বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারত ১০১ নম্বরে স্বীকার করল কেন্দ্র

Kolkata24x7 Desk: সাম্প্রতিক বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের (world hunger index) তালিকায় দেখা গিয়েছে ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারতের (india) স্থান ১০১ নম্বরে। মূলত অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, শিশুদের…

World Hunger Index

Kolkata24x7 Desk: সাম্প্রতিক বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের (world hunger index) তালিকায় দেখা গিয়েছে ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারতের (india) স্থান ১০১ নম্বরে। মূলত অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, শিশুদের স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্যের (poverty) মত কয়েকটি মানদণ্ডের নিরিখে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচক তালিকার বিষয়ে এদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদরা (opposition mp) একযোগে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের কাছে একাধিক প্রশ্ন রাখেন। তাঁরা জানতে চান, দেশের শিশু ও মহিলাদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করতে সরকার কি কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য যেমন ছিল ২০২১ সালে তেমনই রয়েছে।

এটা কি ঠিক? অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা শিশু ও মহিলাদের শারীরিক অবস্থার উন্নয়নে সরকার কি কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে? অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু ঠেকাতে সরকারের কি কোনও পরিকল্পনা আছে? দেশের একজন মানুষও যাতে খাবারের অভাবে না ভোগেন এবং বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকায় নিজের অবস্থান আরও সামনের দিকে আনতে সরকারের কি কোনও পরিকল্পনা আছে?

বিরোধী সাংসদদের তোলা এই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী জুবিন ইরানি বলেন, বিরোধীরা ঠিক কথাই বলছেন। অর্থাৎ সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত ১১৬ টি দেশের মধ্যে ১০১ নম্বর স্থান পেয়েছে। ভারতের প্রাপ্ত নম্বর ২৭.৫। অপুষ্টি, শিশুদের বৃদ্ধির হার, শিশু মৃত্যু এবং বয়স অনুযায়ী শিশুদের ওজনের মত একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে এই তালিকা তৈরি করা হয়। তবে এই তালিকায় ভারতের অবস্থান দেখে দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা যাবে না।

কারণ এই তালিকায় দেশের প্রকৃত চিত্র কখনওই ধরা পড়ে না। কারণ যে ৪টি মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে এই তালিকা তৈরি করা হয় তার মধ্যে একমাত্র অপুষ্টি সরাসরি ক্ষুধার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে শিশুদের বৃদ্ধির হার এবং শিশু মৃত্যুর বিষয়টি একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যার মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত শৌচালয়, জিনগত চরিত্র, পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাদ্যের উপযুক্ত ব্যবহার প্রভৃতি। তবে মন্ত্রী এটা স্বীকার করে নেন যে, শিশু মৃত্যুর হার বিষয়টি কিছুটা হলেও ক্ষুধার সঙ্গেও জড়িত।

মন্ত্রী আরও জানান, মানুষের পুষ্টি-বৃদ্ধি, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে সরকার নিয়মিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে চালিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে শিশুদের উপযুক্ত বৃদ্ধি না হওয়ার হার ৩৮.৪ শতাংশ থেকে কমে ৩৫.৫ শতাংশ হয়েছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে বহু শিশুর বয়স অনুপাতে ওজন ঠিক থাকে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে সেক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৫.১ শতাংশ। ২০২০-২১ সালে যা কমে হয়েছে ৩২.১ শতাংশ।

শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য সমস্যা দূর করতে কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। শিশুদের অপুষ্টি জনিত সমস্যা দূর করতে কেন্দ্র মিশন পোষণ-২ প্রকল্প চালু করেছে। অপুষ্টি এবং দুর্বলতাজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে শিশু ও মহিলাদের রক্ষা করতে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে আয়ুষ প্রকল্প কার্যকর করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিশু ও মহিলাদের অপুষ্টি দূর করতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে কাজ চালানো হচ্ছে।

মন্ত্রী এদিন আরও বলেন, পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অপুষ্টি সরাসরি কোনও কারণ নয়। তবে শিশুদের অপুষ্টি দূর করা গেলে কিছুটা হলেও মৃত্যু হার কমতে পারে। কারণ শিশু যদি সুস্থ ও সবল হয় তাহলে তার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তুলনায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। গোটা দেশে ২০১৫-১৬ সালে যেখানে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৪৯.৭ শতাংশ সেটা ২০২০-২১ সালে কমে হয়েছে ৪১.৯ শতাংশ।

মন্ত্রী জুবিন ইরানি আরও বলেন দেশের একজন মানুষও যাতে ক্ষুধার্থ না থাকেন সেজন্য ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি আইন বা জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ এলাকার ৭৫ শতাংশ এবং শহরতলী এলাকার ৫০ শতাংশ মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই হিসেবে বর্তমানে গোটা দেশের ৮১.৩৫ শতাংশ মানুষ ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকেন। আর্থিক সমস্যার কারণে দুঃস্থ মানুষের যাতে রেশনের পণ্য পেতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য অন্তঃদয় অন্ন যোজনা চালু করা হয়েছে। অন্তঃদয় অন্য যোজনা প্রকল্পে দেশের হতদরিদ্র প্রতিটি পরিবারকে মাসিক ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য দেওয়া হয়। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই প্রকল্প চালু আছে। সরকারের লক্ষ্য হল, প্রতিটি মানুষের মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্ন তুলে দেওয়া।