সৌরভ সেন: ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের ৫০ বছর। আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরও পাঁচ দশক (Bangladesh 50)। সেইসব দিনরাত্রি এখনও যেন মনে হয় এই তো গতকাল ঘটে গেল!
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। কলকাতা তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের ভিড়ে ছয়লাপ। রাজনৈতিক ঘনঘটা প্রবল। পূর্ব পাকিস্তান রক্তাক্ত। আর পশ্চিমবঙ্গে চলছিল তীব্র রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাত। কংগ্রেস ও বামপন্থীদের রাজনৈতিক লড়াই।অতিবামপন্থীদের সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
আসি ৩ ডিসেম্বরের কথায়। পাকিস্তান বিমান বাহিনী হামলা শুরু করেছিল পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে। পরপর বোমা ফেলল আগ্রা, আম্বালা, যোধপুরে। আর পূর্বদিকে আগরতলায় বোমা পড়ল।
ইন্দিরা গান্ধী তখন কলকাতায়। খবর পেয়েই দ্রুত ফিরলেন রাজধানী। তখন ই এম বাইপাস চিন্তার বাইরে। ভিআইপি-দের যাতায়াতের রুট বলতে ভিআইপি রোড- কাঁকুড়গাছি – মানিকতলা – বিবেকানন্দ রোড- গিরিশ পার্ক -সেন্ট্রাল (চিত্তরঞ্জন) অ্যাভিনিউ- এসপ্ল্যানেড-রাজভবন।
সন্ধের দিকে আচমকা রটে গেল—কর্মসূচি বাতিল করে ইন্দিরা ফিরে যাচ্ছেন। গলির মোড়ে- বিবেকানন্দ রোডে আমি, দিদি, পাড়ার বন্ধুবান্ধব, সঙ্গে বড়রাও দাঁড়িয়ে গেলাম। একটি বড় জিপ, পিছনটা খোলা, সেখানে চেয়ারে বসে থমথমে মুখে একটা কাগজ পড়ছেন তিনি। মুখে আপতিত আলো। যাত্রা-অভিমুখের উল্টো দিক করে বসে। একদম একা। গভীর অভিনিবেশে কাগজ পড়তে-পড়তে চলে গেলেন। অভ্যাসমতো কোনও হাত নাড়া ইত্যাদি নয়। তাঁর সেই থমথমে রাঙা মুখখানি আজও চোখে ভাসছে।
তখন ওই কম বয়সে বুঝিনি, পরে সম্যক বুঝেছি যে ওই মুখ ছিল নিজের চিন্তা, নিজের বোধ-কে মথিত করে এক কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখ, ওই মুখে ছিল বিশ্ব-রাজনীতিতে এক চিরস্মরণীয় পদক্ষেপের প্রস্তুতি।
পঞ্চাশটা বছর পেরিয়ে এলাম!
(১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হামলার পরে ভারত শুরু করেছিল প্রত্যাঘাত। কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধী। সে এক ঐতিহাসিক মহূর্ত। )