নিউজ ডেস্ক: কাবুল থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বামিয়ান উপত্যকার৷ এক সময় এটি ঐতিহাসিক সিল্করুটের অংশ ছিল৷ ষষ্ঠ শতাব্দীতে বৌদ্ধদের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় বামিয়ান৷ কয়েক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুর বসবাস ছিল তখন এই উপত্যকায়৷
ভিক্ষুদের হাত ধরে পার্বত্য অঞ্চলটিতে তাদের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে৷ লাল বেলেপাথরের পাহাড়ের গায়ে গুহা তৈরি করে তারা বসবাস করতেন৷ এই পাথর দিয়েই গড়েন বুদ্ধের প্রকাণ্ড মূর্তি৷ চিনের বৌধ ভিক্ষু ও পরিব্রাজক সুয়েনজাং সপ্তম শতাব্দীতে এখানে এসেছিলেন৷ বামিয়ান উপত্যকার কথা তিনি লিখেছেন এভাবে, ‘‘কয়েক ডজন মন্দির আর হাজারো ভিক্ষুর বসবাস সেখানে৷ বুদ্ধের দণ্ডায়মান মূর্তি ৫০ মিটার উঁচু, যার থেকে সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়ে৷’’ সুয়েনজাং পরিচিত হিউয়েন সাঙ নামেও৷
সবচেয়ে উঁচু মূর্তিটি ছিল ৫৩ মিটার উঁচু দীপঙ্কর বুদ্ধের প্রতিভূ৷ ইতিহাসবিদদের মতে, এর নির্মাণশৈলীতে গ্রিকদের হেলেনিস্টিক বৈশিষ্টের সঙ্গে বৌদ্ধ শিল্পকলার মেলবন্ধন ঘটে৷ প্রায় এক হাজার খ্রিষ্টাব্দে বামিয়ান উপত্যকা মুসলিম শাসনের অধীনে আসে৷ তখনও বহাল তবিয়েতে ছিল মূর্তিগুলো৷ বিশ শতকেও জায়গাটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে টিঁকে ছিল৷ তবে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর বদলে যায় চিত্র৷ কৌশলগত গুরুত্বের কারণে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে আমেরিকার মদতপুষ্ট মুজাহিদিনদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় বামিয়ান উপত্যকা৷
বিভিন্ন শাসনকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য হিসেবে হাজার বছর টিঁকে থাকলেও ২০০১ সালের মার্চে তালিবানরা বামিয়ানের বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করে৷ কাবুলের জাতীয় জাদুঘরও তছনছ করে তারা৷ ধ্বংসের পরে ইউনেস্কো বামিয়ানকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷ সেখানে আবারও বৌদ্ধ মূর্তি গড়ে তোলার বেশ কয়েকটি প্রস্তাব উঠলেও, এখন পর্যন্ত তার কোনটি বাস্তবায়ন হয়নি৷