News Desk: এই প্রতিবেদন মূলত স্মৃতিকথা ভিত্তিক। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ত্রিপুরায় এসেছিলেন। ৫০ বছর (Bangladesh 50) আগে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু শরণার্থীর মতো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় এসেছিলেন কিশোরী অবস্থায়। ত্রিপুরা ছিল বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম ঘাঁটি। জীবন হাতে করে আগরতলা পৌঁছনোর দীর্ঘ যাত্রা কেমন ভয়ানক ছিল, সেটাই জানিয়েছেন।
সিমিন হোসেন রিমির (Simeen Hussein) পিতা তাজউদ্দিন আহমদ (first prime minister of Bangladesh Tajuddin)। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুন করা হয়। সেই সামরিক অভ্যুত্থানে তাজউদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুজিব সহযোগী তাজউদ্দিন সহ চার শীর্ষ নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে গুলি করে খুন করা হয়। ভয়াবহ মুহূর্তগুলো জীবন স্মৃতিতে দগদগে হয়ে আছে সিমিন হোসেনের।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের সেই পরিস্থিতি আমরা তুলে ধরলাম।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতের পর থেকে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকার এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের বাড়ি দরদরিয়া পৌঁছাই আমরা। চারিদিকে অগুন্তি লাশ। পচে যাওয়া দেহ কাক কুকুরে খাচ্ছিল। ভয়াবহ পরিস্থিতি। গ্রামের বাড়িতেও হামলার ঠিক আগের মুহূর্তে গভীর রাতে নদী পথে অনির্দিষ্ট যাত্রা শুরু হলো।
তিনি লিখেছেন, তারপর কত এলাকা, কতপথ ঘুরে কুমিল্লা হয়ে শরণার্থী আমরা ভারত সীমান্ত পার করি। আগরতলার বক্সনগর দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলাম। পথে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কা। পাক সেনার মুখোমুখি হবার প্রবল ভয় নিয়ে পচা লাশে ঢেকে থাকা বাংলাদেশের জমি ছেড়ে ঢুকলাম ইন্ডিয়াতে। পুরো সীমান্ত জুড়ে তখন হাজার হাজার শরণার্থী। সেই শরণার্থী স্রোতের সাথে সীমান্ত ধরে ২৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সীমান্ত ঘেঁষা ত্রিপুরার সোনামুড়ায় পৌঁছাই। সেই সময় সোনামুড়ার মহকুমা প্রশাসক ছিলেন হিমাংশু মোহন চৌধুরী।
স্মৃতিতে সিমিন হোসেন লিখেছেন, সোনামুড়ার যে টিলার ওপর হিমাংশু মোহন চৌধুরী যে বাড়িতে থাকতেন, সেই সরকারি বাড়িটি এখনও একই রকম আছে। শুধু বাড়ির পাশে দেয়াল হয়েছে।
পঞ্চাশ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গিয়ে সিমিন হোসেন রিমি লিখেছেন, সেই সবুজ ঘাসের উঠান, টিনের চালা ঘর। আমরা ৪ ভাইবোন চার জায়গায় আছি। আম্মা নেই। আজ আমি যখন ঘরের ভেতর ঢুকলাম, আমি তখন ছোট বেলার আমি। আমি অবাক হয়ে দেখছি আশপাশ। আমি আমার পঞ্চাশ ছয় মাস বছর আগের স্মৃতিকে স্পর্শ করলাম ৯ ডিসেম্বর ২০২১সালের বৃহস্পতিবার। মনে মনে বলছিলাম চোখ তুমি ভিজে যেওনা। কিন্তু গড়িয়ে পরতে থাকল আনন্দ বেদনার মিলিত অশ্রু।
ত্রিপুরা স্টেট মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে একটি কক্ষ আছে। সংরক্ষিত ছবি, খবরের কাগজ ইত্যাদি দেখছিলাম আর পড়ছিলাম গভীর মনোযোগে। যে দিন (১৫ অক্টোবর ১৯৭১) প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন, তাঁদের হাতের লেখা দেখলাম। জাদুঘরে ছবি তোলা নিষেধ। কিউরেটর অভিভূত হলেন পরিচয় জেনে। শুধু বাংলাদেশের ওই অংশের ছবি তুলতে দিলেন।
বাবা ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর বিপ্নবী সাথী। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পকিবারকে যে অপশক্তি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে, তারাই আমার বাবাকে বন্দি করে খুন করেছে। তবুও তারা সফল নয়। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী অটুট থাকবেই।
<
p style=”text-align: justify;”>(আগরতলার সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার ও সিমিন হোসেন রিমির স্মৃতিকথা তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।)