পঞ্চাশ বছর আগে এক ঐতিহাসিক বিমান যাত্রার সাক্ষী ছিলেন ইংল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি। বাংলাদেশের (Bangladesh 50) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডন থেকে নয়াদিল্লি এসেছিলেন।
ইংল্যান্ড সরকারের বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুর সেই ১৩ ঘণ্টার সফর ছিল চরম কৌতূহলজনক। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির মুজিবুর রহমান দিল্লিতে আসেন। তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় ভারত সরকার।
একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই পাকিস্তান সরকার বন্দি করেছিল বঙ্গবন্ধুকে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয় পাক সরকার।
সেই ঐতিহাসিক বিমান যাত্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে রবীন্দ্রনাথ রচিত “আমার সোনার বাংলা…”।
ভারতের ততকালীন রাষ্ট্রদূত শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জির স্মৃতিকথা:
“ফ্লাইটে নানা কথার মধ্যে হঠাৎ বঙ্গবন্ধু বললেন, ব্যানার্জি তুমি গান গাইতে জানো? অবাক হয়ে বললাম, আমি তো গানের গ-ও জানি না। তিনি বললেন, আরে তাতে কী! তুমি আমার সঙ্গে ধরো। বলেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। বেশ পেছনে বসা ড. কামাল হোসেনদেরও দাঁড়াতে বললেন এবং তার সঙ্গে গান ধরতে বললেন। তিনি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ খুব দরদ দিয়ে গাইতে থাকলেন আর তখন তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকল। একজন মহান নেতার গভীর দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি পরম ভালোবাসা আমাকে আবার মুগ্ধ করল। গান গেয়ে তিনি যখন বসলেন, তখন আমি আমার কূটনৈতিক প্রথা ভেঙে একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু, আপনাকে আমি প্রণাম করতে পারি? তিনি কিছু বলার আগেই আমি তার চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করলাম।’ কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, এটি হবে আমার স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত।”