আরও পড়ুন: মমতাও হেরেছেন বলেই আবার ভোটে লড়ছেন, এন্টালিতে প্রিয়ঙ্কার হার প্রসঙ্গে তৃণমূলকে কটাক্ষ তথাগতর
ফলে জিততে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ভোটপ্রচার দেখে ইতিমধ্যেই বোঝা গিয়েছে, প্রেস্টিজ ফাইটে কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে মরিয়া তিনি। ভবানীপুরের গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। কলকাতা হাই কোর্টের অ্যাডভোকেট প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। ২০১৪ সালে মোদী ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। ক্ষমতায় এসেছিল এনডিএ সরকার (NDA)। সেবছরেরই আগস্টে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। শুরুতেই দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করেছেন। ছ’বছর পর, ২০২০ সালের আগস্টে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার (বিজেওয়াইএম) সহ-সভাপতি করা হয়।

এতকিছুরই পরেও প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল শুভেন্দু অধিকারী নন। সেরকমভাবেই সিপিআইএমের শ্রীজীব বিশ্বাসও মীনাক্ষী গোস্বামী নন। ফলে আপাতদৃষ্টিতে লড়াই যথেষ্টই সহজ তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। যদিও তাতে কোনভাবেই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীরাও। ভবানীপুরে ভোটারদের মন জিততে মরিয়া প্রত্যেকে। ভবানীপুরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা বেশী। চলতি বিধানসভা ভোটেও ওই ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। ফলে ওই ওয়ার্ডে স্বভাবতই মনো্যোগ বাড়িয়েছে জোড়াফুল শিবির। সেখানেই পোস্টার পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। বাংলার বদলে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে ওই পোস্টারে, গোটা বিষয়টাই হিন্দিভাষী ভোটারদের কথা মাথায় রেখে।
গর্গকে নিয়ে ইয়ার্কি মেরো না, ও হারভার্ডে বাসন মেজেছে।
একা দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করছে, এমন কোনো বিহারী ফুচকাওয়ালার তেঁতুল জলের হাঁড়ি এক ঘুষিতে ভেঙে দিতে পারে !
ওর পিছনে বড় বড় বাংলাদেশী মৌলবীরা আছে ! https://t.co/IQzfr5edrq— Tathagata Roy (@tathagata2) September 23, 2021
সেই ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে বাংলাপক্ষের গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে ওই হিন্দিতে লেখা পোস্টার খুলতে আহ্বান জানিয়েছিলেন অভিজিত বসাক নামের জনৈক নেটনাগরিক। তা শেয়ার করেই বাংলাপক্ষের প্রতিষ্টাতা-সদস্য গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে ঠুঁকলেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তিনি লিখেছেন, “গর্গকে নিয়ে ইয়ার্কি মেরো না, ও হারভার্ডে বাসন মেজেছে। একা দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করছে, এমন কোনো বিহারী ফুচকাওয়ালার তেঁতুল জলের হাঁড়ি এক ঘুষিতে ভেঙে দিতে পারে! ওর পিছনে বড় বড় বাংলাদেশী মৌলবীরা আছে!”

বেশ কয়েকবছর ধরেই ‘পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির অধিকার রক্ষায়’ পথে নামছে বাংলাপক্ষ। দিনকয়েক আগেই কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। মজা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই সংগঠনকে শাসকদলের (পড়ুন তৃণমূল কংগ্রেস) বি টিম বলেও কটাক্ষ করে। আবার অন্যদিকে এই সংগঠনের বিক্ষোভের পরেই WBSEDCL (West Bengal State Electricity Distribution Company), পোস্টাল বিভাগের পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক হয়েছে বাংলা। ইংরেজি না জানার অভিযোগে বরখাস্ত করা কর্মীদেরও পূনর্বহাল করা হয়েছে কাজে। ফলে তথাগত রায়ের মন্তব্য এবং তাতে গর্গ চ্যাটার্জী, বাংলাপক্ষকে টেনে আনায় দ্বিধাবিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়া।
]]>
বাংলা ভাগের চক্রান্ত হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী বিজেপি দীর্ঘদিন করছে৷ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে বাংলাকে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ দুই রাজ্যে ভাগ করে গোটা বাঙালি জাতিকে দুর্বল করার প্রক্রিয়া এখনও ভীষণ রকম ভাবে সক্রিয় বলে মনে করে বাংলাপক্ষ৷ এই পরিস্থিতিতেবাঙালি জাতির একতা এবং এই বাংলায় নিজেদের চাকরি বাজার, পুঁজি ব্যবসায় আধিপত্য যদি সুনিশ্চিত করতে হয়, তাহলে বাংলা ভাগ যেকোনও মূল্যে প্রতিহত করতে হবে বলে এদিনের সভায় উঠে আসে৷
এছাড়াও বাংলার প্রত্যেকটি সরকারি চাকরিতে ভূমিপুত্র সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করতে বাংলা পক্ষ ভূমিপুত্র সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের দাবিতে জোর সওয়াল করা হয়৷ বাঙালি তথা যেকোনও অহিন্দি জাতির প্রতিনিধিত্ব দিনের পর দিন যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারি চাকরি গুলো থেকে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং হিন্দিতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে যেভাবে হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলো থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের একতরফা চাকরির সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত নেমে আসছে সেই তথ্য তুলে ধরে বাংলা পক্ষ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যেকোনও পরীক্ষায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে বাঙালির দীর্ঘমেয়াদি জনমত তৈরি করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়৷

এদিনের পথসভায় বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলা ও বাঙালির শত্রু বিজেপি যেভাবে দিনের-পর-দিন বাংলা ভাগের ষড়যন্ত্র করছে এবং দলীয় সাংসদ বিধায়কদের কাজে লাগিয়ে দিনের-পর-দিন বাংলা ভাগের উস্কানি দিচ্ছে, এটা বাঙালি কোন ভাবে মেনে নেবে না৷ একইসঙ্গে ডানকুনি থেকে শ্রীরামপুর, শিলিগুড়ি পশ্চিম বর্ধমান সহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে৷ সেখানে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে৷ এই কর্মসংস্থানে ৮৬% চাকরি বাঙালির হতে হবে৷ একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে বাঙ্গালিদের বেদখল করার জন্য বাংলা ভাষায় পরীক্ষা নেওয়া হয় না৷ অথচ হিন্দিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ আমরা কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার চাই।

বাংলা পক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কৌশিক মাইতি জানিয়েছেন, ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে নূন্যতম ৭৫ শতাংশ ভূমিপুত্র সংরক্ষণ আইন পাস হয়েছে বা তার খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। বাংলা ভারতের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ৷ তাই সব জায়গায় যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতা বাংলাতেও চাই। বাংলা ভাগ করে বাঙালিকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার যে ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী বিজেপি করে চলেছে, তার বিরুদ্ধে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জেলায় জেলায় বাংলা পক্ষ লড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সমস্ত পরীক্ষায় সেভাবেই হিন্দি বাধ্যতামূলক, সেভাবে বাংলা ভাষাতেও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলা পক্ষ সমস্ত বিষয়গুলো বাঙালির সামনে তুলে ধরেছে।
বাংলা পক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য তথা বাংলা পক্ষ হুগলি জেলার অন্যতম মনন মন্ডল জানিয়েছেন, বাংলা ভাগের চক্রান্ত হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের দীর্ঘদিনের। বাঙালিকে যেনতেন প্রকারে দুর্বল করে সেই জায়গায় বাইরে থেকে নিজেদের লোক এনে বসিয়ে বাংলার সবকিছু দখল করার চেষ্টায় বহিরাগত শক্তিরা অবিরত কাজ করে যাচ্ছে। বাংলার মাটিতে যদি বাঙালি জাতির প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হয়, তাহলে আমাদের সবকিছুকে যদি আমাদের নিজেদের করে সামলে যত্নে রাখতে হয় তাহলে চাকরি বাজার পুঁজি ব্যবসা টেণ্ডার লাইসেন্স সমস্ত কিছুকে নিজেদের হাতে রাখতে হবে এবং তার জন্য প্রত্যেকদিন একে অপরকে সাহায্য করে যেতে হবে। না হলে প্রতিদিন দখলদারি বাড়বে৷ বাঙালি তার মাটিতে সংখ্যাধিক হলেও, আমাদেরকে প্রতিদিন পরাস্ত করার চেষ্টা. আমাদেরকে প্রতিদিন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে তোলার প্রক্রিয়া বহিরাগত হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা চালিয়ে যাবে।
]]>