সম্প্রতি অনুপ্রবেশকারী এক পাক জঙ্গি ধরা পড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। ধৃত জঙ্গিকে জেরা করেই নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের গোপন ডেরার হদিশ পায় বলে মনে করা হচ্ছে। ওই পাক জঙ্গিকে নিয়েই গত কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এই তল্লাশি অভিযান চালাতে বুধবার ভোরে দুরিয়ান ভাট্টির জঙ্গলে গিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। জওয়ানদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা জবাব দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। উভয়পক্ষের এই সংঘর্ষে এক পুলিশ কর্মী ও এক জওয়ান জখম হন। একই সঙ্গে গুলিতে জখম হয় এক লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি। কিন্তু গুলির লড়াই চলায় আহত ওই জঙ্গিকে উদ্ধার করতে পারেনি সেনাবাহিনী। পরে ওই জঙ্গির দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের নাম জিয়া মুস্তাফা।
সেনাবাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বেশ কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলার পর বন্ধ হয় গুলির লড়াই। গুলির লড়াই বন্ধ হলে জঙ্গলের ভেতর জঙ্গিদের একটি গোপন ঘাঁটি থেকে পাঁচটি অ্যাসাল্ট রাইফেল, ৩৫ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, দুটি গ্রেনেড উদ্ধার হয়।
একই সঙ্গে ওই গোপন গুহা থেকে মেলে কম্বল, শুকনো খাবার, বিস্কুট, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও একাধিক জুতো। নিরাপত্তা বাহিনীর আশঙ্কা, জঙ্গিরা গভীর জঙ্গলের মধ্যে ঘাঁটি গেড়েছিল। সে কারণেই তারা খাবার-দাবার, ওষুধ মজুত করেছিল। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা ঘন জঙ্গলের ভিতর পালিয়ে যায়। ওই জঙ্গলে জঙ্গিদের সন্ধানে জোরদার চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।
সেনার এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই জঙ্গলের মধ্যে যে সমস্ত গুহা ছিল সেগুলি সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকা থেকে ১২ জন বাসিন্দাকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গিদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে। নিরাপত্তা বাহিনী আরও জানিয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা জঙ্গিদের আশ্রয় এবং নানা গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করতো। কিন্তু বাসিন্দারা এই অভিযোগ মেনে নিলেও জানিয়েছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় এই কাজ করতেন না। জঙ্গিরা তাঁদের প্রাণের ভয় দেখিয়েই এ ধরনের কাজ করতে বাধ্য করতো। তবে ধৃত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, আফগানিস্তান তালিবানের দখলে যাওয়ার পরই রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলা দিয়ে পাক জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেড়েছে। এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এখনও পর্যন্ত ১০ জনকে খতম করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ১৫ দিন ধরে গোটা ভূস্বর্গেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চলছে জোরদার তল্লাশি।
একই সঙ্গে দুই থেকে তিনজন জঙ্গিকে ঘিরে রেখেছে ভারতীয় সেনা জওয়ানরা৷ জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের ঘেরাও করেছে৷ তবে আপাতত জঙ্গিদের দিক থেকে গুলি বন্ধ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।
#UPDATE | An encounter underway in the Sopore area of Baramulla district. Police and security forces are undertaking the operation: Jammu & Kashmir Police
(Visuals deferred by unspecified time) pic.twitter.com/VOz0wbmLFm
— ANI (@ANI) August 24, 2021
প্রসঙ্গত, সোমবার এসওজি’র ১০ জন কমান্ডো ছদ্মবেশে ক্রিকেট মাঠ ঘিরে ফেলে এবং দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নেতা আব্বাস শেখ এবং উপপ্রধান সাকিব মঞ্জুরকে এনকাউন্টারে হত্যা করে। দু’জনেই দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের রাডারে ছিলেন। নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। দুজনেই বেশ কয়েকজন সাধারণ নাগরিক হত্যায় জড়িত ছিল। তারা স্থানীয় যুবকদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করছিল। পুলিশের মতে, এটি তাদের একটি বড় সাফল্য।
আইজিপি বিজয় কুমার বলেছিলেন, দুই জঙ্গির সম্পর্কে সুনির্দিস্ট ইনপুট পেয়ে শ্রীনগর পুলিশের ১০ জন কর্মী সাদা পোশাকে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং তাদের চ্যালেঞ্জ জানায়। সতর্কবার্তা দেওয়ার পর সেখান থেকে গুলি চালানো হয়৷ যার জবাব দেওয়া হয়।
আব্বাস সন্ত্রাস ছড়িয়েছিলেন এবং নতুন যুবকদের জঙ্গিবাদে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন৷ যার কারণে শিশুদের বাবা -মা খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন। তিনি অভিভাবকদের কাছে আবেদন করেন যেন তাদের সন্তানরা এই পথে না যায়। যারা চলে গিয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন, আমরা তাদের স্বাগত জানাব।
বিজয় কুমার জানান, আব্বাস শেখের নির্দেশেই সাকিব মঞ্জুর শ্রীনগরে অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। আরও চারজন জঙ্গি রয়েছে, যারা শীঘ্রই খতম হবে। কয়েক মাস আগে সাকিবের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল৷ যাতে তাকে ফিরানে AK 47 বের করতে এবং দুই পুলিশ সদস্যকে আক্রমণ করতে দেখা যায়। এই হামলায় দুই পুলিশ সদস্যই শহীদ হন।
]]>