নিউজ ডেস্ক: আফগান (Afghanistan) মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া বা যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করা নিয়ে তালিবান (Taliban) জঙ্গিদের মধ্যে বিস্তর ঝগড়া শুরু হয়েছে। সবাই বলছে আমিও মন্ত্রী হব। কবে শপথ অজানা। তালিবান নেতাদের একাংশের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, সরকারের অন্দরে ঝগড়া প্রবল। আবদুল ঘানি বরাদার (Abdul Ghani Baradar) এবং নতুন সরকারের সবথেকে আগ্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের (Haqqani Network) মধ্যে সম্পর্কা আদায় কাঁচকলায়। হাক্কানি নেটওয়ার্ক পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই মদতে চলে। তাদের ভাগে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
আরও পড়ুন তালিবান-রাজ: বোরখা পরেই দেশ ছেড়েছেন আফগানিস্তানের মহিলা মেয়র
জঙ্গি দলটির তরফে শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা খলিল উর রহমান হাক্কানির দাবি আরও ভালো পদ চাই। এই ঝামেলার পরই বরাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহার চলে গিয়েছিলেন বলে তালিবানদের এক সূত্র জানিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে উপ প্রধানমন্ত্রী মোল্লা বারাদারকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বজোড়া আলোড়ন এই তালিবান শীর্ষ নেতা এক গোষ্ঠি সংঘর্ষে মৃত। তবে তালিবান এই খবর অস্বীকার করে। তারা জানায় মোল্লা বারাদার সুস্থ। তালিবানদের উপ-প্রধানমন্ত্রী বরাদার অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার গঠন কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে এই বাকবিতণ্ডার শুরু হয়।
আবদুল গণি বরাদার এবং হাক্কানি নেটওয়ার্ক:
কয়েক দশক পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা পেয়েছে তালিবানরা। ১৫ আগস্ট কাবুলে আসরাফ ঘানি সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতা কায়েম করেছে। আফগানিস্তানের নাম বদলে নাম রেখেছে ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান। এই সমস্ত ঘটনার পেছনে অন্যতম নাম আবদুল গণি বরাদার।
প্রথম তালিবান নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বরাদারের। ২০২০ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে তালিবানের পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেন।
দ্বিতীয় তালিবান সরকার গঠনের পেছনে তালিবানদের এই সাফল্য তাঁর মতো কূটনীতিকদের জন্যই এসেছে বলে দাবি করেছেন বরাদার। অন্যদিকে হাক্কানির ধারণা যুদ্ধের মাধ্যমেই কাবুল জয় সম্ভব হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় তালিবান সরকারের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব চেয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই মদতপুষ্ট।
The Taliban is heaping praise on Jalaluddin Haqqani during its victory tour – revering him as one of the defenders of the Islamic Emirate. Throughout much of the 20-year war, the U.S. leadership didn't understand the so-called Haqqani Network's integral role within the Taliban. https://t.co/PgbDARKkbr
— Thomas Joscelyn (@thomasjoscelyn) September 9, 2021
একদিকে, ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে বরাদরকেই গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, আইএসআই। ২০২০ সালে দোহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে বরাদারকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জালম্যে খালিজাদ। পাকিস্তান তার অনুরোধ মেনে নিলে দু’বছর পর দোহায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানদের হয়ে চুক্তি করেন তিনি। অন্যদিকে, তালিবানদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানি নেটওয়ার্ক সংগঠনকে জঙ্গি গোষ্ঠী তালিকাভুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন আবদুল গণি বরাদার: তালিবান নেতা থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি
এছাড়াও আফগানিস্তান দখল করার কয়েকদিন পরেই তালিবানরা কাশ্মীরের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। সরকারীভাবে জানিয়ে দেয়, এটি একটি “দ্বিপক্ষীয়; এবং ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়”। শুধু কাশ্মীরই নয়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সর্বতোভাবে সুসম্পর্ক রাখার কথাও বলেছে তারা। অন্যদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, যেহেতু হাক্কানি নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সংযোগ রাখে ফলে তাদের ততপরতা বাড়বে উত্তরবঙ্গে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে নেপালে থাকা হাক্কানি এজেন্টরা ফের সক্রিয়। তারা পশ্চিমবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে উস্কানি দিতে তৈরি। একইভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে। নেপালের সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলা। দার্জিলিং সংলগ্ন কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ততপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেই গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান।
ফলে একই বিষয়ে ভিন্নমত তৈরি হওয়া এবং সম্পূর্ন উলটো অবস্থান নিয়েই বারবার বিরোধ বাড়ছে তালিবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের। এই কারণেই বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তানে দ্বিতীয় তালিবান সরকারের শপথগ্রহন অনুষ্ঠান।