বিশ্ববাজারে ট্যারিফ নীতি এবং সুদের হার নিয়ে আগামী সপ্তাহে কি আসবে বড় পরিবর্তন?

আগামী সপ্তাহে বিশ্ব বাজারের অনুভূতিতে প্রভাব ফেলবে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন দেশীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, বিনিয়োগকারীরা শুধু…

ekolkata24-latest bengali news

আগামী সপ্তাহে বিশ্ব বাজারের অনুভূতিতে প্রভাব ফেলবে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন দেশীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, বিনিয়োগকারীরা শুধু বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সুদের হার সিদ্ধান্তের দিকে নজর দেবে না, বরং বিশ্বব্যাপী ট্যারিফ সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব এবং তার প্রভাবও পর্যবেক্ষণ করবে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন যে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার পরিবর্তন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি বিশ্ব বাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। চলতি সপ্তাহে, সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যিক উত্তেজনা নিয়ে বাজারে ব্যাপক আলোচনা হতে পারে, যা প্রভাব ফেলবে বিশ্বের প্রধান শেয়ারবাজারগুলোতে।

এছাড়া, আগামী সপ্তাহে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোইকোনমিক ডেটা প্রকাশিত হবে, যার মধ্যে ফেব্রুয়ারির WPI (Wholesale Price Index) মূল্যস্ফীতি রিপোর্ট অন্যতম। এই রিপোর্ট বাজারের উপর প্রভাব ফেলবে এবং বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, এটি সাধারণ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করবে। এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ট্রেডিং কার্যকলাপের উপরও নজর রাখা হবে, যেহেতু এর মাধ্যমে বাজারের প্রধান সূচকগুলোর গতিবিধি জানা যাবে।

গেওজিত ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের রিসার্চ প্রধান বিনোদ নারায়ণ বলেছেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা ভারতীয় বাজারে কার্যকরী প্রভাব ফেলবে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারের মূল্য পতন, তেলের দাম কমে যাওয়া, ডলারের সূচক হ্রাস এবং ভবিষ্যতে দেশীয় আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা এই অনিশ্চয়তার মাঝেও বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সহায়তা করবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্কিত যে অনিশ্চয়তা চলছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাজারে আরও কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, কিছু ইতিবাচক সঙ্কেতও রয়েছে, যেমন: শেয়ারের মূল্য হ্রাস এবং তেলের দাম কমে যাওয়া যা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।”

এদিকে, চীন তাদের মার্চ মাসের খুচরা বিক্রয় এবং শিল্প উৎপাদন সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করবে। চীনের অর্থনীতি নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়া গেলে, তা বিশ্ববাজারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, চীনের অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি, তাই সেখানে যেকোনো বড় পরিবর্তন বিশ্ববাজারের উপর প্রভাব ফেলবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যও তাদের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড (BoE) এর সুদের হার ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সাথে সংযুক্ত হতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।

গত সপ্তাহে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মন্দার আশঙ্কার কারণে শেয়ারবাজারে বেশ কয়েকটি নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। বিএসই সেনসেক্স গত সপ্তাহে ৫০০ পয়েন্টেরও বেশি পতন করেছে এবং এনএসই নিফটি ৫০ সূচক ১৫০ পয়েন্টেরও বেশি কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অস্থিরতার কারণে হয়েছে।

মোটিলাল ওসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের রিসার্চ প্রধান সিদ্ধার্থ খেমকা জানিয়েছেন, “এই সপ্তাহে শেয়ারবাজারের গতিবিধি রেঞ্জ-বাউন্ড থাকবে এবং কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, যা বিশ্ব বাজারের প্রবণতা এবং মার্কিন ট্যারিফ নীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।”

বিশ্ববাজার এবং ভারতের বাজারে আসন্ন সপ্তাহের পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার পরিবর্তন এবং বাণিজ্যিক ট্যারিফ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলি বাজারের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে। অতএব, বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে কী হবে তা নির্ধারণ করতে গ্লোবাল ট্রেন্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির সিদ্ধান্তগুলোর দিকে নজর রাখবেন।