Bangladesh liberation war – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com Stay updated with Ekolkata24 for the latest Hindi news, headlines, and Khabar from Kolkata, West Bengal, India, and the world. Trusted source for comprehensive updates Thu, 16 Dec 2021 15:09:07 +0000 en-US hourly 1 https://ekolkata24.com/wp-content/uploads/2024/03/cropped-ekolkata24-32x32.png Bangladesh liberation war – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com 32 32 ‘নিয়াজি-র আত্মসমর্পণ’ সেই মন্দ্র কণ্ঠ ‘দিস ইজ অল ইন্ডিয়া রেডিও, নিউজ রেড বাই সুরজিৎ সেন…’ https://ekolkata24.com/uncategorized/50-years-ago-16-december-memory-this-is-all-india-radio-news-read-by-surajit-sen Thu, 16 Dec 2021 08:11:05 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15088 sourav-senসৌরভ সেন: ১৯৭১। আমার কিশোরবেলা। তখন এ-বাংলায় রাজনৈতিক কারণে হানাহানি ও অস্থিরতা আমাদের দ্রুত ‘বড়’ করে তুলছে। কাগজে রাজনৈতিক খবর পড়ায় বেশ আগ্রহ। আগের বছর, মানে ১৯৭০-এ স্কুলে হাফ-ইয়ারলি, অ্যানুয়েল কোনও পরীক্ষাই হতে পারেনি। সরাসরি পরের ক্লাসে। ‘মন্থর বিকেলে শিমুল তুলোর ওড়াউড়ি’র মতন সোডার বোতল ছোড়াছুড়িও সহজ, ছন্দোময় হয়ে উঠেছে। চোখের সামনে পেটো পড়া-ও তখন দৃষ্টি বা শ্রুতিতে গ্রাহ্য। এধার-ওধার থেকে খুনের খবর আসে। পাড়ায়-পাড়ায় সিআরপি-র রুট মার্চ কিংবা কুম্বিং অপারেশনে বাড়িতে ঢুকে মাঝরাতে পুলিশের খানাতল্লাশি তখন নগরজীবনের অঙ্গ।

এহেন সময়ে স্বাধীন বাংলা-র হিল্লোল! পাক-বাহিনীর বর্বরতার ছবি কাগজে-কাগজে, হত্যালীলার বিবরণ। গুলিতে হত্যা, বেয়োনেটে খুঁচিয়ে হত্যা— কত যে প্রকার! ইয়াহিয়া খান একটা আস্ত জল্লাদ, এমন একটা ছবি মনে আঁকা হয়ে গেছে। অনেক পরে শিল্পী কামরুল হাসান-চিত্রিত জল্লাদের (জানোয়ার) ছবিটি দেখে অবাক হই। মনে-আঁকা ছবির সঙ্গে প্রায় মিলে যাচ্ছে! লক্ষ-লক্ষ শরণার্থীর স্রোত। প্লাস্টিক ছাউনিতে, কংক্রিটের পাইপে তাদের আস্তানা। ধু-ধু সল্ট লেক তখন সবে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। সেখানেও ৭২ ইঞ্চি পাইপের মধ্যে বসতি। ইতিমধ্যে লোকসভা ভোটে জিতে ইন্দিরা গান্ধী নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব আরও পোক্ত করে নিয়েছেন। দেশে-দেশে তাঁর দৌত্য, ছুটোছুটি কাগজে পড়ছি। নিক্সন, কিসিঞ্জার— এসব নাম শুনলে গা রি-রি করে। অন্য দিকে মনে পড়ছে— সেনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে ঘুরলেন। কাগজে প্রথম পাতায় বিবরণ। শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য বিপুল খরচের বোঝা ভারত সরকারের কাঁধে। খবরের কাগজ, সিনেমার টিকিট— এসবের ওপর অতিরিক্ত মাশুল চাপল। চিঠিপত্রে ডাকমাশুল বাড়ল ৫ পয়সা। একটি অতিরিক্ত স্ট্যাম্প সাঁটতে হত। প্রথম-প্রথম ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের ডাকটিকিটে ‘রিফিউজি রিলিফ’ ছাপ মারা হত, পরে নতুন টিকিট ছাপা হল।

bangladesh liberation war

মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি চলেছিল আরেক যুদ্ধ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের— যাকে অনেক পরে গোটা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘ওআরএস’ বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন। তখন সীমান্ত-অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরগুলোয় কলেরা ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক ভাবে। এপারের ডা. দিলীপ মহলানবিশ, ওপারের ডা. রফিকুল ইসলাম ওআরএস-এর সফল প্রয়োগ শুরু করলেন। এছাড়াও, নলজাতকের স্রষ্টারূপে চিরস্মরণীয় ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় শরণার্থীদের অপুষ্টি-রোধে বানিয়েছেলেন ‘ফিশ প্রোটিন কনসেনট্রেট’।

মুক্তিযুদ্ধের খবর আসছে। ছবিও ছাপা হচ্ছে। ‘রাজাকার’, ‘আল বদর’ নামগুলো জানতে শুরু করেছি। এপারের অনেক সাংবাদিক ওপারে গিয়ে জীবন্ত বিবরণ আনছেন। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে অন্তর্বর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়ে গেছে, মুজিবনগরে। টিভি তো তখন আসেনি। আকাশবাণী কিন্তু এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল! নিয়াজি-র আত্মসমর্পণের ছবিতে প্রথম সারিতে দিল্লির সংবাদপাঠক সুরজিৎ সেন! কানে শুনতে পাচ্ছি সেই মন্দ্র কণ্ঠ— “দিস ইজ অল ইন্ডিয়া রেডিও, নিউজ রেড বাই সুরজিৎ সেন…”। কলকাতা কেন্দ্রের প্রণবেশ সেন, উপেন তরফদার, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা স্মরণে থেকে গেছে। ‘সংবাদ-বিচিত্রা’য় গ্রাউন্ড লেভেলের সরাসরি রিপোর্ট। রেডিও-য় শুনে-শুনে প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা— “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…”। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’। কলকাতারই এক ঘাঁটি থেকে চলত সম্প্রচার। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ অধিবেশন শুরু হত, যদ্দূর মনে পড়ছে। ও-বাংলার সময়ানুযায়ী বেলা একটা নিশ্চয়ই। শুরুতেই বাজানো হত গান : “জয় বাংলা, বাংলার জয়…”।

তারপর তো ডিসেম্বরের তিন তারিখে পাকিস্তানের বোমাবর্ষণ, ভারতের যুদ্ধঘোষণা। পুব ও পশ্চিম রণাঙ্গন। মার্কিন সপ্তম নৌবহর আসছে! কী হয়, কী হয়! রসিকজনের রটনা কিনা জানা নেই, তবে ছড়িয়ে গেল— আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবনবাবু নাকি অক্লেশে বলেছেন : আমাদেরও আই এনএস বিক্রান্ত্ আছে! বিক্রান্ত্ ছিল তখন ভারতের একমাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। তবে সপ্তম নৌবহরের কাছে নস্যি! যা হোক, বিক্রান্ত্ কিন্তু খুলনা থেকে চট্টগ্রাম অবধি নাগাড়ে পাহারা দিয়ে গেছে। সেই বিক্রান্ত্-কে বছর-আষ্টেক আগে লোহার দরে বেচে দেওয়া হল। দু’ ফোঁটা চোখের জল কেউ ফেলেছিল কি?

যুদ্ধ চলছে। ফেনি, আখাউড়া, ঝিনাইদহ, হিলি, বয়রা, ঝিকরগাছা ইত্যাদি নামগুলো ম্যাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে নিচ্ছি। পালাতে গিয়ে পাক-সেনারা সেতু, রেলপথ, ভবন সব নষ্ট করে দিচ্ছে। পদ্মার ওপরে সুবিখ্যাত সারা (হার্ডিঞ্জ) ব্রিজের একটা গার্ডার ধ্বংস করা হল। বয়োজ্যেষ্ঠরা হায়-হায় করে উঠলেন। কলকাতায় ব্ল্যাক-আউট চলছে। সন্ধের পর বাইরে কুপকুপে অন্ধকার। ঘরের মধ্যে আলো না-ঠিকরানো বিশেষ ল্যাম্পশেড। একচিলতে আলোও বাইরে গেলে পুলিশে সতর্ক করে যায়। আকাশে প্লেনের আওয়াজে হামলার আশঙ্কা। টালা ট্যাঙ্ক, হাওড়া ও বালী ব্রিজ নাকি ‘দুশমনে’র পয়লা নিশানা!

অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়। যুদ্ধ শেষ। জন্ম নিল স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। সারা দেশে উচ্ছ্বাস। এ-বাংলায় অন্য এক উন্মাদনা। দেয়ালে-দেয়ালে লিখন। দু’ দেশের জাতীয় পতাকার ছবি। তবে তখন কিন্তু বাংলাদেশের পতাকা আঁকা ছিল বেশ ঝঞ্ঝাটের! কারণ মধ্যিখানে ছিল সে-দেশের মানচিত্র। সেটি নিখুঁত আঁকা বেশ কষ্টসাধ্য। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নামের আগে জুড়ে গেল বিশেষণ ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য’, যা এ-বাংলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরবর্তী কয়েক বছর ব্যবহৃত হয়েছে।

’৪৭-এ ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভাষার জোর এতটাই যে ধর্মকে পরাভূত করে সেই রাষ্ট্রের জঠর থেকে নতুন এক রাষ্ট্র জন্ম নিল দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনন্য নজির।

মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয় এ-বাংলার শিল্পসাহিত্যেও দাগ রেখে গেছে। গান, কবিতা ও অন্যান্য সৃষ্টিতে মাতোয়ারা হয়েছিল মানুষ। আজ ইচ্ছে করলে সেসবের আস্বাদ নেওয়া যায়। বৈদ্যুতিন তথ্যভাণ্ডার এখন অতি সমৃদ্ধ। শুধু একটি গানের হদিশ পেতে ব্যর্থ হয়েছি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ‘পারাপার’ :
আমরা যেন বাংলা দেশের/ চোখের দুটি তারা।/ মাঝখানে নাক উঁচিয়ে আছে—/ থাকুক গে পাহারা।/ দুয়োরে খিল/ টান দিয়ে তাই/ খুলে দিলাম জানলা।/ ওপারে যে বাংলাদেশ/ এপারেও সেই বাংলা।।

<

p style=”text-align: justify;”>পঞ্চাশ বছর আগে এটি গান হিসেবে গাওয়া হত। সুরারোপ কার জানা নেই। আমি নিজে অনুপ ঘোষাল-কে অনুষ্ঠানে গাইতে শুনেছিলাম। ছোট্ট গান, জমজমাট সুর, এখনও দিব্যি মনে আছে। তবে কোনও মাধ্যমেই আর শুনি না, খোঁজ পাই না। পুনরুদ্ধার করা যায় কি?

]]>
Bangladesh50: পাকিস্তান ‘দ্বিখণ্ডিত’, পাঁচ দশক পর কালচক্র ফেরাল ঐতিহাসিক বৃহস্পতিবার https://ekolkata24.com/uncategorized/new-country-bangladesh-was-formed-on-the-historic-thursday-after-the-break-up-of-pakistan Thu, 16 Dec 2021 07:56:37 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15084 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: তারিখ-বার আবর্তিত হয় দিনপঞ্জির নিয়ম মেনে। সেই কালচক্র পঞ্চাশ বছর পর ফিরিয়ে দিল ঐতিহাসিক ‘বৃহস্পতিবার’। পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হওয়ারও ৫০ বছর আজ অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ সাল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিনও বৃহস্পতিবার! সেই দিন অখণ্ডতা খুইয়ে দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তানের মানচিত্র তৈরি হয়েছিল। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর বিশ্ব থেকে সরকারিভাবে মুছে গেছিল পূর্ব পাকিস্তান নাম। নতুন ভূখন্ড বাংলাদেশ (Bangladesh)।

১৯৪৭ সালে ভারত হয় দ্বিখণ্ডিত। তৈরি হয় পাকিস্তান। নবগঠিত পাকিস্তানের দুই অংশ। একদিকে পশ্চিম পাকিস্তান অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান। মাঝে বিশাল ভারত। একদিকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা অন্যদিকে দেশটির রাজধানী করাচি (পরে ইসলামাবাদ)।

দেশভাগের যে যন্ত্রণা নিয়ে অখণ্ড ভারতবাসী ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে নিজ নিজ ভূখণ্ড ভারত ও পাকিস্তান বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের সামনে আরও একটি ভাঙন অপেক্ষা করেছিল। পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার ২৪ বছরের মধ্যে দু টুকরো হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বহু দেশ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। আবার সংযুক্ত হয়েছে। এই ভাঙা-গড়ার খেলায় পাকিস্তানের দু টুকরো হয়ে যাওয়ায় সর্বাধিক প্রভাব পড়ে ভারতে। যে দেশ ১৯৪৭ সালে রক্তাক্ত পরিস্থিতির মাঝে টুকরো হয়েছে আগেই।

পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে দেশটির পূর্বাংশ বা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিজ ভাষা বাংলার উপর খবরদারি করার কাজটি করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এসেছিলেন স্বয়ং পাক জনক মহম্মদ আলি জিন্না। বাংলাভাষী অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানে এসে তাঁর ঐতিহাসিক উক্তি বাংলা নয় উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় ভাষা এই মন্তব্যই দেশটি টুকরো হবার প্রথম শুরুয়াত।

তারপর কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় ‘রক্তনদী কল্লোল্লিত’ হয়েছে বহুবার।মেঘনা, পদ্মা, ধানসিড়ি, কপোতাক্ষের স্রোত বেয়ে কালচক্রের টানে হাজির ১৯৫২, ঐতিহাসিক ভাষা অধিকার রক্ষার বিজয় বছর। রক্তাক্ত আন্দোলনে বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পাক সরকারের। পরবর্তী সময়ে পাক সামরিক আইনের দমননীতির প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের রক্তাক্ত সময় পেরিয়ে হাজির ১৯৭১ সাল।

বজ্রকণ্ঠে হুঙ্কার এলো পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। মুজিব ভাষণের উন্মাদনায় ভেঙে পড়েছিল পাক শাসনের সামরিক দম্ভ দেয়াল। জলে-জমিতে লাউমাচা ধানক্ষেতের আড়ালে সেই মুক্তির সংগ্রামের নয় মাসের পর্ব পরিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিক হয়ে গেল।

এই ইতিহাসের সমান অংশীদার ভারত। বাংলা ভাষার দেশের জন্ম ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় লেখা আছে ভারতের নাম।

]]>
Bangladeh 50: পাকিস্তানের আতঙ্ক কিংবদন্তি গেরিলা বাঘা সিদ্দিকী দিলেন সরস্বতী পুজোর চাঁদা https://ekolkata24.com/uncategorized/when-legendary-bangaldesh-guerrilla-commander-tiger-siddique-lived-in-bardhaman Wed, 15 Dec 2021 18:43:13 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15035 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: নাম তাঁর ‘টাইগার’। দুনিয়া জুড়ে যত গেরিলা যুদ্ধের কাহিনী আছে তার অন্যতম এক তারকা। এহেন অকুতোভয় টাইগার ওরফে বাঘা সিদ্দিকী তাঁর বাহিনী পাকিস্তানি সেনার কাছে আতঙ্কের কারণ ছিলেন। পাক সেনা হোক বা কমান্ডাররা মনে প্রাণে চাইত যদি আত্মসমর্পণ করতেই হয় তাহলে টাইগারের কাছে নয়, এর চেয়ে ভারতীয় সেনা অনেক ভালো। অন্তত তারা যুদ্ধবন্দি আইনে মেরে ফেলবে না। মুক্তিযোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকীর হাতে পড়লে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হবে। তাঁর এই ভয়াবহ রূপ বিশ্বজুড়ে আলোচিত। যেভাবে তিনি পাক সেনাদের মারতেন সেই ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন ফেলেছিল।

গেরিলা কমান্ডার বাঘা সিদ্দিকীর আসল নাম আবদুল কাদের সিদ্দিকী। বাঘের মতো হিংস্র হামলায় পটু তাই নাম হয় ‘বাঘা’। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর উপলক্ষে এই প্রতিবেদনে বাঘা সিদ্দিকীর একটি বিরল মুহূর্ত তুলে ধরা হলো।

Tiger-siddique

বাঁ-দিকে মুক্তিযুদ্ধে ভয়ঙ্কর রূপ, ডানদিকে বর্ধমানের শ্রীপল্লীর বাড়িতে টাইগার

ফিরে যাওয়া যাক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে:
৫০ বছর আগের কথা। তখন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল পাক শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীর একটি সমান্তরাল গেরিলা দল ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। ১৯৭১ সালের এই মুক্তিযুদ্ধে বাঘা সিদ্দিকীর বাহিনী পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে প্রত্যাঘাত শুরু করে। টাঙ্গাইল থেকে শুরু হয়েছিল সেই হামলা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় প্রথম ভারতীয় সেনার তৎকালীন মেজর জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগরার পাশাপাশি বাঘা সিদ্দিকী তাঁর বাহিনী নিয়ে ঢুকেছিলেন। বাংলাদেশ তৈরির পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। উপাধি পান ‘বঙ্গবীর’।

এই বাড়িতে থাকতেন বাঘা সিদ্দিকী। ছবি: আব্দুস সবুর।

এহেন বাঘা সিদ্দিকীকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেনা অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুনের পর প্রত্যাঘাতের সুযোগে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঘা সিদ্দিকী। ১৯৭৫-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই প্রবাস পর্বের দীর্ঘ সময় কেটেছিল বর্ধমান শহরে। বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর শহর বর্ধমান।

এক বিরল মুহূর্তের বাঘা সিদ্দিকী:
বর্ধমানের অতি পরিচিত সাংবাদিক আব্দুস সবুর। তিনি শহরের ‘নতুন চিঠি’ সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত। আব্দুস সবুর তখন তরুন। তিনি বলেছেন, একদিন ক্লাবের সবাই মিলে সরস্বতী পুজোর চাঁদা তুলতে বেরিয়েছি। সদরঘাট রোডের পৌরসভা কসাইখানার কাছে যে বাড়িতে বাঘা সিদ্দিকী থাকতেন সেখানে গেলাম। উনি আমাদের দেখে বেরিয়ে এলেন। আমি বললাম ক্লাবের সরস্বতী পুজো কিছু চাঁদা দিন। উনি বললেন, কেন দেব না। বলেই দু টাকা দিলেন। তখনকার দিনে দু টাকা মানে বিরাট।

abdur-sabur

সাংবাদিক আব্দুস সবুর

সাংবাদিক আব্দুস সবুরের স্মৃতিতে আজও ভাসে কিংবদন্তি গেরিলা যোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকীর সেই চেহারা। তিনি বলেছেন, ছয় ফুট লম্বা, ধবধবে ফর্সা হাসি হাসি মুখ। উনি হাসতে হাসতে সরস্বতী পুজোর চাঁদা দিলেন। আমি বললাম রশিদে কী লিখব? বাঘা সিদ্দিকী বললেন, মা’য়ের পুজো তাই মা’কে দিলাম লিখে দাও।

মুক্তিযোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকীর বর্ধমানে থাকার স্মৃতি এই শহরের বহুজনের কাছে উজ্জ্বল। তবে তাঁর এই বিরলতম মুহূর্তের গুটিকয়েক সাক্ষীর একজন সেদিনের তরুণ আজকের প্রৌঢ় আব্দুস সবুর।

মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীর উপলক্ষে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক মৈত্রী সম্পর্কেরও ৫০ বছর পালিত হচ্ছে। সাংবাদিক আব্দুস সবুর চান সুসম্পর্ক আরও গাঢ় হোক।

]]>
Bangladesh 50: পচা লাশ পেরিয়ে ঢুকলাম আগরতলায়, স্মৃতিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কন্যা https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladeh-50-first-prime-minister-of-bangladesh-tajuddins-daughter-simeen-hussein-recall-her-experience-of-liberation-war Wed, 15 Dec 2021 16:20:42 +0000 https://ekolkata24.com/?p=15010 News Desk: এই প্রতিবেদন মূলত স্মৃতিকথা ভিত্তিক। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ত্রিপুরায় এসেছিলেন। ৫০ বছর  (Bangladesh 50) আগে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু শরণার্থীর মতো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় এসেছিলেন কিশোরী অবস্থায়। ত্রিপুরা ছিল বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম ঘাঁটি। জীবন হাতে করে আগরতলা পৌঁছনোর দীর্ঘ যাত্রা কেমন ভয়ানক ছিল, সেটাই জানিয়েছেন।

সিমিন হোসেন রিমির (Simeen Hussein) পিতা তাজউদ্দিন আহমদ (first prime minister of Bangladesh Tajuddin)। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুন করা হয়। সেই সামরিক অভ্যুত্থানে তাজউদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুজিব সহযোগী তাজউদ্দিন সহ চার শীর্ষ নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে গুলি করে খুন করা হয়। ভয়াবহ মুহূর্তগুলো জীবন স্মৃতিতে দগদগে হয়ে আছে সিমিন হোসেনের।

bangladesh Tajuddin's daughter Simeen Hussein recall

মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় সফর করা তাজউদ্দিন আহমদের স্বাক্ষর

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের সেই পরিস্থিতি আমরা তুলে ধরলাম।

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতের পর থেকে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকার এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের বাড়ি দরদরিয়া পৌঁছাই আমরা। চারিদিকে অগুন্তি লাশ। পচে যাওয়া দেহ কাক কুকুরে খাচ্ছিল। ভয়াবহ পরিস্থিতি। গ্রামের বাড়িতেও হামলার ঠিক আগের মুহূর্তে গভীর রাতে নদী পথে অনির্দিষ্ট যাত্রা শুরু হলো।

bangladesh Tajuddin's daughter Simeen Hussein recall

তিনি লিখেছেন, তারপর কত এলাকা, কতপথ ঘুরে কুমিল্লা হয়ে শরণার্থী আমরা ভারত সীমান্ত পার করি। আগরতলার বক্সনগর দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলাম। পথে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কা। পাক সেনার মুখোমুখি হবার প্রবল ভয় নিয়ে পচা লাশে ঢেকে থাকা বাংলাদেশের জমি ছেড়ে ঢুকলাম ইন্ডিয়াতে। পুরো সীমান্ত জুড়ে তখন হাজার হাজার শরণার্থী। সেই শরণার্থী স্রোতের সাথে সীমান্ত ধরে ২৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সীমান্ত ঘেঁষা ত্রিপুরার সোনামুড়ায় পৌঁছাই। সেই সময় সোনামুড়ার মহকুমা প্রশাসক ছিলেন হিমাংশু মোহন চৌধুরী।

স্মৃতিতে সিমিন হোসেন লিখেছেন, সোনামুড়ার যে টিলার ওপর হিমাংশু মোহন চৌধুরী যে বাড়িতে থাকতেন, সেই সরকারি বাড়িটি এখনও একই রকম আছে। শুধু বাড়ির পাশে দেয়াল হয়েছে।

পঞ্চাশ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গিয়ে সিমিন হোসেন রিমি লিখেছেন, সেই সবুজ ঘাসের উঠান, টিনের চালা ঘর। আমরা ৪ ভাইবোন চার জায়গায় আছি। আম্মা নেই। আজ আমি যখন ঘরের ভেতর ঢুকলাম, আমি তখন ছোট বেলার আমি। আমি অবাক হয়ে দেখছি আশপাশ। আমি আমার পঞ্চাশ ছয় মাস বছর আগের স্মৃতিকে স্পর্শ করলাম ৯ ডিসেম্বর ২০২১সালের বৃহস্পতিবার। মনে মনে বলছিলাম চোখ তুমি ভিজে যেওনা। কিন্তু গড়িয়ে পরতে থাকল আনন্দ বেদনার মিলিত অশ্রু।

bangladesh Tajuddin's daughter Simeen Hussein recall

ত্রিপুরা স্টেট মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে একটি কক্ষ আছে। সংরক্ষিত ছবি, খবরের কাগজ ইত্যাদি দেখছিলাম আর পড়ছিলাম গভীর মনোযোগে। যে দিন (১৫ অক্টোবর ১৯৭১) প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন, তাঁদের হাতের লেখা দেখলাম। জাদুঘরে ছবি তোলা নিষেধ। কিউরেটর অভিভূত হলেন পরিচয় জেনে। শুধু বাংলাদেশের ওই অংশের ছবি তুলতে দিলেন।

বাবা ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর বিপ্নবী সাথী। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পকিবারকে যে অপশক্তি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে, তারাই আমার বাবাকে বন্দি করে খুন করেছে। তবুও তারা সফল নয়। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী অটুট থাকবেই।

<

p style=”text-align: justify;”>(আগরতলার সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার ও সিমিন হোসেন রিমির স্মৃতিকথা তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।)

]]>
Bangladesh 50: ‘প্রিয় আবদুল্লাহ…আপনার দূত পাঠান’, চিরকুটে লিখলেন মেজর জেনারেল নাগরা https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-a-letter-writen-by-general-nagra-to-pakistani-general-neazi-is-a-symbol-of-psychological-war Wed, 15 Dec 2021 07:51:56 +0000 https://ekolkata24.com/?p=14941 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: সৈনিক জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপেক্ষা করা সমীচিন নয়। পাকিস্তানি সেনার ঘেরাটোপে থাকা ঢাকা দখলের প্রথম গৌরবের হাতছানি। সবমিলে প্রবল মানসিক টানাপোড়েনে রয়েছেন ভারতীয় সেনার মেজর জেনারেল নাগরা। অপরপক্ষে তাঁর ‘বন্ধু’ এখন প্রতিপক্ষ ‘শত্রু’ পাকিস্তানি লেফট্যানেন্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। যুদ্ধ দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মাঝে একটি সেতু। বিখ্যাত মিরপুর ব্রিজ।

তৎকালীন সময়ে তো বটেই এখনও ঢাকা মহানগরীর অন্যতম একটি সেতু। এই সেতুর দুই মুখে পজিশন নিয়েছে দু পক্ষ। একদিকে ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ সেনা অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনা।

Mirpur bridge dhaka

ঢাকার বিখ্যাত মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি বর্ষণ বন্ধ হয়েছিল। উত্তেজিত জেনারেল নাগরা ডেকে নিলেন তাঁর সহকারি অফিসারদের। তাঁর বাহিনীকে পুরো সহযোগিতা করছে কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর (বাঘা সিদ্দিকী) কাদেরিয়া বাহিনী।

৫০ বছর আগে মিরপুর সেতুতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর টানা দুটো দিন ঘটেছিল সেই নাটকীয় মুহূর্তের প্রথম পর্বটি। এই সেতুর এক প্রান্ত থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সেনা কমান্ডার নিয়াজির কাছে একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন ভারতীয় সেনা কর্তা গন্ধর্ব সিং নাগরা।

Bangladesh liberation war Witness to surrender

কী লিখেছিলেন মেজর জেনারেল নাগরা?
“My dear Abdullah, I am here. The game is up, I suggest you give yourself up to me and I will take care of you, Nagra”
(প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর ব্রিজে। ঘটনার পরিসমাপ্তি হয়েছে। পরামর্শ হচ্ছে, আপনি আমার কাছে আত্মসমর্পণ করুন। সেক্ষেত্রে আমরা আপনাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেব, শীঘ্র আপনার প্রতিনিধি পাঠান। নাগরা)

নাগরা ও নিয়াজি পরস্পর পরিচিত। দুই দেশের দুই শীর্ষ সেনা কর্তা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দুজনকে ঐতিহাসিক চরম মুহূর্তে টেনে এনেছিল।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা ‘আমি বিজয় দেখেছি’ বইতে নাগরা ও নিয়াজির সম্পর্ক লিখেছেন এম আর আখতার মুকুল। তিনি তৎকালীন মুজিবনগর সরকার (প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার) এর তরফে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কর্তা। তিনি লিখেছেন, ‘ বছর কয়েক আগে জেনারেল নাগরা যখন ইসলামাবাদে ভারকীয় দূতাবাসে মিলিটারি এট্যাচি হিসেবে চাকরি করতেন, তখন থেকে নিয়াজীর সঙ্গে তার পরিচয়’ (বানান অপরিবর্তিত)

<

p style=”text-align: justify;”>সেদিন নাগরার চিরকুট পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেনা কর্তা আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি (এ এ কে নিয়াজি)। ঢাকার পাক সেনা কার্যালয়ের সেই গুমোট ভয়ানক পরিবেশের বর্ণনা দিয়েছেন পাকিস্তানি আমলা সিদ্দিক সালিক তাঁর লেখা ‘Witness to surrender’ (আত্মসমর্পণের সাক্ষী) বইতে।
তিনি লিখেছেন, নাগরার বার্তা হাতে নিয়ে পড়ার পর নিয়াজির চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তিনি কোনও কথা না বলে চিঠিটা অন্যদের পড়তে দিলেন। সবাই বার্তাটা দেখলেন। মিনিট কয়েক জন্য সেখানে কবরের নিস্তব্ধব্ধতা নেমে এলো।

]]>
Bangladesh 50: ছায়ামানুষ মি: ভট্টাচার্যের সেই গোপন বৈঠক, গেরিলাদের স্বাধীন বাংলা বেতার https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-50-years-of-swadhin-bangla-betar-kendra-history-of-a-guerrilla-radio-service Tue, 07 Dec 2021 04:58:58 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13924 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: একাত্তরের রাতের কলকাতা। রাস্তার হলদে ডুম আলোর নিচেটাই যা একটু স্পষ্ট। তারপর অন্ধকার। গলির ভিতরগুলো? একপক্ষ অন্যপক্ষকে তাড়া করছে। রাজনৈতিক লড়াইয়ে দুই বামপক্ষ, তাদের প্রতিপক্ষ প্রশাসন ও কংগ্রেস। মহানগরের এই রূপ যারা দেখেছেন তারাই জানেন।

তেমনই এক রাত। বালিগঞ্জ শুনশান। দশটা বাজার আগেই একটা দোতলা বাড়িতে দু’জন ঢুকে গেলেন। এই বাড়িতেই হয়েছিল ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক রণাঙ্গনের ইতিহাসে বেতার সম্প্রচারের গৌরবময় পর্বের একটি।

৫০ বছর আগের সেই রাতে ফিরে যাওয়া যাক। বাড়িটায় সেদিনের গোপন বৈঠকে যারা ছিলেন তাদের দুজনের পরিচয় এখনও অস্পষ্ট। এদের একজন ছায়ামানুষ- মি: ভট্টাচার্য। সে রাতের পর ভট্টাচার্য মশাই আর দেখা দেননি।

Swadhin Bangla Betar Kendra

মুক্তিযুদ্ধের কথক বাংলাদেশের কিংবদন্তি সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, “একাত্তরের মে মাসের বাইশ তারিখ। মান্নান ভাই বললেন, ‘আজ রাত দশটায় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িটাতে একটা গোপন বৈঠক আছে। আপনি হাজির থাকবেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র চালু করার ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।’ দোতলা বাড়ি। উপরের তলায় মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীবর্গ আর বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আস্তানা। তাই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আমি আর মান্নান ভাই একটু আগেই গিয়ে হাজির হলাম। নিচের তলায় ড্রয়িং রুমে দু’জনে অধীর আগ্রহে বসে রইলাম। ঠিক রাত দশটায় সাদা পোশাকে দু’জন ভদ্রলোক এলেন। দু’জনেই ভারতীয় বাঙালি। একজন তো তেমন কোন কথাই বললেন না। অন্যজন নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে নাম বললেন, ভট্টাচার্য। অনেক কষ্টে কৌতূহল দমন করলাম। ওদের পুরো পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম না।”
সৌ: আমি বিজয় দেখেছি। এম আর আখতার মুকুল।

মি ভট্টাচার্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। সেটি তাঁর পেশাগত গোপনীয়তা বলেই ধরে নেওয়া যাক। কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতে সেদিন বৈঠকে স্থির হয়েছিল ভারত সরকারের তরফে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় রেডিও বার্তা সম্প্রচার করা হবে। এই রেডিও সংবাদে থাকবে মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর কথা।

রণাঙ্গনে রেডিও পাকিস্তান বনাম আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই তরঙ্গ যুদ্ধ বিশ্ব বেতার সম্প্রচার ইতিহাসের অতি চমকপ্রদ অধ্যায়। যার ভূমিকাটুকু করতে সেই রাতে ভট্টাচার্য মশাইয়ের আগমন হয়েছিল।

‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ এমন এক রেডিও মাধ্যম যা গেরিলা যুদ্ধের অংশীদার হয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি এই রেডিওর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে বাংলাদেশ তৈরির পর এই রেডিও বার্তার আর প্রয়োজন হয়নি।

এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, “ভট্টাচার্য মশায় সরাসরি বললেন, ‘ একটা পঞ্চাশ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার বাংলাদেশের সীমান্তে বসানো হয়েছে। এই ট্রান্সমিটার চালু রাখার দায়িত্ব ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এর অবস্থানটা স্বাভাবিক কারণেই গোপনীয় থাকবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোলকাতায় প্রতিদিন বেতার অনুষ্ঠান রেকর্ড করতে হবে। রেকর্ডকৃত অনুষ্ঠান ট্রান্সমিটার ভবনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।”

সেদিনের সেই গোপন আলোচনায় গেরিলা যুদ্ধের প্রচার মাধ্যম হিসেবে রেডিও হয়েছিল বিশেষ উপযোগী। সিদ্ধান্ত পাকা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রণাঙ্গনের প্রথম সম্প্রচার হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মে। সেদিন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন।

]]>
Bangladesh 50: ভুটান রাজার টেলিগ্রামে বাংলাদেশের ‘প্রথম’ স্বীকৃতি, ভারত সংসদে ‘জয় বাংলা’ https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-bhutan-king-historic-telegram-recognition-of-bangladesh Mon, 06 Dec 2021 08:54:26 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13782 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আচমকা এসেছিল হিমালয়ের রহস্যময় দেশ ভুটানের রাজামশাইয়ের টেলিগ্রাম। এতে ছিল বাংলাদেশের লড়াইয়ের প্রতি ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা। সেই টেলিগ্রামটি ঐতিহাসিক। কারণ ‘ড্রাগনভূমি’ ভুটান দিয়েছিল বাংলাদেশের (Bangladesh) সার্বভৌম স্বীকৃতি। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর তেমনই এক দিন ছিল। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাঝে এই দিনটি কূটনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

বিতর্ক ছিল কোন দেশ প্রথম বাংলাদেশ কে সার্বভৌম স্বাধীন স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত নাকি ভুটান ? এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছিল ২০১৪ সালে ভুটানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোগবের ঢাকা সফরে। বাংলাদেশ সরকার তখনই জানায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে অন্তিম পর্যায়ে ভুটান সরকার সর্বপ্রথম সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে টেলিগ্রাম বার্তা দেয়।

১৯৭১ সলের মুক্তিযুদ্ধের টানা ৯ মাসের ঘটনাবহুল দিনপঞ্জির মধ্যে ৬ ডিসেম্বর দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনেই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল বাংলাদেশ।

৫০ বছর আগে সল্টলেকের জলা জমিতে বিরাট বিরাট পাইপের ভিতর শরণার্থীদের ভিড়। ভুটানের রাজামশাই জিগমে দোরজি সেসব পরিদর্শন করছিলেন। একটু পরে তিনি কলকাতায় ‘মুজিব নগর সরকার’ (প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ) এর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে তার বার্তা পাঠান। তাঁর টেলিগ্রাম থেকে ‘বাংলাদেশ’ নামটি সরকারিভাবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করল।

কী লিখেছিলেন ভুটান রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুক? তাঁর পাঠানো সেই টেলিগ্রামটি –
“On behalf of my Government and myself, I would like to convey to Your Excellency and the Government of Bangladesh that we have great pleasure in recognizing Bangladesh as a sovereign independent country. We are confident that the great and heroic struggle of the people of Bangladesh to achieve freedom from foreign domination will be crowned with success in the close future. My people and myself pray for the safety of your great leader Sheikh Mujibur Rahman and we hope that God will deliver him safely from the present peril so that he can lead your country and people in the great task of national reconstruction and progress.
Jigme Dorji Wangchuck
King of Bhutan
6 December 1971 “

Bangladesh liberation war

তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকারের তরফেও বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয়। তবে ভুটানের স্বীকৃতি দানের কিছু পরে ভারতের স্বীকৃতি বার্তা আসে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদে অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই ও ভারতীয় সেনার বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধকে অভিনন্দন জানান। ভারত সংসদ তখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত।

ভুটান রাজার বিখ্যাত টেলিগ্রামটি যখন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ে খুশির বাতাস বয়ে এনেছে, তার পরেই বিশ্বজোড়া ঝড়ো ‘ব্রেকিং নিউজ’ -ভারতের স্বীকৃতি দান নিয়ে প্রবল আলোচনা। সে ছিল এক কূটনৈতিক পর্ব। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটান ও ভারত একই দিনে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। এর দশ দিনের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় চূড়ান্ত পরাজিত হয় পাকিস্তানি সেনা। প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষের গণকবরের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান হয় দ্বিখণ্ডিত।

ভুটান সরকারের তরফে ২০১৪ সালে সেই । বিখ্যাত টেলিগ্রামটি বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পদ্মা-মেঘনার দেশ সেই প্রথম স্বীকৃতি স্বীকার করে নেয়।

]]>
Bangladesh 50: একা ইন্দিরার ‘সেই থমথমে রাঙা মুখখানি আজও চোখে ভাসছে’ https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-after-pakistan-attack-indian-pm-indira-gandhi-announced-war Fri, 03 Dec 2021 12:26:13 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13369 সৌরভ সেন: ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের ৫০ বছর। আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরও পাঁচ দশক (Bangladesh 50)। সেইসব দিনরাত্রি এখনও যেন মনে হয় এই তো গতকাল ঘটে গেল!sourav-sen
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। কলকাতা তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের ভিড়ে ছয়লাপ। রাজনৈতিক ঘনঘটা প্রবল। পূর্ব পাকিস্তান রক্তাক্ত। আর পশ্চিমবঙ্গে চলছিল তীব্র রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাত। কংগ্রেস ও বামপন্থীদের রাজনৈতিক লড়াই।অতিবামপন্থীদের সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

আসি ৩ ডিসেম্বরের কথায়। পাকিস্তান বিমান বাহিনী হামলা শুরু করেছিল পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে। পরপর বোমা ফেলল আগ্রা, আম্বালা, যোধপুরে। আর পূর্বদিকে আগরতলায় বোমা পড়ল।

ইন্দিরা গান্ধী তখন কলকাতায়। খবর পেয়েই দ্রুত ফিরলেন রাজধানী। তখন ই এম বাইপাস চিন্তার বাইরে। ভিআইপি-দের যাতায়াতের রুট বলতে ভিআইপি রোড- কাঁকুড়গাছি – মানিকতলা – বিবেকানন্দ রোড- গিরিশ পার্ক -সেন্ট্রাল (চিত্তরঞ্জন) অ্যাভিনিউ- এসপ্ল্যানেড-রাজভবন।

সন্ধের দিকে আচমকা রটে গেল—কর্মসূচি বাতিল করে ইন্দিরা ফিরে যাচ্ছেন। গলির মোড়ে- বিবেকানন্দ রোডে আমি, দিদি, পাড়ার বন্ধুবান্ধব, সঙ্গে বড়রাও দাঁড়িয়ে গেলাম। একটি বড় জিপ, পিছনটা খোলা, সেখানে চেয়ারে বসে থমথমে মুখে একটা কাগজ পড়ছেন তিনি। মুখে আপতিত আলো। যাত্রা-অভিমুখের উল্টো দিক করে বসে। একদম একা। গভীর অভিনিবেশে কাগজ পড়তে-পড়তে চলে গেলেন। অভ্যাসমতো কোনও হাত নাড়া ইত্যাদি নয়। তাঁর সেই থমথমে রাঙা মুখখানি আজও চোখে ভাসছে।

তখন ওই কম বয়সে বুঝিনি, পরে সম্যক বুঝেছি যে ওই মুখ ছিল নিজের চিন্তা, নিজের বোধ-কে মথিত করে এক কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখ, ওই মুখে ছিল বিশ্ব-রাজনীতিতে এক চিরস্মরণীয় পদক্ষেপের প্রস্তুতি।

পঞ্চাশটা বছর পেরিয়ে এলাম!

(১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হামলার পরে ভারত শুরু করেছিল প্রত্যাঘাত। কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধী। সে এক ঐতিহাসিক মহূর্ত। )

]]>
Bangladesh 50: পাক বিমানের অপহরণকারী চাইল বাংলাদেশের জন্য ওষুধ, কমান্ডোরা হতবাক https://ekolkata24.com/uncategorized/bangladesh-50-frenchman-who-hijacked-a-plane-in-support-of-bangladesh-liberation-war Fri, 03 Dec 2021 09:52:09 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13355 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ডিসেম্বরের সকাল। শীতের প্যরিস শহর। জনচঞ্চল ফ্রান্সের রাজধানীতে ঘটে গেল রোমহর্ষক ঘটনা। প্যারিস বিমানবন্দর থেকে এসেছে বিপদবার্তা। ফরাসি কমান্ডোদের তৈরি হতে বলা হল। নির্দেশ এসেছে উদ্ধার করতে হবে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পি আই এ) যাত্রীদের। তাঁরা পণবন্দি হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সকালটা এমনই ছিল ফ্রান্সে।

প্যারিস থেকে করাচি। তখন চলছে ফোনাফুনি। অপহরণকারীর কবল থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে পাকিস্তান সরকার চাইল সাহায্য। ফরাসি কমান্ডোরা প্যারিসের অর্লি বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমান ঘিরতে শুরু করলেন।

বিমানের ভিতর আরও এক কান্ড। যাত্রীরা দেখছেন এক যুবক চিৎকার করে বলছে বিমান হাইজ্যাক। বেগড়বাঁই করলে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। ফ্রান্স সরকারের কাছে কিছু বলতে চায় সে। পি আই এ ৭২০ বোয়িং পাইলটের গলার কাছে শক্ত করে অস্ত্র। অপহরণকারীর নির্দেশে পাইলট বার্তা পাঠালেন।

Jean Kay

অপহরণকারীর নাম জ্যঁ ক্যুয়ে। সে চায় পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে লড়াই করা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতে শরণার্থীদের জন্য ওষুধ। চমকে গেল ফ্রান্স সরকার। ততক্ষণে ফরাসি সংবাদ মাধ্যমে বিমান অপহরণের সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। গোটা বিশ্ব দেখছে সেই ছবি। জ্যঁ ক্যুয়ের বার্তা ছড়াতে শুরু করল।

পডুন : Bangladesh 50: ভয়ঙ্কর লালডেঙ্গার মিজো বিদ্রোহীদের টুকরো করেছিল ‘তিব্বতি ভূত’ বাহিনী

ফ্রান্স সরকার ও জ্যঁ ক্যুয়ের মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা চলল সেই টানাপোড়েন। জ্যঁ ক্যুয়ের দাবি করে, এই বিমানেই সব ওষুধ পাঠাতে হবে। তার ব্যক্তিগত কোনও চাহিদা নেই। অবশেষে ফ্রান্সের সরকার রাজি হয় সব শর্তে।

কথাবার্তায় চালানোর ফাঁকে ফরাসি কমান্ডোরা ঘিরতে শুরু করছিলেন পি আই এ বিমানটি। সংকেত আসতেই আক্রমণ শুরু হয়। ওষুধ পাঠানোর জন্য রেডক্রস কর্মীদের সঙ্গে ছদ্মবেশে দুই ফরাসি পুলিশ কমান্ডো ঢুকে পড়েন বিমানের ভিতর। অপহরণকারীকে বাগে আনতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তাকে কাবু করতে গিয়ে হতবাক কমান্ডোরা! তল্লাশিতে কোনও বোমা বা অস্ত্র মেলেনি। ছিল একটি বাইবেল আর বৈদ্যুতিক তার, একটি ইলেকট্রিক শেভার।

টানা ৫ ঘণ্টার সেই রুদ্ধশ্বাস বিমান অপহরণ ঘটনার জেরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি বিশ্বজুডে আরও আলোড়ন ফেলে দেয়। বিমান অপহরণ করার চেষ্টা অভিযোগে জ্যঁ কুয়ে হন বন্দি। তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইক পম্পেদু সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করবার। সেই ভুয়ো অপহরণকারী জ্যঁ কুয়েরের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে ফরাসি সরকার ভারতে থাকা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠায়। রাষ্ট্রসংঘে ফ্রান্স সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। পূর্ণ মেয়াদে জেল খেটে মুক্তি পান জ্যঁ ক্যুয়ে। তিনি একজন লেখক। ২০১২ সালে তিনি প্রয়াত হন।

জ্যঁ ক্যুয়ের যখন পাক যাত্রী বিমান অপহরণের হুমকি দিয়েছিলেন, তখন পাকিস্তান ছিল বিমান হামলায় মত্ত। ৩ ডিসেম্বর পাক বিমান বাহিনী সরাসরি আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকে পরপর বোমা হামলা শুরু করে। কলকাতায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করে দ্রুত দিল্লি ফিরে যান তিনি। সেই রাতে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

]]>
Bangladesh 50: ভয়ঙ্কর লালডেঙ্গার মিজো বিদ্রোহীদের টুকরো করেছিল ‘তিব্বতি ভূত’ বাহিনী https://ekolkata24.com/offbeat-news/bangladesh-50-phantom-of-the-hills-mysterious-tibetan-guerrillass-in-bangladesh-liberation-war Thu, 02 Dec 2021 11:59:13 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13209 প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বাংলাদেশের (Bangladesh) মুক্তিযুদ্ধে একদল ‘তিব্বতি ভূতের হামলা’ হয়েছিল! সেই হামলায় কচুকাটা হয়েছিল পাকিস্তানি সেনা আর তাদের দোসর মিজোরাম থেকে আসা বিদ্রোহীরা। সবমিলে সে এক অদ্ভুতূড়ে কান্ড। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে এই তিব্বতি ভূত কারা ?

ভয়ঙ্কর এই কাহিনী। আর মারাত্নক এক বাহিনী। এই যুদ্ধে মিশে আছে প্রায় অশ্রুত এমন এক গোষ্ঠীর কথা যারা স্বপ্ন দেখত কখনও নিজের দেশ তিব্বত পুনরায় চিন শাসনের কব্জা থেকে মুক্ত করবে। সেই লক্ষ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া তিব্বতিদের হিংস্র হামলার স্বাক্ষী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।

ভারত সরকার বিরোধী উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম উপজাতি নেতা লালডেঙ্গা। তার নেতৃত্বে সশস্ত্র আন্দোলন চালানো মিজো বিদ্রোহীদের সাহায্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। তখনও মিজোরাম তৈরি হয়নি। ভারত বিরোধী অবস্থান নিতে সীমান্ত পেরিয়ে মিজো বিদ্রোহীরা সরাসরি মুক্তিবাহিনীর উপর হামলা চালায়। উপজাতি মিজোদের ভয়ঙ্কর হামলা রুখতে মরণপণ লড়াই চালায় স্থানীয় বাংলাদেশি সেক্টর কমান্ডাররা।

Tibetan guerrillas

এই লড়াইয়ের ময়দানে একদিন আচমকা হাজির আরও অদ্ভুত কয়েকজন। তাদের মুখ, চোখ, কথা, ব্যবহার তীব্র জিঘাংসাময়। চেহারায় মিজো বিদ্রোহীদের সঙ্গে বিস্তর মিল, তবে তাদের দেখলেই ছুরি নিয়ে লাফিয়ে পড়ে। কচুকাটা হয় মিজো উপজাতি নেতা লালডেঙ্গার দলবল। স্টেনগান নিয়ে তারা পাক সেনার উপর হামলা করে হাওয়ার মতো পাহাড়ি বাঁকে মিলিয়ে যায়।

এরা কারা? মুখে মুখে রটে যায় এরা ভুত। তিব্বতি ভূতেরা হামলা করছে। তারা এসেছে বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে।

মুচকি হাসতেন ভারতীয় সেনার মেজর জেনারেল সুজন সিং ওখান। তিনি গেরিলা যুদ্ধের পারদর্শী এক সেনানায়ক। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তিব্বতি ভূত বাহিনীর প্রধান।

চট্টগ্রামের বিস্তির্ণ পাহাড়ি এলাকা সামলানো কঠিন। এটা বুঝে পাকিস্তান সেনার তরফে স্থানীয় চাকমা জনগোষ্ঠীর রাজা ত্রিদিব রায়ের সাহায্য চাওয়া হয়। তিনি পাকিস্তানের পক্ষ নেন। চাকমা রাজার পরামর্শেই পাক সামরিক অফিসাররা যোগাযোগ করে মিজো বিদ্রোহী নেতা লালডেঙ্গার সঙ্গে। সাগ্রহে লালডেঙ্গা রাজি হয়। তার ও চাকমা রাজার বাহিনী মিলে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হামলা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষকরা বলছেন,মিজো উপজাতি নেতা লালডেঙ্গার সঙ্গে কথাবার্তা পাকা করেন পাকিস্তানি সেনার ব্রিগেডিয়ার জহিরুল আলম খান। ৬০০ জন মিজো বিদ্রোহীর জন্য প্রতিদিন এক পাউন্ড করে চাল দাবি করে লালডেঙ্গা। এছাড়া তিন হাজার মিজোর জন্য প্রতিদিন একটন করে চাল চায়। রাজি হয় পাকিস্তান।

লালডেঙ্গা খতরনাক। সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে তার বিস্তর ক্ষমতা। ভারত সরকার হয় উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি বুঝে তিব্বত থেকে নির্বাসিতদের নিয়ে তৈরি করা বিশেষ বাহিনীকে নামানো হয়। শুরু হয় তিব্বতি ভূতুড়ে দলের ভয়াবহ হামলা। মিজো-তিব্বতি সেই লড়াই ছিল যেমন আক্রমনাত্মক তেমনই কৌতুহলের।

এই তিব্বতি বাহিনীর হামলার নাম “অপারেশন মাউন্টেন ঈগল” তিব্বতি এই ভূতুড়ে বাহিনীর পোশাকি নাম ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স'(SSF) ; ১৯৬২ সালে ভারত-চিন সংঘর্ষের সময় তিব্বত থেকে চলে আসা ধর্মগুরু চতুর্দশ দলাই লামার অনুগত তরুন তিব্বতিদের নিয়ে SSF তৈরি করেছিল ভারত সরকার।

১৯৭১ সালে অক্টোবর মাসে স্পেশাল ফ্রণ্টিয়ার ফোর্সের তিন হাজার যোদ্ধাকে ভারতীয় বিমান বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের কাছে নামিয়ে দেয়। সীমান্তের অপর পাশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অংশে গেরিলা অপারেশন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্বে যখন পাকিস্তান ক্রমে কোনঠাসা। পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্ত। বিজয়ী মুক্তিবাহিনীর মাঝে আচমকা দেখা গেছিল তাদের। গুলি ছুঁড়ে তারাও আনন্দ প্রকাশ করে। তারপর হঠাৎ মিলিয়ে যায়। কে এরা ? এরাই সেই তিব্বতি যোদ্ধা। যাদের হামলায় লালডেঙ্গার মতো ভয়ঙ্কর উপজাতি নেতা পিছু হটেছিল। আর চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তো রাজত্ব ছেড়ে পাকিস্তানেই চলে গেছিলেন চিরতরে।

]]>
Exclusive: কলকাতার ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সদর কার্যালয় ভারতের কাছে চাইল বাংলাদেশ https://ekolkata24.com/offbeat-news/exclusive-bangladesh-government-wants-to-take-over-historic-8-theatre-road-house Sun, 29 Aug 2021 17:03:52 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=3439 #Bangladesh 1971 war
প্রসেনজিৎ চৌধুরী: তখন মাঠ ঘাট কচুরিপানা ধানক্ষেতের আড়ালে পাকিস্তানের সেনার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করছিলেন বাংলাদেশি গেরিলারা। এই ‘মুক্তিযোদ্ধা’দের সদর কার্যালয় ছিল কলকাতায়। ঐতিহাসিক সেই ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়ি (বর্তমান সেক্সপিয়ার সরণী) থেকে ‘মুজিবনগর সরকার’ (প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার) পরিচালিত হতো। বাড়িটিতে সংগ্রহশালা বানাতে অধিগ্রহণ করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এই বিষয়ে ভারতের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে ঢাকার তরফে।

এই বাড়িতেই ছড়িয়ে আছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনার ইতিহাস। বাড়িটি আরও একটি কারণে বিখ্যাত। বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষের(ঋষি অরবিন্দ) মামার বাড়ি। এই বাড়িতেই তাঁর জন্ম হয়। এই বাড়ির নাম অরবিন্দ ভবন।

Historic 8 Theatre Road house

রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দেরাইস্বামী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বৈঠক হয়। এই বৈঠকেই উঠেছে কলকাতার ঐতিহাসিক ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়ির প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অনুরোধ করেন, দ্রুত বাড়িটি যেন হস্তান্তর করা হয়।

কলকাতার এই বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের টানা নয় মাসের বেশি সময় ধরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, সেনাপ্রধান কর্নেলসন এমজিএ ওসমানি, অর্থমন্ত্রী মনসুর আলি সহ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা বৈঠক করতেন।

india Bangladesh minister meeting

পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু হয়েছিল। সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসা বহু বুদ্ধিজীবী, লেখক শিল্পীরা কলকাতাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিবিসি জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারত সরকার ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে ছিল এই বাড়ি। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে এই ভবন দিয়েছিল ভারত সরকার।

বিবিসি জানাচ্ছে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে (বর্তমান শেক্সপিয়ার সরণী) অরবিন্দ ভবন নামের বাড়িটিতে নেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোনও স্মৃতিফলক। তবে অরবিন্দ ভবনের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। ফলে বাংলাদেশ সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী।

ভারতীয় হাইকমিশনারকে দেওয়া বার্তায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যুদ্ধের সময় ভারত সরকারের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দ্বেরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পরীক্ষিত। দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন দ্বেরাইস্বামী।

]]>
টিক্কা খানের সেনাকে টেক্কা দেওয়া গণহত্যার রিপোর্টার সাইমন ড্রিং প্রয়াত https://ekolkata24.com/offbeat-news/british-journalist-saimon-dring-dies-at-76 Wed, 21 Jul 2021 10:14:39 +0000 https://www.ekolkata24x7.com/?p=1113 নিউজ ডেস্ক:  যেখানেই মুক্তি সংগ্রাম সেখানেই হাজির লন্ডন টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা সাইমন ড্রিং। ষাট-সত্তর দশকে কখনো ভিয়েতনাম তো কখনও ঢাকা, পরে হাইতির গণসংগ্রামের রিপোর্টার প্রয়াত হলেন। কিংবদন্তি সাংবাদিকের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তাঁর পাঠানো বিশ্ববিখ্যাত সংবাদগুলির অন্যতম “ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান “। এই শিরোনামে লন্ডন টেলিগ্রাফ খবর প্রকাশ করতে বিশ্ব কেঁপে গিয়েছিল। স্পষ্ট হয়েছিল ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঠিক কী ঘটাচ্ছে পাকিস্তানের সেনা। জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে শুরু হয়েছিল গণহত্যা ও শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা নেমেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।

লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের হয়ে ভিয়েতনামে আমেরিকান সেনার বর্বরতা লিখে বিশ্ব কাঁপাচ্ছিলেন সাইমন ড্রিং। সেখান থেকে তাঁকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করতে পাঠান লন্ডন টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষ। ১৯৭১ সালের ঢাকা তখন পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র গণ আন্দোলনের কেন্দ্র।

সাইমন ড্রিং ভিয়েতনাম থেকে ঢাকা আসার পর পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিঘোরালো হয়। ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকার ঢাকায় গণহত্যা “অপারেশন সার্চলাইট” শুরু করে। বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা থেকে জোর করে করাচি নিয়ে যায় পাক সেনা। কিন্তু টিক্কা খানের সেনাবাহিনি কে টেক্কা দিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। তিনি আত্মগোপন করেন ঢাকার বিখ্যাত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ভিতর। ২৫ মার্চের ভয়াবহ ট্যাংক অভিযান ও গণহত্যার বিবরণ তিনিই হোটেল থেকে দেখে সাংকেতিক আকারে লিখে রাখেন। তাঁর খোঁজে হোটেলে পাক সেনার তল্লাশি চলছিল। সাইমন ড্রিং গুটিকয়েক হোটেল কর্মীর সাহায্যে কখনো জলের ট্যাংকের ভিতরে, চেয়ার টেবিলের আড়ালে, রান্নাঘরে লুকিয়ে ছিলেন।

২৫ মার্চ ঢাকায় গণহত্যা শুরুর পর ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ তুলে নেয় পাক সরকার। মৃতদেহে ঢেকে থাকা ঢাকার রাজপথে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে ছবি ও বিবরণ সংগ্রহ করেন সাইমন ড্রিং। তারপর লেখেন ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদন ৩০ মার্চ প্রকাশ করে লন্ডন টেলিগ্রাফ। আন্তর্জাতিক এক্সক্লুসিভ এই বিবরণ পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেয়। সংবাদ প্রকাশের পরেই আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র শেরগোল পড়ে যায়।

আর লুকিয়ে থাকা সম্ভব হয়নি। সাইমন ড্রিংকে বন্দি করে পাক সরকার। প্রবল অত্যাচার করে তাঁকে ঢাকা থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় তাকে অবশ্য ছাড়তে বাধ্য হয় পাকিস্তান। লন্ডন ফিরে সাইমন ড্রিং ঢাকার বিবরণ পরপর প্রকাশ করতে থাকেন। গণহত্যার সেই বিবরণগুলি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাইমন ড্রিং লন্ডন থেকে কলকাতা আসেন। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা থেকে ঘুরে এসে প্রতিবেদন লিখতেন। টানা ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের থেকে ছিন্ন হয়ে তৈরি হয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাইমন ড্রিং নতুন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসেন ভারতীয় সেনার সঙ্গে। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন সাইমন ড্রিং।

শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নয়, হাইতি দ্বীপের গণসংগ্রামে আমেরিকান সেনার হামলার খবর ঘটনাস্থল থেকে লিখেছেন তিনি। প্রবল বিভিন্ন পড়েছিল ওয়াশিংটন। আর ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের রিপোর্ট লিখে সাইমন ড্রিং তো মার্কিন সরকারের চক্ষুশূল হয়েইছিলেন। অকুতোভয় সাংবাদিক পরে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ কথক সাইমন ড্রিংয়ের প্রয়াণ সংবাদে বাংলাদেশ, হাইতি, ভিয়েতনাম শোকস্তব্ধ।

]]>