প্রসেনজিৎ চৌধুরী: যে ড্রাগন সেনা একসঙ্গে সাতটি ভারত বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি দুরমুশ করেছিল তারা নারী সেনার অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়ে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ভুটানি সেনার সর্বাধিনায়ক রাজা জিগমে খেসর নামগিয়াল ওয়াংচুক সেনাবাহিনির অভিবাদন নিতে গিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নারী সেনার ভূমিকা তুলে ধরেন। জমকালো পাসিং আউট প্যারেডের ছবি প্রকাশ করেছে থিম্পুর সংবাদমাধ্যম।
ভুটানি সংবাদ সংস্থা BBS জানাচ্ছে, ওয়াংদিফোডরং-এর তেনচোলিং মিলিটারি ট্রেনিং ক্যাম্পে সেনাবাহিনির কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন সর্বাধিনায়ক রাজা জিগমে খেসর নামগিয়াল ওয়াংচুক। অনুষ্ঠানে ছিলেন রানি জেতসুন পেমা, দুই যুবরাজ সহ সেনা কর্মকর্তারা।
রয়াল ভুটান আর্মির ৭৭ তম ব্যাচে ১৫১ জন নারী ও ১৫০ জন পুরুষ সেনা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সবাইকে দ্রুত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হবে। ঐতিহাসিকভাবে এটাই ভুটানের রাজকীয় সেনা বাহিনিতে প্রথম মহিলা অন্তর্ভুক্তি।
রয়াল ভুটান আর্মির দখলে রয়েছে ঐতিহাসিক ‘অপারেশন অল ক্লিয়ার’ (২০০২-২০০৩) জঙ্গি দমন অভিযানের সফল তকমা। এটি এমন এক জঙ্গি দমন অভিযান যেটি দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ দমনে অতি উল্লেখযোগ্য হয়ে রয়েছে। সেই অভিযানে তৎকালীন ভুটান রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুকের কড়া নির্দেশের পর ভারত সরকারের বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শিবিরগুলি ভেঙে দিয়েছিল রয়াল ভুটান আর্মি। দু’দশক আগে ভারত সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গল এলাকায় সেই অভিযানের অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান রাজা জিগমে খেসর।
আলফা (ULFA) , এনডিএফবি (NDFB) , কেএলও (KLO), এনএসসিএন (NSCN), এনএলএফটি (NLFT) মতো আগ্রাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির নেতৃত্ব ভুটানি সেনার তাড়া খেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বহু জঙ্গির মৃত্যু হয়। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র। সেই অভিযানের পর থেকেই আত্মগোপনে উত্তরবঙ্গে নাশকতা ঘটানো কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। সম্প্রতি তার হুমকি বার্তা পরপর আসছে। উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় দ্বিতীয়বারের জন্য জঙ্গি তালিবান সরকার এসেছে। বিশ্বজোড়া উদ্বেগ। গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির আশঙ্কা, তালিবান সরকারের শরিক হাক্কানি নেটওয়ার্ক গোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের নাশকতার জাল ছড়াবে। নেপাল থেকেই তাদের এজেন্টরা ফের উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতে
সক্রিয় হচ্ছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। আফগানিস্তানের টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝে ভুটান সরকার তাদের সেনাবাহিনিতে নজিরবিহীনভাবে নারী সেনার অন্তর্ভুক্তি ঘটাল।
আফগানিস্তানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের শক্তিশালী চক্র নেপাল থেকে উত্তরবঙ্গে ফের সক্রিয় হতে মরিয়া হচ্ছে। নেপাল ও ভুটানের সীমান্তবর্তী উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলা দার্জিলিং, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ারের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের খোলা সীমান্ত। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সুযোগ নিয়ে হাক্কানি নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠিগুলোর সঙ্গে সংযোগ মজবুত করবে ফের।
ভুটানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। ১৯৪৯ সালের মৈত্রী চুক্তি অনুসারে ভুটানের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনা অবস্থান করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্তে মোতায়েন থাকে রয়াল ভুটান আর্মি। চিনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্তে একসঙ্গে মোতায়েন থাকে ভারতীয় ও ভুটানি সেনা।