Bangladesh 50: আরতি মুখার্জীর গানেই ‘সংকেত’, পাক জাহাজ ধ্বংসে ঝাঁপালেন আত্মঘাতী গেরিলারা

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: মধ্যরাতের তারা ঝিকমিক করছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেটির কাছে বঙ্গোপসাগরে উপর নির্দিষ্ট জাহাজগুলির দিকে লক্ষ্য রেখে কয়েকজন সাঁতরে যাচ্ছিলেন। এদের লক্ষ্য পাকিস্তানি জাহাজ…

50 years of Opetation jackpot

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: মধ্যরাতের তারা ঝিকমিক করছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেটির কাছে বঙ্গোপসাগরে উপর নির্দিষ্ট জাহাজগুলির দিকে লক্ষ্য রেখে কয়েকজন সাঁতরে যাচ্ছিলেন। এদের লক্ষ্য পাকিস্তানি জাহাজ বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া। ঘড়ির কাঁটা ধরে ধরে চলছিল অপারেশন ‘জ্যাকপট’।

অভিযানের সংকেত আকাশবাণী রেডিও তরঙ্গে চলে এসেছে। বাংলাদেশি (Bangladesh) মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা তাঁর গান শুনে এই অভিযান করবে সেটা কী করে জানবেন সুধাকন্ঠী গায়িকা আরতি মুখার্জী? তাঁর জানার কথাও না।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের কাছে একটি নির্দেশ গেছিল…রাত ১০টা বেজে ৩০মিনিট থেকে ১১টার মধ্যে শোনাতে হবে আরতি মুখার্জীর গাওয়া গানটি। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে আকাশবাণী সম্প্রচার করল আরতি কণ্ঠে জনপ্রিয় গান-
“আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি
পাল্কি চেপে বরের সাথে আনন্দ যে ভারি…”

৫০ বছর আগের সে রাতে আকাশবাণীর অনুষ্ঠান তন্ময় হয়ে শুনছিলেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতা। তরঙ্গ স্রোতে আরতি কণ্ঠে বহুশ্রুত গান শুনেই মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা কমান্ডাররা বুঝলেন অপারেশন জ্যাকপট শুরুর নির্দেশ চলে এসেছে। এর পরের ঘটনা রোমহর্ষক।

পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের একের পর বন্দর। পাক নৌ বাহিনী এই ভয়াবহ হামলায় সম্পূর্ণ হতচকিত হয়ে যায়। নীরবে নিঃশব্দে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা ‘পুতুল কে শ্বশুরবাড়ি’ পাঠিয়ে এসেছিলেন। আরতি মুখার্জীর গানে ‘পুতুল’ অর্থাৎ মাইন সঙ্গে নিয়ে আত্মাঘাতী গেরিলা, আর ‘যাবে শ্বশুরবাড়ি’ অর্থাৎ বিস্ফোরণ ঘটানো!

50 years of Opetation jackpot

সে রাতের ঘটনা:
রেডিওতে আরতি মুখার্জীর গান বাজানো শুরু হতেই ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা মাঝ রাত পেরিয়ে ১৬ আগস্ট শুরু হতেই চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা জাহাজ ধংসের জন্য যাত্রা করেন। রাত ১টা বেজে ১৫ মিনিটে আত্মঘাতী গেরিলারা জাহাজের উদ্দেশ্যে সাঁতরানো শুরু করেন। টার্গেট করা জাহাজগুলোর গায়ে মাইন লাগিয়ে চলে এলেন। রাত ১টা বেজে ৪০ মিনিট- প্রথম বিস্ফোরণে কেঁপে গেল চট্টগ্রাম বন্দর। তারপর একে একে সব মাইন বিস্ফোরণ হতে থাকে। চট্টগ্রামে নোঙর করা বিস্ফোরক বোঝাই তিনটি পাকিস্তানি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হল। ১৬ আগস্ট সকালে এতবড় গেরিলা অভিযানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোড়িত।অপারেশন সাকসেস। পুতুল পৌঁছে গেছে শ্বশুরবাড়ি!

ঘটনার আরও কিছু বাকি আছে। খবর আসতে থাকে শুধু চট্টগ্রাম নয়, পূর্ব পাকিস্তানের নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর নদী বন্দরে গেরিলা হামলা হয়েছে। একই রাতে এই দুটি বন্দরেও পুতুলকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছে মুক্তিবাহিনী।

বেলা বাড়তে আরও ভয়াবহ ছবি:
সেদিন ভোরে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ মংলা বন্দরে। গেরিলারা ৬টি বিদেশি জাহাজে মাইন বিস্ফোরণ ঘটায়।৩০,০০০ হাজার টন গোলা বারুদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সহ একটি সোমালীয়, একটি আমেরিকান, ২টি চিনা, ১টি জাপানি ও একটি পাকিস্তানি জাহাজ পুরো ডুবে যায়।

আরও পড়ুন: Bangladesh 50: কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামের সেই ফুটবল ম্যাচ, বিশ্বে প্রথম গেরিলা যোদ্ধাদের গোল

<

p style=”text-align: justify;”>বিশ্ব নৌ যুদ্ধ ও গেরিলা হামলার খতিয়ানে অপারেশন জ্যাকপট অত্যন্ত সফল অভিযানের তকমা পেয়েছে।মোট চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল এই অভিযান। ৬০ জনের ২টি দল এবং ২০ জনের আরো ২টি দল। গোপনে দীর্ঘসময় তাদের অনুশীলন হয় নদিয়া জেলায়। বিখ্যাত পলাশী যুদ্ধের আম বাগানের কাছে ভাগীরথী গঙ্গায়। অভিযানের পূর্ণ সহযোগিতা করে ভারতীয় নৌবাহিনী।