বিশেষ প্রতিবেদন: কাবুলসহ আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা তালিবানদের দখলে৷ দেশে তালিবানিরাজ কায়েম করেছে৷ তাসত্বেও এখনও এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে মানুষ এই ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা তুলছে। তার মধ্যে অন্যতম হল নর্দান অ্যালায়েন্সের প্রাক্তন কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের শক্ত ঘাঁটি পঞ্জশির উপত্যকা।
রাজধানী কাবুলের খুব কাছেই এই উপত্যকাটি৷ এখানে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের বসবাস৷ এলাকাটি এতটাই বিপজ্জনক যে, ১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তালিবানদের কব্জায় আসেনি এই উপত্যকাটি৷ শুধু তাই নয়, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীও এই এলাকায় শুধুমাত্র বিমান হামলা চালিয়েছে৷ তারা কখনও কোনও পদাদিক বাহিনী পাঠানোর সাহস দেখাতে পারেনি৷
মনে করা হচ্ছে আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ এই এলাকায় লুকিয়ে আছেন
আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহও এই এলাকার বাসিন্দা। রবিবার তিনি টুইট করে বলেন, আমি কোনও অবস্থাতেই তালিবান জঙ্গিদের কাছে মাথা নত করব না। আমি কখনই আমাদের নায়ক কমান্ডার, কিংবদন্তি এবং গাইডের আহমেদ শাহ মাসুদের চেতনা এবং উত্তরাধিকারকে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমার কথা শোনার লক্ষ লক্ষ মানুষকে আমি হতাশ করব না। আমি কখনই তালিবানদের সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকব না। কখনও না।
An anti-Taliban coalition seems to be forming, including Vice President @AmrullahSaleh2 and Ahmad Massoud, son of Ahmad Shah Massoud – they are in Panjsher, about three hours drive from Kabul #Afghanistan pic.twitter.com/EbuF1UXlNY
— Yalda Hakim (@SkyYaldaHakim) August 16, 2021
তালিবান আজ পর্যন্ত পঞ্জশির দখল করতে পারেনি
জুলাই মাসের শুরুতে যখন তালিবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে আক্রমণ শুরু করে, তখন তারা প্রতিরোধ ছাড়াই অনেক জায়গা জিতে নেয়। বলা হচ্ছে, আফগান ন্যাশনাল আর্মির সৈন্যদের মধ্যে খবর ছড়িয়েছিল যে, শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা তালিবানদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। যোগাযোগের অভাব এবং অস্ত্রের অভাবও সৈন্যদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল। এই কারণে আফগান সেনাবাহিনীর জওয়ানরা অনেক এলাকায় একটিও গুলি খরচ না করে তালিবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তবে, পঞ্জশির একমাত্র প্রদেশ যা এখনও তালিবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে৷
সোভিয়েত সেনাবাহিনীও ঢুকতে পারেনি
উত্তর-মধ্য আফগানিস্তানের এই উপত্যকাটি ১৯৭০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা ১৯৯০ এর দশকে তালিবানদের দখলে ছিল না। আহমদ শাহ মাসুদ৷ যাকে শের-ই-পঞ্জশির বলা হয়৷ তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি। এলাকার ভৌগোলিক কাঠামো এমন যে, কোন সেনাবাহিনী এই এলাকায় প্রবেশ করার সাহস দেখাতে পারে না। চারদিকে উঁচু পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই অঞ্চলের মাঝখানে সমতল ভূমি রয়েছে। সেখানকার গোলকধাঁধা সবার জন্য সহজ হয় না৷
আফগানদের নায়ক ছিলেন আহমেদ শাহ মাসুদ
১৯৯০ -এর দশকে তালিবানদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আহমেদ শাহ মাসুদ দারুণ প্রতিপত্তি অর্জন করেছিলেন। ভারতও তাদের সাহায্য করে আসছে। বলা হয়ে থাকে যে, একবার যখন তালিবানদের হামলায় আহমদ শাহ মাসুদ মারাত্মকভাবে আহত হন, তখন তাঁকে ভারত সরকার এয়ারলিফ্ট করে তাজিকিস্তানের ফারখোর এয়ারবেসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায়। এখানই ভারতের প্রথম বিদেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে৷ ভারত বিশেষ করে নর্দান অ্যালায়েন্সকে সাহায্য করার জন্য এই সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।