কিন্তু এই গ্রামে সবকিছু থাকলেও ছিল না জল। পর্যাপ্ত জলের (watet) অভাবে গ্রামবাসীদের (villagers) সমস্যার অন্ত ছিল না। একটু পানীয় জলের জন্য গ্রামের মেয়ে বউদের প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার দূরে যেতে হত। জলের অভাবে হত না চাষবাস। ফলে দারিদ্র্য ও অভাব ছিল এই গ্রামের নিত্যসঙ্গী। যাদের একটু পয়সা ছিল তারা অনেকেই এই গ্রাম ছেড়ে শহরে উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
কিন্তু এত সহজে হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না লোঙ্গি ভুঁইয়া । গ্রামে জল আনতে তিনি একাই এগিয়ে আসেন। কাটতে শুরু করেন তিন কিলোমিটার লম্বা একটি খাল। প্রথমে গ্রামের আরও কয়েকজন তরুণকে তিনি খাল কাটার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আর কেউই খাল কাটতে এগিয়ে আসেনি। সকলেই এটাকে বেগার খাটা বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এই অবস্থায় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লোঙ্গি সকালে কিছু খাবার খেয়ে পোষ্য গরু-ছাগলগুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
Bihar: A man has carved out a 3-km-long canal to take rainwater coming down from nearby hills to fields of his village, Kothilawa in Lahthua area of Gaya. Laungi Bhuiyan says, "It took me 30 years to dig this canal which takes the water to a pond in the village." (12.09.2020) pic.twitter.com/gFKffXOd8Y
— ANI (@ANI) September 12, 2020
অবশ্যই সঙ্গে থাকত কোদাল ও ঝুড়ি। এভাবেই দেখতে দেখতে চলে যায় ৩০ টা বছর। গ্রামের অনেকেই তাকে পাগল বলত। কেউবা বলত ভূতের বেগার খাটছেন লোঙ্গি। যদিও কোঠিওয়ালা গ্রামে জলের অভাবে চাষবাস প্রায় হত না বললেই চলে। তবে লোকে যে যাই বলুক, লোঙ্গি তাঁর লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। জঙ্গলে গিয়ে প্রথমে তাঁর পোষ্যগুলিকে ছেড়ে দিয়ে খাল কাটতে শুরু করতেন লোঙ্গি। এইভাবে দিনের পর দিন খাল কাটতে কাটতে গড়িয়ে যায় মাস, কেটে যায় বছর। দীর্ঘ ৩০ বছর পর হঠাৎই শেষ হয় খালকাটা। খালের মুখ জুড়ে যায় নদীর সঙ্গে।
লোঙ্গি জানিয়েছেন, বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেও পাহাড় বা নদীতে থেকে গ্রামে জল আসার কোনও সুযোগ ছিল না। সে কারণেই তিনি এই খাল কাটার সিদ্ধান্ত নেন। খাল কাটার ফলে এখন পাহাড়ি নদী থেকে জল সরাসরি চলে আসছে কোঠিওয়ালা গ্রামে। তবে শুধু এই একটি গ্রাম নয়, লোঙ্গির এই খালের জলে উপকৃত হবেন আরও পাঁচটি গ্রামের মানুষ। এই পাঁচটি গ্রামের মাঠও হয়েছে শস্য-শ্যামল। যা দেখে এখন জুড়িয়ে যায় চোখ। শুধু চাষবাস নয়, গ্রামবাসীরা ওই খালে মাছ চাষ করতে পারবেন বলে দাবি করলেন ৭২ বছরের তরুণ লোঙ্গি। সামান্য একটা খাল গোটা গ্রামের দারিদ্র দূর দূর করবে বলে জানালেন এই বাহাত্তুরে তরুণ। লোঙ্গির কাটা এই খালে পাহাড় থেকে নেমে আসা বর্ষার জল যেমন গ্রামে ঢুকবে তেমনই পাহাড়ি নদীর জলও নিয়মিত আসবে।
লোঙ্গির এই অবদান স্বীকার করে নিয়েছেন বিনোদ ঝা নামে ওই গ্রামেরই এক ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লোঙ্গি একাই এই খাল কেটেছেন। জঙ্গলের মধ্যে লোঙ্গি দিনের পর দিন একা একা কী করছিলেন সেটা আমরা কেউই বুঝিনি। আজ বুঝতে পারছি লোঙ্গি কত বড় একটা কাজ করেছেন। তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল কাটার ফলে আশপাশ এলাকার একাধিক গ্রামের সুবিধা হবে। চাষবাস করতে পারবে গ্রামের মানুষ।
<
p style=”text-align: justify;”>সিং নামে ওই এলাকার এক শিক্ষক বলেছেন, এই খাল কাটার জন্য কোনও প্রশংসাই লোঙ্গির জন্য যথেষ্ট নয়। লোঙ্গির এই কাজে প্রচুর মানুষের উপকার হবে। ইতিমধ্যেই গোটা এলাকার চেহারা লোঙ্গি একার হাতেই পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর এই অবদান এলাকার মানুষ কোনও দিন ভুলতে পারবে না।
]]>কুমির বলতে পরিবেশবিদ বলেছেন শহরের খালে ক্রমাগত তরল ও কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ হওয়াকে। বাঘ, খাল এবং জলার দুপাশে লক্ষ লক্ষ দখলদার। পরিবেশবিদ বলেন, “আমরা বিপদকে আহ্বান করছি। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে কয়েক সপ্তাহ আগে কেষ্টপুর ও বাগজোলা খালের হাল-হকিকৎ দেখতে বেরিয়েছিলাম। এর দূর্দশার বিবরণ দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। এককথায় আমার কাছে তা ছিল সত্যিই হৃদয়-বিদারক।”
তিনি আরও বলেন, ‘খালদুটোর দু-ধারে হাজার হাজার বেআইনি দখলদারি দেখে আদৌ অবাক হইনি, কেননা ৬ বছর আগেই আদিগঙ্গার পাড় দখল চাক্ষুষ করেছিলাম। চমকিত হলাম এখানে এর ব্যপকতাটা দেখে। স্থায়ী ও অস্থায়ী কাঠামো তৈরী করে খালের ধারেই কেবল নয়, জলের ওপরেও অসংখ্য নির্মাণে অবাধে চলছে ব্যবসা ও বসবাস। ঐ প্রান্তিক মানুষগুলোকে দেখে প্রথমেই ফ্ল্যাশ ব্যাকে আমার ছিন্নমূল হওয়া ছেলেবেলার বস্তিজীবনের কয়েকটা অধ্যায় মনে আসলো। এটা অনুভব করলাম যে আমি বা আমরা তখন ঢের ভালো ছিলাম। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি এই ছিন্নমূল মানুষগুলো কারা বা কোথা থেকে এসেছেন! “

পরিবেশবিদ জানিয়েছেন, ” কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মার্চ ২০২১ এ সারা ভারতে ট্রিটমেন্ট প্লাণ্টের কার্য্যকরণের ওপর একটা রিপোর্ট তৈরী করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের রাজ্যে দৈনিক মোট ৫৪৫৭ মিলিয়ন লিটার তরল বর্জ্য তৈরী হয়, তার মধ্যে মাত্র ৩৩৭ মিলিয়ন লিটার শোধিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা শতকরা প্রায় ৯৬ শতাংশ তরল বর্জ্য (মলমূত্র ও অন্যান্য) সরাসরি খাল-বিল-নদী-নালায় নিক্ষেপ করি। জলদূষণ এখন আমাদের দেশের ভূষণ। খাল-পাড়ের দখলদারেরাতো খাল ও জলাগুলোকে সরাসরি প্রক্ষালনে পরিণত করেছে, আর আমাদের মতন জিম্মাদারেরা পরোক্ষভাবে এগুলোকে প্রক্ষালন বানিয়েছে। তাই বাগজোলা ও কেষ্টপুর খালের ধারে এত দূর্গন্ধ পেয়েছিলাম যে আমার পূর্বজন্মের অন্নপ্রাশনের ভাতও প্রায় উঠে এসেছিলো।
শুধু তরল বর্জ্যই নয়- এত জঞ্জাল যে খাল দুটোতে কোথা থেকে আসে বা কিভাবেই তা প্রবাহিত হয় তা বুঝে উঠতেই পারলাম না। চলমান কঠিন বর্জ্যের এই প্রবাহের দৃশ্য সত্যিই বিরল। এখানেই শেষ নয় জাল বা দড়ি দিয়ে আটকে এই জঞ্জাল খাল থেকে তোলার প্রস্তুতিও কয়েক জায়গায় দেখলাম। খালে জঞ্জাল ফেলে সেগুলোকে ঠিকঠাক না রেখে, তা নোংরা করার পর পরিষ্কারের প্রয়াসটাকে অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিই বা বলতে পারি?”
তিনি বলছেন, “রাজ্যে মোট কত খাল রয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই। শুধুমাত্র গঙ্গাতেই ১৩৮ টা খাল সংযোজিত রয়েছে বলে রিপোর্ট। নিজেদের বাড়ির টয়লেটগুলোকে সাফ-সুরত রেখে আমরা রাজ্যের সব খাল ও তৎসহ নদীগুলোকেই টয়লেট বানিয়ে ফেলেছি। একটা প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। কেন খাল ও জলাগুলোর আজ এই করুণ হাল? সরকার ও প্রশাসন করছেটা কি? আমি বলি ওঁরা ভোট ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটটা অটুট রাখতেই কেবল আগ্রহী। অন্য কোন এজেন্ডা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নেই। খাল-বিল,জলা ও নদীগুলো আজ সেই কারণে অনাথ।”
]]>