলবে, কাল যুদ্ধে নামবে! কাল কী হবে কেউ জানে না।

50 years of Shadhin Bangla Football Team football match guerillas of bangladesh

খেলা চলছে। নদিয়া জেলা দল বনাম ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’-এর, যেটি বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গড়া। আর নদিয়ার দল একপ্রকার ভারতীয় একাদশের ভূমিকা নিয়েছে। ‘মুক্তি’ লোকেরা কেমন? যাদের কথা রোজ কাগজে আসছে, আকাশবাণীর সংবাদে বলছে, তাদের দেখতেই দর্শকদের বেশি আগ্রহ। কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামের দর্শকরা প্রবল উত্তেজিত।
গেরিলা ফুটবল দলটির সবাই পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে এসেছেন। তাদের সমর্থকরাও সীমান্তের ওপারে মুক্তাঞ্চল দিয়ে নদিয়া ঢুকেছেন। প্রবল আক্রমণাত্মক ম্যাচটি ২-২ গোলে অমীমাংসিত হয়েছিল। ৫০ বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লড়াইয়ের ইতিহাসে এই ম্যাচটিরও সুবর্ণ জয়ন্তী।

প্রথমবার রবীন্দ্রনাথ রচিত দুই জাতীয় সঙ্গীত
সেদিন খেলার আগে কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে একইসঙ্গে বেজেছিল দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। তথ্য পরম্পরা মিলিয়ে নিলে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই বিশ্বে প্রথমবার রবীন্দ্রনাথের লেখা দুটি জাতীয় সঙ্গীত বেজেছিল কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সরকারিভাবে তখনও স্বীকৃত নয়। তবে কলকাতায় থাকা প্রবাসী মুজিবনগর সরকার (অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার) আগেই রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘আমার সোনার বাংলা…’কে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়।

চাকরি গেল ভারতীয় আমলার!
বিতর্ক মিশে আছে এই ম্যাচে। তখনও আন্তর্জাতিকভাবে অস্বীকৃত বাংলাদেশ। সেই দেশের পতাকা ওড়ানোর দায়ে নদিয়ার তৎকালীন জেলা কর্তা (ডিসি) দীপককানত্ম ঘোষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তিনি কূটনৈতিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছিলেন।৩

<

p style=”text-align: justify;”>৩৪ জন খেলোয়াড়, ম্যানেজার এবং কোচ সহ মোট ৩৬ জন নিয়ে গড়া ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল’ দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। সহ অধিনায়ক ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। কোচ ছিলেন ননী বসাক।গেরিলা বাহিনীর ফুটবল দল পরপর ১৬টি ম্যাচ খেলেছিল ভারতে। কলকাতায় সৌজন্য ম্যাচে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে (গোষ্ঠপাল একাদশ) ও মুম্বইতে (তখন বম্বে) মহারাষ্ট্র দলের বিরুদ্ধে খেলে। মোট ১২টি ম্যাচে জয়ী হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগ্রহ করে।

]]>
Bangladesh 50: ছায়ামানুষ মি: ভট্টাচার্যের সেই গোপন বৈঠক, গেরিলাদের স্বাধীন বাংলা বেতার https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-50-years-of-swadhin-bangla-betar-kendra-history-of-a-guerrilla-radio-service Tue, 07 Dec 2021 04:58:58 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13924 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: একাত্তরের রাতের কলকাতা। রাস্তার হলদে ডুম আলোর নিচেটাই যা একটু স্পষ্ট। তারপর অন্ধকার। গলির ভিতরগুলো? একপক্ষ অন্যপক্ষকে তাড়া করছে। রাজনৈতিক লড়াইয়ে দুই বামপক্ষ, তাদের প্রতিপক্ষ প্রশাসন ও কংগ্রেস। মহানগরের এই রূপ যারা দেখেছেন তারাই জানেন।

তেমনই এক রাত। বালিগঞ্জ শুনশান। দশটা বাজার আগেই একটা দোতলা বাড়িতে দু’জন ঢুকে গেলেন। এই বাড়িতেই হয়েছিল ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক রণাঙ্গনের ইতিহাসে বেতার সম্প্রচারের গৌরবময় পর্বের একটি।

৫০ বছর আগের সেই রাতে ফিরে যাওয়া যাক। বাড়িটায় সেদিনের গোপন বৈঠকে যারা ছিলেন তাদের দুজনের পরিচয় এখনও অস্পষ্ট। এদের একজন ছায়ামানুষ- মি: ভট্টাচার্য। সে রাতের পর ভট্টাচার্য মশাই আর দেখা দেননি।

Swadhin Bangla Betar Kendra

মুক্তিযুদ্ধের কথক বাংলাদেশের কিংবদন্তি সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, “একাত্তরের মে মাসের বাইশ তারিখ। মান্নান ভাই বললেন, ‘আজ রাত দশটায় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িটাতে একটা গোপন বৈঠক আছে। আপনি হাজির থাকবেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র চালু করার ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।’ দোতলা বাড়ি। উপরের তলায় মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীবর্গ আর বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আস্তানা। তাই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আমি আর মান্নান ভাই একটু আগেই গিয়ে হাজির হলাম। নিচের তলায় ড্রয়িং রুমে দু’জনে অধীর আগ্রহে বসে রইলাম। ঠিক রাত দশটায় সাদা পোশাকে দু’জন ভদ্রলোক এলেন। দু’জনেই ভারতীয় বাঙালি। একজন তো তেমন কোন কথাই বললেন না। অন্যজন নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে নাম বললেন, ভট্টাচার্য। অনেক কষ্টে কৌতূহল দমন করলাম। ওদের পুরো পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম না।”
সৌ: আমি বিজয় দেখেছি। এম আর আখতার মুকুল।

মি ভট্টাচার্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। সেটি তাঁর পেশাগত গোপনীয়তা বলেই ধরে নেওয়া যাক। কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতে সেদিন বৈঠকে স্থির হয়েছিল ভারত সরকারের তরফে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় রেডিও বার্তা সম্প্রচার করা হবে। এই রেডিও সংবাদে থাকবে মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর কথা।

রণাঙ্গনে রেডিও পাকিস্তান বনাম আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই তরঙ্গ যুদ্ধ বিশ্ব বেতার সম্প্রচার ইতিহাসের অতি চমকপ্রদ অধ্যায়। যার ভূমিকাটুকু করতে সেই রাতে ভট্টাচার্য মশাইয়ের আগমন হয়েছিল।

‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ এমন এক রেডিও মাধ্যম যা গেরিলা যুদ্ধের অংশীদার হয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি এই রেডিওর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে বাংলাদেশ তৈরির পর এই রেডিও বার্তার আর প্রয়োজন হয়নি।

এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, “ভট্টাচার্য মশায় সরাসরি বললেন, ‘ একটা পঞ্চাশ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার বাংলাদেশের সীমান্তে বসানো হয়েছে। এই ট্রান্সমিটার চালু রাখার দায়িত্ব ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এর অবস্থানটা স্বাভাবিক কারণেই গোপনীয় থাকবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোলকাতায় প্রতিদিন বেতার অনুষ্ঠান রেকর্ড করতে হবে। রেকর্ডকৃত অনুষ্ঠান ট্রান্সমিটার ভবনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।”

সেদিনের সেই গোপন আলোচনায় গেরিলা যুদ্ধের প্রচার মাধ্যম হিসেবে রেডিও হয়েছিল বিশেষ উপযোগী। সিদ্ধান্ত পাকা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রণাঙ্গনের প্রথম সম্প্রচার হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মে। সেদিন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন।

]]>
Bangladesh 50: ভুটান রাজার টেলিগ্রামে বাংলাদেশের ‘প্রথম’ স্বীকৃতি, ভারত সংসদে ‘জয় বাংলা’ https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-bhutan-king-historic-telegram-recognition-of-bangladesh Mon, 06 Dec 2021 08:54:26 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13782 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আচমকা এসেছিল হিমালয়ের রহস্যময় দেশ ভুটানের রাজামশাইয়ের টেলিগ্রাম। এতে ছিল বাংলাদেশের লড়াইয়ের প্রতি ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা। সেই টেলিগ্রামটি ঐতিহাসিক। কারণ ‘ড্রাগনভূমি’ ভুটান দিয়েছিল বাংলাদেশের (Bangladesh) সার্বভৌম স্বীকৃতি। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর তেমনই এক দিন ছিল। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাঝে এই দিনটি কূটনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

বিতর্ক ছিল কোন দেশ প্রথম বাংলাদেশ কে সার্বভৌম স্বাধীন স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত নাকি ভুটান ? এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছিল ২০১৪ সালে ভুটানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোগবের ঢাকা সফরে। বাংলাদেশ সরকার তখনই জানায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে অন্তিম পর্যায়ে ভুটান সরকার সর্বপ্রথম সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে টেলিগ্রাম বার্তা দেয়।

১৯৭১ সলের মুক্তিযুদ্ধের টানা ৯ মাসের ঘটনাবহুল দিনপঞ্জির মধ্যে ৬ ডিসেম্বর দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনেই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল বাংলাদেশ।

৫০ বছর আগে সল্টলেকের জলা জমিতে বিরাট বিরাট পাইপের ভিতর শরণার্থীদের ভিড়। ভুটানের রাজামশাই জিগমে দোরজি সেসব পরিদর্শন করছিলেন। একটু পরে তিনি কলকাতায় ‘মুজিব নগর সরকার’ (প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ) এর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে তার বার্তা পাঠান। তাঁর টেলিগ্রাম থেকে ‘বাংলাদেশ’ নামটি সরকারিভাবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করল।

কী লিখেছিলেন ভুটান রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুক? তাঁর পাঠানো সেই টেলিগ্রামটি –
“On behalf of my Government and myself, I would like to convey to Your Excellency and the Government of Bangladesh that we have great pleasure in recognizing Bangladesh as a sovereign independent country. We are confident that the great and heroic struggle of the people of Bangladesh to achieve freedom from foreign domination will be crowned with success in the close future. My people and myself pray for the safety of your great leader Sheikh Mujibur Rahman and we hope that God will deliver him safely from the present peril so that he can lead your country and people in the great task of national reconstruction and progress.
Jigme Dorji Wangchuck
King of Bhutan
6 December 1971 “

Bangladesh liberation war

তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকারের তরফেও বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয়। তবে ভুটানের স্বীকৃতি দানের কিছু পরে ভারতের স্বীকৃতি বার্তা আসে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদে অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই ও ভারতীয় সেনার বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধকে অভিনন্দন জানান। ভারত সংসদ তখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত।

ভুটান রাজার বিখ্যাত টেলিগ্রামটি যখন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ে খুশির বাতাস বয়ে এনেছে, তার পরেই বিশ্বজোড়া ঝড়ো ‘ব্রেকিং নিউজ’ -ভারতের স্বীকৃতি দান নিয়ে প্রবল আলোচনা। সে ছিল এক কূটনৈতিক পর্ব। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটান ও ভারত একই দিনে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। এর দশ দিনের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় চূড়ান্ত পরাজিত হয় পাকিস্তানি সেনা। প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষের গণকবরের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান হয় দ্বিখণ্ডিত।

ভুটান সরকারের তরফে ২০১৪ সালে সেই । বিখ্যাত টেলিগ্রামটি বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পদ্মা-মেঘনার দেশ সেই প্রথম স্বীকৃতি স্বীকার করে নেয়।

]]>
Bangladesh 50: বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ’, প্রেরণায় ভিয়েতনাম https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-bangladesh-name-history-in-context-of-vietnam-independence-war-and-leftist-movement-in-kolkata Sun, 05 Dec 2021 08:47:47 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13629 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: উত্তাল ষাটের দশক। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তান সরকারের দমননীতি ও সামরিক আইনের প্রতিবাদে গণঅভ্যুত্থানে সামিল হয়েছেন। কাঁপছিল পাকভূমি। আর ভারত কাঁপছিল বিশ্বজোড়া আলোড়িত ভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে বামপন্থীদের স্লোগানে- ‘তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম’। কলকাতার রাজপথে জনতরঙ্গ। ভিয়েতনামে চলছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ। কমিউনিস্ট গেরিলা বাহিনীর হামলায় জমি হারাচ্ছিল মার্কিন সেনা।

কলকাতার জনকল্লোল থেকে কি ঢাকা মুখ ঘুরিয়ে রাখতে পারে? স্বাভাবিকভাবেই নয়। ফলে ভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের স্লোগান পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে পদ্মা-মেঘনা তীরে গণ আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সেই স্লোগানই ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণঅভ্যুত্থানের অংশ হয়ে গেল অচিরেই। এই কাজটি করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঘোষণা করলেন ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’ অচিরেই মুখে মুখে জন্ম নিল ‘বাংলাদেশ’।

Bangladesh-Vietnam-war

বঙ্গবন্ধুর তৈরি স্লোগান পূর্ব পাকিস্তানের জমিতে পাক সরকার বিরোধী আন্দোলনের মূল স্লোগান হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর যুক্তবাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় ‘বাংলাদেশ’ নামটি চূড়ান্ত করেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। দিনটি ‘বাংলাদেশ দিবস’ বা ‘বাংলাদেশের নামকরণের দিবস’ হিসেবেই পালিত হয়।

সোহরাওয়ার্দীর ওই স্মরণসভায় বাংলাদেশ নাম দেওয়ার কারণ হিসেবে পরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে -বাংলা। স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে-দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়।

১৯৬৯ সালের পাঁচ ডিসেম্বরের পর মৌখিকভাবে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের নাম হয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে কাগজে-কলমে পূর্ব পাকিস্তান লিখলেও মুখে সবাই এই অঞ্চলকে বাংলাদেশই বলতেন।

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘‘বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু জানান, দেশ স্বাধীনের পর নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হবে। এমনকী তিনি সেদিন স্লোগানও দিয়েছিলেন ‘আমার দেশ, তোমার দেশ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধু কখনও পূর্ব পাকিস্তান বলতেন না, তিনি সবসময় পূর্ব বাংলা বলতেন।’

১৯৫২ সালে ভাষার অধিকারের জন্য রক্তাক্ত গণআন্দোলনেের ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা। ১৯৫৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান নামের প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেছিলেন, পূর্ব বাংলা নামের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। যদি পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতেই হয়, তাহলে বাংলার মানুষের জনমত যাচাই করতে হবে। তারা নামের এই পরিবর্তন মেনে নিবে কিন সেজন্য গণভোট করতে হবে।

]]>
Bangladesh 50: একা ইন্দিরার ‘সেই থমথমে রাঙা মুখখানি আজও চোখে ভাসছে’ https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-after-pakistan-attack-indian-pm-indira-gandhi-announced-war Fri, 03 Dec 2021 12:26:13 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13369 সৌরভ সেন: ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের ৫০ বছর। আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরও পাঁচ দশক (Bangladesh 50)। সেইসব দিনরাত্রি এখনও যেন মনে হয় এই তো গতকাল ঘটে গেল!sourav-sen
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। কলকাতা তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের ভিড়ে ছয়লাপ। রাজনৈতিক ঘনঘটা প্রবল। পূর্ব পাকিস্তান রক্তাক্ত। আর পশ্চিমবঙ্গে চলছিল তীব্র রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাত। কংগ্রেস ও বামপন্থীদের রাজনৈতিক লড়াই।অতিবামপন্থীদের সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

আসি ৩ ডিসেম্বরের কথায়। পাকিস্তান বিমান বাহিনী হামলা শুরু করেছিল পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে। পরপর বোমা ফেলল আগ্রা, আম্বালা, যোধপুরে। আর পূর্বদিকে আগরতলায় বোমা পড়ল।

ইন্দিরা গান্ধী তখন কলকাতায়। খবর পেয়েই দ্রুত ফিরলেন রাজধানী। তখন ই এম বাইপাস চিন্তার বাইরে। ভিআইপি-দের যাতায়াতের রুট বলতে ভিআইপি রোড- কাঁকুড়গাছি – মানিকতলা – বিবেকানন্দ রোড- গিরিশ পার্ক -সেন্ট্রাল (চিত্তরঞ্জন) অ্যাভিনিউ- এসপ্ল্যানেড-রাজভবন।

সন্ধের দিকে আচমকা রটে গেল—কর্মসূচি বাতিল করে ইন্দিরা ফিরে যাচ্ছেন। গলির মোড়ে- বিবেকানন্দ রোডে আমি, দিদি, পাড়ার বন্ধুবান্ধব, সঙ্গে বড়রাও দাঁড়িয়ে গেলাম। একটি বড় জিপ, পিছনটা খোলা, সেখানে চেয়ারে বসে থমথমে মুখে একটা কাগজ পড়ছেন তিনি। মুখে আপতিত আলো। যাত্রা-অভিমুখের উল্টো দিক করে বসে। একদম একা। গভীর অভিনিবেশে কাগজ পড়তে-পড়তে চলে গেলেন। অভ্যাসমতো কোনও হাত নাড়া ইত্যাদি নয়। তাঁর সেই থমথমে রাঙা মুখখানি আজও চোখে ভাসছে।

তখন ওই কম বয়সে বুঝিনি, পরে সম্যক বুঝেছি যে ওই মুখ ছিল নিজের চিন্তা, নিজের বোধ-কে মথিত করে এক কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখ, ওই মুখে ছিল বিশ্ব-রাজনীতিতে এক চিরস্মরণীয় পদক্ষেপের প্রস্তুতি।

পঞ্চাশটা বছর পেরিয়ে এলাম!

(১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হামলার পরে ভারত শুরু করেছিল প্রত্যাঘাত। কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধী। সে এক ঐতিহাসিক মহূর্ত। )

]]>
Bangladesh 50: পাক বিমানের অপহরণকারী চাইল বাংলাদেশের জন্য ওষুধ, কমান্ডোরা হতবাক https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-frenchman-who-hijacked-a-plane-in-support-of-bangladesh-liberation-war Fri, 03 Dec 2021 09:52:09 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13355 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ডিসেম্বরের সকাল। শীতের প্যরিস শহর। জনচঞ্চল ফ্রান্সের রাজধানীতে ঘটে গেল রোমহর্ষক ঘটনা। প্যারিস বিমানবন্দর থেকে এসেছে বিপদবার্তা। ফরাসি কমান্ডোদের তৈরি হতে বলা হল। নির্দেশ এসেছে উদ্ধার করতে হবে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পি আই এ) যাত্রীদের। তাঁরা পণবন্দি হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সকালটা এমনই ছিল ফ্রান্সে।

প্যারিস থেকে করাচি। তখন চলছে ফোনাফুনি। অপহরণকারীর কবল থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে পাকিস্তান সরকার চাইল সাহায্য। ফরাসি কমান্ডোরা প্যারিসের অর্লি বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমান ঘিরতে শুরু করলেন।

বিমানের ভিতর আরও এক কান্ড। যাত্রীরা দেখছেন এক যুবক চিৎকার করে বলছে বিমান হাইজ্যাক। বেগড়বাঁই করলে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। ফ্রান্স সরকারের কাছে কিছু বলতে চায় সে। পি আই এ ৭২০ বোয়িং পাইলটের গলার কাছে শক্ত করে অস্ত্র। অপহরণকারীর নির্দেশে পাইলট বার্তা পাঠালেন।

Jean Kay

অপহরণকারীর নাম জ্যঁ ক্যুয়ে। সে চায় পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে লড়াই করা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতে শরণার্থীদের জন্য ওষুধ। চমকে গেল ফ্রান্স সরকার। ততক্ষণে ফরাসি সংবাদ মাধ্যমে বিমান অপহরণের সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। গোটা বিশ্ব দেখছে সেই ছবি। জ্যঁ ক্যুয়ের বার্তা ছড়াতে শুরু করল।

পডুন : Bangladesh 50: ভয়ঙ্কর লালডেঙ্গার মিজো বিদ্রোহীদের টুকরো করেছিল ‘তিব্বতি ভূত’ বাহিনী

ফ্রান্স সরকার ও জ্যঁ ক্যুয়ের মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা চলল সেই টানাপোড়েন। জ্যঁ ক্যুয়ের দাবি করে, এই বিমানেই সব ওষুধ পাঠাতে হবে। তার ব্যক্তিগত কোনও চাহিদা নেই। অবশেষে ফ্রান্সের সরকার রাজি হয় সব শর্তে।

কথাবার্তায় চালানোর ফাঁকে ফরাসি কমান্ডোরা ঘিরতে শুরু করছিলেন পি আই এ বিমানটি। সংকেত আসতেই আক্রমণ শুরু হয়। ওষুধ পাঠানোর জন্য রেডক্রস কর্মীদের সঙ্গে ছদ্মবেশে দুই ফরাসি পুলিশ কমান্ডো ঢুকে পড়েন বিমানের ভিতর। অপহরণকারীকে বাগে আনতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তাকে কাবু করতে গিয়ে হতবাক কমান্ডোরা! তল্লাশিতে কোনও বোমা বা অস্ত্র মেলেনি। ছিল একটি বাইবেল আর বৈদ্যুতিক তার, একটি ইলেকট্রিক শেভার।

টানা ৫ ঘণ্টার সেই রুদ্ধশ্বাস বিমান অপহরণ ঘটনার জেরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি বিশ্বজুডে আরও আলোড়ন ফেলে দেয়। বিমান অপহরণ করার চেষ্টা অভিযোগে জ্যঁ কুয়ে হন বন্দি। তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইক পম্পেদু সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করবার। সেই ভুয়ো অপহরণকারী জ্যঁ কুয়েরের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে ফরাসি সরকার ভারতে থাকা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠায়। রাষ্ট্রসংঘে ফ্রান্স সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। পূর্ণ মেয়াদে জেল খেটে মুক্তি পান জ্যঁ ক্যুয়ে। তিনি একজন লেখক। ২০১২ সালে তিনি প্রয়াত হন।

জ্যঁ ক্যুয়ের যখন পাক যাত্রী বিমান অপহরণের হুমকি দিয়েছিলেন, তখন পাকিস্তান ছিল বিমান হামলায় মত্ত। ৩ ডিসেম্বর পাক বিমান বাহিনী সরাসরি আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকে পরপর বোমা হামলা শুরু করে। কলকাতায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করে দ্রুত দিল্লি ফিরে যান তিনি। সেই রাতে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

]]>