Special report – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com Stay updated with Ekolkata24 for the latest Hindi news, headlines, and Khabar from Kolkata, West Bengal, India, and the world. Trusted source for comprehensive updates Mon, 13 Dec 2021 19:00:27 +0000 en-US hourly 1 https://ekolkata24.com/wp-content/uploads/2024/03/cropped-ekolkata24-32x32.png Special report – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com 32 32 ভারতের দুনিয়াকে বোকাবাক্সে বন্দি করা শুরু দূরদর্শনের মাধ্যমেই https://ekolkata24.com/offbeat-news/doordarshan-started-on-15th-september-a-special-report Mon, 13 Dec 2021 18:45:21 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=4676 বিশেষ প্রতিবেদন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ধাক্কায় সিনেমার পাশাপাশি টিভি দেখার প্রবণতা কমেছে। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের মতো সর্বত্রই এখন নেটফ্লিক্স, হটস্টার-এর রমরমা। আর দূরদর্শন? এমন বলে টিভিতেও কোনও চ্যানেল আছে জানেই না আজকের জেনারেশন। অথচ সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল ভারতের মানুষের পৃথিবীকে ঘরবন্দি করার প্রথম পদক্ষেপ। আজ সেই দূরদর্শনের জন্মদিন। 

১৯৫৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লীতে একটি অস্থায়ী স্টুডিও বানিয়ে প্রথম পথ চলা শুরু হয়েছিল দূরদর্শনের। তখন এটি পরীক্ষার পর্যায়ে ছিল। এটির নামকরণ করা হয়েছিল টেলিভিশন ইন্ডিয়া। সেখান থেকে দিল্লিস্থিত টাওয়ারের মাত্র কয়েক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে খুব স্বল্প সময়ের জন্য আরম্ভ হয় প্রথম সম্প্রচার। পরে ১৯৭৫ সালে টেলিভিশন ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তন করে হয়েছিল দূরদর্শন।

১৯৬৫ সালে, দৈনিক প্রোগ্রামগুলি দূরদর্শন নিয়মিত প্রচার করতে শুরু করে। পাঁচ মিনিটের একটি নিউজ বুলেটিনও শুরু হয়েছিল। তবে প্রাথমিকভাবে টিভি সম্প্রচারের বৃদ্ধি খুব ধীর ছিল। ১৯৭৫ সালের মধ্যে কেবল সাতটি শহরেই সম্প্রচার শুরু করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৮২ সালে রঙিন টিভি বের হয় এবং এশিয়ান গেমসের সম্প্রচার তার জনপ্রিয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে। এখানেই টিভির রূপান্তর ঘটেছিল।

নতুন প্রোগ্রাম শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে প্রোগ্রামগুলি সকালে এবং তারপরে বিকেলে সম্প্রচার শুরু হয়। সপ্তাহে দু’বার চিত্রহার এবং রবিবার সন্ধায় রঙ্গোলি ও কৃষি দর্শনের জনপ্রিয়তার সাথে আজকের প্রোগ্রামগুলির কোনও মিল পাওয়া যায় না। ১৯৬৬ সালে শুরু হওয়া কৃষি দর্শন দেশে সবুজ বিপ্লব আনতেও ভূমিকা রেখেছে। আজ ২ টি জাতীয় এবং ১১ টি আঞ্চলিক চ্যানেল সহ দূরদর্শনের মোট ২১ টি চ্যানেল সম্প্রচারিত হয়। এটি ১৪ হাজার গ্রাউন্ড ট্রান্সমিটার এবং ৪৬ স্টুডিও সহ দেশের বৃহত্তম সম্প্রচারক। ঘটনা হল, যতই অন্যান্য মাধ্যমের রমরমা হোক এখনও ১৫ আগস্ট কিংবা ২৬ জানুয়ারির প্রোগ্রাম দেখতে গেলে ভরসা ডিডি।

১৯৫৯ সালে প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রথম সম্প্রচার শুরু হওয়ার পরে ১৯৬৫ সালে আকাশবাণীর একটি অংশ হিসেবে আরম্ভ হয় দূরদর্শনের নিয়মিত সম্প্রচার এবং ১৯৭২ সালে ভারতের টেলিভিশন পরিষেবা মুম্বই (তদানীন্তন “বম্বে”) এবং অমৃতসর পর্যন্ত পরিবর্ধিত হয়। এরপর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি শহর দূরদর্শন পরিষেবার আওতাভুক্ত হয়। ১৯৭৫ সালের ৯ অগস্ট কলকাতায় প্রথমবারের জন্য স্থাপিত হয় “দূরদর্শন কেন্দ্র”। ১৯৭৬ সালে দূরদর্শনকে আকাশবাণী থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বতন্ত্র এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিষেবায় রূপান্তরিত করা হয়। নয়াদিল্লিতে আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের নিজস্ব কার্যালয়ে দু’জন পৃথক অধিকর্তা নিযুক্ত হন।

১৯৫৯ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্টুডিওতে একটি ছোট ট্রান্সমিটার ও অস্থায়ী স্টুডিও নিয়ে কাজ শুরু করে দূরদর্শন। ৬ বছর পর, ১৯৬৫ সালে প্রতিমা পুরী প্রথম পাঁচ মিনিটের সংবাদ পাঠ করেন দূরদর্শনে।দূরদর্শন শুরু হয়েছিল গোটা পরিবারকে একসঙ্গে ধরে রাখার ভাবনা থেকে- সে সমাচার হোক অথবা সান্ধ্য শো, আঞ্চলিক এন্টারটেনমনেন্ট হোক কি জাতীয় প্রোগ্রাম অথবা স্পোর্টস।

<

p style=”text-align: justify;”>দুরদর্শনে সম্প্রচারিত বহু শো ক্লাসিকে পরিণত বয়েছে। ৮-এর দশকের শেষ থেকে ৯ এর দশের গোড়া পর্যন্ত মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল তু তু ম্যাঁয় ম্যাঁয়, মহাভারত, দেখ ভাই দেখ, উড়ান, ফৌজি, মালগুডি ডেজ-এর মত শো গুলি।

]]>
হারিয়ে যেতে যেতে যেতে এখনও দাঁড়িয়ে বঙ্গলক্ষী পাইস হোটেল https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-pice-hotel-bangalakshi-in-kolkata Tue, 16 Nov 2021 09:24:42 +0000 https://ekolkata24.com/?p=11479 বিশেষ প্রতিবেদন: ১৩০/সি, বি.বি.গাঙ্গুলী স্ট্রীটের ১৯৪১ সালের দোকান। নাম নিউ বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল। ৮০ বছর অতিক্রান্ত। পুরু বিশ ইঞ্চি দেওয়াল ভেদ করে মোবাইলের সিগন্যাল যেখানে সহজে প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে গলিপথ বরাবর সকালের প্রাতঃরাশ, দুপুর-রাতের মিল, বিকেলের টিফিন (ঘুগনি অন্যতম) – একেবারে স্বল্প মূল্যে বা ন্যায্য মূল্য’র খাবার নিত্যদিন।

এখনকার দুই কর্ণধার বিশ্বনাথ বড়ু ও কাশীনাথ বড়ু সম্পর্কে দুই ভাই। স্ত্রী ও পুত্রদের নিয়ে বেশিরভাগ সময় এখানেই থেকে যান। দুই ভাইয়ের স্ত্রী’রা এই হোটেলের হেঁসেল সামলান। একেবারে বাড়ির পরিবেশে বাড়ির রান্না। মশলা মেশিনে পিষে প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহার হয়। গুঁড়ো লঙ্কা একেবারেই নিষিদ্ধ। সকালে চা’যের সাথে বাটার-টোস্ট, ডিমের অমলেট, দুপুর ও রাত্রে ভাত, রুটি, তরকারি, রুই, কাতলা, ভেটকি মাছের ঝোল, মুরগির মাংসের ঝোল, রুইপোস্ত, চাটনি’র বিস্তর আয়োজন।

Pice Hotel Bangalakshi in Kolkata

পাইস হোটেল শব্দের সৃষ্টি যদি “পয়সা” থেকে হয়ে থাকে, তাহলে নিউ বঙ্গলক্ষ্মী এখনও সেই ধারার পাইস হোটেল বলা যায়। মূল খাবারের থালায় প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পরিবেশন করা হয় প্রথমে। থালি সিস্টেম যাকে বলে। এরপর অতিরিক্ত ভাত, ডাল, তরকারির জন্য আলাদা পয়সা। খাবারের তালিকা ও মূল্য এই রকম (আজকের তালিকা):
* রুইমাছ, ভাত, তরকারি: ৬০/-
* রুইপোস্ত, ভাত, তরকারি: ৬৫/-
* চারাপোনা, ভাত, তরকারি: ৬৫/-
* কাতলা মাছ, ভাত, তরকারি; ৮০/-
* ভেটকি মাছ, ভাত, তরকারি: ৮০/-
* মুরগি মাংস, ভাত, তরকারি: ৮০/-
* সব্জি, ভাত: ৪০/-
* ভাজা ৫ টাকা
* চাটনি ৬ টাকা

কাশীনাথ ও বিশ্বনাথ বাবু ছোটবেলায় দেখেছেন, প্রায় ৫০ বছর আগেও এই হোটেলে মাটিতে বসে লোক আহার করতেন। পেতলের থালা, গেলাস, বাটিতে খাবার পরিবেশন করা হতো তখন। শুধু তাই নয়, ১বস্তা অর্থাৎ ৫০ কিলো চাল লাগতো প্রতিদিন দু’বেলা লোক খাওয়ার জন্য। রমরম করে চলতো এই বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল সেই সময়। পাশের এক পরিচিত জন জানালেন, তাঁর বাবাদের সময় ৪ অনায় মাছের মুড়ো সহ এক থালা ভাত পাওয়া যেত। না, বঙ্গলক্ষ্মীর সেই বাম্পার সেল আর নেই এখন।

<

p style=”text-align: justify;”>মেরেকেটে ১০ জন আসেন দুপুরে খেতে, আর সারাদিনে চা-স্ন্যাকসের জন্য কিছু লোকজন। দীর্ঘ সময় পার করে এলেও এঁদের খাবারের দাম কিন্তু সেই অর্থে বেড়েছে, এটা বলা যায় না। পাইস হোটেলের স্বকীয়তা বজায় রাখা সত্ত্বেও নিউ বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল ধুঁকছে প্রয়োজনীয় ক্রেতার অভাবে…।

]]>
গোওওওল…….অন্তঃসত্ত্বা মায়ের চিৎকার, ভূমিষ্ঠ ফুটবল ঈশ্বর https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-maradonas-birthday Sat, 30 Oct 2021 10:52:39 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9716 Special Correspondent, Kolkata: অন্তঃসত্ত্বা মা রেডিয়োর ধারাভাষ্য শুনছিলেন। বড় ফুটবল ম্যাচ চলছে। গোল হতেই বিশাল চিৎকার করে ওঠেন মহিলা। ওই চিৎকারে চাপ পড়ে পেটে। কিছু সময় পর ওই মহিলাই জন্ম দেন ফুটবলের রাজপুত্রের। জন্মদাত্রী মা তোতা, পুত্র দিয়েগো। ফুটবলের সঙ্গে যেন নাড়ির যোগ কিন্তু সে যে বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি হয়ে উঠবে কে জানত। 

maradona

পেলের মতোই হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন মারাদোনা। শ্রমিক বাবা চিতোরো আর পরিচারিকা মা তোতার সঙ্গে তিনি থাকতেন ভিসা ফিওরিতার এক বস্তিতে। সেখানকার নালাতে তিনি ডুবে যাচ্ছিলেন দুই বছর বয়সে। কাকা দেখতে পেয়ে তাঁকে তুলে আনেন। শুনেছি, তোতার যে দিন প্রসব বেদনা ওঠে সেদিন বড় ফুটবল ম্যাচ ছিল। রেডিওতে ধারা বিবরণী চলছিল। মারাদোনা যখন পৃথিবীর মুখ দেখবেন সেই সময়ে না কি তোতা প্রচণ্ড চিৎকার করে ওঠেন গোওওওওলল বলে। সেদিন ওই হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সব কন্যা সন্তানের মধ্যে একমাত্র মারাদোনাই ছিলেন পুত্র। সবাই তোতাকে বলে ছিলেন, “দেখো তোমার এই ছেলে একদিন নামী ফুটবলার হবে।” শুনে আনন্দে তোতা কেঁদে ফেলেন। আশীর্বাদ বাস্তব হয়েছিল।

maradona

মারাদোনার সারা জীবন জুড়ে ছিলেন তাঁর মা তোতা। পরিবারের প্রতি তাঁর অদ্ভূত টান। বিরাশির বিশ্বকাপের আগে জার্মানির সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ রিভারপ্লেটের মাঠে। লোথার ম‍্যাথেউজ খেলতেই দিলেন না তাঁকে। গ্যালারি থেকে বিদ্রুপ ভেসে আসতে লাগল। সেই সঙ্গে মা বাপ তুলে অকথ্য গালিগালাজ। মারাদোনা সহ্য করতে না পেরে এক দর্শককে মেরে বসলেন। ব্যাস পরদিন তাঁর তুমুল সমালোচনা হল। রেগে মারাদোনা চলে গেলেন তাঁর পৈতৃক ভিটেতে| Buenos Aires থেকে অনেক দূরে এস্কিনো বলে এক জায়গায়। সেবার বিশ্বকাপ টিমের কোচ লুই সিজার মেনোত্তি। বারবার তিনি লোক পাঠানো সত্ত্বেও মারাদোনা বসে রইলেন সেখানে। বলে পাঠালেন, তিনি মাছ ধরায় ব্যস্ত। পাল্টা প্রশ্ন করলেন তিনি, “একটা ম্যাচ বাজে খেললেই কেন লোকে গালি দেবে মা তুলে? আমার মা হলেন পৃথিবীর সেরা মা। ওঁর জন্য আমি সব কিছু ত্যাগ করতে পারি।”

ফুটবলার জীবনের শুরুতেই মারাদোনার একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স তেরো চৌদ্দ। দেশের হয়ে উরুগুয়েতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গেছেন। কর্তারা প্লেয়ারদের হোটেলে না রেখে একেক জনকে একেক পরিবারের সঙ্গে রেখে ছিলেন সেখানে। সব প্লেয়ার ভালো ভালো পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু মারাদোনা বস্তির ছেলে। তাই ঠাই পান কালো চামড়ার এক বেকার যুবকের ঘরে। মারাদোনা খুব দুঃখ পেয়ে ছিলেন এই অবহেলায়। বাড়ি ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করে ছিলেন, “ওরা আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করল কেন মা?” তোতা বলেন, “মন খারাপ করিস না। ভাল খেলে তুই উত্তর দিয়ে এসেছিস।” এভাবেই মারাদোনার সারা জীবন জুড়ে ছিলেন তাঁর মা তোতা।

]]>
Paritosh Sen: বাঙালি শিল্পীতে মুগ্ধ পিকাসো মন ভরে দেখিয়েছিলেন নিজের সৃষ্টি https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-artist-paritosh-sens-birthday Fri, 22 Oct 2021 12:55:21 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=8701 Special report: ভারতীয় শিল্পীর মধ্যে কে জানে কি খুঁজে পেয়েছিলেন পিকাসো। নিশ্চয় কিছু পেয়েছিলেন। না হলে সবাইকে ছেড়ে তাঁকে হাত ধর টেনে নিয়ে গিয়ে কেন পাঁচ ঘণ্টা ধরে তা অনবদ্য সৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবেন। ওই কথায় বলে জহুরির চোখ। ভিড়ের মধ্যে হিরে খুঁজে নিয়েছিলেন পিকাসো।

শিল্পী পরিতোষ সেনের (Paritosh Sen) জীবনে এই ঘটনা ঘটেছিল ১৯৫৩ সালের ৩ মে। পয়লা মে একটি ঐতিহ্যবাহী প্রদর্শনীতে পিকাসোর দেখা পেয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক দিন পর তাঁকে নিজের স্টুডিওতে যেতে বলেন পিকাসো। নির্দিষ্ট দিনে পরিতোষ সেন পিকাসোর স্টুডিওতে গিয়ে আরও বহু সাক্ষাৎপ্রার্থী দেখতে পান। কিন্তু সবাইকেই একে একে চলে যেতে হয়। সবশেষে পরিতোষ সেন পিকাসোর সচিব জেইম সাবার্তকে পিকাসোর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পিকাসোর অনুমোদনের কথা বলেন। প্রথমে সচিব আপত্তি জানালেও পরিতোষ সেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের মানুষ শুনে পিকাসোর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

তিনি নিজে বলেছেন , “’পিকাসোর সঙ্গে একনাগাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলাম। সে দেখা হওয়াটা আমার জীবনের এক মহৎ অভিজ্ঞতা, যা কোনো দিন ভোলার নয়। আমি ছবি নিয়ে গিয়েছিলাম। তাঁকে আমার ছবি দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য। তাঁর কাছ থেকে যে প্রশংসা পেয়েছিলাম, তা আমার সারা জীবনের জন্য অক্ষয় পাথেয় হয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, পাবলো পিকাসো সম্পর্কে সাধারণ একটা ধারণা ছিল যে তিনি খুব দাম্ভিক প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু আমার জন্য তাঁর সচিব মাত্র পনেরো মিনিট সময় নির্দিষ্ট করে দিলেও আমি পিকাসোর স্টুডিওতে পাঁচ ঘণ্টা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার ছবি দেখার পর পিকাসো আমার হাত ধরে নিয়ে তাঁর ছবি, ভাস্কর্য দেখান, যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এমন ব্যবহার শুধু মহৎ ব্যক্তিরাই করতে পারেন।” পিকাসোর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে পরিতোষ সেন বিস্তারিত লিখেছেন তাঁর আবু সিম্বাল, পিকাসো ও অন্যান্য তীর্থ গ্রন্থের ’শিল্পী পিকাসোর মুখোমুখি’ অধ্যায়ে।

দেশ-বিদেশে পরিতোষ সেনের বেশ কিছু একক প্রদর্শনী হয়েছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে সম্মিলিত বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বদেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট আর্ট গ্যালারিতে তাঁর ছবির সংগ্রহ রয়েছে।

১৯৮৫ সালে পরিতোষ সেন ’শিরোমণি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৬ সালে দিল্লির ললিতকলা একাডেমি বিশেষ সম্মানজনক ’আনন্দকুমার স্বামী’ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। একই বছর তাঁকে ললিতকলা একাডেমির ফেলো নির্বাচন করা হয়। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন ১৯৬৬-৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর কাজের ওপর একটি ডকুমেন্টারি ছবি তৈরি করেছিল।

শিল্পচর্চা ছাড়াও পরিতোষ সেন নিয়মিত সমসাময়িক শিল্পকলা ও শিল্প-ইতিহাসের ওপর নিবন্ধ লেখেন। তাঁর প্রকাশিত চারটি বই হলো জিন্দাবাহার; আমসুন্দরী ও অন্যান্য রচনা; আলেখ্য মঞ্জরীঃ আবু সিম্বাল, পিকাসো ও অন্যান্য তীর্থ এবং কিছু শিল্পকথা।

পরিতোষ সেনের চিত্রকলার সর্বশেষ প্রদর্শনী হয়েছে কলকাতায়, ২০০৬-এ। গ্যালারি ৮৮ শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের ৮৮তম জ্নদিন উপলক্ষে তাঁর ৮৮টি শিল্পকর্মের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল যা খুব প্রশংসিত হয়েছিল। একইভাবে ২০০৬-এ গ্যালারি ৮৮ শিল্পী পরিতোষ সেনের ৮৮তম জন্মদিন উদযাপন করেছে তার ৮৮টি শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

তিনি ভারত ও বহির্বিশ্বে প্রচুর প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে: কলকাতা গ্রুপ প্রদর্শনী (১৯৪৪),লন্ডন, যুক্তরাজ্য (১৯৬২),সাও পাওলো বিয়েনালে (সাও পাওলো দ্বিবার্ষিক), ব্রাজিল (১৯৬৫) ,নয়া দিল্লী ট্রিয়েনালে (নয়া দিল্লী ত্রিবার্ষিক) (১৯৬৮, ১৯৭১, ১৯৭৫), সুইডেন (১৯৮৪), হাভানা বিয়েনালে (হাভানা দ্বিবার্ষিক), কিউবা (১৯৮৬)। একানব্বইয়ের এপ্রিলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ের পর পরিতোষ সেন ব্যথিত হয়ে পড়েছিলেন গভীরভাবে। সেই জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার বহু ছবি দেখেছেন তিনি পত্রপত্রিকায়, দূরদর্শনের পর্দায়। সেসব দৃশ্য মনে রেখে তিনি ’ঘূর্ণিঝড়ের পর’ সিরিজে এঁকেছিলেন বেশ কিছু চিত্রকলা। সেগুলো ’৯১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লির ভিলেজ গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়।

]]>
উত্তম-সৌমিত্রর মতান্তর এবং অভিনেত্রী সঙ্ঘ ভেঙে শিল্পী সংসদ https://ekolkata24.com/entertainment/special-report-on-uttam-kumars-birthday-uttam-soumitra-conflict Fri, 23 Jul 2021 19:13:02 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=1245 বিশেষ প্রতিবেদন: বঙ্গ জীবনে এমন কতগুলি শব্দযুগল জড়িয়ে রয়েছে যা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বাঙালিদের মধ্যে তর্ক-ঝগড়া চলে৷ মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল, হেমন্ত না মান্না, সত্যজিৎ না ঋত্বিক, উত্তম না সৌমিত্র।

এটা ঘটনা উত্তমকুমার এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ফ্যানেরা এই দুই তারকাকে নিয়ে যতোই তর্ক-বিতর্ক করুক না কেন, আর পেশাগত দিক দিয়ে রেষারেষি যাই থাকুক না কেন ব্যক্তিগত জীবনে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল খুবই ভাল৷ তবে ষাটের দশকের শেষ দিকে উত্তম- সৌমিত্রের মধ্যকার ব্যক্তিগত সংঘাত হয়েছিল যার জন্য দুই ব্যক্তিত্বের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। যদিও কিছুদিন পরেই তা আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে তাদের দূরত্বের পাশাপাশি ওই সময় ভাঙন ধরেছিল অভিনেতা কলাকুশলীদের সংগঠনেও।

৬০-এর দশকের শেষ দিকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না বলে ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল সিনেমার নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদেরও মধ্যে। যারফলে বেশ কিছু দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় ‘‌সিনে টেকনিশিয়ানস ওয়াকার্স ইউনিয়ন’‌।

১৯৬৮ সালে যখন এই ধর্মঘট শুরু হয় তখন ‘‌অভিনেতৃ সঙ্ঘ’ তা নৈতিক সমর্থন করে। তখন ‘অভিনেতৃ সঙ্ঘ’‌–এর সভাপতি হলেন উত্তমকুমার এবং সম্পাদক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এদিকে রাজ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার থাকায় কর্মচারি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলিরও তখন বেশ জঙ্গি মনোভাব। সেই সময় আবার গঠিত হয় ‘‌পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতি’‌ এবং এই সংগঠনে পুরোভাগে ছিলেন উত্তমকুমারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন প্রযোজক।

ওই সময় অভিনেতৃ সঙ্ঘের একাংশ সঙ্ঘের তহবিল থেকে দশ হাজার টাকা ধর্মঘটীদের দিতে চায়। কিন্তু তা নিয়ে মতভেদ দেখা যায় ৷ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপকুমাররা ছিলেন টাকা দেওয়ার পক্ষে কিন্তু বিকাশ রায় জহর গাঙ্গুলীরা তার বিরোধিতা করেন৷ এদিকে উত্তমকুমার প্রযোজকদের প্রতিনিধি হয়ে পড়েছেন বলে তখন অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে উত্তমকুমার সৌমিত্র এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বেশ ক্ষুব্ধ হন৷ ফলে পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে দাঁড়ায় যে সদস্যদের মধ্যে ভোটাভুটি করতে হয়৷ আর সেই ভোটে জিতে অভিনেত্রী সঙ্ঘের সভাপতি হন সৌমিত্র৷ এর পর যথারীতি সঙ্ঘ ধর্মঘটীদের ১০,০০০টাকা দেয়৷

অন্যদিকে উত্তমকুমার ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্ঘ ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৈরি করেন শিল্পী সংসদ৷ উত্তমের সঙ্গে শিল্পী সংসদে তখন বিকাশ রায় জহর রায়েরা ৷ অন্যদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়েরা অভিনেত্রী সংঘে৷ আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হয়ে থাকে বামপন্থীরা তখন ‘‌অভিনেতৃ সঙ্ঘ’‌–এ এবং কংগ্রেসী সমর্থকরা যোগ দিয়েছেন ‘‌শিল্পী সংসদ’‌–এ। তবে অতটা সরল বিভাজন তখন সেটা ছিল না কারণ বিপরীত মতাদর্শের লোক হলেও অনিল চট্টোপাধ্যায়, নির্মল ঘোষেরা কিন্তু শিল্পী সংসদে যোগ দেন ৷ মতাদর্শের পাশাপাশি বাংলা রুপালি পর্দার দুই নায়কের ব্যক্তিগত সংঘাতও সেই সময় কাজ করেছিল সংগঠনের ক্ষেত্রে বলে মনে করেন অনেকে ৷

তবে এটাও ঘটনা এর কিছু দিন বাদে বসুশ্রী সিনেমা হলে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে হাজির ছিলেন উত্তম সৌমিত্র এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখানে সৌমিত্র ভানুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেও উত্তমকুমারকে হাতজোড় করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন৷ তখন উত্তমকুমার সৌমিত্রের কাছে জানতে চান, এতদিন সৌমিত্র উত্তমকে বড় ভাইয়ের মতো ভেবে পায়ে হাত দিয়ে তাকে প্রণাম করে এসেছেন কিন্তু এখন তাদের সংগঠন আলাদা হয়ে গিয়েছে বলেই এমন আচরণ করা হল? তখন অবশ্য সৌমিত্র পায়ে হাত দিতে প্রণাম করে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং উত্তমও তাঁকে জড়িয়ে ধরেন৷ আর দুজনের সম্পর্কের বরফ গলে আগের মতো হয়ে যায়৷

]]>