মমতার দাবি BJP গণতন্ত্রের তোয়াক্কা করে না, পঞ্চায়েত ভোট টেনে কটাক্ষ শুরু

News desk: ত্রিপুরার পুর ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক হামলার জেরে বিতর্ক চরমে। এই নিয়ে বিজেপিকে গণতন্ত্রের বার্তা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি যাওয়ার…

mamata banerjee in delhi

News desk: ত্রিপুরার পুর ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক হামলার জেরে বিতর্ক চরমে। এই নিয়ে বিজেপিকে গণতন্ত্রের বার্তা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি যাওয়ার আগে বিজেপিকে তোপ মমতার, বললেন এই দল গণতন্ত্রের তোয়াক্কা করে না।

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল টিএমসি যাদের বিরুদ্ধেই পঞ্চায়েত ভোট লুঠ ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে সেই দলের সুপ্রিমো মমতার মুখে গণতন্ত্র বুলি নিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়েছে। ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএমের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে কতটুকু গণতন্ত্র অবশিষ্ট রেখেছেন।

সেই রেশ টেনে বঙ্গ বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে ৩৪ শতাংশ জোর করে দখল করেছে টিএমসি। একই কায়দায় ত্রিপুরায় বিজেপি ভোট লুঠ করছে।গণতন্ত্রের কথা দুটি দলের সঙ্গে খাপ খায়না।

Mamata Banerjee

ত্রিপুরায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে সোমবার দুপুরে কলকাতা (kolkata)থেকে দিল্লি(delhi) গেলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। কলকাতা বিমানবন্দরে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। মমতা এদিন ত্রিপুরা প্রসঙ্গেই বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, সায়নী ঘোষের মতো একজন শিল্পীর বিরুদ্ধেও খুনের চেষ্টার মামলা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে বিজেপির (bjp)লোকজন পুলিশের সামনেই হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কেউই এসব বিষয় দেখতে পাচ্ছে না। আসলে বিজেপি গণতন্ত্রের তোয়াক্কাই করে না

মমতা বলেন, আসলে বিজেপি মানুষকে ভয় পাচ্ছে। ওরা মানুষকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভোটের নামে ওখানে ঘোট করছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের সময় আমাদের রাজ্য তো অনেক বিজেপি নেতা ঘুরে গিয়েছেন। কই আমরা তো কাউকে বাধা দিইনি। ত্রিপুরার ঘটনা গণতন্ত্রের কলঙ্ক।

মমতা আরও বলেন, ত্রিপুরায় শুধু যে তাঁর দলের নেতাদের আক্রমণ করা হচ্ছে তা নয়। সংবাদমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অবশ্য এটা সাধারণ ঘটনা। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার বর্তমান অবস্থা অগ্নিগর্ভ। সেখানে কোনও মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর এটা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় দিল্লি সফর। সাধারণত সংসদের অধিবেশনের শুরুতে বা অধিবেশন চলাকালীন প্রতিবারই দিল্লি আসেন মমতা। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর গোটা দেশের রাজনীতিতে তৃণমূল নেত্রীর গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। তাই মমতার এই দিল্লি সফরে নজর রয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহলের। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেবুধবার মোদির মুখোমুখি হবেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে জানিয়েছেন, বিএসএফের এলাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আগেই চিঠি দিয়েছেন। দিল্লিতেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন আর্থিক দাবিদাওয়াগুলি অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী।

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মত লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের ঘাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার বোঝা চেপেছে। এই আর্থিক দায় সামলাতেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের বকেয়া পাওনাগন্ডা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে চলেছেন। করোনাজনিত কারণে এমনিতেই রাজ্যের আর্থিক হাল খুবই খারাপ। তার ওপর নতুন করে সরকারের ঘাড়ে আরও আর্থিক বোঝা চেপেছে। দেশের ২৩টি রাজ্য পেট্রোল, ডিজেলে ভ্যাট কমালেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা পরিষ্কার জানিয়েছেন, বাংলায় ভ্যাট কমবে না।

রাজ্য যে প্রবল আর্থিক সংকটে ভুগছে তার প্রমাণ মিলেছে মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক ঘোষণায়। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন দফতরের বাজেটে কাটছাঁট করেছেন। বাজেট বরাদ্দের পরেও বিভিন্ন দফতরের টাকা খরচের উপর একাধিক বিধিনিষেধ জারি করেছেন। অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়া কোনও দফতরই টাকা খরচ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে অর্থ দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। তাই প্রতিটি দফতরকে সর্বদাই টাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আয়ের বিষয়টি সুনিশ্চিত না করেই মুখ্যমন্ত্রীর লাগামছাড়াভাবে অর্থ খরচ করার কথা বলে নিজের জালে নিজেই জড়িয়েছেন। এই মুহূর্তে তাই তাঁকে কেন্দ্রের কাছে অর্থের জন্য দরবার করতে হচ্ছে।

চলতি সফরে মমতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও দেখা করবেন। ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে বিরোধীদের রণকৌশল তৈরি নিয়েও আলোচনা করবেন তিনি। তাই সবদিক দিয়েই মমতার দিল্লি সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহলের কাছে।