freedom fighter – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com Stay updated with Ekolkata24 for the latest Hindi news, headlines, and Khabar from Kolkata, West Bengal, India, and the world. Trusted source for comprehensive updates Sat, 13 Nov 2021 20:09:51 +0000 en-US hourly 1 https://ekolkata24.com/wp-content/uploads/2024/03/cropped-ekolkata24-32x32.png freedom fighter – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com 32 32 ১৯ বছরের বিপ্লবীর শেষ যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ https://ekolkata24.com/offbeat-news/the-story-of-freedom-fighter-uday-chanda-jain Sat, 13 Nov 2021 20:09:51 +0000 https://ekolkata24.com/?p=11228 বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য ১৮৫৭ সালে শুরু হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ৯০ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলে। ১৯৪২ এর আন্দোলনে বহু বীর শহীদ হয়। অন্যতম উদয়চন্দ জৈন। প্রাচীন মহাকৌশল ও আজকের মধ্যপ্রদেশের প্রাচীন আর প্রসিদ্ধ নগর মন্ডলা। মন্ডলার লোকজন অমর শহীদ উদয়চন্দ জৈন-এর কথা এখনও স্মরণ করে।

উদয়চন্দ জৈন মাত্র ১৯ বছর বয়সে বুকে ইংরেজদের গুলি খেয়ে স্বাধীনতার মার্গ প্রশস্ত করেন। উদয়চন্দ জৈন-এর জন্ম হয়েছিল ১০ ই নভেম্বর ১৯২২ সালে হয়। তার পিতার নাম ছিল ত্রিলোকচন্দ জৈন। তিনি তো মেধাবী ছাত্র ছিলেনই, সাথে নেতৃত্ব ও ক্ষমতার জন্য ছাত্র সংঘের প্রধান নেতৃত্বকারি বানানো হয় তাকে। ১৯৪২-এর আন্দোলন সারা দেশকে জাগ্রত করে তোলে। “করো ইয়া মারো” শ্লোগান সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন মন্ডলা নগরও পিছিয়ে থাকেননি। ১৪ আগস্ট ১৯৪২ সাল শ্রী মন্নুলাল মাদী ও মথুরা প্রসাদ যাদব-এর আহ্বানে জগন্নাথ হাই স্কুলের ছাত্ররা হরতাল শুরু করেন।

উদয়চন্দ জৈন দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। প্রসিদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী গোপাল প্রসাদ তিওয়ারি তার স্মরণে লিখেছিলেন- ইংরেজের অত্যাচারে যখন লোকজন পালাতে শুরু করে তখন আমি উদয়চন্দ জৈনকে বলেছিলাম, এক উচু স্থানে গিয়ে লোকজনকে সামলাও আমি ভিড়ের মধ্যে ঢুকে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করি। এই ভাবে উদয়চন্দ জৈন এক উঁচু স্থানে গিয়ে দাড়ান ও পুরো শান্তিপূর্ণ ভাবে হরতাল পালন করতে বলেন। এবার লোকজন আবারো এক হয়ে তাদের শ্লোগান শান্তিপূর্ণ ভাবে দেন।

উচ্চ ইংরেজ জেলার পুলিশকে গুলি চালানোর আদেশ দেন। পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করেন, আর গুলি উদয়চন্দ জৈন এর পেট চিরে শরীরে প্রবেশ করেন। উদয়চন্দ জৈন “ভারত মাতার জয়” বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাটিতে রক্তের নদী বয়ে যাচ্ছে, তখন পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সমস্ত লোকজন হাসপাতালের দিকে রওনা হন। লোকজনেরা পুলিশের রক্তের পিপাসা হয়ে ওঠে।

উদয়চন্দ জৈন ১৯৪২-এর ১৫ ই আগস্ট পুরো রাত গুলির আঘাতে কাতরাতে থাকে, কিন্তু ১৬ ই আগস্ট বীরগতি প্রাপ্ত হন। উদয়চন্দ জৈন মরেও অমর হয়ে রইলেন। জেলা প্রতিনিধি গজাধর সিং তিওয়ারি উদয়চন্দ জৈন-এর পিতার কাছে গিয়ে বলেন চুপচাপ তার ছেলের অন্তিমসংস্কার করা হোক। ত্রিলোকচন্দ ধৃঢ়তা পূর্বক এর বিরোধিতা করেন। নগরের প্রসিদ্ধ উকিল শ্রী অসগর আলী ক্রমশ: মন্ডলা ও মহারাজপুর জনগন ও পুলিস প্রশাসকে আশ্বস্ত করেন, অন্তিম সংস্কার-এর এই আন্দোলনে হিংসা হবে না। হ্যাঁ, যদি পুলিস প্রশাসন এই অন্তিম যাত্রায় শামিল হন তবে দাঙ্গা ও খুনাখুনি থামানো যাবে না।

মণ্ডলার ইতিহাসে এমন অন্তিম যাত্রা কখনো বের হয় নি। সোনা যায় যে প্রায় ৯ হাজার লোকজন এই অন্তিম যাত্রায় শামিল হন। সেই সময় মন্ডলায় মাত্র ১২ হাজার গ্রামবাসী ছিল। মন্ডলায় তার নামে একটি স্কুল চালু করা হয়। ১৬ ই আগস্ট প্রতি বছর সেখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরই মাঝে তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

]]>
‘একজন ইউরোপীয়ও থাকবে না মেদিনীপুরে’, ফাঁসির আগের হুঙ্কার চমকে দিয়েছিল বার্জকে https://ekolkata24.com/offbeat-news/freedom-fighters-pradyot-kumar-bhattacharya Sat, 13 Nov 2021 19:58:05 +0000 https://ekolkata24.com/?p=11225 বিশেষ প্রতিবেদন: ১২ জানুয়ারি ১৯৩৩। জেলের ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা। কনকনে ঠান্ডা। তত ক্ষণে প্রদ্যোতের স্নান সারা। গীতাপাঠও করে নিয়েছেন। ছ’টা বাজতে তিন মিনিটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল ফাঁসির মঞ্চে। জেলের বিভিন্ন সেল থেকে গর্জন, ‘প্রদ্যোৎ কুমার কি জয়।’ মঞ্চের ওপরে দাঁড়ালেন।

নিহত ডগলাসের পরবর্তী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ বার্জ জিজ্ঞেস করলেন,‘Are you ready?’ শান্ত ভাবে প্রদ্যোৎ বললেন, ‘One minute please Mr. Burge, I have something to say.’ বার্জ অনুমতি দিলেন। এ বারে প্রদ্যোৎ হাসতে হাসতে বললেন,‘We are determined, Mr. Burge, not to allow any European to remain at Midnapore. Yours is the next turn. Get yourself ready.’ (এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিল। মাস সাতেক বাদেই বার্জকে হত্যা করেন বিপ্লবীরা।) একটু থেমে আবার বললেন, ‘I am not afraid of death. Each drop of my blood will give birth to hundreds of Prodyots in all houses of Bengal. Do your work please.’ কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা পড়ল। ফাঁসির দড়ি পরানো হল। শেষ বারের মতো উচ্চারণ করলেন, ‘বন্দে মাতরম’। দুই দাদা, প্রভাতভূষণ ও শক্তিপদ দেখলেন সেই মৃত্যুদৃশ্য।

ধীরস্থির, শান্ত, প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ১৯৩০ সালে মেদিনীপুরের হিন্দু স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে, স্থানীয় কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পরেই জীবন পালটে গেল। অথচ তাঁর পরিবারে কেউ কখনও স্বদেশি করেননি। বাবা ছিলেন রেভিনিউ এজেন্ট। বড় ভাই ডাক্তার। মেজ ভাই সাউথ ইস্টার্ন রেলের কর্মী।

এক সময়, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার বা বিভি মেদিনীপুর শাখার নিষ্ঠাবান যোদ্ধা দীনেশ গুপ্তের সান্নিধ্যে আসেন প্রদ্যোৎ। তখন প্রদ্যোতের সবে সতেরো। দীনেশ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি জানো, ধরা পড়লে ফাঁসি, দ্বীপান্তর, অকথ্য অত্যাচার, ভাগ্যে যা খুশি জুটতে পারে। হাসিমুখে সইতে পারবে?’ প্রদ্যোৎ বললেন, ‘নিশ্চয়ই।’ ‘মন্ত্রগুপ্তি রক্ষা করতে পারবে?’ ‘পারব।’ ১৯৩০-এ প্রদ্যোৎকে দলে নিলেন।

মেদিনীপুর সংস্থার পরিচালনার ভার পড়েছিল প্রফুল্ল দত্তের ওপর। তিনি বললেন, ‘বাঃ, এই তো সাচ্চা দীনেশ গুপ্তের ভাবশিষ্য। নামেও কচি (প্রদ্যোতের ডাকনাম), বয়সেও। তবু কাজে লাগানো যেতে পারে।’ এই প্রদ্যোৎই জেল ম্যাজিস্ট্রেট প্যাডি হত্যার প্ল্যান করার জন্য ২৫ মার্চ ১৯৩২-এ সন্ধে সাতটায়, ফণী কুণ্ডু, জ্যোতিজীবন, বিমল দাশগুপ্ত এবং প্রফুল্ল দত্তের সঙ্গে দেখা করলেন, স্টেশনের নির্জন মাঠে। কিছু দিন পরে এক সন্ধেয়, একটি জেলা স্কুলশিক্ষা প্রদর্শনীতে হঠাৎ রিভলভারের গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়লেন অত্যাচারী প্যাডি। হত্যাকারী জ্যোতিজীবন ঘোষ এবং বিমল দাশগুপ্ত তখন বিদ্যুৎগতিতে সীমানার বাইরে।

তার পরে শুরু হল পরবর্তী ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাসকে হত্যার পরিকল্পনা। প্রভাংশুশেখর পাল এবং প্রমথ মুখোপাধ্যায়ের ওপর পড়ল দায়িত্ব। কংসাবতী নদীর তীরে ওঁরা অপেক্ষায়। ডগলাস বোটে করে পার হবেন। কথা ছিল, গাড়ি থেকে নামলেই গুলি। কিন্তু সে দিন তিনি নামলেন না। অভিযান ব্যর্থ। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার হল। প্রমথ ভীষণ নার্ভাস। অতএব তাঁকে বাতিল করে, এলেন প্রদ্যোৎ।

৩০ এপ্রিল ১৯৩২। দুপুর পৌনে দুটো। ডগলাস ব্যস্ত জেলা মিটিং-এ। প্রদ্যোতের চোখে চশমা। সিঁথিটা অন্য দিকে কাটা। প্রভাংশুর মোটা গোঁফ, মালকোঁচা মারা ধুতি। দুজনেই ছদ্মবেশে। প্রহরীরা কিছু বোঝার আগেই দুজন তীব্র গতিতে একেবারে ডগলাসের পিছনে। গুলি ছুড়লেন। তার পর ওঁরা ছুটছেন। গুলি ছুড়তে ছুড়তে প্রভাংশু অমর লজের পাশ দিয়ে পালালেন। পথে একটি সাঁকোর তলায় রিভলভারটি পুঁতে সাধারণ পোশাকে অদৃশ্য হলেন। প্রদ্যোতের ভাগ্য সে দিন বিরূপ। পিছনে প্রহরীদের চিৎকার— পাকড়ো পাকড়ো। গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা পিছু নিয়েছে। প্রদ্যোৎ ঘুরে বার বার রিভলভারের ট্রিগারে চাপ দিলেন। কিন্তু গুলি বেরল না। দৌড়তে দৌড়তে একটি পোড়ো বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লেন। বন্দুকে নতুন গুলি ভরতে চেষ্টা করলেন। ইতিমধ্যে কপাটহীন ঘরে ঢুকে এক জন গুলি চালাল।

প্রদ্যোৎ ঘর থেকে বেরিয়ে উত্তর দিকে দৌড়লেন। বন্দুক তাক করে আবার ট্রিগারে চাপ দিলেন। নাঃ, এ বারেও গুলি বেরোল না। শেষে ঝোপ-জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সরু গলি ধরে পালাচ্ছেন, হঠাৎই কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় জড়িয়ে ছিটকে পড়লেন। ইটের টুকরো এসে লাগল মুখে। রিভলভার ছিটকে পড়ল দূরে। ব্যস, তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রাজভক্তের দল। এলোপাথাড়ি মার। রক্তাক্ত প্রদ্যোতের চোখে তখনও আগুন। পকেট থেকে পাওয়া গেল দু’টুকরো কাগজ। একটিতে লেখা: ‘A fitting reply to premeditated and prearranged barbarous & cowardly attempt on the patriotic sons of Bengal— Bengal revolutionaries.’ অন্যটিতে: ‘হিজলী হত্যার ক্ষীণ প্রতিবাদে— ইহাদের মরণেতে ব্রিটেন জানুক। আমাদের আহুতিতে ভারত জাগুক— বন্দেমাতরম।’ প্রচণ্ড অত্যাচার চলল প্রদ্যোতের অলিগঞ্জের বাড়িতেও। ঘরের আসবাব ভেঙেচুরে তছনছ। প্রদ্যোতের মা’কে কটূক্তি। বড় ভাই আর মেজ ভাই তখন গ্রামে ছিলেন না। তখন, প্রদ্যোতের ঠিক ওপরের ভাই শর্বরীভূষণকে থানায় নিয়ে যাওয়া হল।

ও দিকে হাজার জেরা, শত অত্যাচারেও প্রদ্যোতের মুখ থেকে একটা কথাও বেরোয়নি। বেরোয়নি সঙ্গী প্রভাংশু বা অন্য কারও নাম। স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টায় যখন ভূপেন দারোগা ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন করেন, ‘ছিঃ প্রদ্যোৎ, তোমার মতো বুদ্ধিমান ছেলে এমন ভুল করল? শেষে কিনা তুমি এমন একটা রিভলভার নিয়ে গেলে, যা কাজের বেলায় একেবারেই সাড়া দিল না!’ শিকল-বাঁধা দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে প্রদ্যোৎ বলেছিলেন: ‘Irony of fate, Bhupen-babu, had my revolver spoken out, I would not have been here and in this condition, the story would have been otherwise.’ রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ-নজরুল তাঁর জপতপ ছিলেন। আশপাশের সেল থেকে, এমনকী প্রহরীও শুনত তাঁর গান। বিপ্লবী ভূপাল পান্ডা তখন একই জেলে। তিনি লিখছেন: …সন্ধ্যায় লকআপের পর হঠাৎ শোনা গেল প্রদ্যোতের মধুর কণ্ঠের গান, রবীন্দ্রনাথের ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে/ তা ব’লে ভাবনা করা চলবে না।’ কখনও বা কাজী নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু…’

সে দিন তাঁর বয়স ছিল মাত্র আঠারো বছর…’ চিঠিটি জেল কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে পাঠিয়েছিলেন তাঁর মা’কে। কিছু কিছু অংশ: ‘কিন্তু আজ একটা আদর্শের জন্য প্রাণ বিসর্জন করছি। তাতে আনন্দ আমার মনের কানায় কানায় ভরে উঠেছে। …ফাঁসির কাঠটা আমার কাছে ইংরেজের রসিকতা মনে হচ্ছে। আমার এই অন্তরের কথাটা তোমারই অন্তরের প্রতিধ্বনি। আমি চিরদিনই জানি যে, আমি বাঙালী (বা ভারতবাসী) আর তুমি বাংলা (বা ভারতবর্ষ) একই পদার্থ। যুগ যুগ ধরে তুমি যে অপমান, লাঞ্ছনা ও নির্যাতন সহ্য করে এসেছ, মাটিতে মুখ থুবড়ে বোবা গরুর মতো মার খেয়েছ, তারই বিরুদ্ধে তোমার মনে যে বিদ্রোহের ধারা অন্তঃসলিলা ফল্গুর মতো বয়ে যাচ্ছিল, সেই পুঞ্জীভূত বিদ্রোহ-ই আমি।’

‘বিপ্লব জিনিসটা কিছু আমোদের নয়, কিন্তু মানব জাতিকে ধ্বংসের হাত হতে বাঁচানোর জন্য যুগে যুগে এটার প্রয়োজন হয়েছে।’

‘যাঁদের প্রতিটি রক্তবিন্দু দাসত্বের কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়ে গেছে তাঁদের কথা ভাবি না। …কিন্তু যাঁরা মধ্যপন্থী, আপস মীমাংসায় এখনো বিশ্বাসবান, তাঁদের জন্য দুঃখ হয়।’

রাজবন্দি কৃষ্ণলাল চট্টোপাধ্যায় ফাঁসির আগের দিন দেখা করে কানে কানে বললেন, ‘ভাই, কাউকে কিছু বলবার আছে কি?’ প্রদ্যোৎ বললেন, ‘আমার প্রতিটি রক্তবিন্দুতে যেন একটি করে শহিদ তৈরি হয়।’

এল শেষের সে দিন। ১২ জানুয়ারি ১৯৩৩। জেলের ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা। ঢং ঢং শব্দে জেগে উঠল ভোর। কনকনে ঠান্ডা। চার দিকে কুয়াশা। তত ক্ষণে প্রদ্যোতের স্নান সারা। গীতাপাঠও করে নিয়েছেন। ছ’টা বাজতে তিন মিনিটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল ফাঁসির মঞ্চে। জেলের বিভিন্ন সেল থেকে গর্জন, ‘প্রদ্যোৎ কুমার কি জয়।’ মঞ্চের ওপরে দাঁড়ালেন। নিহত ডগলাসের পরবর্তী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ বার্জ জিজ্ঞেস করলেন,‘Are you ready?’

শান্ত ভাবে প্রদ্যোৎ বললেন, ‘One minute please Mr. Burge, I have something to say.’ বার্জ অনুমতি দিলেন। এ বারে প্রদ্যোৎ হাসতে হাসতে বললেন,‘We are determined, Mr. Burge, not to allow any European to remain at Midnapore. Yours is the next turn. Get yourself ready.’ (এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিল। মাস সাতেক বাদেই বার্জকে হত্যা করেন বিপ্লবীরা।) একটু থেমে আবার বললেন, ‘I am not afraid of death. Each drop of my blood will give birth to hundreds of Prodyots in all houses of Bengal. Do your work please.’ কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা পড়ল। ফাঁসির দড়ি পরানো হল। শেষ বারের মতো উচ্চারণ করলেন, ‘বন্দে মাতরম’। দুই দাদা, প্রভাতভূষণ ও শক্তিপদ দেখলেন সেই মৃত্যুদৃশ্য।

এর পরের ইতিহাস আরও করুণ। শর্বরীভূষণের সঙ্গে বিপ্লবী দলের কোনও যোগাযোগ ছিল না। হ্যাঁ, প্রদ্যোতের পিঠোপিঠি ভাই হিসেবে কিছু হয়তো জানতেন। সন্দেহের বশে তাঁকেও জেলে পোরা হল। চলল অকথ্য অত্যাচার। চার বছর জেল-হাজত, তার পর শর্বরী অত্যাচারের চোটে পাগল হয়ে গেলেন। রাঁচির উন্মাদ আশ্রমে বাকি জীবন কাটাতে হল। ১৯৮০ সালের ২৮ মার্চ মারা যান। তখনও জানতেন না, দেশ স্বাধীন হয়েছে।

]]>
ফাঁসির মুহূর্তেও নিরুত্তাপ, হুতাত্মার দেহ ভষ্ম পেতে পাগল হয়েছিল তিলোত্তমা https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-story-about-freedom-fighter-kanailal-dutta Wed, 10 Nov 2021 17:26:46 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=10949 Special Correspondent, Kolkata: তাঁকে ফাঁসির সাজা শোনানোর সময় বিচারক প্রথামাফিক জানালেন, উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, “আবেদন? কিসের আবেদন?”। তিনি কানাইলাল দত্ত। যার মৃতদেহের ভষ্ম পেতে শহরে হইহই পড়ে গিয়েছিল।

কুড়ি বছর বয়সী কানাইয়ের ফাঁসির দিন ধার্য হল ১৯০৮-এর ১০ই নভেম্বর আজকের দিনে। কাকভোরে জেলে উপস্থিত হলেন খোদ নগরপাল হ্যালিডে সহ লালবাজারের পদস্থ কর্তারা। সকাল ছ’টায় কানাইলালকে নিয়ে যাওয়া হল ফাঁসির মঞ্চে। কানাই ছিলেন অচঞ্চল, তাপ উত্তাপহীন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে পাওয়া যায়, কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দেওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন স্মিতহাস্য। ফাঁসির সময় উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার পরে বারীনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “How many more do you have like him?” এমন আরও কতজন আছে কানাইয়ের মতো? নিরুত্তর ছিলেন বারীন, মৃদু হেসেছিলেন শুধু।

আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার গতিপ্রকৃতি তুমুল আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল বঙ্গসমাজে। নরেন-হত্যায় অভিযুক্ত দুই যুবককে কেন্দ্র করেও সর্বস্তরে স্রোত বইছিল সহানুভূতির। যা অজানা ছিল না প্রশাসনের। কানাইলালের মরদেহ নিয়ে মূল রাজপথ দিয়ে শোভাযাত্রার অনুমতি দিলেন না নগরপাল। টালি নালার পার্শ্ববর্তী গলিঘুঁজি দিয়েই শ্মশানযাত্রা হবে, নির্দেশ জারি হল। আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় ফোর্ট উইলিয়াম থেকে তলব করা হল রিজার্ভ ফোর্সের তিনশো জওয়ানকে।

কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে কি আর বলপূর্বক রাশ টানা যায়? গিয়েছে কখনও? মরদেহ যখন পৌঁছল গলির গলি তস্য গলি পেরিয়ে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে, তখন মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে প্রতীক্ষারত জনসমাগম। আট থেকে আশি নেমে এসেছে রাস্তায়, শহীদবরণে। আশেপাশের বাড়িগুলির বারান্দা থেকে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে।
মহিলারা প্রস্তুত ফুল-মালা-ঘি-চন্দন নিয়ে, বয়স্কদের অধিকাংশের হাতে ভগবদগীতা। তরুণদের সম্মিলিত “বন্দেমাতরম”-এর গর্জন পরিণত শব্দব্রহ্মে। শহীদের দেহ ছুঁতে চাওয়ার আকুতিতে উত্তাল অপ্রশস্ত পথপরিসর। যানচলাচল স্তব্ধ জনস্রোতে। তুঙ্গস্পর্শী উন্মাদনাকে কোনোমতে নিয়ন্ত্রণে এনে যখন শেষকৃত্য সম্পন্ন হল যুবকের, ফের ঘটল আবেগের অগ্ন্যুৎপাত। পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাওয়া দেহের ছাইভস্ম দখলে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল উন্মত্ত জনতা। ক্রোধ-ক্ষোভ-শোকের বিরল ত্র্যহস্পর্শের সাক্ষী থেকেছিল শ্মশানপ্রাঙ্গন।

চন্দননগর যুগান্তর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক চারুচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণায় কানাইলাল বিপ্লববাদে দীক্ষা নেন এবং ব্রিটিশ-ভারতে বিপ্লবীদের মুখপত্র যুগান্তর ও অন্যান্য পত্রিকা, বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং দেশপ্রেমিকদের জীবনগাথা পাঠে উদ্বুদ্ধ হন। শ্রীশচন্দ্র ঘোষের সক্রিয় নেতৃত্বে উপেন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ, বসন্তকুমার প্রমুখের গোন্দলপাড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে কানাইলালের ঘনিষ্ঠতা হয়। শ্রীশচন্দ্রেরই ব্যবস্থাপনায় কানাইলাল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও আয়ত্ত করেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চন্দননগর গোষ্ঠীর মধ্যে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, যার পুরোভাগে ছিলেন কানাইলাল। এ সময় চন্দননগরে বিলাতি বস্ত্রবর্জন আন্দোলনসহ ইংরেজবিরোধী অসংখ্য স্থানীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কানাইলাল খ্যাতি অর্জন করেন।

বিএ পরীক্ষা শেষে কলকাতায় বারীন্দ্রকুমার ঘোষ পরিচালিত গুপ্ত বিপ্লবী গোষ্ঠীর কার্যকলাপে কানাইলাল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ভবানীপুরের এক গৃহে গোপনে কর্মময় জীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি বাগবাজারের ১৫ গোপীমোহন দত্ত লেনে চলে যান, যেখানে ছিল বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র ও বারুদের ভান্ডার।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ড হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ২ মে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ও অন্যান্যের সঙ্গে কানাইলালও গ্রেপ্তার হন। তাঁদের আলীপুর জেলে (বর্তমান প্রেসিডেন্সি জেল) রাখা হয়।

এ মামলার অন্যতম আসামি নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী প্রাণ বাঁচাতে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়ায় বিপ্লবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট দলপতির নির্দেশে কানাইলাল অপর বন্দি বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেল হাসপাতালের ভেতরই নরেন গোস্বামীকে হত্যা করেন। বিচারে কানাইলালের ফাঁসির আদেশ হয়। এ খবর শুনে তিনি তাঁর জন্য কাউকে আপিল করতে নিষেধ করেন। বিনা আপিলে ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর ফাঁসিকাষ্ঠে আরোহণ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বিকার, স্বাভাবিক।

]]>
এক অজানা বিপ্লবীর কথা: অ্যান্ডারসনকে হত্যা থেকে তাম্রপত্র প্রত্যাখ্যান https://ekolkata24.com/offbeat-news/hemchandra-ghosh-the-freedom-fighter-from-bengal Sun, 31 Oct 2021 09:20:02 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9804 Special Correspondent, Kolkata: হেমচন্দ্র ঘোষের পৈত্রিক নিবাস ছিল বানারীপাড়ার গাভা গ্রামে। তবে তাঁর বাবা মথুরানাথ ঘোষ ঢাকার আইনজীবী ছিলেন। তিনি ঢাকায় ২৪  অক্টোবর ১৮৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় ঢাকার জুবিলি স্কুলের সশস্ত্র আন্দোলনে আকৃষ্ট হন। তাঁর শরীরচর্চার গুরু ছিলেন শ্যামাকান্ত ও পরেশনাথ। লাঠিখেলার দীক্ষা বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের কাছে। হেমচন্দ্র ঘোষ ১৯০১ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। উল্লাসকর দত্তের সাহায্যে বারীন ঘোষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং তিনি অনুশীলন ও যুগান্তরগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রেখে তিনি নতুন দল গঠনের প্রেরণা অনুভব করেন।

১৯০৫ সালে শ্রীশ পাল, হরিদাস দত্ত, গুণেন ঘোষ, রাজেন ল গুহ, মাখন চক্রবর্তী, খগেন দাস, বিভূতি বসু, নিকুঞ্জ সেন, সুরেন বর্ধন প্রমুখ সহযোগিদের নিয়ে মুক্তিসংঘ গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলের বড়দা এবং হরিদাস দত্ত মেজদা। ১৯০৬ সালে হেমচন্দ্র ঘোষ কলকাতায় এসেছিলেন শ্রী অরবিন্দ, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, বিপিন পাল মতো বিখ্যাত বিপ্লবীদের সাথে দেখা করতে। কলকাতায় মুক্তি সংঘের একটি শাখা শ্রীশ পাল শুরু করেছিলেন। তিনি এবং তাঁর বিপ্লবী সংগঠন অর্থাৎ মুক্তিসংঘের সহযোগিতায় কিছু বিপ্লবী কর্মকাণ্ড করেন। তার মধ্যে ১৯০৮ সালে নন্দলাল ব্যানার্জির হত্যা (ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য এই পুলিশ অফিসার দায়িত্বে ছিলেন) এবং ১৯১৪ সালে রডা কোম্পানির অস্ত্রলুণ্ঠন।

১৯১৪ সালেই, হেমচন্দ্রকে রডা কোম্পানির অস্ত্রলুণ্ঠন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ১৯১৮ সালে তাকে রাজবন্দী হিসাবে হাজারীবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন কারাগারে ৬ বছর কারাদণ্ডের পরে ১৯২০ সালে তিনি মুক্তি পেয়ে কলকাতায় আসেন ও গোপনে দল সংগঠনে সক্রিয় হন। ১৯২৬ সালে মুক্তি সংঘের সদস্যরা বেণু নামে একটি মাসিক পত্রিকা শুরু করেন। ১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসে তিনি ও তাঁর দল বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এই কংগ্রেস অধিবেশনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে দলটি গঠিত হয়েছিল তার কার্যাবলি মুক্তিসংঘের সদস্যদের পরিচালনায় পরবর্তীকালে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

এই দলের সদস্যরা মেদিনিপুরের তিন জন এবং কুমিল্লার একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেন। হেমচন্দ্র ও সত্যরঞ্জন বকসি পরিচালিত মুক্তিসংঘ পরিচিত হয় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে। বিনয়-বাদল-দীনেশের অলিন্দ-যুদ্ধকে সফল করতে সহায়তা করেন। ১৯৩০ সালে দার্জিলিং-এ তদানীন্তন বাংলার গর্ভনর জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করেন। ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্রের সমর্থনে সরব হন। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে জেলের বাইরে ছিলেন মাত্র দেড় বছর। এই অকৃতদার বিপ্লবী ভারত সরকারের তাম্রপত্র প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এর পরের ইতিহাস আর আমার পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। শেষে ৩১ শে অক্টোবর ১৯৮০ সালে মহান বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

]]>
Jatin Das: ইংরেজ হঠাতে প্রাণ দিলেন যতীন, শেষ যাত্রায় কাঁধ খাটলেন সুভাষ https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-freedom-fighter-jatin-das Wed, 27 Oct 2021 07:04:39 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9321 Special Correspondent: সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর দেহ কাঁধে করে শ্মশানে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যতীন হলো এযুগের দধীচি, অত্যাচারী ইংরেজ সরকারকে পরাজিত করবার জন্য নিজের অস্থি দিয়ে গেল।’

১৯২১, মাত্র ১৭ বছর বয়স তখন, তখনই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁর হাতে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেস কমিটি গঠন ও পরিচালনার ভার দিয়েছিলেন – তিনি যতীন্দ্রনাথ দাস, সকলের যতীন দাস, কলেজের পড়া বন্ধ করে যোগ দিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯২৩ সালে তাঁর সাথে কাশীর শচীন সান‍্যালের পরিচয় হয়। ১৯২৪ সালে স্বদেশী ডাকাতির অভিযোগে শচীন সান‍্যালের সাথে গ্রেপ্তার হন যতীন দাস। ঢাকা জেলে থাকাকালীন জেল সুপারের সাথে একদিন তাঁর তর্ক-ঝগড়া হতে হতে হাতাহাতি শুরু হয়। এই নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে যতীন দাস অনশন শুরু করেন, যা চলে ২২ দিন ধরে। শেষে জেল সুপার ক্ষমা চাইলে তিনি অনশন তুলে নেন।

১৯২৮ সালের কলকাতা কংগ্রেসের দু-তিন মাস আগে যতীন দাসের জেল মুক্তি হয়। ১৯২৮ সালে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সর্বাধিনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু বি.ভি দলে যতীন দাসকে বিশেষ দায়িত্ব দেন। কলকাতা সম্মেলনের শেষে যতীন দাস ও ভগৎ সিং এলাহাবাদ ও লাহোর যান নতুন ধরনের বোমা তৈরি করতে। কাজ হয়ে যাবার পরে যতীন দাস বাংলায় ফিরে আসেন। ১৯২৯ সালের মে মাসে ডায়মণ্ড হারবারের কাউন্সিল নির্বাচনের সময় সুভাষচন্দ্র বসু বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হিসাবে প্রচারে সমস্ত গ্রাম ঘুরতে থাকেন। মগরাহাট, মন্দিরবাজার, সরিষা, ডায়মণ্ড হারবার সদর, কুলপী, করঞ্জলি প্রভৃতি জায়গায়ে প্রচারে সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে সারাক্ষণ থাকতেন তাঁর প্রিয় যতীন দাস।

১৯২৯ সালের ৬ জুন দিল্লীর এ‍্যাসেমব্লি হলে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা ফেলে ব্রিটিশ শাসন আইনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তার হন। সেইসূত্রে ১৯২৯ সালের ১৪ জুন কলকাতার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন যতীন দাস, ১৬ জুন তিনি লাহোর জেলে আসেন। শুরু হয় ভগৎ সিং, রাজগুরু, শুকদেব সহ যতীন দাসের মামলা। এই মামলাই পরে ‘থার্ড লাহোর কন্সপিরেসি কেস’-এ পরিণত হয়।

যতীন দাস তখন ব্রিটিশ আইন আদালতকে পা দিয়ে চূর্ণ করে চলে গেছেন অনেক দূরে। ১৩ জুলাই থেকে ইংরেজ বিরোধী যে বিস্ময়কর অনশনের শুরু ১৩ সেপ্টেম্বর ৬৩ দিনের মাথায় বেলা ১:০৫ মিনিটে হ’ল তার চির সমাপ্তি। যতীন দাসের অমরদেহ এল কলকাতায় নেতাজীর কাঁধে চড়ে।

]]>
দেশপ্রাণ: মেদিনীপুরের মুকুটহীন সম্রাট https://ekolkata24.com/offbeat-news/deshpran-sashmal-a-freedom-fighter Tue, 26 Oct 2021 09:15:15 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9192 Special Correspondent: ১৮৮১ সালে মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমাধীন চাঁদীভেটিতে জন্মগ্রহণকারী বীরেন্দ্রনাথ শাসমল (Deshpran Sashmal) তাঁর দেশপ্রেমের জন্য ‘দেশপ্রাণ’ নামে খ্যাত ছিলেন। গভীরভাবে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রভাবিত এক ধর্নাঢ্য মাহিষ্য পরিবারে তাঁর জন্ম।

১৯০০ সালে বীরেন্দ্র শাসমল কোন্তাই হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি তাঁর শিক্ষক তারকগোপাল ঘোষ ও শশীভূষণ চক্রবর্তী কর্তৃক বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন। প্রথমে কলকাতা মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হলেও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর কাছে শিক্ষা গ্রহণের মানসে পরে রিপন কলেজে যোগ দেন। এরপর তিনি আইন শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য ইংল্যান্ডের মিডল টেম্পলে যান এবং এ সময়েই তিনি আমেরিকা ও জাপানে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ করেন।

১৯০৪ সালে তিনি ব্যারিস্টার হিসেবে কলকাতা হাই কোর্টে যোগ দেন এবং কয়েক বছর আইন ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকেন। এরপর তিনি মেদিনীপুর জেলা আদালতে চলে আসেন। ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায়ও তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর তিনি জেলা বোর্ড ও মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য হন। তিনি রাজনীতিকে সমাজকল্যাণের সমার্থক মনে করতেন। তাই তিনি ১৯১৩, ১৯২০, ১৯২৬ ও ১৯৩৩ সালে মেদিনীপুরের বন্যায় ত্রাণ কর্মী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯১৩ সালে পুনরায় কলকাতা প্রত্যাবর্তন করে তিনি হাই কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির ১৯২০ সালের কলকাতা সম্মেলনে তিনি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯২১ সালের অহিংস অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কিত প্রস্তাব সমর্থন করেন। তবে শাসমল ইতোমধ্যেই চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। নাগপুর সম্মেলন থেকে ফিরে এসে শাসমল তাঁর লাভজনক আইন ব্যবসা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে (১৯২১) যোগ দেন। তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। এসময়েই তিনি তাঁর নিজ জেলাতে ইউনিয়ন বোর্ড বিরোধী বিক্ষোভ গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

শাসমল জাতীয় শিক্ষার সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষা হওয়া উচিত অবৈতনিক এবং ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই শিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। তিনি কাঁথির নিজ বাসগৃহে একটি জাতীয় স্কুল স্থাপন করেন।

১৯২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রিন্স অব ওয়েলস-এর ভারত সফর বয়কটকে কেন্দ্র করে বাংলার নগরগুলিতে অসন্তোষ চরমে পৌঁছে। ১০ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাশ, আবুল কালাম আজাদ, সুভাষচন্দ্র বসু ও অন্যান্য আরও কয়েকজনের সাথে শাসমলকে বয়কট সংঘটিত করার দায়ে গ্রেফতার করে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

জেল থেকে মুক্তি পেয়ে শাসমল বঙ্গীয় প্রাদেশিক স্বরাজ্য পার্টি গঠনে চিত্তরঞ্জন দাশকে সহায়তা করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। আইন পরিষদে তিনি পার্টির হুইপ নির্বাচিত হন। তিনি কলকাতা করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী হতে ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু পাছে কলকাতার কায়স্থগণ রুষ্ট হয় এ ভয়ে চিত্তরঞ্জন দাশ শাসমলকে এ পদে মনোনীত করতে ভয় পান। চিত্তরঞ্জন দাশের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সুভাষচন্দ্র বসু প্রধান নির্বাহী হন। অপমানিত শাসমল এ ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি ত্যাগ করে তাঁর আইন ব্যবসায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং মেদিনীপুরের আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পুনরায় তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।

শাসমল ১৯২৮ সালের বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির কৃষ্ণনগর অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু সভাপতির ভাষণে সন্ত্রাস ও সহিংসতার ওপর তাঁর মন্তব্যের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতির পদ থেকে শাসমলকে বাদ দেওয়ায় বেঙ্গল প্যাক্ট ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মুসলমান বিরোধী একটি অংশ বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটিতে প্রাধান্য বিস্তার করে এবং এর প্রতিবাদে শাসমল, তাঁর বন্ধুমহল ও পার্টির মুসলমান সদস্যগণ দল ত্যাগ করেন। প্রবীণ জাতীয়তাবাদী মুসলমান নেতাগণ কংগ্রেস ত্যাগ করে সাম্প্রদায়িক দল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের বর্বরতা তদন্ত করার জন্য নিয়োজিত বেসরকারি কমিটির সদস্য থাকাকালে তিনি স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন। মুক্তি পাওয়া মাত্রই তিনি চট্টগ্রাম আসেন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় (১৯৩০) আসামী পক্ষের উকিল হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার জন্য এ মামলায় তাঁর যোগদান সহযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধের পরিচায়ক। ১৯৩২ সালের ডগলাস হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় আবারও আসামী পক্ষের উকিল হিসেবে তিনি কাজ করেন। রামসে ম্যাকডোনাল্ডের সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদের প্রতিবাদ জ্ঞাপনের জন্য জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দল আহুত কলকাতা অধিবেশনে তিনি যোগ দেন। ১৯৩৪ সালের ২৪ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

]]>
Rakrishna khotri: ভারত প্রজাতন্ত্র’ গড়েও বিস্মৃত এই বিপ্লবী https://ekolkata24.com/offbeat-news/rakrishna-khotri-the-unsung-freedom-fighter-of-india Mon, 18 Oct 2021 12:53:40 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=8150 বিশেষ প্রতিবেদন: ‘কাকোরি মামলায়’ তাঁকে দশ বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রমুখ বিপ্লবী তিনি। মধ্য ভারত এবং মহারাষ্ট্রে ‘ভারত প্রজাতন্ত্র’ সংগঠন করেছিলেন তিনিই। তিনি রামকৃষ্ণ খত্রি (Rakrishna khotri)। তবুও এক বিস্মৃত বিপ্লবী তিনি।

রামকৃষ্ণ খত্রি হিন্দি , মারাঠি ও ইংরেজিতে পারদর্শী ছিলেন। তিনি ‘শহীদ কি ছায়া মেইন’ নামে একটি বইও লিখেছিলেন, যা নাগপুর থেকে প্রকাশিত । ভারতের স্বাধীনতার পরে, রামকৃষ্ণ খত্রি, ভারত সরকার সহ স্বাধীনতা সংগ্রামের যোদ্ধাদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা চালু করেছিলেন।

রামকৃষ্ণ খত্রি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০২ সালের ৩ মার্চ বর্তমান মহারাষ্ট্রের জেলা বুলধানা বেরারের চিখালি নামে একটি গ্রামে । তাঁর বাবার নাম শিবলাল চোপড়া এবং মায়ের নাম কৃষ্ণবাই। ছাত্রজীবনে লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলকের বক্তৃতাগুলিতে প্রভাবিত হয়ে রামকৃষ্ণ খত্রি সাধু সমাজকে সংগঠিত করার সংকল্প করেছিলেন এবং ‘উদাসীন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি মহন্ত গোবিন্দ প্রকাশের নামে পরিচিত ছিলেন।

বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসার পরে তিনি স্বেচ্ছায় ‘হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। রাম প্রসাদ বিসমিল একজন সুপরিচিত মারাঠি ভাষা হওয়ায় তাঁকে উত্তরপ্রদেশ থেকে সরিয়ে মধ্য প্রদেশে পাঠিয়েছিলেন। ব্যবস্থা অনুসারে, তাঁকে সংঘের সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। ‘কাকোরীর ঘটনা’-এর পরে, যখন পুরো ভারত থেকে বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন রামকৃষ্ণ খাত্রিকে পুণা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল এবং লখনৌ কারাগারে নিয়ে যায় এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করে। সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতে, তিনি মধ্য ভারত এবং মহারাষ্ট্রে হিন্দুস্তান গণতন্ত্র ইউনিয়ন বাড়ানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে দশ বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়।

রামকৃষ্ণ খত্রি যখন সাজা দেওয়ার পরে কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি প্রথমে রাজকুমার সিনহার বাড়ি পরিচালনার সাথে জড়িত হন, তারপরে যোগেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মুক্তির চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে জেল থেকে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। কাকোড়ির কাছে ‘কাকোরি শহীদ স্মৃতিসৌধ’ কেবল রামকৃষ্ণ খত্রি এবং প্রেমকৃষ্ণ খন্নার যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছিল। সন ১৯৭৭ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর, লক্ষ্ণৌ ‘কাকোরির শহীদ অনুষ্ঠান, তারপর ১৯৮১ সালের , ২৭ এবং ২৮ শে ফেব্রুয়ারী এলাহাবাদে শহীদ চন্দ্রশেখর আজাদ এর স্মৃতির একটি অনুষ্ঠান ও ১৯৮১ সালের ২২ ও ২৩ মার্চ নয়া দিল্লিতে শহীদ ভগত সিং , সুখদেব , রাজগুরু শহীদ উদযাপনে অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ খত্রি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

রামকৃষ্ণ খত্রি একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর রচিত বই ‘শহীদ ছায়া মেইন’ ১৯৮৩ সালে নাগপুরের বিশ্বভারতী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। শেষে ১৮ অক্টোবর ১৯৯৬ সালে অমর বিপ্লবী রামকৃষ্ণ খত্রি লখনৌ, উত্তরপ্রদেশে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

]]>
ভারত থেকে বাংলাদেশ, স্বাধীনতা আন্দোলনের উজ্জ্বল নাম মনোরমা মাসীমা https://ekolkata24.com/offbeat-news/manorama-basu-the-freedom-fighter-of-india-and-bangladesh Sat, 16 Oct 2021 08:19:47 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=7879 বিশেষ প্রতিবেদন: যোগ দিয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে, অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ক্ষুদিরাম ও মুজিবর রহমানকে দেখে। তিনি মনোরমা বসু (Manorama basu)। 

১৮৯৭ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। আশৈশব দারিদ্র্য তাঁকে কঠোর সাধনায় সিদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। তিনি নিজের জীবনে শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি, কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ ও চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।

জন্মস্থানের অনুকূল পরিবেশ মনোরমা বসুকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। তাই মাত্র এগারো বছর বয়সে ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৪ বছর বয়সে বরিশালের বাঁকাই গ্রামের জমিদার চিন্তাহরণ বসুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয় এবং স্বামীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। জমিদার বাড়ির রক্ষণশীলতা ও বিধিনিষেধ অতিক্রম করে তিনি মুক্ত জীবনে প্রবেশ করেন। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তিনি জমিদার বাড়ি ছেড়ে বরিশালে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।

বরিশালে অবস্থানকালে মনোরমা স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং নারী অধিকার রক্ষায় ‘সরোজনলিনী মহিলা সমিতি’র শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম মহিলা সংগঠন। এ সমিতির মাধ্যমেই তিনি নারী সমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি কংগ্রেস মহিলা কর্মী হন এবং ১৯৩২ সালে কংগ্রেসের ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। এ সময় বহরমপুর জেলে তিনি উর্মিলা দেবী (দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বোন), জ্যোতির্ময়ী দেবী প্রমুখ প্রখ্যাত কংগ্রেস নেত্রীর সান্নিধ্য লাভ করেন।

মনোরমা বসু ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজসেবক। তিনি অনাথ ও দুঃস্থ মহিলাদের, বিশেষ করে বিধবা ও কুমারী মেয়েদের আশ্রয় দানের জন্য বরিশালের কাউনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’। আজীবন তিনি এটি পরিচালনা করেন। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। তিনি ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র বরিশাল জেলা শাখার অন্যতম নেত্রী ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ সালে দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সময় লঙ্গরখানা, চিকিৎসালয় ও উদ্ধার আশ্রম স্থাপন এবং পুনর্বাসন কাজে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন নারী আন্দোলন, সমাজসেবা ও রাজনৈতিক কাজের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বরিশাল জেলা শাখা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনকে গতিশীল করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পরিষদের সহসভানেত্রী ছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নতুন শাসকদের শাসন ও শোষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে বরিশালের খাদ্য-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তিনি এক বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেন এবং সে সঙ্গে জননিরাপত্তা আইনে আরও তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৫২ সালের ২৫ এপ্রিল মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালের ১০ এপ্রিল স্বামীর মৃত্যুতে তিনি কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সে আঘাত কাটিয়ে উঠে তিনি পুনরায় স্বীয় কর্মকান্ড শুরু করেন।

১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে মনোরমা বসু আত্মগোপন করেন এবং সে অবস্থা থেকে আত্মপ্রকাশের পর তিনি ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’-এর কাজে ব্যস্ত থাকেন। একই সঙ্গে গড়ে তোলেন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লিকল্যাণ অমৃত পাঠাগার (শহীদ অমৃতলালের নামে), আর শিশুদের জন্য মুকুল মিলন খেলাঘর। তাঁর অবর্তমানে মাতৃমন্দিরের কার্যনির্বাহের জন্য নিজের সব সম্পত্তি মন্দিরের নামে দান করে যান।

১৯৬২ ও ৬৪’র গণআন্দোলন এবং ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। দেশপ্রেম, সমাজসেবা ও মানুষের প্রতি ভালবাসার কারণে দলমত-নির্বিশেষে সকলে তাঁকে ‘মাসীমা’ বলে ডাকত। বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী, দৃঢ়চেতা, পরোপকারী এবং আদর্শনিষ্ঠ মনোরমা বসুর সমগ্র জীবন ছিল দেশপ্রেমে নিবেদিত। তিনি ছিলেন সাম্যবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত এবং যেকোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ। তাঁর জীবদ্দশাতেই সত্যেন সেনের মনোরমা মাসীমা গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।

]]>
স্বামীজীর বাণী বদলে দিয়েছিল মাতঙ্গিনীর জীবন https://ekolkata24.com/offbeat-news/swamijis-words-changed-matangini-hazras-life Wed, 29 Sep 2021 12:33:08 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=6026 বিশেষ প্রতিবেদন: তিনি গান্ধী বুড়ি। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। সেই তাঁকেই স্বামীজীর বাণী ব্যাপকভাবে স্পর্শ করেছিল। তাই তো ইংরেজদের করা তিনটে গুলির শেষটি চোখ, খুলি ফাটিয়ে বেরিয়ে গেলেও তাঁর হাত থেকে পড়েনি জাতীয় পতাকা। তিনি যে দেশ মায়ের একনিষ্ঠ সেবিকা হয়ে গিয়েছিলেন।

স্বামীজি বলেছিলেন, “এখন থেকে আগামী পঞ্চাশ বছর তোমাদের একমাত্র উপাস্য দেবতা হবেন – জননী-জন্মভূমি। তার পূজো করো সকলে”। ভারতবাসীদের উদ্দেশ্যে বলা স্বামী বিবেকানন্দর একটি বাণী ওই সময়ে মাতঙ্গিনীকে বিশেষভাবে স্পর্শ করেছিল। তারপরে যা হয়েছে তা ইতিহাস।

তাঁর জন্ম ১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর। পশ্চিমবঙ্গের তমলুকের হোগলায়। সাধারণ এক কৃষক ঠাকুরদাস মাইতির ঘরে। অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয় আলিনান গ্রামের ত্রিলোচন হাজরার সঙ্গে। ১৮ বছর বয়সেই স্বামীকে হারান মাতঙ্গিনী হাজরা। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আদতে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিতা। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষাদীক্ষা তেমন ছিল না। ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একনিষ্ঠ অনুসারী। সেইজন্য তাঁর আরেক পরিচয় গড়ে উঠেছিল ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে। গান্ধীর আদর্শমতে, তিনি নিজের হাতে চরকা কেটে খাদি কাপড়ও বানিয়েছেন।

১৯০৫ সালে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। তার বিপ্লবী জীবন ছিল ক্ষুরধার। ব্রিটিশের লবণনীতির প্রতিবাদে তার লড়াই ছিল দুরন্ত। তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেরও সদস্য ছিলেন। ডান্ডি অভিযান, অসহযোগ আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য।

ত্রিশের দশক। মেদিনীপুরের নাম শুনলেই সেই সময় বিদেশী শাসককুল আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ত। আইন অমান্য আন্দোলনে মাতঙ্গিনী ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল। খবর পেয়েই পুলিশ এল। মাতঙ্গিনী গ্রেফতার হলেন। সঙ্গে রইলেন অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরাও। তাঁরাও গ্রেফতার হলেন।

matangini hazra

পরবর্তী ঘটনা ঘটে ১৯৩৪-৩৫ সালের। অবিভক্ত বাংলার লাটসাহেব মি. অ্যান্ডারসন তমলুকে দরবার করবেন। কিন্তু মেদিনীপুরবাসীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লাটসাহেবকে এই দরবার তারা কিছুতেই করতে দেবে না। এদিকে ইংরেজ সরকারও তাঁদের সংকল্পে অটল। ফল, সংঘাত।

লাটসাহেবের দরবার বসার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। এমন সময় হাজার কণ্ঠে ধ্বনি উঠল ‘লাটসাহেব তুমি ফিরে যাও- ফিরে যাও।’ বন্দে মাতরম ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল আকাশ বাতাস।

শোভাযাত্রা এগিয়ে চলল দরবারের দিকে। শত শত পুলিশও হাজির। হাতে তাঁদের লাঠি ও বন্দুক। শোভাযাত্রীদের পথ আটকাল ওই পুলিশবাহিনী। পুরোভাগেই ছিলেন মাতঙ্গিনী। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল। এবার কিন্তু তাঁকে আর এমনিতে ছেড়ে দেওয়া হল না। রীতিমতো বিচার হল। মাতঙ্গিনী দুমাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। বিচারের রায় ঘোষণার পর হাসিমুখে বললেন, “দেশের জন্য, দেশকে ভালোবাসার জন্য দণ্ডভোগ করার চেয়ে বড় গৌরব আর কী আছে?”

মাতঙ্গিনীকে অমর করে রেখেছে ১৯৪২ সালের আগস্ট বিপ্লব। ঘটনা ২৯ সেপ্টেম্বর আজকের দিনের, কিন্তু ৭৯ বছর আগের। আগস্ট বিপ্লবের জোয়ার তখন মেদিনীপুরে আছড়ে পড়েছে। ঠিক হয়েছে এক সঙ্গে তমলুক, মহিষাদল, সুতাহাটা ও নন্দীগ্রাম থানা আক্রমণ করে দখল করে নেওয়া হবে।

মাতঙ্গিনী স্বেচ্ছাসেবকদের বোঝালেন গাছ কেটে ফেলে রাস্তা-ঘাট সব বন্ধ করে দিতে হবে। টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের তার কেটে দিতে হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হবে। পাঁচদিক থেকে পাঁচটি শোভাযাত্রা নিয়ে গিয়ে তমলুক থানা এবং একই সঙ্গে সমস্ত সরকারি অফিস দখল করে নিতে হবে।

যেমন কথা তেমনি কাজ। ২৯ সেপ্টেম্বর পাঁচটি দিক থেকে পাঁচটি শোভাযাত্রা এগিয়ে চলল তমলুক অধিকার করতে। হাজার হাজার মেদিনীপুরবাসী শামিল হয়েছিলেন ওই শোভাযাত্রায়। হাতে তাঁদের জাতীয় পতাকা। মুখে গর্জন ধ্বনি, ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো- করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে – বন্দে মাতরম্’।

পশ্চিমদিক থেকে এগিয়ে এল আট-দশ হাজার মানুষের এক বিরাট শোভাযাত্রা। গুর্খা ও ব্রিটিশ গোরা সৈন্যরা তৈরি হল অবস্থার মোকাবিলার জন্য। হাঁটু মুড়ে বসে গেল তাঁরা। তারপরই তাঁদের বন্দুকগুলো গর্জে উঠল। মারা গেলেন পাঁচজন। আহত হলেন আরও বেশ কয়েকজন।

উত্তর দিক থেকে আসছিল মাতঙ্গিনীর দলটি। তাঁরা থানার কাছাকাছি আসতেই পুলিশ ও মিলিটারি অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে দিল। বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন কিছুটা পিছু হঠে গিয়েছিল। তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে মাতঙ্গিনী বললেন, ‘থানা কোন দিকে? সামনে, না পেছনে? এগিয়ে চলো। হয় থানা দখল করো, নয়ত মরো। বলো, ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ – ‘বন্দে মাতরম’।

বিপ্লবীদের সম্বিত ফিরে এল। তাঁদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হতে থাকল, ‘এগিয়ে চলো। ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো। ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে, বন্দে মাতরম।’ আবার এগিয়ে যেতে লাগল তাঁরা উদ্দাম বেগে। ওদিকে গুলি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল বৃষ্টির মতো।

মাতঙ্গিনী দলটির পুরোভাগে। ছুটে চলেছেন উল্কার বেগে। বাঁ-হাতে বিজয় শঙ্খ যেন পাঞ্চজন্য, ডান হাতে জাতীয় পতাকা। আর মুখে ধ্বনি- ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো-করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে – বন্দে মাতরম’।

একটি বুলেট পায়ে লাগতেই হাতের শাঁখটি মাটিতে পড়ে গেল। দ্বিতীয় বুলেটের আঘাতে বাঁ-হাতটা নুয়ে পড়ল। কিন্তু ওই অবস্থাতেও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ভারতীয় সৈনিকদের উদ্দেশ্য করে বলে চলেছেন, ‘ব্রিটিশের গোলামি ছেড়ে গুলি ছোঁড়া বন্ধ করো – তোমরা সব আমাদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে হাত মেলাও।’ প্রত্যুত্তরে উপহার পেয়েছিলেন কপালবিদ্ধ করা তৃতীয় বুলেটটি। প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু জাতীয় পতাকাটি তখনও তাঁর হাতের মুঠোয় ধরা। সেটি কিন্তু মাটি স্পর্শ করেনি কারণ মরতে মরতেও তিনি চিৎ হয়ে পড়লেন আর পতাকা রইল তাঁর বুকের উপর। কপালের লাগা গুলির ক্ষতস্থান দিয়ে বেরোনো রক্তে তখন সারা শরীর ভেসে গেছে। নিথর দেহে অপলক দৃষ্টিতে যেন চেয়ে আছেন ভবিষ্যৎ স্বাধীন ভারতের প্রত্যাশায়!

যেখানে তিনি লুটিয়ে পড়েছিলেন, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পুরনো দিনের মানুষ আজও বীরাঙ্গনাকে স্মরণ করেন।
প্রতি বছর ১৫ আগষ্ট এলে তমলুকের বানপুকুরের পাড়ে এসে দাঁড়ান তাঁরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের এমন তীর্থক্ষেত্রে এসে সকলেই দাঁড়ান মৃত্যঞ্জয়ী বীরাঙ্গনার জন্যই। আসলে মাতঙ্গিনী হাজরা এমনই এক চরিত্র, যিনি তাঁর সমগ্র সত্তা ও হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন উদ্দীপ্ত দেশপ্রেমের অনন্যতন্ত্রতা, অন্তঃরস্থ মনুষত্বের স্বাধীনতা।

১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলো তখন অসংখ্য স্কুল, পাড়া ও রাস্তার নাম মাতঙ্গিনী হাজরার নামে উৎসর্গ করা হয়। স্বাধীন ভারতে কলকাতা শহরে প্রথম যে নারীমূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি ছিল মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি। ১৯৭৭ সালে কলকাতার ময়দানে এই মূর্তিটি স্থাপিত হয়। কলকাতার ময়দান অঞ্চলে মহান বিপ্লবী মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি এখনো তার শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

]]>
বিখ্যাত দুর্গোৎসবের আড়ালে ঢাকা পড়ে বিপ্লবীর স্বাধীনতা সংগ্রাম https://ekolkata24.com/offbeat-news/corporate-durga-puja-left-behind-the-history-of-freedom-fighter-santosh-kumar-mitra Thu, 16 Sep 2021 05:15:38 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=4719 বিশেষ প্রতিবেদন: কলকাতার অন্যতম সেরা বারোয়ারি পুজো মধ্য কলকাতার ‘সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার’। রূপোর প্যান্ডেল, প্রতিমার সোনার শাড়ি কিংবা পুরো দুর্গা মূর্তিই সোনার বানিয়ে দেওয়া, সবেতেই চমক। পুজোর জাঁকজমকের আড়ালে কোথাও যেন হারিয়ে যান নামাঙ্কিত পার্কের স্বাধীনতা সংগ্রামী সন্তোষ কুমার মিত্র। যাঁর জন্ম ১৫অগাস্ট মৃত্যু ১৬ সেপ্টেম্বর আজকের দিনে। তাঁর আত্মবলিদান, স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইংরেজদের দিনের পর দিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো কিছু নিয়েই আলোচনা হয় না । তাঁর বাড়ি ছিল পূজো প্রাঙ্গণ থেকে কিছু দূরে একটি সরু গলিতে। সে বাড়ির অস্ত্বিত্ব তো নেই, অনেকেই জানেন না কে এই সন্তোষ মিত্র।

durga puja left behind the history of freedom fighter santosh kumar mitra

‘সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার’-এর পুজোর শুরু এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে সামনে রেখেই। তবে ব্র্যান্ড সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার-এ ঢাকা পড়েন বিপ্লবী সন্তোষ কুমার মিত্র। পার্কের নাম বদলও আবার ইংরেজ শাসনকালেই। ১৯২০, গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন তখন তুঙ্গে। অত্যাচারী ইংরেজকে দেশছাড়া করতে বাংলার প্রত্যেক যুবক তখন প্রায় বদ্ধপরিকর। এমনই এক যুবক ছিলেন সন্তোষ কুমার মিত্র। এই মেধাবী ছাত্র ১৯১৯ সালে বিএ এবং ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সসম্মানে মাস্টার্সে উত্তীর্ণ হন। সঙ্গে ছিল এলএলবি ডিগ্রিও। কিন্তু উজ্জ্বল এবং নিশ্চিত ভবিষ্যতকে এক লহমায় দূরে সরিয়ে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ মাতৃকার সম্মান উদ্ধারের কাজে।

কলেজ পাশ করার পর বিপ্লবী সন্তোষ কুমার মিত্র কংগ্রেসের হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এই সূত্রে তিনি হুগলি বিদ্যামন্দিরে যাতায়াত করতেন। হুগলি বিদ্যামন্দিরের প্রধান ছিলেন বিপ্লবী ভূপতি মজুমদার। তাঁর সূত্র ধরেই সন্তোষ মিত্রের পরিচয় বিপ্লবী বারীন্দ্র ঘোষ এবং যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের সঙ্গে। ধীরে ধীরে গান্ধীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। প্রভাবিত হন সহিংস বৈপ্লবিক মতাদর্শে। ইংরেজদের কুনজরে চলে আসেন সঙ্গে সঙ্গে।

durga puja left behind the history of freedom fighter santosh kumar mitra

১৯২৩ সালে ‘শাঁখারীটোলা হত্যা মামলায়’ এক ইংরেজ পোস্ট মাস্টারকে খুনের অভিযোগে তাঁর উপরে সব সন্দেহ এসে পড়ে। গ্রেফতারও হন। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান। বিখ্যাত আলিপুর বোমার মামলাতেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রমাণ ছিল না, এবারও ছাড়া পেয়ে যান। সন্তোষ কুমার মিত্র প্রকাশ্যে যেভাবে বৈপ্লবিক মতাদর্শ প্রচার করে বেড়াচ্ছিলেন তা ইংরেজদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর উপর প্রয়োগ করা হয় ‘বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’ অর্থাৎ তাঁকে দেশের নিরাপত্তার জন্যে বিপদ্জনক ঘোষণা করে দেয় ইংরেজ সরকার। এই আইন অনুযায়ী বিনা বিচারে তাঁকে আটকে রাখা যাবে। হয়ে গেলেন ‘সিকিউরিটি প্রিজনার’।

শুধুমাত্র সন্দেহের বশে গ্রেফতার করে জেলবন্দি করার ফলে শাসকের সামনে আর এক সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রথমত পর্যাপ্ত জায়গার অভাব। আলিপুর ও অন্য বড় জেলগুলোতে সাধারণত দাগি আসামিদের সঙ্গে এঁদের রাখতে হচ্ছিল। দ্বিতীয়ত, এই বন্দিদের কোনও পূর্ব অপরাধের রেকর্ড ছিল না। বন্দি এবং সমাজের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাই ‘সিকিউরিটি প্রিজনার’ রাখার জন্য ১৯৩১ সালে ইংরেজ সরকার আলাদা তিনটি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে। বহরমপুর , বক্সাদুয়ার এবং খড়গপুর রেল জংশনের কাছে হিজলীতে তৈরি হয় তিনটি ক্যাম্প।

]]>