special – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com Stay updated with Ekolkata24 for the latest Hindi news, headlines, and Khabar from Kolkata, West Bengal, India, and the world. Trusted source for comprehensive updates Mon, 06 Dec 2021 17:26:55 +0000 en-US hourly 1 https://ekolkata24.com/wp-content/uploads/2024/03/cropped-ekolkata24-32x32.png special – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com 32 32 Kolkata-City of Joy: হাওড়া ব্রিজের ‘বড়দা’ শোনায় পুরনো শহরের গল্প https://ekolkata24.com/offbeat-news/kolkata-city-of-joy-special-report-on-bally-bridge-in-kolkata Mon, 06 Dec 2021 17:26:55 +0000 https://ekolkata24.com/?p=13856 Kolkata: হাওড়া ব্রিজের থেকে বয়সে ১১ বছরের বড় নব্বইয়ের দোরগোড়ায়.. দাঁড়িয়ে নিশব্দ। গল্প শোনায় পুরোনো ব্রিজ।

২৯ ডিসেম্বর তার জন্মদিন। এক সময়ে নামডাক থাকলেও এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া, ৯০ বছরের এই ‘বৃদ্ধ’ কার্যত নিঃসঙ্গ। আর তাই তার জন্মদিন পালন তো দূর, গায়ে জমে থাকা ময়লা সাফ করারও কাউকে পাওয়া যায় না বঞ্চনার শিকার এই বৃদ্ধের পরিচয় ‘ওয়েলিংডন ব্রিজ’, যাকে সকলে চেনেন বালি ব্রিজ নামে। বিদেশি নাম ছেড়ে এক সময়ে তার নাম রাখা হয়েছিল বিবেকানন্দ সেতু। ১৯৩১ সালে ২৯ ডিসেম্বর গঙ্গার উপরে উদ্বোধন হয়েছিল এই রেল ও সড়ক ব্রিজের।

ইতিহাস বলছে, গুজরাতের কচ্ছ এলাকার বাসিন্দা, রেলের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী রায়বাহাদুর জগমল রাজা এই সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন ১৯২৬ সালে। এই কাজের জন্য কচ্ছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল মিস্ত্রিদের। ব্রিজের ভিত তৈরি করতে গঙ্গার নীচে ১০০ ফুট গভীর পাতকুয়ো খোঁড়া হয়েছিল। তার উপরে স্তম্ভ বানিয়ে স্টিল ও কংক্রিট ব্যবহার করে রেল ও সড়ক ব্রিজটি তৈরি হয়। খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা।

রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই ব্রিজের নীচে রয়েছে ৭৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৮ মিটার প্রস্থের লোহার কাঠামো। ব্রিজের সাতটি স্তম্ভের উপর রয়েছে সাতটি এক্সপ্যানশন জয়েন্ট, আর তার উপর পাতা রয়েছে ঢেউ খেলানো ট্র্যাপ প্লেট। এর উপরেই কংক্রিট করা অংশ দিয়ে বালি ও দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে গাড়ি চলাচল করে। দুই রাস্তার মাঝে রয়েছে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার রেললাইন। ভারতীয় রেলের ইতিহাসেও এই ব্রিজের গুরুত্ব রয়েছে। জানা যায়, এই ব্রিজের উপর দিয়েই প্রথম বার হুগলি নদী পারাপার করেছিল ট্রেন— হাওড়া থেকে শিয়ালদহগামী জগমল রাজা হাওড়া এক্সপ্রেস।

বয়সের হিসেবে বালি ব্রিজ হাওড়া সেতুর থেকেও ১১ বছরের বড়। কিন্তু হাওড়া শহরের দুই প্রান্তে গঙ্গার উপরে থাকা এই দুই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে বিশাল বৈপরীত্য। প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠা দিবসে এবং বছরের বিশেষ দিনে রঙিন আলোয় সেজে ওঠে হাওড়া সেতু। সেখানে বালি ব্রিজে অধিকাংশ দিন আলোই জ্বলে না। দীর্ঘ দিন ধরে এই আলোর সমস্যার সমাধানে পূর্ত দফতর এখন এলইডি আলো লাগালেও স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু আলো বন্ধ থাকে। আবার ব্রিজের রাস্তা খারাপ হয়ে গেলে তা কে সারাবে, তা নিয়ে রেল ও রাজ্যের চাপান-উতোরেই বছর ঘুরে যায়।

দুই সেতুর বৈপরীত্যের এখানেই শেষ নয়! গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়া রুখতে হাওড়া সেতুর রেলিংয়ের উপর লাগানো হচ্ছে লোহার তারের জাল, নজরদারির জন্য রয়েছে সিসি ক্যামেরা, পুলিশের ক্যাম্প, কলকাতা ও হাওড়া পুলিশের টহলদারি। পান-গুটখার পিক থেকে হাওড়া সেতুকে বাঁচাতেও তৎপর প্রশাসন। সেখানে বালি ব্রিজের দিন কাটে একা, অবহেলায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বালি ব্রিজের আইনশৃঙ্খলার দিকটা বালি ও বেলঘরিয়া, বরাহনগর থানা ভাগাভাগি করে দেখে। মেরামতির দায়িত্বও রেল ও পূর্ত দফতরের হাতে। কিন্তু তবু দিনের পর দিন চুরি হয়ে যাচ্ছে সেতুর মূল স্টিলের কাঠামো রক্ষা করার লোহার ঢাকনা। ফুটপাত থেকে শুরু করে ব্রিজের সর্বত্র পান-গুটখার পিকে রাঙানো। রেলিংয়ে জমে চাপ চাপ ধুলো। নেই সিসি ক্যামেরা, পুলিশের স্থায়ী ক্যাম্প। অরক্ষিত ব্রিজের রেলিং। ধুলোভর্তি গালিপিটের কারণে বর্ষায় জল থইথই করে ব্রিজের উপরে।

বালি ব্রিজের দুই প্রান্তে রয়েছে চারটি ঘর, তার পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে ব্রিজের নীচে যাওয়ার চারটি সিঁড়ি। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ব্রিজ তৈরির পরে ওই ঘর থেকেই টোল আদায় করা হত। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই ঘর-সিঁড়ি সবই আজ ভগ্নপ্রায়। ঘরগুলির গায়ে ঝোপের আড়ালে আজ চাপা পড়ে রয়েছে ‘বৃদ্ধ সেতুর জন্মদিনের তারিখ ও ব্রিটিশদের দেওয়া নামের ফলক। ব্রিজের কাঠামোয় রায়বাহাদুর জগমল রাজার নামাঙ্কিত ফলকটিও আজ ধুলোয় চাপা পড়েছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ব্রিজের দু’পাশের ওই ঘরগুলি ব্যবহার করে অনায়াসেই রেস্তরাঁ থেকে পুলিশ ক্যাম্প— অনেক কিছুই তৈরি করা যেত। কিন্তু সে সবে কেউই উদ্যোগ দেখায়নি।

]]>
Jaleshwar Temple: জলের নীচে মহেশ্বর, পূন্যতীর্থ জলেশ্বর https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-north-24-parganas-jaleshwar-temple Tue, 30 Nov 2021 09:23:55 +0000 https://ekolkata24.com/?p=12865 বিশেষ প্রতিবেদন: সারাবছর মন্দির সংলগ্ন বিরাট জলাশয়ে  (Jaleshwar) মহাদেব থাকেন, আর চৈত্র সংক্রান্তিতে সন্ন্যাসীরা তাকে জল থেকে তুলে আনেন৷ একদম সঠিক৷ আপনি সারাবছর পুকুরে খুঁজলেও পাবেন না মহেশ্বরকে৷ চৈত্র সংক্রান্তিতে অনেক সন্ন্যাসী মিলে তোলেন মহাদেবকে৷ ধুমধাম করে পুজো হয় বাবার৷ চড়কের মেলা বসে৷ এক অদ্ভূদ সুন্দর পরিবেশ৷

সন্ন্যাসীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখলে, গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য৷ সাথে গ্রাম্য মেলা৷ পাঁপড় ভাজা হোক বা জিলিপি৷ হাজার হাজার মানুষ এই দিন নিজের মানত পূরণ করেন৷ আপনাদের তাক লাগবে দেখলে৷ সবচেয়ে বেশী মানত হয় দণ্ডি কাটার৷ কত মহিলা কত যুবক দেখবেন, পুন্যপুকুরে স্নান করে দণ্ডি কেটে হয় মন্দিরে যাচ্ছেন বা মন্দির প্রদক্ষিণ করছেন৷ আমি দেখে অবাক হয়েছিলাম ৷ কত যুবকের চাকরী পাবার বাসনা পূরণ হয়েছে , অনেকে সন্তানলাভ করেছেন৷ সবাই নিজের মানত এইদিন পূরণ করেন৷ পাশের একটা গাছে বেঁধে যান ঢিল৷ গাছটা আমফানে পড়ে গেলেও , তার ডালে কত মানসিক , কত মানুষের অপূর্ণ বাসনার আশার ঢিল গুলো বাঁধা আছে৷

পুজোর পর বাবা আবার জলে চলে যান৷ সারাবছর এই পুকুরে তার বাস৷ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এই পরিবেশে আছে ছোট্ট একটি পার্ক৷( পার্কের প্রবেশমূল্য ২০ টাকা) বড় মাঠ৷ পিকনিক করবার জায়গা, গেস্টরুম , শৌচাগার থেকে স্নান করে পোশাক পরিবর্তন সবরকম ব্যবস্থা আছে৷ উচ্চস্বরে ডি জে বক্স বাজনো এখানে নিষিদ্ধ ৷

আশেপাশে, লুচি তরকারি , ফুচকা , আইসক্রিম, টুকটাক খাবার পেয়ে যাবেন৷ বাড়ি থেকে কিছু করে আনলে , মাঠে বসে খাবার সুন্দর জায়গা আছে৷ জলের সমস্যা নেই ৷ সারাদিন সুন্দর ভাবে কাটানোর জন্য বেশ ভালো জায়গা৷ সাথে ভোলেনাথের আশীবার্দ পরম প্রাপ্তি ৷ মন্দিরের পা দিলেই মন শান্ত হয়ে যেতে বাধ্য৷ যেকোন দিন পুজো দেওয়া যায়৷ আর পার্ক খোলা থাকে সকাল সকাল থেকে বিকাল চারটেয় অবধি৷ যদিও খুব ছোট্ট পার্ক কিন্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন৷

উঃ ২৪ পরগণার বনগাঁ লাইনের , গোবরডাঙা স্টেশনে নেমে টোটো রিজার্ভ করে যাওয়া যায় অথবা দুটো অটো পাল্টে যাওয়া যায়৷ অথবা হাবড়া নেমে বনগাঁগামী বাস ধরলে, জলেশ্বর মোড়ে নেমে, টোটো ধরে সোজা মন্দির৷ মন্দির পথের সবুজ গ্রাম আপনাদের মন কাঁড়বেই৷ শহরের কোলাহলের থেকে দুর কাটানো যেতেই পারে শিবশম্ভূর পায়ের কাছে কিছুক্ষণ ৷

আশ্চর্যের বিষয় আপনি সারাবছরের কোনদিন মহাদেব কে জলে খুঁজেই পাবেন না৷ অনেকে অনেকবার চেষ্টা করেছেন৷ পাবেন শুধু চৈত্র সংক্রান্তিতে৷

]]>
Suniti kumar Chatterjee: ভাষা নিয়ে খেলতেন রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বকবির ভাষাচার্য ছিলেন এই বাঙালি https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-story-about-linguist-suniti-kumar-chatterjee Fri, 26 Nov 2021 11:40:50 +0000 https://ekolkata24.com/?p=12495 বিশেষ প্রতিবেদন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ভাষাচার্য উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। কবিকে যেমন শুধু তার জীবন-চরিতে পাওয়া যায় না, তেমনই বিশ্ববিশ্রুত ‘ওরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব বেঙ্গলি ল্যাংগোয়েজ’ বা ওডিবিএল-এর সীমার মধ্যে আটকা পড়ে থাকার লোক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (Suniti kumar Chatterjee) নন। আসলে তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল মানবসভ্যতার আবহমান বৈচিত্র। হিউম্যানিটিজ-এর সামগ্রিক চর্চাতেই তিনি পেয়েছিলেন বেঁচে থাকার জ্বালানি।

তাঁর অভিযানের রাজপথ ছিল, ভাষা। মতি শীলের অবৈতনিক ইস্কুল থেকে ভারতের জাতীয় অধ্যাপক— এই আশ্চর্য উড়ান কিন্তু কোনও দিনই ‘বিদ্যা দদাতি বিনয়ং’ প্রবাদকে চ্যালেঞ্জ জানায়নি। তাঁর প্রতিভার প্রশংসা করলে তিনি অবলীলায় বলতেন, ইউরোপের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর ঝাঁট দিলে নাকি দশ-বিশটা সুনীতি চাটুজ্যে পাওয়া যাবে। আবার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির বই কাউকে দেখাতে হলে তাঁকে উৎসর্গ করা বইগুলো লুকিয়ে রাখতেন, পাছে সেটা আত্মপ্রচার হয়ে দাঁড়ায়। কোনও মানুষের, এমনকী ছাত্রছাত্রীদেরও প্রণাম নিতেন না, উলটে তাদের ‘আপনি’ সম্বোধন করতেন।

ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোনও অজানা বিষয় জানলে অন্য অধ্যাপকদের সামনেই সেই স্বীকৃতি দিতেন। ছাত্রী হিসেবে সুকুমারী ভট্টাচার্য তো এর জন্য লজ্জিত বোধ করার কথাই স্বীকার করেছেন। জ্ঞানচর্চার চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার পরেও কোনও ভাল বক্তৃতা শুনলে বলতেন, ‘এ সব শুনলে বুঝি কত সামান্য জানি, কত জানবার ছিল।’ বার বার বলতেন রবীন্দ্রনাথের কথা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাছে শুধু প্রিয় কবি নন, ছিলেন আদর্শ মানুষ। রবীন্দ্রনাথের নায়ক অমিত সুনীতিবাবুর বই নিয়ে শিলং-এ গিয়েছিল। সুনীতিবাবুর মনে হত রবীন্দ্রনাথ যেন এ ভাবেই তাঁকে অমরত্ব দিয়ে গেলেন।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সুনীতিকুমার হাওড়া জেলার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হরিদাস চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ইংরেজদের সদাগরি অফিসের কেরানি। তিনি মতিলাল শীল ফ্রি স্কুল থেকে ১৯০৭ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করে কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯০৯ সালে ৩য় স্থান অধিকার করে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। অতঃপর প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯১১ সালে ইংরেজিতে সম্মানসহ বি.এ শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে সংস্কৃতের শেষ পরীক্ষায় পাস করেন এবং প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি এবং জুবিলি গবেষণা পুরস্কার অর্জন করেন।

কৃতিত্বের সাথে এম.এ ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯১৪ – ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে তিনি ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লন্ডনে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধ্বনিবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিল ‘ইন্দো-আরিয়ান ফিললিজ’।

লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে তিনি ধ্বনিতত্ত্ব ও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতত্ত্ব ছাড়াও প্রাকৃত ভাষা, ফার্সি ভাষা, প্রাচীন আইরিশ ভাষা, পুরনো ইংরেজি ও গোথিক ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর লন্ডন থেকে তিনি প্যারিসে গমন করেন। সেখানে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লাভ ও ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাতত্ত্ব, প্রাচীন সগডিয়ান ও প্রাচীন খোতানী ভাষা, গ্রীক ও লাতিন ভাষার ইতিহাস এবং অস্ট্রো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়াটিক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯২২ সালে দেশে ফিরে আসার পর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের ‘খয়রা’ অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুণরায় কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করার পর ১৯৫২ সালে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে পুণঃনিযুক্ত হন।

অধ্যাপক তারাপুরওয়ালা’র কাছে আবেস্তা অধ্যয়ন করেন। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে ৩ খণ্ডের দি অরিজিন এন্ড ডেভেলপম্যান্ট অব দ্য বেঙ্গলী ল্যাঙ্গুয়েজ গ্রন্থখানি রচনা করে অসাধারণ বিদ্যাবত্তার পরিচয় প্রদান করেন। অন্যান্য রচনাবলী হল – বেঙ্গলী ফোনেটিক রিডার, কিরাত জনকৃতি, ভারত-সংস্কৃতি, বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, পশ্চিমের যাত্রী, ইউরোপ ভ্রমণ, জাতি সংস্কৃতি সাহিত্য, ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা, সংস্কৃতি কী, দ্বীপময় ভারত, রবীন্দ্র সঙ্গমে, শ্যামদেশ ইত্যাদি।

১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারজন ভ্রমণসঙ্গীর একজন হয়ে সুনীতিকুমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে যান। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর। “যাত্রী” গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ এই ভ্রমণের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। এসব দেশে তিনি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও শিল্প সম্বন্ধে বক্তৃতা প্রদান করেন।

]]>
26/11 Mumbai attack: জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা শরীর, নাগপাশে তুকারাম ধরলেন কাসভকে https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-tukaram-omble-in-the-26-11-mumbai-attacks Fri, 26 Nov 2021 09:12:01 +0000 https://ekolkata24.com/?p=12455 26/11 Mumbai attacks
বিশেষ প্রতিবেদন: সেদিন রাত্রের শিফটে ডিউটি ছিল তুকারাম ওম্বলের (Tukaram Omble)। হালকা মেজাজে ভাবছিলেন কদিন পরেই শীতের আমেজ আসবে,মুম্বাই সেজে উঠবে উৎসবের মেজাজে। বান্দ্রা জুহু অন্ধেরি সব জায়গা উঠবে ঝলমলিয়ে। ছেলে মেয়েরা ধরেছে শীতের ছুটিতে কোথাও একটা যাবে। হাসি পেলো তুকারামের , পুলিশের আবার ছুটি। কোনো উৎসবেই তাদের ছুটি চাওয়া পাপ। গণপতি উৎসব,দেওয়ালি, হোলি কিছুতেই মেলেনা ছুটি। তবু পরিবারের মানুষেরা চায় তাকে।এবার একটা চেষ্টা করবে ছুটি নেবার।

ভাবতে ভাবতে মনটা পিছন ফিরে চলে গেলো। সেই কবে আর্মিতে যোগ দেবার পর থেকেই ছুটি বলে কিছু নেই জীবনে। তারপর কতদিন পেরিয়ে গেছে, খালি ডিউটি আর এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানো। বাড়ি থেকে কতো দূরে থাকতে হতো সেই সৈনিক জীবনে। কিন্তু সেই জীবনে একটা রোমাঞ্চ ছিলো। দেশরক্ষার গর্ব গর্বিত করতো। ঝুঁকি নিতে বেশ লাগতো। দেশপ্রেমটা তার মধ্যে চিরকালই বেশি। আর্মি থেকে অবসরের পর যোগ দেন মুম্বাই পুলিশের সব ইনস্পেক্টর পদে। ঘর থেকে ডিউটি। নিরুপদ্রব জীবন, এতেই অভ্যস্ত হয়েছেন এখন। তাও মাঝে মাঝে আর্মির সেই দিন গুলো মনে পড়লে রক্ত গরম হয়, জীবন চায় আবার অভিযান করতে। আবার তারপর মনে হয় এই বেশ, পরিবারকে সময় দেওয়া যাচ্ছে।

ভাবনার ছেদ পড়ল ইনস্পেক্টর ইন চার্জের উত্তেজিত কন্ঠে। ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস এ জঙ্গী হানা হয়েছে। বহু মানুষ হতাহত। জঙ্গিরা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে অ্যান্টি টেরোরিস্ট শাখার অফিসার হেমন্ত কারকারে, এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট বিজয় সালাসকার কে। তাদের কোয়ালিস গাড়ি নিয়ে জঙ্গীরা এদিকেই আসছে। অফিসার দ্রুত পজিশন নিতে বললেন সবাইকে। রক্ত গরম হয়ে উঠলো ওম্বলের। ফোর্সকে রেডি হতে বলে লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়।

এদিকে ইসলামিক ফিদায়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর দুই সদস্য আজমল কাসব ও ইসমাইল খান শিবাজি টার্মিনাস এ হামলা চালিয়ে প্রচুর মানুষকে হত্যা করে বাইরে বেরিয়ে এলো। চারদিকে আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি, চিৎকার। বেশ মজা লাগলো তাদের। ভারতীয় গুলোর রক্ত দেখা পবিত্র কর্তব্য। আবার কয়েক রাউন্ড গুলি করলো জনগনকে লক্ষ্য করে। চিৎকার আরো বাড়লো। দেখা গেলো একটা টয়োটা গাড়ি আসছে লাল বাতি লাগানো। পজিশন নিলো তারা। গাড়ি থেকে সালাস্কার,হেমন্ত কারকারে প্রমুখ নামতেই গুলিবর্ষণ শুরু করলো। ঝাঁঝরা হয়ে গেলো অফিসাররা। গাড়িটার দখল নিলো কাসব। গাড়ি ছুটলো তাজ হোটেল লক্ষ্য করে। ততক্ষণে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ। হঠাৎ গাড়ির চাকা বার্স্ট করলো। তারা একটা অন্য গাড়ি দখল করে ছুটলো। মুম্বাই পুলিশের অসহায় আত্মসমর্পণ আর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এর বহর দেখে মজা করতে লাগল তারা।

সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে রাস্তায় নাকা চেকিং করছে পুলিশ।সমস্ত গাড়িতে তল্লাশি চলছে। চৌপট্টি এলাকায় ডবল ব্যারিকেড করেছে পুলিশ। দেখা গেলো তীর বেগে ছুটে আসছে একটি স্কোডা গাড়ি। আটকাতেই গাড়ি থেকে ছুটে এলো গুলির ঝাঁক। পুলিশও গুলি চালালো। এক জঙ্গি ঝাঁঝরা হয়ে গেল। অপরজনের কাঁধে গুলি লাগলো। সে চালাচ্ছিল গাড়ি। দ্রুত ইউ টার্ন নিলো গাড়ি। ঝাঁপিয়ে পড়লেন তুকারাম। একে জ্যান্ত ধরবো। শরীরে ফুটছে আর্মি রক্ত। দেশপ্রেমের আদর্শ উত্তাল সমুদ্রের মতো উথাল পাথাল করছে। কানে বাজছে সেই মিলিটারি কমান্ডারের আদেশ, “দেশকি শত্রুও কো হাম নেহি ছোড়েঙ্গে। দেশ হামারে মা হ্যায়। মিট্টিমে মিলা দুঙ্গা দেশ কি শত্রুও কো।”

তুকারাম হাতের লাঠি দিয়ে সজোরে ঘা দিলেন গাড়ির দরজায়। এক হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেললেন গেট।টেনে ধরলেন তার বন্দুকের নল। ঝাঁপিয়ে পড়লেন জঙ্গির ওপর। জঙ্গি গুলি শুরু করলো। বুকে পরপর ঢুকে যাচ্ছে বুলেট।রক্তে ভিজছে তার ইউনিফর্ম। আর লৌহকঠিন দুই হাত পেঁচিয়ে ফেলেছে জঙ্গীর গলা। প্রাণপণে আঁকড়ে ধরেছেন তাকে। আঁকড়ে ধরলেন কাসবকে। অক্টোপাসের নাগপাশ ছাড়াতে পারলনা সে। অন্য পুলিশরা ধরে ফেলল কাসব কে। বন্ধন আলগা হোল তুকারামের। দু হাত প্রসারিত করে শুয়ে পড়লেন দেশের মাটির ওপর। ভলকে ভলকে রক্ত ভাসিয়ে দিলো তার জামা। আকাঙ্ক্ষিত ছুটি মিলল তাঁর। দিনটা সরি রাতটা ছিল এই ২৬/১১। সালটা ২০০৮। শহীদ হলেন তুকারাম ওম্বলে।

তাঁর অসম সাহসী এই লড়াই সেদিন ধরিয়ে দিয়েছিলো মুম্বই হামলার একমাত্র জীবিত জঙ্গি কাসব কে। তার থেকে জানা গিয়েছিলো তার পাকিস্তানি পরিচয়। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের মুখোস খুলে দেবার অকাট্য প্রমান পেয়েছিল ভারত। সরকার সম্মান জানিয়েছিল এই বীর শহীদকে। প্রজান্তন্ত্র দিবসে তাঁকে মরণোত্তর অশোক চক্র সম্মান দেওয়া হয়েছিলো। তিনি প্রমান করেছিলেন দেশদ্রোহীদের থেকে দেশপ্রেমিকদের ক্ষমতা অনেক বেশী।

]]>
Courtney Walsh: ভারতীয় উপমহাদেশের অ্যাওয়ে সিরিজে রুপকথার নায়ক https://ekolkata24.com/sports-news/special-story-cricketer-courtney-walsh Wed, 24 Nov 2021 15:20:15 +0000 https://ekolkata24.com/?p=12267 Sports desk: ইতিহাসে কোনো ফাস্ট বোলার কোটনি ওয়ালশের (Courtney Walsh) মতো অ্যাওয়ে সিরিজে উইকেট পাননি। ২৭৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। জেমস অ্যান্ডারসন ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দ্রুত বোলার-এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন, তার মাত্র 36% ডিসমিসাল হোম থেকে এসেছে।

200 টিরও বেশি উইকেট নেওয়া দশজন দ্রুতগতির বোলারদের মধ্যে ওয়ালশের গড় 25.03 এবং স্ট্রাইক রেট 57 মার্শাল, অ্যামব্রোস, হ্যাডলি এবং ম্যাকগ্রার চেয়ে খারাপ, তবে ওয়ালশ ওয়াসিম আক্রম এবং ওয়াকার ইউনিসের সাথে আছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে থেকে এগিয়ে অ্যান্ডারসন এবং জাহির খান থেকে।

এশিয়ায় মহাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে দ্রুতগতির বোলারদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল – ওয়ালশ সমস্ত তর্ককে ব্যাকফ্রুটে ঠেলে দিয়ে সেরা সফরকারী ফাস্ট বোলার ছিলেন; তার 20.53 গড় (76 উইকেট) এবং 45 এর স্ট্রাইক রেট ওয়েস হলের সংখ্যার চেয়ে (সামান্য) খারাপ, মহাদেশের পিচে 54 উইকেট নিয়েছিলেন,এমন সময়ে যখন অনাবৃত পিচ ঢেকে রাখা হতো না কভার দিয়ে।

মার্শাল এবং ডেল স্টেইন – যাঁরা উভয়েই এশিয়াতে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, এবং যাদের রেকর্ডে তাদের মুকুটে রত্ন রয়েছে – ওয়ালশের তুলনায় এশিয়ার গড় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যদিও স্টেইনের স্ট্রাইক রেট ভাল।
কোটনি ওয়ালশকে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ ফর্মে দেখা গিয়ছিলো। তার কেরিয়ারের বেশিরভাগ সময় এশিয়ার সেরা দুই দলের বিরুদ্ধে (ভারত -পাকিস্তান) দেশে ২৯টি ইনিংসে চার বা তার বেশি উইকেট নিয়েছিলেন।

কোটনি ওয়ালশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সোনালি সময়ের প্যাকের মাঝখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে, সমসাময়িক অন্যান্য দ্রুতগতির বোলারদের

স্পষ্ট পারফরম্যান্সের পার্থক্যের দিক দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ালশের বাইশ গজের সার্ভিস কেরিয়ারে এশিয়াতে জিতেছে এমন চারটে টেস্ট ম্যাচ ( সাতটি হেরেছে এবং ছয়টি ড্র করেছে), এই সময়ে ওয়ালশ 16.04 গড়ে 21 উইকেট শুধুমাত্র এশিয়া মহাদেশের পিচে।

ক্যারিবিয়ানদের জয়ের ক্ষেত্রে তার সেরা পারফরম্যান্স ১৯৮৬ লাহোর টেস্ট ম্যাচ, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে 7 উইকেট ওই সময়ে এককথায় দুরন্ত পাকিস্তান দলকে উড়িয়ে দিয়েছিল এবং 1987 সালে দিল্লি টেস্ট, যেখানে ওয়ালশ দ্বিতীয় ইনিংসে 5 উইকেট নিয়ে একটি সিরিজ নির্ধারণ জয়ের অসামান্য নজির স্থাপন করেছিলেন।

1994 সালে মোহালিতে তার 5 উইকেট শিকার এবং প্রথম ইনিংসে ভারতের হয়ে শতরান করা মনোজ প্রভাকরের নাক ভাঙতে ওয়ালশের দুর্ধর্ষ লিফটার ক্রিকেটের ইতিহাসে ভয়ঙ্কর সত্য সঙ্গে পড়তে পড়তে উত্তেজনার মোড়কে নির্মম বাস্তব।

এছাড়াও 1980 সময়ে ফিরে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘ অপরাজিত সিরিজের ধারাটি ভাঙতে বাধা দেয় কোটনি ওয়ালশ। পরের বছর অস্ট্রেলিয়া অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপরাজিত থাকার বাধা টপকে ক্যারিবিয়ানদের ক্রিকেটের বাইশ গজে দাপুটে রাজত্বর সমাপ্তি ঘটায়।

এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দাপুটে পতনের মাঝের সময়েও কোটনি ওয়ালশ শুধুমাত্র নিজের খেলাকে তুলে ধরেন এমন এক আঙ্গিকে, যেখানে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট সাম্রাজ্যের চরম পতন বাইশ গজে একপ্রকার সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

]]>
Rabi Ghosh: বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেন বাবা, ফিরে আসেন অভিনেতা হয়ে https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-about-actor-rabi-ghosh Wed, 24 Nov 2021 08:42:29 +0000 https://ekolkata24.com/?p=12204 বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নাটকে অভিনয়ের হাতেখড়ি। তারপর যখন কলেজে ভর্তি হলেন তখন বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুললেন ‘বন্ধুমন’ নামে একটি নাটকের দল। মহড়া দিতেন আশুতোষ কলেজের ছাদে। কিন্তু, বাবা জীতেন্দ্রনাথ তা একেবারেই পছন্দ করতেন না। প্রায়ই স্ত্রী জ্যোৎস্না রানীকে বলতেন, “ অভিনয় কইরা সময় নষ্ট করে ক্যান ? তোমার পোলারে কয়া দিও ওই চেহারায় অভিনয় হয় না। সে ছিলো দুর্গাদাস বাঁড়ুজ্যে, হিরোর মতন চেহারা।”

অভিনয়ের এমনই পোকা ছিলেন যে বাড়ি থেকে তাকে বের পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছিলো। তবে মায়ের সমর্থন ছিলো পুরোপুরি। তাই তিনি সামনে এগুতে পেরেছিলেন। ভাগ্যিস মা-র সমর্থন ছিলো নইলে বাংলা চলচ্চিত্র এতো শক্তিশালী চরিত্র – অভিনেতা পেতো না। মহড়া সেরে গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেন , চুপি চুপি , যাতে বাবা টের না পান । জীবনের কী সমাপতন ! মঞ্চে অভিনয়ের ঠিক পাঁচদিন আগে বাবা চলে গেলেন । মায়ের কাছে বললেন ছেলে‚ তাঁর দলের অনেক দেনা-কর্জ । শো বাতিল হলে মুশকিল । কালাশৌচের মধ্যেই প্রথম মঞ্চাবির্ভাব । অভিনয়ের প্রতি এই নিখাদ নিবেদন বজায় ছিল জীবনের শেষদিন অবধি । তখন তিনি প্রতিষ্ঠিত । আচমকা মৃত্যু ছোট বোন তপতীর । তার কয়েক ঘণ্টা পরে মঞ্চে বেদম হাসির নাটক ” কনে বিভ্রাট ” দেখে কেউ আঁচও করতে পারেনি সদ্য বোনকে হারানো রবি ঘোষের মনের মধ্যে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে — সে যেন ছিল নিজের সঙ্গে নিজের প্রতি হাস্যকর অভিনয় ! তিনি অভিনেতা নয়, কমেডিয়ান নয় বরং চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে সব সময় পরিচয় দিতেন। বলতেন যেকোনো চরিত্রই ফুটিয়ে তোলা একজন চরিত্রাভিনেতার কাজ।

রবি ঘোষ তাঁর অভিনয়ের গুরু বলে মানতেন চার্লি চ্যাপলিনকে। যে চ্যাপলিন বলেছিলেন, “Actors search for rejection. If they don’t get it they reject themselves.” এখন আর কমেডিয়ানদের যুগ নেই। সারা বছরে হয়তো গুটিকয়েক কমেডি ছবি মুক্তি পায়। একটিও বক্স-অফিস সাফল্য নয়। অনেকবছর আগে অনীক দত্তের ‘ ভূতের ভবিষ্যৎ ’ রমরমিয়ে চলেছিল বটে। তাও হাতেগুনে ওই একটিই। এখনকার কমেডি বাংলা ছবি জোর করে কাতুকুতু দিয়ে লোক হাসায়। কিন্তু রবি ঘোষকে কেউ ভোলেনি। ‘দ্য রিয়্যাল হিরো’ – কে ভুলে যাওয়া সহজ নয়। শুধু বডি – বডি করে না কাটিয়ে পড়াশোনাও করেছেন নিজের মতো। তাঁর পড়াশোনা, বিশ্বের বিভিন্ন ছবি দেখা কত সমৃদ্ধ, সবকিছুই বোঝা যাবে রবি ঘোষের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার শুনলে বা পড়লে । ভাগ্যিস তিনি অভিনয়ে এলেন ! নাহলে এই ক্ষুদ্র জীবন নতুন দর্শনের ভ্রমণে ঘুরতে পারতেন না।

Special report about actor Ravi Ghosh

বিশ্বখ্যাত পরিচালক – অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, “ To truly laugh, you must be able to take your pain, and play with it.” তারপর আরও বলেছিলেন, “ Life is a tragedy when seen in close-up, but a comedy in long-shot.” — এই অমোঘ সমস্ত কথাগুলির সঙ্গে দৃশ্যত মানিয়ে যায় আমাদের প্রত্যেকের পছন্দের এক অভিনেতার নাম — তিনি হলেন রবি ঘোষ ! পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষদস্তিদার । আক্ষরিক ও ব্যবহারিক দু দিক দিয়েই মধ্যবিত্ত বাঙালির পক্ষে খুব ভারী নাম । সংক্ষেপ করে নিয়েছিলেন । বাদ পড়েছিল ইন্দ্র‚ নাথ ও দস্তিদার । যেটুকু ছিল সেটুকু ছোট‚ উচ্চারণেও সুবিধে — ছোট হলেও সে নামের ওজন ও অভিঘাত দুইই বড় সাঙ্ঘাতিক । কয়েক দশক ধরে বাংলা ছবিতে সে নামের ‘ কী দাপট ‘ ! জন্ম পূর্ববঙ্গে ১৯৩১-এর ২৪ নভেম্বর ! আজ সেই উপলক্ষে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী !

আপাদমস্তক দক্ষিণ কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিটের বাসিন্দা । পড়তেন ভবানীপুরের সাউথ সাবার্বান স্কুলে । তারপর আশুতোষ কলেজ । বিজ্ঞান শাখায় পড়ছেন । বাবার আশা‚ ভবিষ্যতে ভদ্রস্থ চাকরি বাঁধা । কিন্তু ছেলেও মন বন্ধক দিয়ে দিয়েছেন থিয়েটারের কাছে । সেই সময় মাস্‌ল ফুলিয়ে, ছাতি চওড়া করে সিনেমায় ‘হিরো’ হওয়ার চল ছিল না। সুন্দর মুখ আর শক্তিশালী অভিনয়েই প্রত্যেকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিজের জাত চেনাতেন। তিনি একলব্য হলে তাঁর দ্রোণাচার্য উৎপল দত্ত । কলেজে পড়তে পড়তে শরীরচর্চা করতেন । পাখির চোখ — মঞ্চে অভিনয় ।

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ১৯৫৯ সালে তার ‘আহ্বান’ চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রবিকে যুক্ত করেন। কিন্তু, রবির জীবনের মোড় ঘুরে যায় তপন সিনহার ‘গল্প হলেও সত্যি’- তে অভিনয়ের পর। ছবিতে এক চাকরের ভূমিকায় অভিনয় করলেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মূল চরিত্র। তপন সিনহার ‘ গল্প হলেও সত্যি ‘ – তে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সবার নজরে আসেন। যদিও পূর্বেই মঞ্চে উৎপল দত্তের ‘অঙ্গার’ নাটকে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দেখেছিলেন পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় এবং বড় পর্দায় প্রথম সুযোগ দেন তিনি — ১৯৫৯ সালে ‘ আহ্বান ‘ ছবি । নায়ক অনিল চট্টোপাধ্যায়‚ নায়িকা সন্ধ্যা রায়‚ সঙ্গে নবাগত রবি ঘোষ । ১৯৬৮ সালে সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চরিত্রে তার অভিনয় চলচ্চিত্রজগতে একটি মাইলফলক। বাঘা চরিত্রে অভিনয় করে অভিনয় শিল্পটিকেই এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।

‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অভিযান’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ ছবিগুলিতে একের পর চুটিয়ে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়ে ছিলেন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা রবি ঘোষ। নায়কোচিত চেহারা না হলেও সে যুগের বাংলা ছবির সমস্ত পরিচালকের প্রিয়পাত্র ছিলেন রবি। তাঁর হাত ধরেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কত কত সফল অভিনেতা ও অভিনেত্রী এসেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে ! ১৯৫৩ সালে কলকাতা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চাকরি শুরু করলেও ১৯৬১-তে সেই পাট চুকিয়ে পাকাপাকি ভাবে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন রবি ঘোষ। অভিনয়ের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হতেন যে যখনই কোনো নতুন মুখের দরকার পড়েছে তখনই এগিয়ে এসেছেন। ‘আকাশ কুসুম’-এর জন্য মৃণাল সেনের কাছে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে, ‘মহানগর’এর জন্য জয়া ভাদুড়িকে, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’- র জন্য সত্যজিত রায়ের কাছে শমিত ভঞ্জ ও শুভেন্দুকে নিয়ে গিয়েছেন।

সিনেমা দেখেন কিন্তু রবি ঘোষকে পছন্দ করেন না – এমন তো হতেই পারে না। ‘ বাঘা বাইন ’ আসলে রবি ঘোষ বরিশালের বাঙাল , যদিও বড় হয়েছেন কলকাতায়। জীবনের বড় অংশ জুড়েই আছে তাঁর সিনেমার গুরু সত্যজিৎ রায়, নাটকের গুরু উৎপল দত্ত ও কমলকুমার মজুমদার। চকলেটের লোভ দেখিয়ে জয়া ভাদুরিকে নায়িকা হতে রাজি করিয়েছিলেন রবি ঘোষ। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে তিনি সবচেয়ে পরিচিত তার হাস্যরসাত্মক চরিত্র রূপায়নের জন্য। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি বাংলা নাট্যমঞ্চ এবং টেলিভিশন তথা ছোট পর্দায় অভিনয় করেছেন। রবি ঘোষের অভিনয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্যই ছিল হাস্যরসের মাধ্যমে সামাজিক রূঢ় বাস্তবিক ঘটনাগুলিকে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা। অভিনয়ের আন্তরিকতা ও সংবেদনশীলতা তাঁর প্রতিটি চরিত্রকে নতুন আঙ্গিকে হাজির করেছিল। আজীবন বাংলা ছবির ‘কমেডিয়ান’ তকমা পেলেও তিনি ছিলেন এক অসাধারণ চরিত্র অভিনেতা !

অথচ পর্দায় যতই তিনি একজন কমেডিয়ান অভিনেতা হোন না কেন, বাস্তবে ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত। যিনি সময় পেলেই ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’ পড়তেন। পরচর্চা পরনিন্দা একবারে না-পসন্দ। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সাঙ্ঘাতিক সিরিয়াস । প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী অনুভা গুপ্ত প্রয়াত হয়েছিলেন ১৯৭২-এ । তার ১০ বছর পরে বিয়ে বৈশাখী দেবীকে । এক বন্ধুর বাড়িতে প্রথম আলাপ । প্রথম দর্শনে বৈশাখী দেবী নাকি খুব হেসেছিলেন তাঁকে দেখে । পরে নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন বৈশাখী দেবী । আলাপের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে । যখনই মজার সংলাপ শোনার আব্দার করতেন উল্টোদিক থেকে জবাব আসতো — কেন ! আমি কি জোকার ?

বাইরের কেউ না থাকলে কাজের লোকেদের, ড্রাইভার গণেশকে বসিয়ে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ শোনাতেন। যে জন্য বহুবার বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, জীবনের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত তাতেই নিবিষ্ট করেছিলেন, তার নাম ‘অভিনয়’। বরিশালের এ হেন কুলীন বাবুটি হলেন রবি ঘোষ।

পাঁচের দশকে (১৯৫০-’৫১) ‘সাংবাদিক’ নাটক দিয়ে পথ চলা শুরু। উৎপল দত্তের পরিচালনায় এই নাটকে মাত্র তিরিশ সেকেন্ডের অভিনয় দেখে সে দিন মৃণাল সেন বুঝেছিলেন রবি ঘোষ কত বড় অভিনেতা। সাউথ সাবারবান মেন স্কুল – এ পড়াকালীন নাটকের মহড়া দিতেন বন্ধুদের ছাদে। সহপাঠী অভিনেতা তরুণ চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে থাকতেন। ভবানীপুর আশুতোষ কলেজের নৈশ বিভাগে বি কম- পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চায় মন দেন। কলেজই বন্ধুত্ব হয় সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এঁরই পরামর্শে পৌঁছে যান উৎপল দত্তের নাটকের দল ‘লিটল থিয়েটার গ্রুপে’। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫৯ — উৎপল দত্তের পরিচালনায় মিনার্ভা থিয়েটারে লিটল থিয়েটার গ্রুপ নিবেদিত ‘অঙ্গার’ নাটকের প্রথম শো।

সেদিন থেকে শেষ শো পর্যন্ত অভিনয় করেছিলেন তিনি। এই নাটকের জন্য ‘উল্টোরথ’ পুরস্কার পান। নাছোড় অভিনেতা-পুত্রের অভিনয় দেখার দিন ঠিক করেছিলেন শেষ পর্যন্ত বাবা জীতেন্দ্রনাথ। কিন্তু বিখ্যাত ‘অঙ্গার’ নাটকে ছেলের অভিনয় আর দেখা হয়নি। ২৫ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। ‘অঙ্গার’ নাটকে সনাতনের ভূমিকায় একজন ছোটোখাটো চেহারার মানুষ খনি থেকে উঠে উচ্চ স্বরে বলে উঠেছিলেন ‘ আমি একজন ভূতপূর্ব লোক ’ ‑ যাঁরা সেই কন্ঠস্বর শুনেছিলেন তাঁরা আজীবন ভুলতে পারেননি।

ওঁর জীবনের অন্যতম প্রেরণা ছিলেন স্ত্রী অনুভাদেবী। অনুভা যখন একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী, তখন রবি ঘোষ একজন স্ট্রাগলিং অভিনেতা। অথচ কী সুন্দর ভাবে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ‘অঙ্গার’ নাটকের অভিনয় দেখে পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ‘কিছুক্ষণ’ ও তপন সিংহ ‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’র জন্য ডাকেন। আর থেমে থাকতে হয়নি। তপন সিংহ তো রবিকে শুধু কমেডিয়ান হিসাবে দেখতেন না, দেখতেন চরিত্রাভিনেতা হিসাবে। তাঁর কথায়, “গোটা ভারতবর্ষে রবির মতো অসামান্য ক্ষমতাসম্পন্ন চরিত্রাভিনেতা বাস্তবিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ” ‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’র পরেই প্রস্তাব আসে সত্যজিত রায়ের ‘অভিযান’-এর জন্য।

‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’ ছবি করার সময় থেকে অনুভাদেবীর সঙ্গে সম্পর্কের শুরু। সেই সময় রবি ঘোষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অনুভাদেবীর সেবায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। নানা টানাপোড়েনের মধ্যে বিয়ে করলেও ১৯৭২-এ স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন রবি ঘোষ। প্রায় বছর দেড়েক অভিনয় জগত থেকে সরে ছিলেন। ফিরে আসেন ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’- এর মাধ্যমে। এর এক দশক পরে, ১৯৮২-তে বৈশাখীদেবীকে বিয়ে করেন। ৪৭ নম্বর মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন গলফ গ্রিনের ফ্ল্যাটে।

সময়ের ব্যাপারে খুব পাংচুয়াল ছিলেন রবি ঘোষ। ‘ঠগিনী’ শ্যুটিং-এ একদিন নির্দিষ্ট সময় পার করে ফ্লোরে এলেন। লাঞ্চের সময় জানালেন, মাকে দাহ করে এলেন, তাই দেরি। কর্তব্যপরায়ণ, দিলখোলা, আড্ডাবাজ, খাদ্যরসিক, বহুমুখী প্রতিভাধর অভিনেতা ছিলেন রবি ঘোষ। শুধু তা-ই নয়, রবি ঘোষ ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। এখানে তাঁর সম্পর্কে তাপস সেনের মূল্যায়নটি মনে রাখার মতো। তাঁর কথায়, “ বহু মানুষের নানা সমস্যায় রবি যে সাহায্য করেছিল তা তাদের সূত্রেই জানতে পারি। শুধু বড় শিল্পী নয়, তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মানুষ। ” লোকে বলতো, ‘রবি ঘোষ মানেই একাই একশো’। পরিচালক তপন সিংহ তাই বলেছিলেন, “গোটা ভারতবর্ষে রবির মতো অসামান্য ক্ষমতাসম্পন্ন চরিত্রাভিনেতা বাস্তবিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। রবি ঘোষকে আমি সেই অর্থে কখনও কমেডিয়ান হিসেবে দেখিনি।” ” ওই চেহারার চোখদুটোই কথা বলে ! ” যেমনটি বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়।

রবির অভিনয় সম্পর্কে একটা খাঁটি কথা বলেছিলেন উত্তমকুমার : “ আমরা হয়তো জাঁকিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছি, আর রবি হয়তো কয়েক সেকেন্ড থেকে এমন একটা কিছু করবে যে ও গোটা দৃশ্যটা টেনে নিয়ে বেরিয়ে যাবে, লোকে হেসে গড়িয়ে পড়বে ”। আর বলিউডের প্রখ্যাত পরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন,“ সব অভিনেতা, সব শিল্পী সব সময় আমার কাছে একশোয় একশো পায় না। রবি পেয়েছিল। ”

ওপরের দুটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি একে একে তিনি সত্যজিৎ রায়ের অভিযান (১৯৬২), মহাপুরুষ (১৯৬৫), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), গুপী বাঘা ফিরে এলো (১৯৯১), আগন্তুক (১৯৯১) প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি ‘নিধিরাম সর্দার’ নামে একটি চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও অংশ নেন। গৌতম ঘোষ পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘পদ্মা নদীর মাঝি’-তেও অভিনয় করেন রবি ঘোষ।
এসবের বাইরে রবি ঘোষ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে ‘বসন্ত বিলাপ’(১৯৭৩), ‘পদি পিসির বার্মি বাক্স’ (১৯৭২), ‘ধন্যি মেয়ে’ (১৯৭১), ‘বালিকা বধূ’ (১৯৬৭), ‘কাল তুমি আলেয়া’(১৯৬৬),
‘স্বপ্ন নিয়ে’(১৯৬৬), ‘মোমের আলো’ (১৯৬৪), হাঁসুলীবাঁকের উপকথা (১৯৬২) প্রভৃতি।
প্রায় অর্ধশত বছরের অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় একশর মতো ছবিতে কাজ করেছেন।

‘অভিযান’-এ ট্যাক্সি ক্লিনার, ‘জন অরণ্য’- এ ‘মিস্টার মিত্র’, ‘গল্প হলেও সত্যি’- তে ধনঞ্জয়, ‘পদ্মা। কলম ধরেছিলেন রবি। লিখেছিলেন দশটি কৌতুক নকশা। ১৯৯৭-এর বইমেলায় প্রকাশিত হল তাঁর ‘হাসতে যাদের মানা’। বইমেলার ইতিহাসে স্মরণীয় ১৯৯৭। সে বছরই বিধ্বংসী আগুনে মেলা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তিনদিনের মাথায় ফের শুরু হয়েছিল মেলা। কিন্তু সেই বইমেলা বাঙালির জীবনে আরও একটি বিষাদময় ঘটনার জন্য স্মরণীয়। তাঁর বই প্রকাশিত হল, আর তিনিও চলে গেলেন। মেলা চলাকালীনই ৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎই প্রয়াত হলেন রবি ঘোষ। তাঁকে হারিয়ে তাঁর সঙ্গী ‘গুপী গাইন’ তপেন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ শনিবার জুটি ছিলাম, রবিবার একা হয়ে গেলাম। ”

]]>
‘লেখকদের লেখক’ কমলকুমার, সাহিত্যেও করতেন ‘এক্সপেরিমেন্ট’ https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-story-about-kamal-kumar-majumdar Wed, 17 Nov 2021 15:13:16 +0000 https://ekolkata24.com/?p=11654 বিশেষ প্রতিবেদন: তাঁকে বলা হয় ‘লেখকদের লেখক’। তাঁর উপন্যাস ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ এর অনন্যপূর্ব আখ্যানভাগ ও ভাষাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। বাঙলা কথাসাহিত্য বিশেষ করে উপন্যাস ইয়োরোপীয় উপন্যাসের আদলে গড়ে উঠছিল, কমলকুমার মজুমদার সেই পথ ত্যাগ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের দুরূহতম লেখকদের একজন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি কথাসাহিত্যিক ও শিল্পী কমলকুমার মজুমদার।

তিনি উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলার, টাকি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-প্রফুল্লকুমার মজুমদার এবং মাতা- রেণুকাদেবী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বাংলা সরকারের জনগণনা বিভাগ, গ্রামীন শিল্প ও কারুশিল্প, ললিতকলা একাডেমি এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। এছাড়াও তিনি ছবি, নাটক, কাঠের কাজ, ছোটদের আঁকা শেখানো, ব্যালেনৃত্যের পরিকল্পনা, চিত্রনাট্য রচনা করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।

রাধাপ্রসাদবাবু বলতেন, “কমলবাবুর পাণ্ডিত্য যখন-তখন অবাক করে দেবার মতো। কিন্তু সেটা তিনি দেখাতেন না, কথায় কথায় ধরা পড়ত। একটা সেন্স অব হিউমারে সব মুড়ে রাখতেন। একবার হল কী, এক ফড়ফড়ে আঁতেল এসে হাজির কফি হাউজে। নতুন নতুন কী সব বইপত্তর নিয়ে বেজায় বকছে। সদ্য প্রকাশ হওয়া কোন এক আর্ট থিওরির বইয়ের নাম করে বললে, “সে কী, এ বই না পড়া থাকলে তো তিরিশ বছর পিছিয়ে আছেন?”

Kamal Kumar Majumdar

“হঠাৎ বহু ক্ষণ চুপ থাকা কমলবাবু বললেন, ‘আপনার কি অ্যারিস্টটলের ‘পোয়েটিক্স’ পড়া আছে? আঁতেল মাথা নাড়ল, “না, ওটা পড়া নেই।” তাতে ‘এ হে হে’ করে উঠলেন কমলবাবু। বললেন, “তাহলে তো আড়াই হাজার বছর পিছিয়ে গেলেন মোহায়! আঁতেল চুপ।” একদিন বিক্রমনের সঙ্গে বসেছি কমলকুমারের কাছে। এ কথা, সে কথায় বিক্রমন জিজ্ঞেস করলেন, “এত কঠিন করে লেখেন কেন?’ একটু হেসে বললেন, “বলা কঠিন।” তারপর একটু থেমে বললেন, “আমার যে খুব সহজ, তরতরে লেখা পড়তেও কষ্ট হয়, হোঁচট খাই।” বিক্রমন জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার লেখাকে কি বঙ্কিমী ধারায় বলা যাবে?”

কমলবাবু চুপ রইলেন কিছুক্ষণ, তারপর প্রশ্ন করলেন, “আপনারা কি মার্শাল প্রুস্তের ‘পুরানো সময়ের সন্ধানে’ (ঠিক এই ভাবেই উনি ‘রিমেমব্রেন্স অব থিংগজ পাস্ট’-এর উল্লেখ করেছিলেন) উপন্যাসটির কিছুটাও কি পড়েছেন?” বিক্রমন ও আমি সমস্বরে বললাম, ‘শুধু প্রথম খণ্ড ‘সোয়ানজ ওয়ে’।

কমলবাবু হেসে বললেন, “বাকি সব খণ্ডেও কিন্তু সেই স্মৃতি, স্মৃতি আর স্মৃতি। কখনও কি মনে হয় এত স্মৃতি কি ধরে রাখা যায়? আর এও কি মনে হয়, কীসের প্রভাবে এত কিছু একই মনে ঘর করে? এ সবই শব্দ, বাক্য, সাহিত্যের ইন্দ্রজাল।”

তবে ওঁর প্রথম, প্রধান, অতুলনীয় উপন্যাস ‘অন্তর্জলী যাত্রা’-র শুরু থেকে শেষ যে শ্মশানঘাটে তার প্রথম অনুচ্ছেদটি যেন বিভাস রাগিণীর আলাপসুর। কমলকুমার লিখছেন…“আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তাফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ। আর অল্পকাল গত হইলে রক্তিমতা প্রভাব বিস্তার করিবে, পূনর্ব্বার আমরা, প্রাকৃতজনেরা, পুষ্পের উষ্ণতা চিহ্নিত হইব। ক্রমে আলো আসিতেছে।” আলো ফুটছে শ্মশানে, যেখানে অশীতিপর সীতারাম চট্টোপাধ্যায়কে অন্তর্জলী যাত্রার জন্য আনা হয়েছে। সেখানে তাঁর সঙ্গে ‘অনিন্দ্যসুন্দর একটি সালঙ্কারা কন্যা’ যশোবতীর বিবাহদানও হল।

<

p style=”text-align: justify;”>লেখাতে কন্যাকে বর্ণনা করেছেন ‘ক্রন্দনের ফলে অনেক স্থানের চন্দন মুছিয়াছে, আকর্ণবিস্তৃত লোচন রক্তাভ, হলুদ প্রলেপে মুখমণ্ডল ঈষৎ স্বর্ণসবুজ। সর্ব্বলক্ষণে দেবীভাব বর্ত্তমান, ফলে সহজেই মনে হইবে এ যেন বা চম্পক ঈশ্বরী, লক্ষ্মী প্রতিমা। শুধুমাত্র মুখখানি জন্ম দুঃখিনীর মতই বিষাদময়।’ এক সময় বৃদ্ধের সঙ্গে যশোবতীর বিবাহ দিয়ে দুজনকে শ্মশানে রেখে চলে গেল সবাই। আশা পর দিন ফেরত এসে বৃদ্ধের মৃত্যু দেখে তাঁর সৎকার ও যশোবতীর সতীদাহ সম্পন্ন করা যাবে। মন মানে না শুধু বৈজু চাঁড়ালের, যার কাজ হবে মড়া পোড়ানো ও সতীকে দাহ করা। সে কেবলই স্বামীর শরীর পাহারা দেওয়া নববধূর কাছে যায় আর বলে, ‘তুমি পুড়বে চচ্চড় করে …ভাবতে আমার চাঁড়ালের বুক ফাটে গো। তুমি পালাও না কেনে।’

]]>
দেব সেনাপতির কাজ ভুলে বাংলার কার্তিক হয়েছেন সন্তান লাভের প্রতীক https://ekolkata24.com/uncategorized/special-report-on-the-history-of-kartik-pujo Wed, 17 Nov 2021 08:41:17 +0000 https://ekolkata24.com/?p=11588 বিশেষ প্রতিবেদন: আমাদের শাস্ত্রজ্ঞান হীনতার আরেক চরম নিদর্শন বঙ্গের কার্তিক পুজো । বঙ্গ দেশে বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রে গণেশের মতোই সমাদৃত কার্তিক মজার পাত্রে পরিণত হয়েছেন । দেব সেনাপতি হয়ে গিয়েছেন সন্তান লাভের প্রতীক।

গণেশ যেমন সিদ্ধি প্রদায়ক তেমনই কার্তিক বল বীর্য্য প্রদায়ক । বল হীণের নিকট জগৎ অভিশাপ । কারণ ধরিত্রী বীরভোগ্য । এ চিরকালীন নিয়ম । ষণ্মুখ , সুব্রহ্মণ্য, কুমার , শক্তিহস্ত , ময়ূরবাহন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে তিঁনি পরিচিত পুজিত । তাঁর ছয় অক্ষর মন্ত্র অতি প্রসিদ্ধ । ভগবতী ললিতার মতোই কার্তিক এর পঞ্চদশী মন্ত্র অত্যন্ত সম্মানিত ও সমাদৃত । তিঁনি শত্রু বিনাশকারী । মঙ্গল গ্রহের অধিষ্ঠাতা । মঙ্গল গ্রহের গ্রহ দোষ প্রশমন কারী । শত্রু মারণের জন্য তাঁর মন্ত্রের বিশেষ প্রয়োগ আছে যা ঠিক ভাবে প্রযুক্ত হলে বিফল হয় না । এমনও বিশ্বাস আছে যে কার্তিকের মন্ত্র সঠিক প্রয়োগ হলে যেকোনো দুর্দশা কেটে যাবেই কারণ তাঁর শক্তি অস্ত্র অব্যর্থ । এই শক্তি অস্ত্র টি সমস্ত দুর্দশা কে বিণস্ট করে। প্রারব্ধ কে আটকে দেয় কার্তিকের মন্ত্র এক জন্মের জন্য । এমনিই একটি দুর্দশা অপত্যহীনতা । তার প্রতিকার ও তিনিই করেন ।

Special report on the history of Kartik Pujo

এগুলো তাঁর সগুন রূপের প্রয়োগ । আবার নির্গুণ রূপে তিঁনি ব্রহ্ম স্বরূপ। মোক্ষ প্রদানকারী । কার্তিকের মন্ত্রের ছয় লক্ষ জ্পের পুরশ্চরন আত্ম জ্ঞান প্রদান করে ।

এইসব দূরে সরিয়ে রেখে বঙ্গে কার্তিক হয়ে গিয়েছেন সন্তান লাভের মেশিন । তাঁকে দরজার সামনে ফেলে দিলেই সন্তান লাভ নিশ্চিত । আজকাল আর কেউ সন্তান হীনতার অপেক্ষা করে না । লুচি আলুর দম খাবার জন্য কার্তিক ফেললেই হলো । সে এক মাস কারো বিয়ে হলেও হবে । মন্ত্রের অবস্থা ও তথৈবচ । পুজোর আসনে যাঁরা তাঁরা ও পুজো বিষয়ে প্রায় কিছুই জানেন না ।

<

p style=”text-align: justify;”>এই যেখানে অবস্থা সেইখানে বল বীর্য্য লাভ আশা করা যায় না । তাই এই অবস্থার উন্নতি ভীষণ প্রয়োজন । অত্যন্ত শক্তিশালী দেবতার এই প্রকার অপমান কুফল ডেকে আনে ।

]]>
Birsa Munda: যাক যদি যায় প্রাণ, মুন্ডাদের কাছে বিরসা আজও ভগবান https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-birsa-munda Mon, 15 Nov 2021 05:45:26 +0000 https://ekolkata24.com/?p=11344 বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার-অবিচারের ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আদিবাসী মুন্ডাদের সংগঠিত করে মুন্ডা বিদ্রোহের সূচনা করেন। বিদ্রোহীদের কাছে তিনি বিরসা ভগবান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিরসা মুন্ড, ভারতের রাঁচি অঞ্চলের একজন মুন্ডা আদিবাসী এবং সমাজ সংস্কারক।

বর্তমানের রাঁচি জেলার উলিহাটুতে ১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর বিরসা জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় মুন্ডা সমাজে যে বারে জন্মাত সে বারের নামে নাম রাখার নীতি ছিল। বৃহস্পতিবারের দিনে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। তাই বাবা সুগানা ও মা করমি ছেলের নাম রেখেছিলেন বিরসা।

১৮৯৫ সালের দিকে বিরসা ভাবল চুপ করে থাকল হবে না। মুণ্ডাদের আদি সমাজ ও কুসংস্কার বাদ দিয়ে নতুন ধর্ম দেখতে হবে। তখন বিরসা মুন্ডার বয়স ছিল ২০ বছর। মুন্ডাদের জাগ্রত করতে, বিরসা গ্রামে গ্রামে প্রচার করেন। বিরসা বলল আমি বিরসা নই আমি ধরতি আবা। আমি মুন্ডাদের মরতে ও মারতে শেখাবো। এই খবর পৌঁছে গেলো রাঁচির ডেপুটি কমিশনারের কাছে। কমিশনার বিরসা মুন্ডা কে ধরার হুকুম দিলেন শেষে মুন্ডা গ্রেপ্তার হলো। বিচারে দুই বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলো।

Birsa Munda

হাজারীবাগ জেল থেকে বিরসা মুন্ডা ১৮৯৭ সালের ৩০ নভেম্বর মুক্তি পান। বিরসা আবার নতুন করে মুন্ডাদের জাগ্রত করার চেষ্টা করলেন। এবার সব মুন্ডারা একের পর এক দায়িত্ব নিলেন। শুরু হলো বিদ্রোহের প্রস্তুতি। সভা হতে লাগল মুন্ডা এলাকার গ্রামে গ্রামে। তামাড় ও খুঁটির পর্বতমালা থেকে কিছু দূরে ডোম্বা বা সাইকোর বনে ঢাকা উপত্যকা ডোম্বারি এলাকায় বিরসা তার প্রধান ঘাঁটি বানিয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৮৯৮ সালের ফেব্রয়ারি মাস থেকে ১৮৯৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ডোম্বারি পাহাড়ে বিরসাইতরা সভা করে। এ সভায় বিরসা ব্রিটিশ রাজের লাল নিশান দেখিয়ে মুন্ডাদের বলে, ‘দিকুদের সঙ্গে যুদ্ধ হবে। এই নিশানের মতো লাল রক্ত বইবে মাটিতে।’

১৮৯৯ সালের বড় দিনে ইংরেজরা খুশিতে মেতে উঠেন। এই সময়টায় ছিল বিরসা মুন্ডার লক্ষ্য। সিংভূম ও রাঁচির ছয়টি থানায় মুন্ডারা মিশনগুলোয় আক্রমণ করে। বেশ কিছু ইংরেজ সাহেব ও চৌকিদার আহত ও নিহত হন। ইংরেজদের মাথার টনক নড়ে যায়। ১৯০০ সালের ৬ জানুয়ারি মাসে বিদ্রোহীরা এক জার্মান জঙ্গল চৌকিদার ও তার চাকরকে হত্যা করেন। ডেপুটি কামশনার বিরসাকে ধরার জন্য সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। সৈলরাকাব পাহাড়ে অভিযান চালায় ইংরেজ বাহিনী। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় পাহাড়টি। স্ট্রিটফিল্ড বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান করেন, কিন্তু বিদ্রোহীরা তার এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ। একদিকে চলে ঝাঁকে ঝাঁকে বন্দুকের গুলি, অন্যদিকে মুন্ডাদের তীর। সেখান থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে যান বিরসা মুন্ডা ও তার সঙ্গীরা।

১৯০০ সালের ফেরুয়ারির ১৩ তারিখে বিরসা সেনত্রা জঙ্গলে ঘুমাচ্ছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বিরসা মুন্ডা কে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারে বিরসা মুন্ডা ও তার দুই সঙ্গীর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়, ১২ জনের দ্বীপান্তর ও ৭৩ জনের দীর্ঘ কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। জেলেই বিরসা মুন্ডাকে খাবারের নাম করে খাবারে বিষ প্রয়োগ করেছিল। যার কারনে বিরসা মুন্ডাকে অসুস্থ্য হতে হয় ও পরে তার জেলেই মৃত্যু হয়। তারিখটি ছিল ৯ জুন ১৯০০ সালে। বিরসার মৃত্যুর কারণ হিসেবে কলেরা বলা হলেও বিরসার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও তার মৃত্যুর পূর্ব লক্ষণের সঙ্গে কলেরা রোগের মিল পাওয়া যায়নি। অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তার মনে করেন বিরসাকে অর্সেনিক বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল।

<

p style=”text-align: justify;”>আদিবাসীদের কাছে আজও বিরসা ভগবান হয়ে বেঁচে আছেন। বিরসা দেখিয়ে গেছেন অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে।

]]>
SBI এর বিশেষ সিদ্ধান্তে প্রবীণদের আর যেতে হবে না ব্যাংকে https://ekolkata24.com/uncategorized/sbis-special-decision-seniors-no-longer-have-to-go-to-the-bank Fri, 05 Nov 2021 16:03:15 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=10402 News Desk, Mumbai: শারীরিক কারণে বহু প্রবীণ মানুষের পক্ষে ব্যাঙ্কে যাওয়া বেশ সমস্যার। এরই মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে সেই সমস্যা আরও বেড়েছে। তবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের বছরে অন্তত একবার ব্যাংকে যেতেই হয়। লাইফ সার্টিফিকেট বা বেঁচে থাকার শংসাপত্র জমা দিতেই তাঁদের ব্যাংকে যেতে হয়। চলতি বছরে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

প্রবীণদের এই সমস্যা দূর করতে এগিয়ে এল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (sbi)। এসবিআই এদিন জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকদের আর কষ্ট করে ব্যাংকে এসে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে না। তাঁরা বাড়িতে বসেই ওই শংসাপত্র জমা দিতে পারবেন। কিভাবে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়া যাবে তাও জানিয়ে দিয়েছে এই ব্যাংক। এসবিআই বলেছে, ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকরা (senior citizen) লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আঁধার ও ফোন নম্বর যুক্ত থাকা আবশ্যিক। এই নতুন পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভিডিয়ো লাইফ সার্টিফিকেট’। কিভাবে এই সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে তাও জানিয়ে দিয়েছে এসবিআই।

ব্যাংকের তরফে জানানো হয়েছে, প্রথমে স্টেট ব্যাংকের পেনশন সংক্রান্ত ওয়েবসাইট (www.pensionseva.sbi) লগ ইন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ‘ভিডিয়ো এলসি’ অপশন বেছে নিতে হবে। এখানেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে পেনশন অ্যাকাউন্ট নম্বরটি লিখতে হবে। পেনশন অ্যাকাউন্টের (account) নম্বর লেখার পর গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওটিপি আসবে। ওই ওটিপি নম্বরটি লেখার পর একটি নতুন পাতা খুলে যাবে। সেখানে ‘স্টার্ট জানি’ লেখাটিতে ক্লিক করতে হবে।

ওই ক্লিক করার পর ‘আই অ্যাম রেডি’ নামে একটি লেখার উপর ক্লিক করতে হবে। ওই ক্লিক করার পর জানাতে হবে প্যান নম্বর। প্যান নম্বর দেওয়ার পরই এসবিআইয়ের প্রতিনিধির সঙ্গে ভিডিয়ো কল শুরু হবে। এরপর গ্রাহকের ফোনে আসা চার অঙ্কের ভেরিফিকেশন নম্বরের সঙ্গে ব্যাংক প্রতিনিধি তাঁর কম্পিউটারে দেখানো নম্বরটি মিলিয়ে নেবেন। এরপর গ্রাহকের হাতে প্যান কার্ড রয়েছে এমন একটি ছবিও তুলে নেবেন ওই ব্যাংক প্রতিনিধি। সেই ছবিই হবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ‘লাইফ সার্টিফিকেট বা জীবনের প্রমাণপত্র।

]]>
Kali Puja: মাছ পোড়া আর ভেড়ার মাংসে তুষ্ট হন জোড়া কালী https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-kalipujo-of-purash-village-in-amta-block Mon, 01 Nov 2021 15:27:27 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9967 Special Correspondent, Kolkata: ওঁরা কানপুরের বাসিন্দা। না, এটা বাংলার কানপুর। আমতা ১ ব্লকের পুরাশের। ওঁরা দুই বোন। একজন মা ভদ্রকালী ও অন্যজন মা বিমলা। প্রিয় খাবার মাছ পোড়া আর ভেড়ার মাংস। আর এটাই ভক্তদের জন্য তাঁদের দেওয়া প্রসাদ।

শেঠ পরিবারের মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দুই দেবী। এনাদের গাত্র রক্ত বর্ণ। দুই দেবী দুই বোন রূপে এই মন্দিরে পূজিত হন।কথিত আছে প্রায় তিনশ বছর আগে এক ভয়স্ক ভদ্রমহিলা পাশ্ববর্তী নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন।সেই বয়স্কার দুই হাত ধরে নাকি দুই মা নদী থেকে উঠেছিলেন।ছবিতে সামনের দিকে থেকে ডানদিকের বড়ো মা হলেন বড়ো বোন মা ভদ্রকালী আর তাঁর পাশে ছোট বোন হলো মা বিমলা।মা এর মন্দিরে মূল অনুষ্ঠান হয় প্রতিবৎসরের ফাল্গুনের প্রথম শনিবার।

Special Kalipujo of Purash village in Amta block

সেই সময় মা এর অন্নকূট হয়।মা এর ভোগের বৈশিষ্ট্য হলো মা এর ভোগে ভেড়ার মাংস ও মাছ পোড়া মা কে দিতেই হবে।এই উৎসব ছাড়াও পৌষ সংক্রান্তির দিনে মা এর মন্দিরের সামনে বিশাল মেলা বসে।মা খুবই জাগ্ৰত।মা এর কাছে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন পূজা দিতে ।অনেকেই মা এর কাছে মনঃকামনা নিয়ে আসেন।কত মানুষের মানসিক যে পূরণ হয় তা পূজার দিনগুলোতে না এলে বিশ্বাস হবে না।প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিন গুলো তে মা এর ভোগ দেওয়া হয়।

<

p style=”text-align: justify;”>অনেকেই বিশ্বাস করেন মা এর নাটমন্দিরের সামনে যে পুকুর আছে তাতে স্নান করে মা কে প্রণাম করলে গঙ্গাস্নান এর সমান পূণ্য লাভ হবে।

]]>
Jatin Das: ইংরেজ হঠাতে প্রাণ দিলেন যতীন, শেষ যাত্রায় কাঁধ খাটলেন সুভাষ https://ekolkata24.com/offbeat-news/special-report-on-freedom-fighter-jatin-das Wed, 27 Oct 2021 07:04:39 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9321 Special Correspondent: সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর দেহ কাঁধে করে শ্মশানে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যতীন হলো এযুগের দধীচি, অত্যাচারী ইংরেজ সরকারকে পরাজিত করবার জন্য নিজের অস্থি দিয়ে গেল।’

১৯২১, মাত্র ১৭ বছর বয়স তখন, তখনই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁর হাতে দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেস কমিটি গঠন ও পরিচালনার ভার দিয়েছিলেন – তিনি যতীন্দ্রনাথ দাস, সকলের যতীন দাস, কলেজের পড়া বন্ধ করে যোগ দিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯২৩ সালে তাঁর সাথে কাশীর শচীন সান‍্যালের পরিচয় হয়। ১৯২৪ সালে স্বদেশী ডাকাতির অভিযোগে শচীন সান‍্যালের সাথে গ্রেপ্তার হন যতীন দাস। ঢাকা জেলে থাকাকালীন জেল সুপারের সাথে একদিন তাঁর তর্ক-ঝগড়া হতে হতে হাতাহাতি শুরু হয়। এই নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে যতীন দাস অনশন শুরু করেন, যা চলে ২২ দিন ধরে। শেষে জেল সুপার ক্ষমা চাইলে তিনি অনশন তুলে নেন।

১৯২৮ সালের কলকাতা কংগ্রেসের দু-তিন মাস আগে যতীন দাসের জেল মুক্তি হয়। ১৯২৮ সালে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সর্বাধিনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু বি.ভি দলে যতীন দাসকে বিশেষ দায়িত্ব দেন। কলকাতা সম্মেলনের শেষে যতীন দাস ও ভগৎ সিং এলাহাবাদ ও লাহোর যান নতুন ধরনের বোমা তৈরি করতে। কাজ হয়ে যাবার পরে যতীন দাস বাংলায় ফিরে আসেন। ১৯২৯ সালের মে মাসে ডায়মণ্ড হারবারের কাউন্সিল নির্বাচনের সময় সুভাষচন্দ্র বসু বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হিসাবে প্রচারে সমস্ত গ্রাম ঘুরতে থাকেন। মগরাহাট, মন্দিরবাজার, সরিষা, ডায়মণ্ড হারবার সদর, কুলপী, করঞ্জলি প্রভৃতি জায়গায়ে প্রচারে সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে সারাক্ষণ থাকতেন তাঁর প্রিয় যতীন দাস।

১৯২৯ সালের ৬ জুন দিল্লীর এ‍্যাসেমব্লি হলে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা ফেলে ব্রিটিশ শাসন আইনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তার হন। সেইসূত্রে ১৯২৯ সালের ১৪ জুন কলকাতার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন যতীন দাস, ১৬ জুন তিনি লাহোর জেলে আসেন। শুরু হয় ভগৎ সিং, রাজগুরু, শুকদেব সহ যতীন দাসের মামলা। এই মামলাই পরে ‘থার্ড লাহোর কন্সপিরেসি কেস’-এ পরিণত হয়।

যতীন দাস তখন ব্রিটিশ আইন আদালতকে পা দিয়ে চূর্ণ করে চলে গেছেন অনেক দূরে। ১৩ জুলাই থেকে ইংরেজ বিরোধী যে বিস্ময়কর অনশনের শুরু ১৩ সেপ্টেম্বর ৬৩ দিনের মাথায় বেলা ১:০৫ মিনিটে হ’ল তার চির সমাপ্তি। যতীন দাসের অমরদেহ এল কলকাতায় নেতাজীর কাঁধে চড়ে।

]]>
কোজাগরি উৎসবেই হয় সরস্বতী আরাধনা, ইউএসপি বিশাল জিলিপি https://ekolkata24.com/offbeat-news/the-special-laxmi-puja-of-binpur Tue, 19 Oct 2021 08:03:51 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=8276 বিশেষ প্রতিবেদন: বিনপুর থানার হাড়দা গ্রামে এটাই ট্র‍্যাডিশন! চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর পুজোর মতোই কোজাগরি উৎসব পাঁচদিন ধরে। কয়েক কুইন্টাল জিলিপি কেনাবেচা হয় এখানে।

দুর্গাপুজো শেষ। একবোনের বিসর্জন, আর অন্য বোনের আবাহন এমনটা হয় নাকি! এক বোনকে ছেড়ে অন্য বোনের পুজোটা কি ঠিক? অন্য কোথাও হলেও বিনপুর থানার হাড়দা গ্রামে হয় না। দুই বোন একই সঙ্গে মর্তে এসেছেন, সুতরাং পুজোটাও হবে একই সঙ্গে। কোজাগরীর রাতে দুই বোনকে পাশাপাশি বসিয়ে পুজো করাটাই দস্তুর বিনপুরে। আর সেটাই প্রায় দেড়শো বছর ধরে করে আসছেন গ্রামবাসীরা।

হাড়দা গ্রামে কয়েক ঘর বর্ধিষ্ণু চাষীদের বাস। পুজোর মূল উদ্যোক্তা তাঁরাই। গ্রামবাসীরা বলেন, এই পুজো নাকি স্বপ্নে পাওয়া। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে হাড়দার শুঁড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা গ্রামের সম্পন্ন ‘মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওই পরিবারগুলিকে ‘মণ্ডল-বাকুল’ বলা হত।

special laxmi puja of binpur

শোনা যায়, গ্রামের অক্রূর মোড়ল স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মণ্ডল-বাকুলের পারিবারিক কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু করেন। পুজোর বয়সও কিছু কম নয়। ১৫৭ বছরে পা দিল বিনপুরের কোজাগরী লক্মী আরাধনা। সম্পদের দেবীর পাশে একই সঙ্গে আলো করে থাকেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী। দু’জনকে নিয়েই পুজো। দু’জনের একই সঙ্গে আবাহন ও পুজো শেষে বিসর্জন। এটাই পরম্পরা। এটাই রীতি। দেড়শো বছরেও তার অন্যথা হয়নি।

এক চালের প্রতিমা। পাশাপাশি লক্ষ্মী-সরস্বতী। চালচিত্রের মাথায় চৈতন্য বেশে নারায়ণ। দুই দেবীর দু’পাশে তাঁদের চার সখী। পুরাণ মতে এই সখীদের বলা হয় লুক ও লুকানি। পুজোটা করেন সম্পন্ন চাষী পরিবারের মোয়ো, বৌয়েরা। তাই উদ্য়োগ-আয়োজনেও কমতি থাকে না। নাড়ু, মুড়ি, মুড়কি, নারকোলের চিঁড়ে দিয়ে এলাহি আয়োজন। কৃষি থেকেই এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। তাকে লক্ষ্মীর আশিস হিসেবেই দেখেন হাড়দা গ্রামের বাসিন্দারা। বুধবার তাই ব্য়স্ততার অন্ত নেই গ্রামে। খেত ভরা ফসলের আনন্দে হাড়দা গ্রামে লক্ষ্মীর বসতি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস “মা লক্ষ্মীর আর্শীবাদেই ফসলে ভরে উঠেছে তাদের উঠোন।’’

লোকসংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণুর স্ত্রী জ্ঞান ও সম্পদ স্বরূপা। সেই ভাবনা থেকেই গ্রামে দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে দেবী সরস্বতীও পূজিতা হন। কৃষি থেকেই আর্থিক স্বচ্ছলতা। সেখান থেকেই বেড়েছে শিক্ষার হার। আর এ সবই দুই দেবীর কৃপায় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা। তাই একই সঙ্গে একই চালায় দুই দেবীই পূজিতা হন।

শতবর্ষ প্রাচীন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে উৎসবমুখর গোটা বিনপুর। গ্রামের প্রায় চারশো মণ্ডল পরিবার এই পুজোয় সামিল হন। পুজোকে ঘিরে বসে মেলা। পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা রাজেশ মণ্ডল বলেছেন, এ বার পুজোর বাজেট পাঁচ-ছয় লাখ টাকার মধ্যে। মণ্ডল পরিবারের সবাই সাধ্যমত টাকা দিয়ে তহবিল গড়েন। যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁরা পুজোয় গ্রামে ফেরেন। লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে হাড়দা গ্রামে শারদীয়া উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।

এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা হল পুজোর মেলায় বিখ্যাত জিলিপি। গ্রামবাসীদের কথায়, লক্ষ্মীপুজোয় বিনপুরের হাড়দা গ্রামের জিলিপির কথা শোনেননি এমন মানুষ নাকি নেই। প্রকাণ্ড মাপের রসে ভরা সেই জিলিপির চলও নাকি প্রাচীন কাল থেকেই। হাড়দাবাসীর বিশ্বাস, জিলিপির রসে মিশে থাকে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ। দেবীর নৈবেদ্যে অবশ্য জিলিপির ঠাঁই নেই।

কিন্তু কে জিলিপি বানাবেন? সে জন্য আগাম নিলাম ডাকে পুজো কমিটি। যিনি সর্বোচ্চ দর দেন, কেবলমাত্র তিনিই মেলায় প্রসাদী জিলিপির দোকান খোলেন। মেলার পাঁচ দিন একমাত্র ওই দোকানেই জিলিপি বিক্রি হয়। বিউলি ডালের গুঁড়োর সঙ্গে আতপ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি হয় বিশেষ ধরনের এই জিলিপি। বছরে মাত্র এক বার। নিয়ম অনুযায়ী কোজাগরীর পরে প্রতিপদ থেকে এই জিলিপি তৈরির কথা। তবে এখন লক্ষ্মীপুজোর দিনেই জিলিপি তৈরি শুরু হয়ে যায়।

বিনপুরের জিলিপিকে ‘ট্যুর প্যাকেজ’-এ সামিল করে ফেলেছে একাধিক বেসরকারি পর্যটন সংস্থা। ঝাড়গ্রামের পর্যটনেও যুক্ত হয়েছে এই পুজোর মেলা।

]]>
Tejaswini: আসছে তেজস্বিনী, রোমিওরা সাবধান https://ekolkata24.com/uncategorized/tejaswini-special-womens-combat-force-of-siliguri-commissionerate Thu, 14 Oct 2021 16:40:29 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=7657 অনলাইন ডেস্ক: স্কুটিরা নিয়ে তেড়ে আসছে তেজস্বিনী (Tejaswini)। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের উদ্যোগে মহিলাদের নিরাপত্তায় বিশেষ কমব্যাট স্কোয়াড৷ ছিনতাইবাজ, ইভটিজারদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে তেজস্বিনী৷ কর্মস্থল থেকে গভীর রাতে ফেরার সময় বিপদে বন্ধু৷ সাংসারিক অশান্তিতে বিপদে পড়া মহিলাদের জন্য কাজ করবে

]]>
Kishore Kumar: চেঁচিয়ে কান্নাকাটি করে সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী হয়েছিলেন কিশোর https://ekolkata24.com/entertainment/kishore-death-anniversary-special Thu, 14 Oct 2021 07:26:18 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=7589 বিশেষ প্রতিবেদন: যারা সঙ্গীত সাধনা করে তাঁরা চিৎকার করেন না কিন্তু তিনি তো অন্য ধাতুতে গড়া তাই তাঁর ক্ষেত্রে সবকিছুই অন্যরকম ঘটে। তিনি কিশোর কুমার (Kishore Kumar)। জোরে চেঁচিয়েই সুমধুর হয়েছিল কিশোর কন্ঠ।

ছোট থেকে মোটেই ভালো ছিল না কিশোরের গলা। তা ছিল কর্কশ আর হেঁড়ে। ছোটবেলায় পায়ের পাতায় একবার চোট লাগার পর প্রায় এক মাস ধরে চেঁচিয়ে কান্নাকাটি করেছিলেন কিশোর। আর তার পরই নাকি ভোল পাল্টে যায় গলার।

কিশোর কুমারের জন্ম হয় মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়াতে। ভালো নাম আভাষ কুমার গাঙ্গুলি‚ ডাক নাম ছিল কিশোর। বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ছিলেন আইনজীবী আর মা গৌরী দেবী গৃহবধূ। চার ভাই-বোনের মধ্যে কিশোর ছিলেন সবার ছোট। সবচেয়ে বড় অশোক কুমার‚ তারপর দিদি সতী দেবী‚ আরেক দাদা অনুপ কুমার আর সব শেষে কিশোর।

গুরু বলে মানতেন তিনজনকে। কে এল সায়গল‚ হলিউডি গায়ক-অভিনেতা ড্যানি কে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাঁর বাড়িতে ঝোলানো ছিল এই তিনজনের বড় বড় পোট্রেট। রোজ সকালে উঠে এই তিনজনকে প্রণাম করতেন কিশোর কুমার।

ভারতবর্ষে মেল প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার রেকর্ড আজও রয়েছে কিশোর কুমারের দখলে। মোট আটবার এই পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। ‘রূপ তেরা মস্তানা(১৯৬৯)’‚ ‘দিল অ্যায়সা কিসি নে মেরা(১৯৭৫)’‚ ‘খাইকে পান বনারসওয়ালা(১৯৭৮)’‚ ‘হাজার রাহে মুড়কে দেখি(১৯৮০)’‚ ‘পগ ঘুঙরু বাঁধ(১৯৮২)’‚ ‘অগর তুম না হোতে(১৯৮৩)’‚ ‘মঞ্জিলে আপনি জগহ(১৯৮৪)’‚ ‘সাগর কিনারে(১৯৮৫)’।

উদ্ভট কাজকর্মের জন্য তাঁর খ্যাতি কিছু কম ছিল না। ওয়ার্ডেন রোডে তাঁর ফ্ল্যাটের বাইরে বোর্ড ঝোলানো থাকত ‘Beware Of Kishore Kumar’। একবার এক প্রযোজক তাঁর প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর হ্যান্ডশেক করতে চাইলে তাঁর হাত নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে কামড়ে দিয়েছিলেন কিশোর। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বাইরে টাঙানো বোর্ডের কথা।

আবার একবার এক প্রযোজক বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর টাকা বাকি রেখে দিয়েছিলেন। সিনেমার নায়ক-গায়ক ছিলেন কিশোর কুমার। তাই রোজ খানিকটা করে গোঁফ আর চুল কামাতে শুরু করেন তিনি। অবশেষে পুরো টাকা মিটিয়ে দেওয়াতে ক্ষান্ত হন কিশোর।

আর একবার একটি দৃশ্যে তাঁর গাড়ি চালিয়ে ফ্রেম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। সেই মতো ফ্রেম থেকে তো বেরিয়ে গেলেন কিশোর‚ কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে সোজা পানভেল অব্দি চলে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ হিসেবে বলেছিলেন ডিরেক্টর তো ‘কাট‘ বলেননি।

অরুণ চৌধুরীর লেখা ‘পাশের বাড়ি‘ গল্প থেকে ১৯৬৮ সালে তৈরি হয় ‘পড়োশন‘। মনে আছে সেই বিখ্যাত গান ‘এক চতুর নার‘? কিশোর কুমার-মান্না দে‘র ডুয়েট সঙ। ট্রেনড ক্লাসিক্যাল গায়ক মান্না দে কিছুতেই আনট্রেনড কিশোর কুমারের কাছে হার মানতে চাননি। তাই ‘ইয়ে সুর কিধার গয়া জি‘ এই ডায়লগটি ডাব করতে অস্বীকার করেন। শেষমেশ অভিনেতা মেহমুদ ডাব করেন এই ডায়লগ।

হৃষিকেশ মুখার্জ্জির ডেব্যু ফিল্মে ‘মুসাফির‘(১৯৫৭)-এ দীলিপ কুমার ও সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন কিশোর কুমারও। পরবর্তীকালে তাঁরই নির্দেশনায় ‘আনন্দ‘-এও অভিনয় করার কথা ছিল কিশোর কুমারের। আর সঙ্গে থাকার কথা ছিল মেহমুদের। কিন্তু কোনও কারণে এক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় ‘আনন্দ‘-এ আর কাজ করা হয়নি কিশোর কুমারের। সেই দুটি চরিত্রে শেষমেশ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রাজেশ খান্না।

কিশোর কুমারের অন্যতম সুপার হিট ছবি ‘চলতি কা নাম গাড়ি‘(১৯৫৮)-র অনুপ্রেরণা ছিল তাঁরই বাবার পুরনো একটা ক্রাইশলার গাড়ি। কিশোর ভেবেছিলেন কমার্শিয়ালি ফ্লপ হবে এই ছবি আর তা তিনি ইনকাম ট্যাক্স লস হিসেবে দেখাতে পারবেন। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে এই ছবি সে বছরের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিট হিসেবে সাফল্য পায়। এই ছবিতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মধুবালা এবং বাকি দুই ভাই অশোক কুমার ও অনুপ কুমার। কিশোর কুমার নির্দেশিত ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বড়তি কা নাম দাড়ি‘ দেখে সত্যজিত রায় বলেছিলেন নিজের সময়কালের থেকে ২৫ বছর এগিয়ে ছিল সে ছবি।

চারটি ছবিতে ডিরেক্টর‚ প্রোডিউসার‚ গল্পকার‚ চিত্রনাট্যকার‚ লিরিসিস্ট‚ মিউজিক ডিরেক্টর‚ অভিনেতা এবং গায়ক এই সবকটি ভূমিকায় একসঙ্গে একা হাতে কাজ করেছেন কিশোর কুমার | সেই ছবিগুলি হলো – ‘দূর গগন কি ছাঁও মে‘(১৯৬৪)‚ ‘দূর কা রাহি‘(১৯৭১)‚ ‘বড়তি কি নাম দাড়ি‘(১৯৭৪) এবং ‘সাবাশ ড্যাডি‘(১৯৭৮)।

]]>
আরিয়ানের জন্য বাড়ি থেকে আনা খাবার ফিরিয়ে দিল আর্থার রোড জেল কর্তৃপক্ষ https://ekolkata24.com/entertainment/aryan-khan-not-allowed-to-have-home-cooked-food-in-custody Sat, 09 Oct 2021 16:36:43 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=7021 নিউজ ডেস্ক: আদালতের নির্দেশে মাদক কাণ্ডে জড়িত শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খান রয়েছেন মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে। শনিবার সকালে আরিয়ানের জন্য শাহরুখের বাড়ি মন্নত থেকে পাঠানো হয়েছিল খাবার ও রেজকার ব্যবহারের কিছু জিনিস। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ শাহরুখের বাড়ি থেকে আনা খাবার বা অন্যান্য জিনিস জেলের ভেতরে ঢুকতেই দেয়নি। অর্থাৎ আপাতত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত আরিয়ানকে জেলের ভিতর সেখানকার খাবারই খেতে হবে। থাকতে হবে আর পাঁচজন সাধারণ অপরাধীর মতই।

নিয়ম অনুযায়ী জেল বন্দিদের জন্য বাইরের খাবার একেবারে নিষিদ্ধ। সে কারণেই এদিন আরিয়ানের জন্য আনা খাবারও জেল কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে শুধু জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নয় আরিয়ানের কারণ কারণে এদিন এক বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাছ থেকেও বড় মাপের ধাক্কা খেয়েছেন শাহরুখ।

একটি অনলাইন শিক্ষাদানকারী সংস্থার সঙ্গে শাহরুখের বিজ্ঞাপনী চুক্তি ছিল। কিন্তু আরিয়ান কাণ্ডের জেরে শাহরুখ খানকে ওই বিজ্ঞাপনী চুক্তি থেকে ছেঁটে ফেলল সংশ্লিষ্ট সংস্থা। ওই সংস্থা জানিয়েছে, আপাতত সব বিজ্ঞাপন থেকেই শাহরুখকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন মুখের সন্ধানও শুরু করে দিয়েছে ওই সংস্থা। তবে বিজ্ঞাপন থেকে শাহরুখকে তুলে নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং শাহরুখ উভয়েরই বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

]]>