বিশ্বের অন্যতম জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এই সংগঠনটি তালিবান জঙ্গিদের সহযোগী। তবে তালিবান নেতৃত্ব সমঝে চলে হাক্কানিদের। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ তালিকায় মোস্ট ওয়ান্টেড সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, আনাস হাক্কানি সহ সংগঠনটির বহু নেতার নাম রয়েছে।
আফগান ক্রিকেট প্রশাসনিক কর্তা হিসেবে বসানো হয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের এক সদস্যকে যে বিভিন্ন সময় ভয়ংকর হামলায় জড়িত।
এদিকে অপসারিত আফগান ক্রিকেট বোর্ডের সিইও হামিদ সিনওয়ারি ফেসবুক পোস্টে জানান, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যদের নির্দেশে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে হামিদ লেখেন, আনাস হাক্কানি নিজে ক্রিকেট বোর্ডে এসে আমাকে বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আমার চাকরি আর নেই।
মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার তালিবান জঙ্গিদের সরকার গঠন হয় আফগানিস্তানে। এই তালিবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতার ছোট ভাই ও বর্তমান হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান আনাস হাক্কানি এখন আফগান ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক।
অপসারিত সিইও হামিদ জানান, তাকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। জানা যাচ্ছে, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত জঙ্গি নেতা নাসিবুল্লাহ হাক্কানিকে দেওয়া হয়েছে প্রধান নির্বাহীর পদ।
]]>আরও পড়ুন তালিবান-রাজ: বোরখা পরেই দেশ ছেড়েছেন আফগানিস্তানের মহিলা মেয়র

জঙ্গি দলটির তরফে শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা খলিল উর রহমান হাক্কানির দাবি আরও ভালো পদ চাই। এই ঝামেলার পরই বরাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহার চলে গিয়েছিলেন বলে তালিবানদের এক সূত্র জানিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে উপ প্রধানমন্ত্রী মোল্লা বারাদারকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বজোড়া আলোড়ন এই তালিবান শীর্ষ নেতা এক গোষ্ঠি সংঘর্ষে মৃত। তবে তালিবান এই খবর অস্বীকার করে। তারা জানায় মোল্লা বারাদার সুস্থ। তালিবানদের উপ-প্রধানমন্ত্রী বরাদার অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার গঠন কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে এই বাকবিতণ্ডার শুরু হয়।
আবদুল গণি বরাদার এবং হাক্কানি নেটওয়ার্ক:
কয়েক দশক পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা পেয়েছে তালিবানরা। ১৫ আগস্ট কাবুলে আসরাফ ঘানি সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতা কায়েম করেছে। আফগানিস্তানের নাম বদলে নাম রেখেছে ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান। এই সমস্ত ঘটনার পেছনে অন্যতম নাম আবদুল গণি বরাদার।

আফগানিস্তানের ক্ষমতা পেয়েছে তালিবানরা (Taliban)। দেশের নাম বদলে নাম রেখেছে ‘ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান’। এই সমস্ত ঘটনার পেছনে অন্যতম নাম আবদুল গণি বরাদার (Abdul Ghani Baradar)।
প্রথম তালিবান নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বরাদারের। ২০২০ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে তালিবানের পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেন।
দ্বিতীয় তালিবান সরকার গঠনের পেছনে তালিবানদের এই সাফল্য তাঁর মতো কূটনীতিকদের জন্যই এসেছে বলে দাবি করেছেন বরাদার। অন্যদিকে হাক্কানির ধারণা যুদ্ধের মাধ্যমেই কাবুল জয় সম্ভব হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় তালিবান সরকারের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব চেয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই মদতপুষ্ট।
The Taliban is heaping praise on Jalaluddin Haqqani during its victory tour – revering him as one of the defenders of the Islamic Emirate. Throughout much of the 20-year war, the U.S. leadership didn't understand the so-called Haqqani Network's integral role within the Taliban. https://t.co/PgbDARKkbr
— Thomas Joscelyn (@thomasjoscelyn) September 9, 2021
একদিকে, ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে বরাদরকেই গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, আইএসআই। ২০২০ সালে দোহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে বরাদারকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জালম্যে খালিজাদ। পাকিস্তান তার অনুরোধ মেনে নিলে দু’বছর পর দোহায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানদের হয়ে চুক্তি করেন তিনি। অন্যদিকে, তালিবানদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানি নেটওয়ার্ক সংগঠনকে জঙ্গি গোষ্ঠী তালিকাভুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন আবদুল গণি বরাদার: তালিবান নেতা থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি
এছাড়াও আফগানিস্তান দখল করার কয়েকদিন পরেই তালিবানরা কাশ্মীরের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। সরকারীভাবে জানিয়ে দেয়, এটি একটি “দ্বিপক্ষীয়; এবং ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়”। শুধু কাশ্মীরই নয়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সর্বতোভাবে সুসম্পর্ক রাখার কথাও বলেছে তারা। অন্যদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, যেহেতু হাক্কানি নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সংযোগ রাখে ফলে তাদের ততপরতা বাড়বে উত্তরবঙ্গে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে নেপালে থাকা হাক্কানি এজেন্টরা ফের সক্রিয়। তারা পশ্চিমবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে উস্কানি দিতে তৈরি। একইভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে। নেপালের সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলা। দার্জিলিং সংলগ্ন কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ততপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেই গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান।
ফলে একই বিষয়ে ভিন্নমত তৈরি হওয়া এবং সম্পূর্ন উলটো অবস্থান নিয়েই বারবার বিরোধ বাড়ছে তালিবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের। এই কারণেই বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তানে দ্বিতীয় তালিবান সরকারের শপথগ্রহন অনুষ্ঠান।
]]>বিবিসি সংবাদে তালিবান নেতাদের একাংশের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, সরকারের অন্দরে ঝগড়া প্রবল। বিবিসি জানাচ্ছে মোল্লা বারাদার এবং নতুন সরকারের সবথেকে আগ্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের (Haqqani Network) মধ্যে সম্পর্কা আদায় কাঁচকলায়। হাক্কানি নেটওয়ার্ক পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই মদতে চলে। তাদের ভাগে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে জঙ্গি দলটির তরফে শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা খলিল উর রহমান হাক্কানির দাবি আরও ভালো পদ চাই। এ নিয়ে ঝগড়া বেড়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে উপ প্রধানমন্ত্রী মোল্লা বারাদারকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বজোড়া আলোড়ন এই তালিবান শীর্ষ নেতা এক গোষ্ঠি সংঘর্ষে মৃত। তবে তালিবান এই খবর অস্বীকার করে। তারা জানায় মোল্লা বারাদার সুস্থ।
গত ১৫ আগস্ট আমেরিকান সেনা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতেই আফগান রাজধানী কাবুল দ্বিতীয়বার দখলের পর দ্বিতীয় তালিবান অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার ঘোষণা হয়। সেই সরকার গত ৯/১১ আমেরিকায় টুইন টাওয়ার হামলার কুড়ি বছর পূর্তির দিনে শপথ নেবে এমনই জানিয়েছিল। দিনটিতে শপথ না নিতে তালিবান বন্ধু দেশ কাতার ও পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপ দিয়েছিল আমেরিকা। রাশিয়ার তরফে আপত্তি আসে। দিনটিতে শপথ নেয়নি তালিবান জঙ্গিদের সরকার।
বিবিসি জানাচ্ছে, শপথ না নেওয়ার পিছনে রয়েছে তীব্র ঝগড়া। তালিবান নেতারা পরস্পর কোন্দলে জড়িয়েছে। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তালিবানের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সরকারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদারের সঙ্গে এক মন্ত্রীর তর্কবিতর্ক হয়েছে। পদ পছন্দ হয়নি ওই মন্ত্রীর।
]]>Read More: তালিবান সরকারের অংশীদার হাক্কানি নেটওয়ার্ক সক্রিয় নেপাল থেকে উত্তরবঙ্গে
তালিবান জঙ্গিদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছায়া মন্ত্রিপরিষদের ঘোষণার সব থেকে বড় চমকটি হলো আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই দফতরের ভার গিয়েছে আইএসআই নয়নের মণি জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের (Haqqani Network) ঘাড়ে। অর্থাৎ তালিবান জঙ্গি সরকার যাই কিছু করুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানির কড়া নজর থাকবে। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা এফবিআইয়ের তালিকায় তার মাথার দাম ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার। মোস্ট ওয়ান্টেড। এর থেকেই স্পষ্ট পুরো তালিবান মন্ত্রিসভায় পাকিস্তানের দাপট।

ISI চক্রজাল ইসলামাবাদ-ঢাকা-কাবুল একটি বিশ্লেষণ
ISI ঢাকা ইউনিট
কূটনৈতিক মহলের আলোচনা, পাকিস্তান জন্মের পর এই প্রথম কোনও দেশে (আফগানিস্তান) নিরাপদ বিচরণের শক্তিশালী ঘাঁটি তৈরি করেছে আইএসআই। তবে আলোচনায় উঠে আসছে, ১৯৭১ পরবর্তী বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত ইসলামি জোট সরকারের আমলে ঢাকায় পাক গুপ্তচর সংস্থার স্বস্তিদায়ক বিচরণের প্রসঙ্গ।
১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে খুনের পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। অভিযোগ, পাকিস্তানের প্রতি খানিকটা নরম হয়েছিলেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি তথা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনিও সেনা অভ্যুত্থানে খুন হন। এর পর রাষ্ট্রপতি এরশাদের সামরিক জমানা পেরিয়ে ফের বিএনপি সরকারে আসে। তখন প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ঢাকায় অত্যন্ত সক্রিয় আইএসআই। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতিমাত্রায় সজাগ থাকে ভারত। সেই চাপ নিয়েছিল পাক গুপ্তচর সংস্থাটি। তাদের ষড়যন্ত্রের অন্যতম নাশকতা তৎকালীন বিরোধী নেত্রী আওয়ামী লীগ সুপ্রিমো শেখ হাসিনার উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। বিশ্ব কেঁপেছিল। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি যোগ স্পষ্ট হয় তদন্তে। বিএনপির একের পর এক মন্ত্রী, খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের নাম এই নাশকতায় জড়িত। তিনি বাংলাদেশ সরকারের খাতায়’পলাতক’। লন্ডনে থাকেন।
ISI কাবুল ইউনিট
বাংলাদেশে আইএসআই জাল নষ্ট হয় আওয়ামী লীগের সরকার পরপর ক্ষমতায় আসার পর। ঢাকা থেকে নেটওয়ার্ক রাখলেও পাক গুপ্তচর সংস্থাটি পরবর্তী সময়ে বারবার প্রতিবেশি আফগানিস্তানে তাদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে থাকে। প্রথম তালিবান সরকারের সময়ে এই সুযোগ এনে দেয় আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক। জঙ্গি সংগঠনটি শীর্ষ নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি আইএসআইয়ের ঘনিষ্ঠ। সেই শুরু তাদের মধুচন্দ্রিমা। তবে ২০০১ সালে মার্কিন সেনা প্রবেশের পর কাবুল থেকে সরে যাওয়ায় আইএসআই তার জমি হারান। তারা আফগানিস্তানে সক্রিয় থাকলেও ভারতের ভূমিকা হয় বড়। শুরু হয় ‘র’আনাগোনা। গত দু দশক এমন চলেছে। গত ১৫ আগস্ট তালিবান দখলে গেছে কাবুল। ফের সক্রিয় আইএসআই। তাদেরই পুতুল সরকার এখন কুর্সিতে। আফগানভূমির হর্তাকর্তার বিধাতা এখন পাকিস্তান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, যেহেতু হাক্কানি নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সংযোগ রাখে ফলে তাদের ততপরতা বাড়বে উত্তরবঙ্গে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে নেপালে থাকা হাক্কানি এজেন্টরা ফের সক্রিয়। তারা পশ্চিমবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে উস্কানি দিতে তৈরি। একইভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে।
নেপালের সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলা। দার্জিলিং সংলগ্ন কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ততপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেই গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান।
তাৎপর্যপূর্ন দুটি ঘটনা,
প্রথমত, ফের সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO) সংগঠনকে। আত্মগোপনে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জীবন সিংহ সরাসরি ভিডিও বার্তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে হুমকি দিয়েছে। কেএলও এমন সময়ে হুমকি দেয় যখম তালিবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।
দ্বিতীয়ত, অনেকটা কাকতালীয় হলেও গত রবিবার যখন কাবুল দখল করছিল তালিবান জঙ্গিরা, ঠিক সেই সময় মেঘালয়ের রাজধানী শিলং ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী এইচএনএলসি (HNLC) সংগঠনের হামলায় বিপর্যস্ত। নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ ছিল অসহায়। তবে সংগঠনটির অভিযোগ তাদের নেতা অসুস্থ চেস্টারফিল্ডকে ঠান্ডা মাথায় এনকউন্টার করা হয়েছে। তারই প্রতিবাদ হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দুটি ঘটনাকে তলিয়ে দেখছেন। তাঁদের অনেকের আশঙ্কা, উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠিগুলির সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের একটা সংযোগ আগে থেকেই রয়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতা তাদের হাতে চলে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই সংগঠন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে উস্কানি দেবে।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবকটি রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি গত কয়েকমাসে বিশেষ সক্রিয়। দীর্ঘ দেড় দশক বাদে ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (NLFT) গুলি চালিয়েছে। তাদের গুলিতে দুই বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়। গত কয়েকমাস ধরেই উত্তরপূর্বের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠির ততপরতা বেশি। ত্রিপুরা ও মিজোরা সীমানায় বিরাট আগ্নেয়াস্ত্র চালান ধরা পড়ে। বাংলাদেশের অতি নিকটে এই চোরাচালান চলছিল। হাক্কানি নেট ওয়ার্ক বাংলাদেশে সক্রিয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যেহেতু উত্তর পূর্বের প্রথম সারির বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব চিন ও মায়ানমারে থাকে, ফলে হাক্কানির পক্ষে তাদের সঙ্গে ‘কনটাক্ট’ করা সহজ। নেপাল সরকারের কাছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক বিষয়ে সতর্কবার্তা রয়েছে। কিন্তু নেপালেও রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি। এই সুযোগ নেবে আফগানিস্তান সরকারের শরিক হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি গোষ্ঠী।
সম্প্রতি সরকার বদল হয়েছে নেপালে। নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির নির্বাচিত সাংসদদের বড় অংশ সমর্থন হারান ওলি। আস্থাভোটে পরাজিত হন। সরকারে এসেছে নেপালি কংগ্রেস। তবে এই সরকার নড়বড়ে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কে পি ওলির সঙ্গে চিনের অতিরিক্ত সখ্যতা নিয়ে কাঠমাণ্ডু ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক বারে বারে গরম হয়। একইভাবে নেপালের অভ্যন্তরে চিনা কূটনীতিকর বড়সড় প্রভাব পড়ে। চিন এখন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের প্রতি নরম।
নেপালে বরাবর সক্রিয় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তাদের মদত পায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক। নেপাল থেকে তারা নাশকতার পরিকল্পনা করবে বলেই আশঙ্কা। আফগানিস্তানে প্রথম তালিবান সরকারের (১৯৯৬-২০০১) আমলে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের IC814 বিমান অপহরণ কাঠমাণ্ডু থেকেই হয়েছিল। কান্দাহারে সেই বিমান নামায় পাক জঙ্গিরা। মাসুদ আজাহারের মুক্তির বিনিময়ে যাত্রীদের ছাড়ায় ভারত সরকার।
]]>