নিউজ ডেস্ক: সন্ত্রাসবাদ রুখতে একদিন কুয়াশা ঢেকে থাকা অরণ্যের মাঝে গুলির ঝড় তুলেছিল রয়াল ভুটান আর্মি। ভারত বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির তখন ছেড়ে দে কেঁদে বাঁচি অবস্থা। এমনই ভুটান কিন্তু অদৃশ্য ঘাতক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ চালাচ্ছে। ফলাফল চমকে দেওয়ার মতো। গত ১ বছর চার মাসের মধ্যে মৃত ১ জন!
পশ্চিমবঙ্গের পাশের এই দেশ আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি জেলার সীমান্ত দিয়ে ঘেরা প্রতিবেশি ভুটান (ড্রাগনভূমি)। উত্তরবঙ্গ যখন করোনা সংক্রমণে জর্জরিত তখন এই এলাকা লাগোয়া বিদেশে চলছে করোনা বিরোধী মারাত্মক লড়াই।
রাজ্যের তিনটি জেলার লাগোয়া দক্ষিণ ভুটানের অন্তত ছটি জেলায় যখনই সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে তখনই দেশটির সরকার জারি করেছে এলাকাভিত্তিক লকডাউন। ভুটান স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট (৯.৭.২১) বলছে ২ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত, ১,৯০০ জনের বেশি সুস্থ হয়েছেন। মৃত ১ জন।
আসছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। সতর্ক সব দেশ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আশঙ্কিত। পশ্চিমবঙ্গের আগামী করোনা পরিস্থিতি কী হবে তাও চিন্তার। আর একের পর এক সব সীমান্ত ফটক বন্ধ করে বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুটান অসম এক লড়াইয়ে মত্ত।
ড্রাগন ফটকগুলি বন্ধ হলেও দেশটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ১৮৩ কিলোমিটারের সীমান্তের বেশিরভাগই খোলা। ১৯৪৯ সালে জওহরলাল নেহরুর অবিস্মরণীয় ভুটান সফরের পর ভারতের সঙ্গে ‘মৈত্রী চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছিল ভুটান। সেই চুক্তির বলে দুই দেশের জনগণ ভিসা ছাড়া যাতায়াত করতে পারেন। জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা এই সীমান্ত সংলগ্ন দুই দেশের গ্রামগুলিতে কড়া নজর রেখে চলেছে ভুটান সরকার। শ’য়ে শ’য়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মোতায়েন করা হয়েছে।
ভুটানের এই করোনা যোদ্ধাদের নাম অরেঞ্জ ফাইটার্স। ভুটানে পরিচিত ডি সুং (ডি সুপ) নামে। মূলত বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সীমিত পরিকাঠামো দিয়ে অতি আধুনিক মানের এই বাহিনির (কমলা যোদ্ধা) কর্মকুশলতায় চমকে গিয়েছে হু। দুর্গম এলাকার কোনও অংশই বাকি নেই তাদের নজরদারি থেকে। এলাকাভিত্তিক গণস্বাস্থ্য কর্মসূচির বিরাট প্রয়োগ করছে অনুন্নত দেশের তালিকায় থাকা ভুটান।
ফল মিলছে হাতে হাতে। কড়া বাঁধুনিতে মোড়া দেশটি এখন করোনা বিরোধী লড়াইয়ে বিশ্বের কাছে চমক। এই চমকের আরও বাকি আছে। ভুটানের লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে ভুটানকে সভাপতির পদে বসিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অ্যাসেম্বলি (WHA)। এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় হু। সদস্য দেশগুলি একযোগে সমর্থন করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভুল উচ্চারণে ব্যাঙ্গ করে ‘বাটন’ বা বোতামের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন পূর্বতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই ভুটানকে WHA সভাপতি পদে মেনে নিতে হয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই।
নিষিদ্ধ দেশ ঠিক নয়। তবে নিজেকে রহস্যের ঘেরাটোপে রেখে চমকে দেওয়া ভুটান কিন্তু এমনই। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডা লোটে শেরিং বাংলা ভালোই বোঝেন ও বলেন। তাঁর সূক্ষ্ণ বৈজ্ঞানিক নজরে থাকছে এই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। তাঁর নির্দেশে রোজকার তথ্য বিশ্লেষণে হচ্ছে পরের দিনের পরিকল্পনা। করোনা বিরোধী লড়াইয়ে রোজই দুর্গ রক্ষায় কোমরবেঁধে নেমে পড়ছেন ভুটানিরা।