Swamiji – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com Stay updated with Ekolkata24 for the latest Hindi news, headlines, and Khabar from Kolkata, West Bengal, India, and the world. Trusted source for comprehensive updates Thu, 28 Oct 2021 09:10:23 +0000 en-US hourly 1 https://ekolkata24.com/wp-content/uploads/2024/03/cropped-ekolkata24-32x32.png Swamiji – Ekolkata24: Latest Hindi News Updates from Kolkata – Breaking Stories and More https://ekolkata24.com 32 32 সিস্টার নিবেদিতাকে বলে মহাপ্রয়ানের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন স্বামীজি https://ekolkata24.com/offbeat-news/swamiji-gave-a-hint-of-his-upcoming-death-to-sister-nivedita Thu, 28 Oct 2021 09:10:23 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=9453 Special Correspondent, Kolkata: তিনি মৃত্যুর দূতকে আসতে দেখেছিলেন। সে আসছিল দূর সাগর পার হতে। তাঁর অসীম ক্ষমতা। চাইলেই পারতেন দূতকে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তাঁর অন্যতম প্রিয় ভক্ত ভগিনী নিবেদিতাকে বলে পাড়ি গিয়েছিলেন মহাপ্রয়াণের পথে। নিবেদিতা সেই মুহূর্তে কিছুই বুঝতে পারেন নি। বুঝেছিলেন স্বামীজির মৃত্যু সংবাদ আসার পর।

ঘটনা ১৯০২ সালের ২ জুলাই। স্বামীজির মৃত্যুর দুই দিন আগের ঘটনা। নিবেদিতাকে নেমন্তন্ন করলেন বিবেকানন্দ। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেলুর মঠে এলেন নিবেদিতা। সেদিন আবার স্বামীজির একাদশী। উপোস তাঁর। নিজে খাবেন না কিন্তু ভগিনীকে নিমন্ত্রণ করেছেন। বেজায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন নিবেদিতা। স্বামীজির নিমন্ত্রণ হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারেন না।

এরপরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ। নিবেদিতাকে খাওয়ালেন ভাত,আলুসিদ্ধ,দুধ,কাঁঠাল। খাওয়ায় মন নেই নিবেদিতার। তিনি বুঝতেই পারছেন না কি করতে চাইছেন স্বামীজি। প্রথমে খানিক না না করেও শেষে খাওয়া শুরু করলেন। খাওয়ার সময় নানারকম কথা বলতে শুরু করলেন স্বামীজি। খাওয়া শেষ হল। এবার নিবেদিতার হাত পা জল দিয়ে ধুয়ে দিলেন। নিবেদিতা এবারেও অস্বস্তিতে। একেবারেই বুঝতে পারছেন না বিবেকানন্দ কি করছেন আর কেনই বা এমন করছেন।

স্বামীজি হাত যখন নিবেদিতার পা যত্ন সহকারে ধুয়ে দিচ্ছে আর থাকতে পারেননি নিবেদিতা। প্রতিবাদ করে বলেন, “এ কী করলেন আপনি, এ তো আমার করা উচিত আপনাকে।” বিবেকানন্দের উত্তর , “তুমি তো যীশুর কথা পড়েছ। তাহলে নিশ্চয় জানো তিনিও শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন।” নিবেদিতা বলে ছিলেন, “সে তো তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে।” বিবেকানন্দের সহস্য উত্তর, “you silly girl”। ভগিনী নিবেদিতা গুরুর কথা পুরো বুঝে উঠতে পারেননি।

৫ জুলাই ১৯০২ সকালবেলা বেলুরমঠেরই এক সাধক এসে একটি চিঠি দেন নিবেদিতাকে। চিঠি পাঠিয়েছেন স্বামী সারদানন্দ। বার্তা? স্বামীজির মহাপ্রয়াণের। ৪ তারিখ রাত ৯.১০ ধরাধাম ছেড়ে চলে গিয়েছে স্বামীজির দেহ। শিষ্যা অবাক। তিনি তখন অন্য কথা ভাবছেন। না দিন দুই স্বামীজির তাঁর পদ সেবা করার কথা নয়। তিনি উত্তর খুঁজছিলেন, ৪ তারিখ ৯.১০মিনিটে কেন তিনি স্বপ্নে দেখলেন শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শরীর দ্বিতীয়বার চলে যাচ্ছে ধরাধাম ছেড়ে। সেটাই কি তবে স্বামীজির তাঁকে দেওয়া দ্বিতীয় মৃত্যু বার্তা ছিল!

স্বামী অভেদানন্দকে অবশ্য স্বামীজি তাঁর মৃত্যুর বছর পাঁচ ছয়েক আগে এমনই এক বার্তা দিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই একদিন স্বামীজি তাঁকে বলেন, “আমি আর বছর পাঁচ ছয়েক বাঁচবো বুঝলে।” অভেদানন্দ স্বামীজির এমন কথায় বেশ বিরক্ত। স্বামীজির উত্তর, “তুমি বুঝবে না হে , তুমি বুঝবে না। আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে তা আর আমার এই শরীরের মধ্যে তাকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। খালি ছেড়ে পালাতে চাইছে।

]]>
Durga Puja 2021: পুজোর মাত্র চার পাঁচদিনের আগে বেলুড়ে দুর্গোৎসবের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বামীজী https://ekolkata24.com/offbeat-news/durga-puja-2021-thats-how-puja-started-in-belur-math-by-swamiji Wed, 13 Oct 2021 06:38:27 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=7489 বিশেষ প্রতিবেদন: ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজো করলেন। আর সেই থেকেই বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোর প্রচলন হল। কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছিল সেই পুজো?

বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই স্বামী বিবেকানন্দের মনে ইচ্ছে ছিল যে তিনি বেলুড়মঠে দুর্গাপুজো করবেন। কিন্তু নানা কারণে তা আর হয়ে উঠছিল না। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বেলুড়মঠ প্রতিষ্ঠার পর স্বামীজী প্রায়ই তাঁর প্রিয় বেলগাছতলায় বসে সম্মুখে প্রবাহিতা গঙ্গার দিকে তাকিয়ে আপন মনে গাইতেন, “বিল্ববৃক্ষমুলে পাতিয়া বোধন/গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন।/ঘরে আনব চণ্ডী, কর্ণে শুনব চণ্ডী,/আসবে কত দণ্ডী, জটাজুটধারী।…”

১৯০১ সালের মে-জুন মাস। স্বামীজির অন্যতম গৃহী শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী বেলুড়মঠে এলে বিবেকানন্দ তাঁকে ডেকে রঘুনন্দনের ‘অষ্টবিংশতি তত্ত্ব’ বইটি কিনে আনার জন্য বললেন। শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি রঘুনন্দনের বইটি নিয়ে কি করবেন?’ স্বামীজি বলেছিলেন, ‘এবার মঠে দুর্গোৎসব করবার ইচ্ছে হচ্ছে। যদি খরচ সঙ্কুলান হয় ত মহামায়ার পুজো করব। তাই দুর্গোৎসব বিধি পড়বার ইচ্ছা হয়েছে। তুই আগামী রবিবার যখন আসবি তখন ঐ পুস্তকখানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসবি।’ যথাসময়েই শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী বইখানি বিবেকানন্দকে এনে দিয়েছিলেন। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বইটি পড়া শেষ করে বিবেকানন্দ তাঁর স্নেহভাজন শিষ্যের সঙ্গে আবার দেখা হতেই জানিয়েছিলেন, ‘রঘুনন্দনের স্মৃতি বইখানি সব পড়ে ফেলেছি, যদি পারি তো এবার মার পূজা করব।’

এরপর দীর্ঘদিন কেটে যায়। পুজোর সময়ও এসে যায়। কিন্তু পুজোর এক সপ্তাহ আগেও এ নিয়ে কোনও কথাবার্তা বা উদ্যোগ দেখা গেল না। হয়ত এ বারও বিবেকানন্দের ইচ্ছাটির পূরণ হল না। কিন্তু হঠাৎই একদিন, তখন পুজোর আর মাত্র চার-পাঁচ দিন বাকি, স্বামীজি কলকাতা থেকে নৌকা করে বেলুড়মঠে ফিরেই ‘রাজা কোথায়? রাজা কোথায়?’ বলে স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজের খোঁজ করতে লাগলেন। (স্বামী ব্রহ্মানন্দকে স্বামী বিবেকানন্দ রাজা বলে সম্বোধন করতেন)। স্বামী ব্রহ্মানন্দকে দেখতে পেয়েই বিবেকানন্দ বলে উঠলেন, ‘এবার মঠে প্রতিমা এনে দুর্গাপূজা করতে হবে, তুমি সব আয়োজন করে ফেলো।’ সবে আর মাত্র চার-পাঁচটা দিন বাকি রয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে সব আয়োজন কীভাবে করবেন, প্রতিমাই বা পাওয়া যাবে কি না, এই সব ভেবে ব্রহ্মানন্দজী স্বামীজির কাছে দুটো দিন সময় চাইলেন। স্বামীজি বললেন, ‘আমি ভাব-চক্ষে দেখেছি এবার মঠে দুর্গোৎসব হচ্ছে এবং প্রতিমায় মার পূজা হচ্ছে।’

তখন স্বামী ব্রহ্মানন্দজীও তাঁর এক অদ্ভুত দর্শনের কথা স্বামী বিবেকানন্দকে জানালেন। দিন চারেক আগের ঘটনা। ব্রহ্মানন্দজী বেলুড়মঠের গঙ্গাতীরে বসেছিলেন। হঠাৎই দেখলেন দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে মা দুর্গা গঙ্গা পার হয়ে মঠের বেলগাছতলায় এসে উঠলেন।

স্বামীজি আর ব্রহ্মানন্দ মহারাজের মধ্যেকার এই সব কথাবার্তা বেলুড়মঠের অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পরতেই বেশ হই হই পড়ে গেল। ব্রহ্মানন্দ মহারাজ ব্রহ্মাচারী কৃষ্ণলালকে কলকাতার কুমারটুলিতে পাঠালেন কোনও প্রতিমা পাওয়া যাবে কি না দেখে আসতে। আর কী আশ্চর্য! ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল কুমারটুলিতে গিয়ে দেখলেন যে মাত্র একটিই সুন্দর প্রতিমা সেখানে অবশিষ্ট রয়েছে। যিনি বা যাঁরা সেই প্রতিমাটি তৈরি করতে দিয়েছিলেন, সে দিনও পর্যন্ত তাঁরা সেটি নিতে আসেননি। ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল শিল্পীকে ওই প্রতিমাটি পাওয়া যাবে কি না জিজ্ঞাসা করতে শিল্পী একটি দিন দেখে নেওয়ার সময় চাইলেন। বেলুড়মঠে ফিরে এসে এই খবর স্বামী বিবেকানন্দকে জানাতেই তিনি ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলালকে বললেন, ‘যেমন করেই হোক তুমি প্রতিমাখানি নিয়ে আসবে।’

পরের দিন স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল ও স্বামী প্রেমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীর দেবীর কাছে গেলেন বেলুড়মঠে দুর্গাপুজো করার অনুমতি চাইতে। শ্রীশ্রীমা সানন্দে অনুমতি দিলেন, শুধু পশুবলি দিতে নিষেধ করলেন। ইতিমধ্যে স্বামী প্রেমানন্দ কুমারটুলিতে সেই প্রতিমা শিল্পীর কাছে গিয়ে দেখলেন প্রতিমাটি সে দিনও কেউ নিতে আসেনি। তিনি প্রতিমা শিল্পীর সঙ্গে সমস্ত কথাবার্তা ঠিক করে প্রতিমাটি বায়না করে এলেন। অন্যদিকে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজ পুজোর সমস্ত আয়োজন করে ফেললেন।

সেবার দুর্গাপুজোর তিথি পড়েছিল কার্তিক মাসে। ১লা কার্তিক, শুক্রবার (১৮ই অক্টোবর) ছিল ষষ্ঠী। তার আগের দিন অর্থাৎ পঞ্চমীর দিন ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল, স্বামী নির্ভয়ানন্দ এবং আরও কয়েক জন সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী মিলে কুমারটুলি থেকে নৌকা করে দুর্গা প্রতিমাখানি মঠে নিয়ে এলেন। মঠের উত্তর দিকের জমিতে দুর্গাপুজোর এক বিরাট মণ্ডপ বানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিমাখানি সেখানে না নিয়ে গিয়ে ঠাকুর ঘরের নীচতলার দালানে রাখা হল। এর কিছুক্ষণ বাদেই আকাশ ভেঙে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হল। তবে তাতে প্রতিমা বা মণ্ডপের কোনও ক্ষতি হয়নি।

ষষ্ঠীর দিন সকালে বাগবাজার থেকে শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণী তাঁর অন্যান্য ভক্তদের নিয়ে বেলুড়মঠে চলে এলেন। তাঁর থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিল নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। বলা হয় যে সন্ন্যাসীদের কোনও পুজো বা বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ডে অধিকার নেই। কেননা তাঁরা সর্বত্যাগী। তাই শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীর নামেই পুজোর সংকল্প করা হয়েছিল। আজও বেলুড়মঠের পুজোয় শ্রীশ্রীমায়ের নামেই সংকল্পের প্রথা অব্যাহত রয়েছে। স্বামীজির প্রিয় বেলগাছতলাতে বোধন অনুষ্ঠান হল। এরপর ঠাকুর দালান থেকে প্রতিমাকে মণ্ডপে এনে স্থাপন করা হল। যেন মহোৎসব শুরু হল। অধিবাস, ষষ্ঠীর পুজো ইত্যাদি। শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীর অনুমতি নিয়ে পুজো করতে বসলেন ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল। সঙ্গে তন্ত্রধারকরূপে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র ভট্টাচার্য।

২রা কার্তিক (১৯ অক্টোবর) শনিবার ছিল সপ্তমীপুজো। স্বামী বিবেকানন্দ ওই দিন যেন ছিলেন পূর্ণ আনন্দে উজ্জীবিত। কখনও এ দিক ও দিক পায়চারি করে সবকিছু তদারকি করছেন, কখনও বা মণ্ডপে বসে সকলের সঙ্গে হাসি গল্পে মেতেছেন। কিন্তু ৩ কার্তিক (২০ অক্টোবর) রবিবার মহাষ্টমীর দিন তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সেদিন আর মণ্ডপেই আসতে পারলেন না। দোতলায় নিজের ঘরে ভীষণ জ্বরে শস্যাশায়ী থাকলেন। তবে ৪ঠা কার্তিক (২১শে অক্টোবর) সোমবার ভোরবেলা সন্ধিপুজোর সময় স্বামীজী মণ্ডপে এসে বসলেন। শ্রীশ্রীদুর্গামায়ের পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করলেন।

এরপর কয়েকজন কুমারীর পুজো হল, স্বামীজীর অনুরোধে গৌরী মা (শ্রী রামকৃষ্ণদেবের মন্ত্র শিষ্যা ও একমাএ সন্ন্যাসিনী শিষ্যা, প্রথম নারী মঠ শ্রী শ্রী সারদেশ্বরী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাএী ) কুমারী পূজার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পাদ্য- অর্ঘ- শঙ্খবলয় – বস্ত্রাদি দিয়ে স্বামীজী নয়জন কুমারীকে পূজা করেন । স্বামীজী সেই সকল কুমারীদিগকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করেন। ভাবাবস্থায় একজন কুমারীকে ( শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীর মন্ত্র শিষ্যা ও একমাএ সন্ন্যাসিনী শিষ্যা, সারদেশ্বরী আশ্রমের দ্বিতীয় অধ্যক্ষা দূর্গা পুরী দেবী ) কপালে রক্তচন্দন পড়াবার সময় স্বামীজী শিহরিয়ে উঠে বলেছিলেন- “আহা দেবীর তৃতীয় নয়নে আঘাত লাগে নি তো।” উক্ত কুমারীদের মধ্যে রামলাল দাদার কনিষ্ঠা কন্যা রাধারানীও অন্যতমা ছিলনে । শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং এই দিন রামলাল দাদার জ্যেষ্ঠা কন্যা কৃষ্ণময়ীদিদিকেএবং আরও কয়েকজন সধবাকেও ‘এয়োরানী পূজা’ করেন। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ওই দিনই মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতির পর স্বামীজী একের পর এক ভজন গাইলেন।

৫ই কার্তিক (২২শে অক্টোবর) মঙ্গলবার ছিল বিজয়া দশমী। পুজোর অন্যান্য দিনগুলির মতো বিকেল বেলা প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতেও অসংখ্য মানুষের ভিড় হয়েছিল। শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণী দুর্গাপ্রতিমা বরণ করলেন, বরণের সময় শ্রীশ্রীমায়ের দুচোখ বেয়ে জলের ধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনি বরণ শেষে ঘরের মেয়ে উমা কে চিবুক ধরে চুমো খেয়ে বিদায় জানলেন এবং পরের বছর পুনরায় আসার কথাও তাঁর কানে কানে বলে দিলেন। এরপর ঢাক-ঢোলের বাজনার সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত, ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসীগণ সবাই মিলে “মহামাঈ কী জয়”, “দুর্গা মাঈ কী জয়” ধ্বনি দিতে দিতে প্রতিমাকে নৌকায় ওঠালেন। কেউ কেউ তখন বাজানার তালে তালে নাচছিলেন। এমন সময় স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজও এসে নৌকায় উঠলেন। তারপর প্রতিমার সামনে ভাবে বিভোর হয়ে নৃত্য করতে লাগলেন। অসুস্থতার জন্য স্বামীজী দশমীর দিনও দোতলার ঘর থেকে নিচে নামেননি। কিন্তু স্বামী ব্রহ্মানন্দ নৌকায় নাচছেন শুনে আর থাকতে পারেননি।

গঙ্গার ঢেউয়ে ঢেউয়ে ঢাক,ঢোল, কাঁশির তালে তালে নৌকা এগিয়ে চলেছে প্রতিমা নিরঞ্জনের। মাঝে মাঝে সমবেত ধ্বনি উঠছে “দুর্গা মাঈ কী জয়” আর এসবের মাঝেই তুমুল ভাবে বিভোর হয়ে স্বামী ব্রহ্মানন্দজী নেচে চলেছেন। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে স্বামীজী এই দৃশ্য দেখতে লাগলেন। এইভাবেই বেলুড়মঠের প্রথম দুর্গোৎসবের সমাপন ঘটল। আজ স্বামীজির করা সেই দুর্গোৎসব এক মহীরুহে রূপান্তরিত হয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে ভক্তেরা আসেন এই মহোৎসবে সামিল হতে। স্বামীজি বিশ্বকে জ্যান্ত দুর্গার পূজা দেখাতে চেয়েছিলেন তা তিনি করে দেখিয়েও ছিলেন। পরবর্তী কালে ব্রহ্মানন্দজী বলেছিলেন এই পূজা আমাদের শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরাণীরই পূজা মৃণ্ময়ী প্রতিমায়। তিনি এবার সব অস্ত্র রেখে দুইহাত কোলে রেখে এসেছেন “অভয়া” রূপে। তিনিই আমাদের দুর্গোৎসবের প্রাণপ্রতিমা। 

তথ্যসূত্র : সারদা রামকৃষ্ণ , মঠে স্বামীজী দূর্গা পূজা।

]]>
স্বামীজীর বাণী বদলে দিয়েছিল মাতঙ্গিনীর জীবন https://ekolkata24.com/offbeat-news/swamijis-words-changed-matangini-hazras-life Wed, 29 Sep 2021 12:33:08 +0000 https://www.ekolkata24.com/?p=6026 বিশেষ প্রতিবেদন: তিনি গান্ধী বুড়ি। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। সেই তাঁকেই স্বামীজীর বাণী ব্যাপকভাবে স্পর্শ করেছিল। তাই তো ইংরেজদের করা তিনটে গুলির শেষটি চোখ, খুলি ফাটিয়ে বেরিয়ে গেলেও তাঁর হাত থেকে পড়েনি জাতীয় পতাকা। তিনি যে দেশ মায়ের একনিষ্ঠ সেবিকা হয়ে গিয়েছিলেন।

স্বামীজি বলেছিলেন, “এখন থেকে আগামী পঞ্চাশ বছর তোমাদের একমাত্র উপাস্য দেবতা হবেন – জননী-জন্মভূমি। তার পূজো করো সকলে”। ভারতবাসীদের উদ্দেশ্যে বলা স্বামী বিবেকানন্দর একটি বাণী ওই সময়ে মাতঙ্গিনীকে বিশেষভাবে স্পর্শ করেছিল। তারপরে যা হয়েছে তা ইতিহাস।

তাঁর জন্ম ১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর। পশ্চিমবঙ্গের তমলুকের হোগলায়। সাধারণ এক কৃষক ঠাকুরদাস মাইতির ঘরে। অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয় আলিনান গ্রামের ত্রিলোচন হাজরার সঙ্গে। ১৮ বছর বয়সেই স্বামীকে হারান মাতঙ্গিনী হাজরা। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আদতে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিতা। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষাদীক্ষা তেমন ছিল না। ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একনিষ্ঠ অনুসারী। সেইজন্য তাঁর আরেক পরিচয় গড়ে উঠেছিল ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে। গান্ধীর আদর্শমতে, তিনি নিজের হাতে চরকা কেটে খাদি কাপড়ও বানিয়েছেন।

১৯০৫ সালে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। তার বিপ্লবী জীবন ছিল ক্ষুরধার। ব্রিটিশের লবণনীতির প্রতিবাদে তার লড়াই ছিল দুরন্ত। তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেরও সদস্য ছিলেন। ডান্ডি অভিযান, অসহযোগ আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য।

ত্রিশের দশক। মেদিনীপুরের নাম শুনলেই সেই সময় বিদেশী শাসককুল আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ত। আইন অমান্য আন্দোলনে মাতঙ্গিনী ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল। খবর পেয়েই পুলিশ এল। মাতঙ্গিনী গ্রেফতার হলেন। সঙ্গে রইলেন অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরাও। তাঁরাও গ্রেফতার হলেন।

matangini hazra

পরবর্তী ঘটনা ঘটে ১৯৩৪-৩৫ সালের। অবিভক্ত বাংলার লাটসাহেব মি. অ্যান্ডারসন তমলুকে দরবার করবেন। কিন্তু মেদিনীপুরবাসীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লাটসাহেবকে এই দরবার তারা কিছুতেই করতে দেবে না। এদিকে ইংরেজ সরকারও তাঁদের সংকল্পে অটল। ফল, সংঘাত।

লাটসাহেবের দরবার বসার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। এমন সময় হাজার কণ্ঠে ধ্বনি উঠল ‘লাটসাহেব তুমি ফিরে যাও- ফিরে যাও।’ বন্দে মাতরম ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল আকাশ বাতাস।

শোভাযাত্রা এগিয়ে চলল দরবারের দিকে। শত শত পুলিশও হাজির। হাতে তাঁদের লাঠি ও বন্দুক। শোভাযাত্রীদের পথ আটকাল ওই পুলিশবাহিনী। পুরোভাগেই ছিলেন মাতঙ্গিনী। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল। এবার কিন্তু তাঁকে আর এমনিতে ছেড়ে দেওয়া হল না। রীতিমতো বিচার হল। মাতঙ্গিনী দুমাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। বিচারের রায় ঘোষণার পর হাসিমুখে বললেন, “দেশের জন্য, দেশকে ভালোবাসার জন্য দণ্ডভোগ করার চেয়ে বড় গৌরব আর কী আছে?”

মাতঙ্গিনীকে অমর করে রেখেছে ১৯৪২ সালের আগস্ট বিপ্লব। ঘটনা ২৯ সেপ্টেম্বর আজকের দিনের, কিন্তু ৭৯ বছর আগের। আগস্ট বিপ্লবের জোয়ার তখন মেদিনীপুরে আছড়ে পড়েছে। ঠিক হয়েছে এক সঙ্গে তমলুক, মহিষাদল, সুতাহাটা ও নন্দীগ্রাম থানা আক্রমণ করে দখল করে নেওয়া হবে।

মাতঙ্গিনী স্বেচ্ছাসেবকদের বোঝালেন গাছ কেটে ফেলে রাস্তা-ঘাট সব বন্ধ করে দিতে হবে। টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের তার কেটে দিতে হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হবে। পাঁচদিক থেকে পাঁচটি শোভাযাত্রা নিয়ে গিয়ে তমলুক থানা এবং একই সঙ্গে সমস্ত সরকারি অফিস দখল করে নিতে হবে।

যেমন কথা তেমনি কাজ। ২৯ সেপ্টেম্বর পাঁচটি দিক থেকে পাঁচটি শোভাযাত্রা এগিয়ে চলল তমলুক অধিকার করতে। হাজার হাজার মেদিনীপুরবাসী শামিল হয়েছিলেন ওই শোভাযাত্রায়। হাতে তাঁদের জাতীয় পতাকা। মুখে গর্জন ধ্বনি, ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো- করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে – বন্দে মাতরম্’।

পশ্চিমদিক থেকে এগিয়ে এল আট-দশ হাজার মানুষের এক বিরাট শোভাযাত্রা। গুর্খা ও ব্রিটিশ গোরা সৈন্যরা তৈরি হল অবস্থার মোকাবিলার জন্য। হাঁটু মুড়ে বসে গেল তাঁরা। তারপরই তাঁদের বন্দুকগুলো গর্জে উঠল। মারা গেলেন পাঁচজন। আহত হলেন আরও বেশ কয়েকজন।

উত্তর দিক থেকে আসছিল মাতঙ্গিনীর দলটি। তাঁরা থানার কাছাকাছি আসতেই পুলিশ ও মিলিটারি অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে দিল। বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন কিছুটা পিছু হঠে গিয়েছিল। তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে মাতঙ্গিনী বললেন, ‘থানা কোন দিকে? সামনে, না পেছনে? এগিয়ে চলো। হয় থানা দখল করো, নয়ত মরো। বলো, ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ – ‘বন্দে মাতরম’।

বিপ্লবীদের সম্বিত ফিরে এল। তাঁদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হতে থাকল, ‘এগিয়ে চলো। ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো। ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে, বন্দে মাতরম।’ আবার এগিয়ে যেতে লাগল তাঁরা উদ্দাম বেগে। ওদিকে গুলি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল বৃষ্টির মতো।

মাতঙ্গিনী দলটির পুরোভাগে। ছুটে চলেছেন উল্কার বেগে। বাঁ-হাতে বিজয় শঙ্খ যেন পাঞ্চজন্য, ডান হাতে জাতীয় পতাকা। আর মুখে ধ্বনি- ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো-করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে – বন্দে মাতরম’।

একটি বুলেট পায়ে লাগতেই হাতের শাঁখটি মাটিতে পড়ে গেল। দ্বিতীয় বুলেটের আঘাতে বাঁ-হাতটা নুয়ে পড়ল। কিন্তু ওই অবস্থাতেও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ভারতীয় সৈনিকদের উদ্দেশ্য করে বলে চলেছেন, ‘ব্রিটিশের গোলামি ছেড়ে গুলি ছোঁড়া বন্ধ করো – তোমরা সব আমাদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে হাত মেলাও।’ প্রত্যুত্তরে উপহার পেয়েছিলেন কপালবিদ্ধ করা তৃতীয় বুলেটটি। প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু জাতীয় পতাকাটি তখনও তাঁর হাতের মুঠোয় ধরা। সেটি কিন্তু মাটি স্পর্শ করেনি কারণ মরতে মরতেও তিনি চিৎ হয়ে পড়লেন আর পতাকা রইল তাঁর বুকের উপর। কপালের লাগা গুলির ক্ষতস্থান দিয়ে বেরোনো রক্তে তখন সারা শরীর ভেসে গেছে। নিথর দেহে অপলক দৃষ্টিতে যেন চেয়ে আছেন ভবিষ্যৎ স্বাধীন ভারতের প্রত্যাশায়!

যেখানে তিনি লুটিয়ে পড়েছিলেন, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পুরনো দিনের মানুষ আজও বীরাঙ্গনাকে স্মরণ করেন।
প্রতি বছর ১৫ আগষ্ট এলে তমলুকের বানপুকুরের পাড়ে এসে দাঁড়ান তাঁরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের এমন তীর্থক্ষেত্রে এসে সকলেই দাঁড়ান মৃত্যঞ্জয়ী বীরাঙ্গনার জন্যই। আসলে মাতঙ্গিনী হাজরা এমনই এক চরিত্র, যিনি তাঁর সমগ্র সত্তা ও হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন উদ্দীপ্ত দেশপ্রেমের অনন্যতন্ত্রতা, অন্তঃরস্থ মনুষত্বের স্বাধীনতা।

১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলো তখন অসংখ্য স্কুল, পাড়া ও রাস্তার নাম মাতঙ্গিনী হাজরার নামে উৎসর্গ করা হয়। স্বাধীন ভারতে কলকাতা শহরে প্রথম যে নারীমূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি ছিল মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি। ১৯৭৭ সালে কলকাতার ময়দানে এই মূর্তিটি স্থাপিত হয়। কলকাতার ময়দান অঞ্চলে মহান বিপ্লবী মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি এখনো তার শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

]]>