মুম্বই: প্রতিনিয়ত পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ছে৷ গত কয়েকদিনে ভারতের কোন কোন শহরে পেট্রলের দাম সেঞ্চুরি সমান হয়েছে৷ এখন গাড়ি কেনা আর হাতি পোষার সমান হয়ে গিয়েছে৷ ফলে সকলেই চাইছে একটা বিকল্প ব্যবস্থা৷ জ্বালানি তেলের বিকল্প হিসেবে ব্যাটারিচালিত যান বাজারে এসেছে৷ তবে সেই অর্থে এখনও বাজার ধরতে পারেনি ইলেকট্রিক কার৷ কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে চার্জিংয়ের কারণে ব্যাটারিচালিত গাড়ি ক্রেতাদের মন জয় করতে পারেনি৷
যদিও, ভবিষ্যতে পরিবহণের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন-ভিত্তিক ফুয়েল সেল আরও বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা ৷ ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহার করা উচিত বলেই তো এতকাল মনে করা হত৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে এমন গাড়ি ভাড়া নেওয়া বেশ সহজ হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু এখন হাইড্রোজেন গাড়ি নিয়ে চর্চা বেড়ে চলেছে৷ প্রায় ২০ বছর আগে এমন গাড়ি তুলে ধরা হয়েছিল, তবে সেই জ্বালানি দিয়ে সে সময়কার প্রচলিত ইঞ্জিন চালান হত৷ প্রশ্ন হল, এখনও পর্যন্ত হাইড্রোজেন ইঞ্জিনের প্রচলন কেন বাড়েনি?
হাইড্রোজেন জ্বালানি সংগঠন ও সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিরা অবশ্য অনেক কাল ধরেই এমন গাড়ি চালাচ্ছেন৷ প্রশ্ন হল, ব্যাটারিচালিত গাড়ির তুলনায় এমন গাড়ির সুবিধা কী? হাইড্রোজেন জ্বালানি সংগঠন বলছে, ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে রেঞ্জ একটা বড় সমস্যা৷ আগের তুলনায় রেঞ্জ বাড়লেও তারপর দুই থেকে চার ঘণ্টা ধরে চার্জ করতে হয়৷ ছুটি কাটাতে বেরিয়ে আড়াইশ’ কিলোমিটার পর পর চার ঘণ্টা ধরে বিরতি নিতে হলে কেমন লাগে? তাদের মতে, এটা মোটেই কোনও সমাধানসূত্র হতে পারে না৷
হাইড্রোজেন-গাড়ি কীভাবে চলে? এমন গাড়িকে ‘ফুয়েল সেল কার’ বলা হয়৷ বাইরের বাতাস অক্সিজেন ট্যাংকের ফুয়েল সেলের মধ্যে রাখা হাইড্রোজেনের সংস্পর্শে আসে৷ এর ফলে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়, যা দিয়ে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন চলে৷ গাড়ির পিছনের এক্সট পাইপ থেকে জলের বিন্দু পড়ে৷ প্রচলিত পেট্রল বা ডিজেল ইঞ্জিনের মতো ধোঁয়া বের হয় না৷
অর্থাৎ, হাইড্রোজেনের আরও ব্যাপক প্রয়োগ করতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমপক্ষে দুই গুণ বাড়াতে হবে৷ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বায়ু ও সৌরশক্তি থেকে জ্বালানি উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে৷ তবেই পরিবহণের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন এবং মানুষের জন্য যথেষ্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে৷ এই সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ভ্যার্নার ডিভাল্ড মনে করেন, ‘‘পরিবহণের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে হলে শুধু পুনর্বব্যহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে সেই হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে হবে৷ এমন সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহায়তার পথে যেতে হবে, যেখানে বিশাল পরিমাণ খালি জমি এবং যথেষ্ট সূর্যের আলো ও বাতাস রয়েছে৷
পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির সরবরাহ ব্যাপক আকারে বাড়িয়ে হাইড্রোজেন উৎপাদন না হয় সম্ভব হল৷ কিন্তু সেই জ্বালানী উপভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে ফুয়েল স্টেশনের মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবও তো বড় এক সমস্যা৷ দেখা গিয়েছে, বার্লিন শহরে মাত্র পাঁচটি হাইড্রোজেন স্টেশন রয়েছে৷ গোটা জার্মানিতে সব মিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় নব্বই৷ গাড়িতে জ্বালানি ভরতে তিন মিনিটের মতো সময় লাগে৷ তারপর গাড়ি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে৷ ডিভাল্ড বলেন, ১০০ কিলোমিটার চালানোর খরচ ডিজেল গাড়ির মতো৷ অর্থাৎ, মালিকের এর বেশি ব্যয় হয় না৷ শিল্পজগতের সঙ্গে রফা অনুযায়ী প্রায় ৪০০ ফুয়েল স্টেশন গড়ে তোলা হবে৷ তবে এমন গাড়ির সংখ্যা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই৷”
রাজনীতি জগত পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে যথেষ্ট সহায়তা করছে৷ হাইড্রোজেন উৎপাদনও বাড়ছে৷ ডিসেম্বর মাসে জার্মান সরকার চিলিতে এক পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু করেছে৷ সেখানে সিমেন্স কোম্পানি ভবিষ্যতে হাইড্রোজেনের সাহায্যে কৃত্রিম পেট্রোলিয়াম তৈরি করবে৷ সেই কারণেও বিশেষজ্ঞরা জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত৷ ভ্যার্নার ডিভাল্ড বলেন, ‘‘প্রায় দশ বছর আগে শুধু কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারের মনে এমন ‘স্মার্ট’ প্রযুক্তির স্বপ্ন ছিল৷ আজ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ‘গ্রিন ডিল’-এর আওতায় বাধ্যতামূলক লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ পেট্রল বা ডিজেল ইঞ্জিন চালু রেখে যে সেটা আর সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়্ছে৷ আমাদের অন্য প্রযুক্তির প্রয়োজন৷”
হাইড্রোজেনের আন্তর্জাতিক বাজার এবং সেটি কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম পণ্য উৎপাদনও বেড়ে চলেছে৷ এর ফলে হাইড্রোজেন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷