নিউজ ডেস্ক, কলকাতা: Travel- ঐতিহ্যমন্ডিত জনপদ সুখচর। ভাগীরথীর পূর্বতীরে উত্তর ২৪ পরগণার অন্তর্গত বারাকপুর মহকুমার অধীন খড়দহ থানার প্রেক্ষাপটে সুখচর এক অতি প্রাচীন জনপদ। এই জনপদটি পানিহাটী পৌরপ্রতিষ্ঠানের অর্ন্তভুক্ত। উত্তর প্রান্তে সুখচর মৌজার কিছু অংশ খড়দহ পৌরসভারও অন্তর্গত। কলকাতা থেকে প্রায় ১৪ কিমি উত্তরে সোদপুর স্টেশনে বা খড়দহ স্টেশনে নেমে এই গ্রামে আসার অটোর ব্যবস্থা আছে।
সোদপুর স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে অটো স্ট্যান্ড রয়েছে। সুখচর বাজারপাড়া অটো ধরে রাজা রোড দিয়ে বাজারপাড়া গঙ্গা সংলগ্ন বাজারপাড়া ঘাটের নিকট স্টপেজ। অপর রুটটি সুখচর সন্মিলনী অটো ধরে গির্জার রাস্তা দিয়ে সন্মিলনী স্টপেজ। সুখচর একসময় এক প্রসিদ্ধ জনপদ ছিল। সুখচরের ঐতিহ্যের ধারা আজও বর্তমান।
সকাল সকাল বেরিয়ে শিয়ালদহগামী যেকোনো ট্রেনে চেপে সোদপুর ষ্টেশনে নেমে সুখচরগামী অটো অথবা টোটোতে চলে আসুন সুখচর এ।
সুখচরে যেসব স্থানগুলি দেখবেন সেইগুলি হল-
ভবাপাগলার আশ্রম । এর পাশে রয়েছে সুখচরের প্রসিদ্ধ ভগ্নপ্রায় টেরাকোটার শিবমন্দিরত্রয়। ভবাপাগলা আশ্রমের পাশে রয়েছে ক্যাম্পের ঘাট। এরপর চলে আসুন কাঠিয়াবাবার আশ্রমের দিকে। তাঁর আগে দেখে নিন ভোলানন্দ মঠ। পাশে রয়েছে অর্ধনারীশ্বর মন্দির (২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুখচরের পঞ্চাননতলায় প্রায় হাজার বছরের পুরনো একটি অর্ধনারীশ্বর মূর্তি খুঁজে পাওয়া যায়।)
কাঠিয়াবাবা আশ্রমের পাশে রয়েছে বিহারী পাইনদের ঠাকুরবাড়ি । ঠাকুরবাড়ির পাশে রয়েছে রাসমঞ্চ। বাড়িতে রয়েছে পাইনদের প্রতিষ্ঠিত “রাধাকৃষ্ণ”। দোল উৎসব,রাস উৎসব পালিত হয়ে ধূমধাম করে।
পাইনদের বাড়িতে পরিবারের বসতি থাকায় ও এই বাড়িটি মূলত সিনেমা-সিরিয়াল এর শুটিং এর কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় প্রবেশে অনুমতির প্রয়োজন। এই বাড়িটি “শুটিং বাড়ি” নামেও পরিচিত।
এরপর চলে যান বালক ব্রহ্মচারীর আশ্রম থেকে। এখানে দর্শন করে চলে আসুন মা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির ও তুঁতেশ্বর শিব মন্দির। এর পাশে রয়েছে রাধাকান্ত মন্দির। রয়েছে শতবছরের শশধর পাঠাগার।
এরপর চলে আসুন বাজারপাড়া ঘাট এ। দেখবেন রয়েছে রাজা রাধাকৃষ্ণদেব বাহাদুরের কাছাড়ি বাড়ির ভগ্নপ্রায় অংশ প্রবেশদ্বার।
দেখা হয়ে গেলে চলে আসুন কালীব্রহ্ম মন্দির ( নূতন কালী মন্দির ) ও এর পাশে রয়েছে হরিদাস সাঁতরা ঘাট।
আগের পানিহাটি পর্বে বারোমন্দির ঘাট এর কথা বলেছিলাম। এটিও সুখচরের মধ্যে পড়ে। হাতে সময় থাকলে টোটো ধরে চলে আসুন বারোমন্দির ঘাট। এর পাশে রয়েছে বিপাশনা কেন্দ্র । বসুমল্লিকদের সাহেব বাগান ও সাহেব কুঠি (ভগ্নপ্রায়)। এর পাশে রয়েছে মহেন্দ্রনাথ বাবুর ঠাকুর বাড়ি। মহেন্দ্রবাবুর ঠাকুরবাড়ি ও ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
এর পাশে রয়েছে নীহারিকা ঘাট। নীহারিকা ঘাট সংলগ্ন ঐতিহাসিক হেরিটেজ হাইজ “”নীহারিকা” ।বর্তমানে এটি গেস্ট হাউস হিসাবে ব্যবহৃত হয় । “নীহারিকা” নামটির বদলে “Nihar on the Ganges” নামে সকলের কাছে নতুনভাবে উন্মোচিত হয়েছে।
এবার আসি কয়েকটি বিশেষ কথা নিয়ে-
১। যেহেতু বেশিরভাগই মন্দির রয়েছে এই ভ্রমণে তাই সকাল সকাল পৌঁছে যেতে হবে। নাহলে ১২টার মধ্যে মন্দিরগুলির দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে।
২। দুপুরের প্রসাদের জন্য আমি বিশেষভাবে কোনও মন্দির বা আশ্রমকে উল্লেখ করিনি। যে যেমন আহার করবেন সেইটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। তাও কয়েকটি ফোন নাম্বার নীচে দিয়ে দেবো যদি প্রয়োজন হয়,
ক। ভবার মহা শক্তির আশ্রয়। স্বামী সোমেশানন্দ গিরি।৯৪৩২৬ ৬৯০৮৪/ ৮৭৭৭৮ ৭৭২৬৭
খ।কাঠিয়াবাবা আশ্রম- ৯৪৩৩১১০০৬০/০৩৩-২৫৬৩-২০১৭
গ।সুখচর বালক ব্রহ্মচারী আশ্রম- ৯৩৩১৮৯০৫৮১
ঘ। সাই মন্দির সুখচর-৭২৭৮৬০৩৮৪৮
ঙ। শ্যামসুন্দর জীউ মন্দির খড়দহ-৯৫৪৭৩৬১৫১৫/৯০৫১৬৭০২৪৫
৩। আপনি দুপুরের প্রসাদ খড়দহের শ্যামের মন্দিরেও করতে পারেন। বিকেলে খড়দহের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরে বাড়ি ফিরতে পারেন।
খড়দহ নিয়ে আমার পরের পর্বে লেখা থাকবে ওখানে কি কি ঘুরবেন ইত্যাদি বিষয়ে।
৪। আপনারা হাওড়া/ হুগলী দিয়ে আসলে কোননগর স্টেশনে নামতে হবে। কোননগর ফেরীঘাট পেরিয়ে পানিহাটি থেকে একটা রিসার্ভ টোটো করে নিতে পারেন। প্রথমে বারোমন্দির থেকে শুরু করে শেষ করুন ভবাপাগলার আশ্রম (ক্যাম্পের ঘাট) অথবা সাইমন্দিরে।
৫। বিটি রোড ধরে এলে সুখচর গির্জায় এ নেমে টোটো/ রিকশায় চলে আসুন ভবা পাগলার আশ্রম। এখান থেকে শুরু করে বারোমন্দিরে শেষ করতে পারেন।
৬। পায়ে হেঁটে এত রাস্তা দেখতে অসুবিধা হতে পারে। তাই একটা রিসার্ভ টোটো করে নিতে পারেন।
৭।আপনি দুপুরের প্রসাদ পানিহাটির রাঘব ভবন অথবা ইস্কন মন্দিরেও করতে পারেন। বিকেলে পানিহাটির দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরে বাড়ি ফিরতে পারেন।(আগের পর্বে উল্লেখ করেছি। যারা পড়েননি গিয়ে পড়ে নিতে পারেন।)
৮। সুখচর সাই মন্দির অবস্থিত সুখচর গির্জা বাস স্টপেজের সামনে। দেখতে পাবেন জি টি এস টাওয়ার।
৯। করোনা পরিস্থিতে কিছু মঠ/আশ্রম সকলের জন্য খোলা কিনা জানা নেই।
১০। সুখচরের ভবা পাগলা আশ্রম থেকে কিছু দূর গেলে রয়েছে খড়দহের সোনার মন্দির।