টুইট করে বিজেপি নেতা প্রাক্তন রাজ্যপাল (ত্রিপুরা ও মেঘালয়) তথাগত রায় লিখলেন “কি হবে জানাই ছিল, কিন্তু দুঃখ তো চেপে রাখা যায় না ! কালকে টুইট হবে।”
কাল অর্থাৎ বুধবার তথাগত বিস্ফোরণ হতে চলেছে ফের। নিজেকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আগেই। বিধানসভা উপনির্বাচনে বিরোধী দল বিজেপির ভরাডুবি, জামানত হারানো নিয়ে দলেরই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতা, পরিদর্শকদের বারবার আক্রমণ করেছেন।
এর আগে তথাগতবাবুর টুইটে একাংশ নেতাদের মহিলা দেখলে লালা ঝরে এমন কথায় তীব্র রাজনৈতিক শোরগোল পড়েছে। কখনও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো কখনও কৈলাস বিজয়বর্গীয় কাউকেই টুইট হামলা থেকে রেহাই দেননি বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা।
কলকাতা পুরভোটের ফলাফল বের হওয়ার পর তথাগত রায়ের টুইটে ইঙ্গিত, তিনি দলের বিপর্যয়ের দিকটি তুলে ধরতে চেয়েছেন। একইসঙ্গে উঠে আসছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের প্রসঙ্গ। কলকাতা পুর নির্বাচনে ব্যাপক ছাপ্পা-রিগিং হয়েছে বলেই অভিযোগ।
ভোট প্রাপ্তির নিরিখে কলকাতা পুরভোটের ফলাফলে চমকপ্রদভাবে বামফ্রন্টের উত্থান হয়েছে। বিজেপি নেমেছে বামেদের নিচে। এই নিয়ে বিজেপি মহল বিমর্ষ। রাজ্যে বিরোধী দল হয়েও কলকাতা পুরনিগমের ভোটো তাদের তিন নম্বরে নেমে যাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চা।
]]>নির্বাচনে বিজেপি সরকার গড়তে না পারায় দলকে ও নেতাদের টুইটে মেয়ে দেখলে ‘লালা ঝরে’ বলে কটাক্ষ করেছেন। কখনও বলেছেন দলটাই রাজ্য থেকে উঠে যাবে।

এহেন তখাগত বাবুর ‘আপাতত বিদায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি’ টুইটে বঙ্গ গেরুয়া শিবির সরগরম। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, উনি একটা সময় পার্টি করতেন। তখন আমি দলের দায়িত্বে ছিলাম না। যখন আমি দায়িত্বে আসি, তখন উনি রাজ্যপাল ছিলেন। তাই একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়নি। আর এখন উনি দলে থেকে কী করছেন, তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। উনি দলে থাকতেই বা পার্টির কী লাভ হয়েছে? আমার তো জানা নেই। তাই উনি কী করবেন, না করবেন তা ওনার সিদ্ধান্ত। ওঁকে নিয়ে আমার ভাবার সময় নেই। আমি শুধু ভাবছি আমার দল এবং দলের কর্মীদের নিয়ে।’
তাৎপর্যপূর্ণ, তথাগতবাবুকে একপ্রকার অলাভজনক বলে কটাক্ষ করলেন দিলীপবাবু। তবে বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া আসেনি।
তথাগত রায় বনাম দিলীপ ঘোষের বাকযুদ্ধ যেন রাজ্য বিজেপির ধসের ছবিটা আরও স্পষ্ট করে তুলছে। এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞ মহলে। বিজেপি যে পশ্চিমবঙ্গে ভেঙে যাবে সেটাও টুইটে আগে লিখেছেন তথাগত রায়।
এদিকে তথাগত রায় টুইটে ফের লিখেছেন ‘দলের কিছু নেতৃস্থানীয় লোক যেভাবে কামিনী-কাঞ্চনে গা ভাসিয়েছিলেন সেটা সম্বন্ধে দলকে সজাগ করার জন্য করছিলাম। এবার ফলেন পরিচয়তে।’
নারী ও অর্থ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি চলার যে মারাত্মক অভিযোগ তথাগতবাবু করেছেন তার জন্য রাজ্য বিজেপি এখনও তাঁকে শো কজ করেননি। বিরোধী দলনেতা ও নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও নীরব।
]]>অভিযোগ ছিল, তিনি ‘গোঁজ প্রার্থী’ হতেই ভোটে নামতেন। এহেন তথাগতবাবুর একটি বিস্ফোরক টুইটে বিজেপি বিড়ম্বিত। তবে বঙ্গ বিজেপিতে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন গোঁজ প্রার্থী হওয়ার অভ্যাসে গোঁজামিল দেওয়া টুইট বার্তা দিয়েছেন তথাগত রায়।
শনিবার তথাগতবাবু টু়ইটে ঘোষণা করেন ‘আপাতত বিদায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি’। দল ও রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়ায় দলত্যাগ করতে চলেছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা। তবে তথাগতবাবু লিখেছেন, ‘আপাতত’। এই শব্দ নিয়েই দলেরই অভ্যন্তরে গুঞ্জন তিনি পথ খোলা রেখেছেন।

তথাগতবাবুর টুইট এক অর্থে ‘গোঁজামিল’, এতে রহস্য আছে বলেই কিছু নেতার ধারণা। গত উপনির্বাচনগুলিতে পরপর বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার জেরে তথাগত রায়ের টুইট হামলায় বঙ্গ ও কেন্দ্র বিজেপি নাজেহাল হচ্ছিল। একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল ও বিজেপি নেতা।
বিতর্কিত সেই প্রসঙ্গগুলি টেনে এনে টুইটে তথাগত রায় লিখেছেন, ‘কারুর কাছ থেকে বাহবা পাবার জন্য আমি টুইটগুলো করছিলাম না। দলের কিছু নেতৃস্থানীয় লোক যেভাবে কামিনী-কাঞ্চনে গা ভাসিয়েছিলেন সেটা সম্বন্ধে দলকে সজাগ করার জন্য করছিলাম। এবার ফলেন পরিচীয়তে। পুরভোটের ফলের জন্য প্রতীক্ষায় থাকব। আপাতত বিদায়, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি !”
বিধানসভা উপনির্বাচনে বিরোধী দল বিজেপির বিরাট পরাজয়ের পর টুইট করে নেতাদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন তথাগত রায়। তিনি লিখেছিলেন, “৩ থেকে ৭৭ (এখন ৭০) গোছের আবোলতাবোল বুলিতে পার্টি পিছোবে, এগোবে না। অর্থ এবং নারীর চক্র থেকে দলকে টেনে বার করা অত্যাবশ্যক।” তাঁর টুইটের প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিজেপি।
]]>রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে ‘নারীচক্র’ মন্তব্য করে আগেই রাজনৈতিক বোমা ফাটিয়েছিলেন তিনি। সেই মন্তব্য ধরেই এবার তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে যে এফআইআর দায়ের করেছেন বাম নেতা আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই অভিযোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। এর পরেই প্রশ্ন, পুলিশ কি প্রবী়ন বিজেপি নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে?
সিপিআইএম যুব নেতা ও আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত অভিযোগ খতিয়ে দেখে পুলিশ সেটি গ্রহণ করেছে। এর পরেই বঙ্গ বিজেপিতে শোরগোল। তবে তথাগতবাবুর মন্তব্য তাঁর নিজ দলেরই একাংশ নেতার বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন দলের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ আরও জল্পনা উস্কে দিয়েছে।
সম্প্রতি উপনির্বাচনে পরপর পরাজয়ের রোষে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেশে চলেছেন তথাগতবাবু। তাঁর বিস্ফোরক দাবি, “বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিট বিনিময়ের ক্ষেত্রে দলের একাংশ অর্থ এবং নারী চক্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়।”
বামপন্থী আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নারীচক্র সক্রিয় রাজ্যে। তা বিধানসভায় নির্বাচনের প্রেক্ষিতে তথাগত রায়ের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে করা মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই বিষয়ে তদন্ত চেয়েই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। তিনি জানান, ইতিমধ্যে নারী সংক্রান্ত বিজেপি নেতাদের অপরাধ সম্পর্কে রাজ্য মহিলা কমিশনে বিভিন্ন অভিযোগ জমা পড়েছে।
সায়নবাবুর অভিযোগ, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে নারীচক্র ব্যবহার হয়েছিল তা তথাগতবাবুর টুইট ও মন্তব্য থেকে জানা গিয়েছে। “একটি সাক্ষাৎকারে ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় অভিযোগ করেছেন ২০২১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি অনৈতিকভাবে অর্থ এবং নারীর আদান প্রদান করেছে। নিজের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকেও এই বিষয়ে একটি ট্যুইট করেন তিনি এবং এর সাথে আরও অভিযোগ করেন যে বাংলায় বিজেপি রাজ্যনেতারা নারী চক্রে জড়িয়ে পড়েছেন।”
]]>কী লিখেছেন টিএমসি নেতা কুণাল ঘোষ? টুইটে তিনি লিখেছেন, “Part 1: হা হা। রাজ্যপাল পদ শেষ হলে বাংলায় নেতা হতে এসেছিলেন তথাগত। দিলীপ ঘোষ ঢুকতে দেননি। দিলীপবাবু তো নিজে তবু বিধায়ক, সাংসদ হয়েছেন। এই ভাঁড়সম্রাট তথাগত দিলীপবাবুর জুতো নালিশের যোগ্য নন। রোজ অবসাদ থেকে বিষোদ্গার করছেন টুইটে। গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া আর টুইট ছাড়া এটার আছেটা কী?”
এর পরেই প্রত্যুত্তর দিয়েছেন তথাগত রায়। তিনি টুইটে লেখেন, “হিন্দু যেমনি মুসলমান হলে গরু খাবার যম হয় ঠিক তেমনি এই ভাঁড়টি মমতাকে গালাগালি দিয়ে, সারদা কেসে জেলে গিয়ে, জামিন পেয়ে অতীতের পাপ স্খালন করার জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মমতাপন্থী হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুনখারাপি করার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে !”

বঙ্গ রাজনীতিতে এখন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তত্ত্বের লড়াই হয় না। এর বদলে হয় পারস্পরিক অশালীন টুইট যুদ্ধ। এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে গত বাম জমানায় মাঠে ময়দানে কিছু বাম নেতা যে মেঠো ভাষা ব্যবহার করতেন তা শহুরে জনজীবনে অশালীন বলে চিহ্নিত হয়েছিল। তবে বাম আমলে যে রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক বিশ্লেষণ হতে তার কণামাত্র অবশিষ্ট নেই এখন।
অভিযোগ আরও, যেভাবে আর্থ-সামাজিক সমস্যার বিষয়গুলিকে এড়িয়ে গিয়ে পারস্পরিক অশালীন আক্রমণ চালাচ্ছেন শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা তাতে সুস্থ রাজনীতি শেষ।
বিশ্লেষণে আরও উঠে আসছে, কংগ্রেস জমানার প্রসঙ্গ। সেই সময়েও এমন দেখা যায়নি। তখন ছিল তীব্র রাজনৈতিক লড়াই।
তবে গত ছয় দশকে বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে সামাজিক দৃষ্টির। সেশ্যাল মিডিয়ায় শালীনতা গিয়েছে অস্তাচলে। তারই প্রতিফলন হচ্ছে অনবরত।
<
p style=”text-align: justify;”>কু়ণাল ঘোষ ও তথাগত রায়ের টুইট লড়াইয়ের আগে শনিবার সকালে অবশ্য বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলেরই নেতা তথাগত রায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, বিজেপিতে থাকতে যখন এতই লজ্জা তাহলে দল ছেড়ে দিন। উনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর ক্রমাগত তথাগত রায় টুইট করে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে নিজের রীতিতে ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছেন।
]]>তথাগত রায় টুইটে লিখেছেন, ‘সুর করে দিদি-দিদি ডাকায় যা ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে মমতাকে বারমুডা পরতে বলায়,কারণ এর মধ্যে অশ্লীল ইঙ্গিত আছে। ’বারমুডা’ কথাটা বোধ হয় নতুন শেখা হয়েছিল। নিচু স্তরের মাস্তানির সুরে “পুঁতে দেব”, “শবদেহের লাইন লাগিয়ে দেব”, এই সব কথাতেও প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।’
বিধানসভায় ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রতি জনসভা থেকে ব্যাঙ্গাত্মক বাচনে দিদি ও দিদি বলে ডাকতেন। তাঁর লক্ষ্য ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভা থেকে মোদীর সেই ব্যাঙ্গাত্মক ভাষণ নির্বাচনী খোরাক হয়েছিল।
https://twitter.com/tathagata2/status/1455746776737075209?s=20
একের পর এক উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয় ও সর্বশেষ চার কেন্দ্রে হেরে যাওয়ার পর বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তর এখন আগ্নেয়গিরি। এই অবস্থায় তথাগত রায় ক্রমাগত হামলা শুরু করেছেন। মোদীর সেই সুর করে দিদি বলা তাঁর টুইটে সমালোচিত হয়েছে।
এর পরেই তিনি টেনে এনেছেন বারমুডা প্রসঙ্গ। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ততকালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বারমুডা পরানোর কথা বলেছিলেন। তাঁর কটাক্ষের লক্ষ্য ছিলেন মমতা। টুইটে তথাগত রায় এই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
<
p style=”text-align: justify;”>তথাগত রায়ের নিশানা যে মোদী পর্যন্ত তা ভেবেই শিহরিত রাজ্য বিজেপি। তবে টুইট বাণ চালিয়েই যাচ্ছেন তথাগত রায়।
]]>চারটি আসনের উপনির্বাচনে তিনটি আসনে জামানত খুইয়েছে বিজেপি। গতবারের জয়ী দুটি আসন এবার হাতছাড়া। এমনটা ভাবেননি রাজ্য নেতৃত্ব। ফলে আকচা আকচি শুরু হয়েছে।

কেউ টুইটে তো কেউ ব্যক্তিগত মহলে কেউ আবার প্রকাশ্যেই শুরু করে দিয়েছেন আক্রমণ। কেথাও কোথাও লাভা বের হতে শুরু করেছে। এর পরেই জ্বালামুখ ফেটে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলায় দলীয় দফতরগুলিতে নেতাদের ও তাঁদের গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উপনির্বাচনে চার কেন্দ্রেই পরাজয়। ফলাফল বলে দিচ্ছে বিরোধী দলটির বিধায়কের সংখ্যা কমে গেল বিধানসভায়। আরও সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ থেকে ধস নামছে দীপাবলির পরেই।
ফলাফল ঘোষণা শেষ হতেই বিজেপির নেতারা যেভাবে হামলা শুরু করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাতে আশঙ্কা দলের রাজ্য দফতরে না খণ্ডযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমনই আশঙ্কা বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলার একাংশ নেতাদের। তাঁরা স্পষ্ট জানান, তেমন হলে তৃণমূলে সামিল হয়ে যাব। আর কোনও পথ নেই।
অভিযোগ আরও প্রবল, রাজ্য সভাপতি সুকান্তবাবু, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুবাবু সহ বিভিন্ন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীরা কড়া নিরাপত্তা পান। কিন্তু যাদের উপর ভরসা করে দল চলে সেই নিচু তলার কর্মীরা অসুরক্ষিত। তাঁরা এবার দলে দলে ভিড় জমাবেন তৃণমূল শিবিরে।
<
p style=”text-align: justify;”>রাজনৈতিক গতি বলে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যে স্রোত বয়েছিল বিধানসভা ভোটে এবার উপনির্বাচনের ফলে তার উল্টো স্রোত বইছে।
]]>উপনির্বাচনে চার কেন্দ্রেই পরাজয় হয়েছে বিজেপির। তার মধ্যে দুটি কেন্দ্রে গতবার জয়ী হলেও এবার হাতছাড়া হওয়ায় বিরাট ধাক্কা বিরোধী দলে। এমন পরাজয়ের পর চুপ থাকেননি তথাগত রায়। তিনি টুইট করে দলের নব্য নেতাদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
https://twitter.com/tathagata2/status/1455467119756263424?s=20
তথাগত রায়ের লক্ষ্য বর্তমান নেতারা। তাদের ভাষা কেমন তার টুকরো বর্ননা তিনি টুইটে লিখেছেন। বিজেপির অভ্যন্তরে এ নিয়ে তীব্র শোরগোল চলছে। সূত্রের খবর, পরপর ১২ জন বিধায়ক দলত্যাগ করতে তৈরি। তাদের রোখা সম্ভব নয় বলেই ধরে নিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব।
<
p style=”text-align: justify;”>উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জয় পেয়ে বিধানসভায় শক্তি বাড়িয়ে নিল। শক্তি কমল বিজেপির। আসন্ন দলত্যাগ ধসে বিজেপি আরও নামতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
]]>আরও পড়ুন: মমতাও হেরেছেন বলেই আবার ভোটে লড়ছেন, এন্টালিতে প্রিয়ঙ্কার হার প্রসঙ্গে তৃণমূলকে কটাক্ষ তথাগতর
ফলে জিততে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ভোটপ্রচার দেখে ইতিমধ্যেই বোঝা গিয়েছে, প্রেস্টিজ ফাইটে কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে মরিয়া তিনি। ভবানীপুরের গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। কলকাতা হাই কোর্টের অ্যাডভোকেট প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। ২০১৪ সালে মোদী ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। ক্ষমতায় এসেছিল এনডিএ সরকার (NDA)। সেবছরেরই আগস্টে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। শুরুতেই দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করেছেন। ছ’বছর পর, ২০২০ সালের আগস্টে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার (বিজেওয়াইএম) সহ-সভাপতি করা হয়।

এতকিছুরই পরেও প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল শুভেন্দু অধিকারী নন। সেরকমভাবেই সিপিআইএমের শ্রীজীব বিশ্বাসও মীনাক্ষী গোস্বামী নন। ফলে আপাতদৃষ্টিতে লড়াই যথেষ্টই সহজ তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। যদিও তাতে কোনভাবেই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীরাও। ভবানীপুরে ভোটারদের মন জিততে মরিয়া প্রত্যেকে। ভবানীপুরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা বেশী। চলতি বিধানসভা ভোটেও ওই ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। ফলে ওই ওয়ার্ডে স্বভাবতই মনো্যোগ বাড়িয়েছে জোড়াফুল শিবির। সেখানেই পোস্টার পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। বাংলার বদলে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে ওই পোস্টারে, গোটা বিষয়টাই হিন্দিভাষী ভোটারদের কথা মাথায় রেখে।
গর্গকে নিয়ে ইয়ার্কি মেরো না, ও হারভার্ডে বাসন মেজেছে।
একা দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করছে, এমন কোনো বিহারী ফুচকাওয়ালার তেঁতুল জলের হাঁড়ি এক ঘুষিতে ভেঙে দিতে পারে !
ওর পিছনে বড় বড় বাংলাদেশী মৌলবীরা আছে ! https://t.co/IQzfr5edrq— Tathagata Roy (@tathagata2) September 23, 2021
সেই ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে বাংলাপক্ষের গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে ওই হিন্দিতে লেখা পোস্টার খুলতে আহ্বান জানিয়েছিলেন অভিজিত বসাক নামের জনৈক নেটনাগরিক। তা শেয়ার করেই বাংলাপক্ষের প্রতিষ্টাতা-সদস্য গর্গ চট্টোপাধ্যায়কে ঠুঁকলেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তিনি লিখেছেন, “গর্গকে নিয়ে ইয়ার্কি মেরো না, ও হারভার্ডে বাসন মেজেছে। একা দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করছে, এমন কোনো বিহারী ফুচকাওয়ালার তেঁতুল জলের হাঁড়ি এক ঘুষিতে ভেঙে দিতে পারে! ওর পিছনে বড় বড় বাংলাদেশী মৌলবীরা আছে!”

বেশ কয়েকবছর ধরেই ‘পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির অধিকার রক্ষায়’ পথে নামছে বাংলাপক্ষ। দিনকয়েক আগেই কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। মজা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই সংগঠনকে শাসকদলের (পড়ুন তৃণমূল কংগ্রেস) বি টিম বলেও কটাক্ষ করে। আবার অন্যদিকে এই সংগঠনের বিক্ষোভের পরেই WBSEDCL (West Bengal State Electricity Distribution Company), পোস্টাল বিভাগের পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক হয়েছে বাংলা। ইংরেজি না জানার অভিযোগে বরখাস্ত করা কর্মীদেরও পূনর্বহাল করা হয়েছে কাজে। ফলে তথাগত রায়ের মন্তব্য এবং তাতে গর্গ চ্যাটার্জী, বাংলাপক্ষকে টেনে আনায় দ্বিধাবিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়া।
]]>
আরও পড়ুন মমতার বিরুদ্ধে লড়বেন, চিনে নিন পদ্মপ্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল
নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই, ভবানীপুরসহ তিন কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রত্যাশা মতোই এবার ভবানীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী। উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। ২০১৪ সালে মোদী ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। ক্ষমতায় এসেছিল এনডিএ সরকার (NDA)। সেবছরেরই আগস্টে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। শুরুতেই দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করেছেন। ছ’বছর পর, ২০২০ সালের আগস্টে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার (বিজেওয়াইএম) সহ-সভাপতি করা হয়।

২০১৫ সালে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে কলকাতা পৌর পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এই তরুণ নেত্রী। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের স্বপন সমাদরের কাছে হেরে যান। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রতীকে এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু ৫৮২৫৭ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলের স্বর্ণকমল সাহার কাছে হেরে যান। কর্পোরেশন ইলেকশনেও জিততে পারেননি, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর স্বপ্ন দেখছেন। একথা বলেই প্রিয়ঙ্কা এবং গেরুয়া শিবিরকে ক্রমাগত কটাক্ষ করছেন তৃণমূল সমর্থকরা। তাদেরই একহাত নিলেন তথাগত রায়।

বিজেপি (BJP) নেতা তথাগত রায়ের সেই ফেসবুক পোস্ট।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘মুলোরা এমন ভাব করছে যেন মমতা উপনির্বাচন জিতেই বসে আছেন ! কিন্তু উপনির্বাচনটা হচ্ছে কেন? মমতা হেরে গিয়েছিলেন বলেই না ! সুপার হেভিওয়েট হওয়া সত্ত্বেও ! প্রিয়াঙ্কা যেমনি এন্টালিতে হেরেছিলেন মমতা তেমনি নন্দীগ্রামে হেরেছিলেন। যিনি একবার হেরেছেন তিনি দ্বিতীয়বারও হারতে পারেন!’

পদ্মশিবিরের দুই সাংসদ অর্জুন সিং এবং জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো এবং রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিংকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবানীপুর কেন্দ্রের আটটি ওয়ার্ড পর্যবেক্ষণে রাখবেন একজন করে বিজেপি বিধায়ক। তাঁদেই মাথায় থাকবেন দুই সাংসদ।
একই সময়ে নির্বাচন ও ভোট গণনা হবে রাজ্যের আরো দুই আসন সমশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে। ভবানীপুর-সহ বাকি ৭টি বিধানসভা আসনে ভোট করানোর দাবিতে বার বার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের দাবি ছিল, রাজ্যো করোনা সংক্রমণ অনেকটাই কম। তাই ভোট করানো যেতে পারে।
তৃণমূল মোট ২১৩ টি সিট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিধানসভা নির্বাচনে। তারপরেও ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে প্রায় ছ’জন বিধায়ক যোগ দিয়েছেন রাজ্যের শাসকদলে। সেই সংখ্যাটাও আরও বাড়তে পারে। এবার উপনির্বাচনে সেই আসন সংখ্যা আরও বাড়ানোর সুযোগ এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাছে।
]]>