ঘরবন্দি খালেদা জিয়া, বেগম-বিহীন ‘৪৩’ এর বিএনপি ছন্নছাড়া

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বাংলাদেশ (Bangladesh) জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল কোনটি? ধাঁধার প্রশ্ন। উত্তরটা মজার। বিএনপি বিরোধী দল আবার নয় ! দলটি ৪৩ বছরে পা রেখে…

Khaleda Zia

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বাংলাদেশ (Bangladesh) জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল কোনটি? ধাঁধার প্রশ্ন। উত্তরটা মজার। বিএনপি বিরোধী দল আবার নয় ! দলটি ৪৩ বছরে পা রেখে এই ধাঁধা গোলকে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধ সামনে রেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই দল গঠন করেন।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনা অভ্যুত্থানে খুন করা হয় ১৯৭৫ সালে। এর পরেই ততকালীন অন্যতম সেনাকর্তা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। চূড়ান্ত অরাজকতা তখন ঢাকায়। রাষ্ট্রপতি ভবন অর্থাৎ বঙ্গভবন ঘিরে যুযুধান দুই সেনা পক্ষের ট্যাংক ঘিরে রেখেছিল। তেমনই পরিস্থিতে ক্ষমতার শীর্ষে চলে যান জিয়াউর রহমান।

সেই বিখ্যাত ধাঁধা!
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন আওয়ামী লীগ জোয়ার। আর জাতীয় সংসদের বিরোধী আসনে নেই একসময়ের ক্ষমতাধর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)। ভোটে বিলীন হয়ে গিয়েছে দলটি। টায়টোয় ৬টি আসন! তবে যে কোনও মুহূর্তে রাজপথ দখল করে নিতে পারে বা নেয় বাংলাদেশের এই দলটি। বাংলাদেশের জনগণ জানেন বিরোধী দল বিএনপি। আর সরকারি হিসেবে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী দল হয়েছে একদা সামরিক শাসক প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।

দ্বিতীয় ধাঁধা, বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রী কে? একশ জনের মধ্যে নিরানব্বই জন বাংলাদেশি বা বিদেশি যারা বাংলাদেশের খবর রাখেন-এক ঝটকায় বলে দেবেন খালেদা জিয়ার (Khaleda Zia) নাম। আদৌ তা নয়। দেশটিতে প্রায় অস্তিত্বহীন ‘জাপা’ দলের (রংপুর বাদে) নেত্রী রওশন এরশাদ বিরোধী নেত্রী। তিনি প্রয়াত এরশাদের স্ত্রী।

দুটি ধাঁধাতেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের চরিত্র। পরপর তিনবার জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত তিনটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথম দুটি নির্বাচনে ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে ভোট বয়কট করেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া। জোট শরিক জামাত ইসলামিকে পাশে নিয়ে হিংসাত্মক জ্বালাও-পোড়াও নীতি নিয়েছিল বিএনপি। শতাধিক মৃত্যু হয়। বিএনপির উগ্র আন্দোলন দলটিতে রাজনৈতিকভাবে জনবিমুখ করে তেমনই দলটির কট্টরপন্থী সমর্থকরা আরও সংঘবদ্ধ হয়। তবে দলের অভ্যন্তরে খালেদা জিয়া ভোট বয়কট প্রশ্নে বিদ্ধ হন।

বিএনপির এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের তকমা পায় এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি। কুর্সিতে থাকা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নরম সম্পর্কের খাতিরে বিরোধী দল হয়েও ‘জাপা’ এখন সরকারি দলের বর্ধিত অংশ বলেই বিবেচিত। এই অবস্থায় বিএনপি সংসদে প্রায় না থেকেও বাংলাদেশের রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত।

১৯৮১ সালের ৩০ মে ফের সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খুন হন। তাঁর সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া আসেন নেতৃত্বে। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। এর পরেই হয় তাদের বিপর্যয়ের শুরু। আওয়ামী লীগের দ্রুত উত্থান। ফের কুর্সিতে বসেন শেখ হাসিনা। টানা হাসিনা শাসনে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ।

তবে বিএনপি দলনেত্রী খালেদা জিয়া যিনি দলের অভ্যন্তরে ম্যাডাম ও বাংলাদেশের সর্বত্র বেগম জিয়া নামে সুপরিচিত তিনি রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সাথে দুর্নীতির মামলায় জর্জরিত হতে থাকেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা দায়ের করে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল সোসাইটির আর্থিক দুর্নীতির মামলায় জেলে যান খালেদা জিয়া। অসুস্থতার কারণে তিনি এখন ঘরবন্দি। দেশ ছেড়ে বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এই অবস্থায় বিএনপি দিশেহারা। আন্দোলনের ডাক দিলে হাজার হাজার সমর্থক রাজপথে জড় হন। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে ঘাটতি।

এক যুগের দেশ শাসন, টানা এক যুগেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে। দুই দফা আন্দোলনে ব্যর্থতা, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব এবং দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা। এমন বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠার ৪৩তম বছরে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতা এবং দু বার বিরোধী দলে থাকা বিএনপির ভবিষ্যৎ ঘরবন্দি বেগমের নির্দেশে চলে। তবে ক্ষয় হচ্ছে দ্রুত।