প্রসেনজিৎ চৌধুরী: উত্তাল ষাটের দশক। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তান সরকারের দমননীতি ও সামরিক আইনের প্রতিবাদে গণঅভ্যুত্থানে সামিল হয়েছেন। কাঁপছিল পাকভূমি। আর ভারত কাঁপছিল বিশ্বজোড়া আলোড়িত ভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে বামপন্থীদের স্লোগানে- ‘তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম’। কলকাতার রাজপথে জনতরঙ্গ। ভিয়েতনামে চলছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ। কমিউনিস্ট গেরিলা বাহিনীর হামলায় জমি হারাচ্ছিল মার্কিন সেনা।
কলকাতার জনকল্লোল থেকে কি ঢাকা মুখ ঘুরিয়ে রাখতে পারে? স্বাভাবিকভাবেই নয়। ফলে ভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের স্লোগান পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে পদ্মা-মেঘনা তীরে গণ আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সেই স্লোগানই ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণঅভ্যুত্থানের অংশ হয়ে গেল অচিরেই। এই কাজটি করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঘোষণা করলেন ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’ অচিরেই মুখে মুখে জন্ম নিল ‘বাংলাদেশ’।
বঙ্গবন্ধুর তৈরি স্লোগান পূর্ব পাকিস্তানের জমিতে পাক সরকার বিরোধী আন্দোলনের মূল স্লোগান হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর যুক্তবাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় ‘বাংলাদেশ’ নামটি চূড়ান্ত করেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। দিনটি ‘বাংলাদেশ দিবস’ বা ‘বাংলাদেশের নামকরণের দিবস’ হিসেবেই পালিত হয়।
সোহরাওয়ার্দীর ওই স্মরণসভায় বাংলাদেশ নাম দেওয়ার কারণ হিসেবে পরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে -বাংলা। স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে-দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়।
১৯৬৯ সালের পাঁচ ডিসেম্বরের পর মৌখিকভাবে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের নাম হয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে কাগজে-কলমে পূর্ব পাকিস্তান লিখলেও মুখে সবাই এই অঞ্চলকে বাংলাদেশই বলতেন।
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘‘বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু জানান, দেশ স্বাধীনের পর নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হবে। এমনকী তিনি সেদিন স্লোগানও দিয়েছিলেন ‘আমার দেশ, তোমার দেশ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধু কখনও পূর্ব পাকিস্তান বলতেন না, তিনি সবসময় পূর্ব বাংলা বলতেন।’
১৯৫২ সালে ভাষার অধিকারের জন্য রক্তাক্ত গণআন্দোলনেের ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা। ১৯৫৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান নামের প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেছিলেন, পূর্ব বাংলা নামের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। যদি পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতেই হয়, তাহলে বাংলার মানুষের জনমত যাচাই করতে হবে। তারা নামের এই পরিবর্তন মেনে নিবে কিন সেজন্য গণভোট করতে হবে।