News Desk, New Delhi: নরেন্দ্র মোদীর আমলে সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকার কার্যত নিজের হাতে তুলে নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাও মোদী সরকারের অঙ্গুলিহেলনে যাবতীয় কাজ করে, বিরোধীরা বারেবারে এমনই অভিযোগ করেছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ উঠল।
কয়েকদিন আগে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল চন্দ্রর নেতৃত্বে কমিশনের তিন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রধান সচিব মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অপর তিন সদস্যকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধীরা তো বটেই এমনকী, নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন অফিসাররাও রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন হল, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত অন্য সদস্যরা কেন বিস্মিত হয়েছেন?
সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনারদেরএভাবে ডেকে পাঠানোর কোনও নজির নেই। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রধান সচিব যেভাবে কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন সেটাও নজিরবিহীন। বিরোধীদল তো বটেই নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এমনকী, প্রশাসনিক মহলও এই ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলেই মনে করছে। তাঁরা স্পষ্ট বলেছেন, এই ঘটনা কমিশনের পক্ষে অত্যন্ত অসম্মানজনক। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে কমিশনের স্বাধীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কারণ কমিশনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের ক্ষমতা দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সমান।
ঘটনার জেরে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আগামী দিনে কি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও ডেকে পাঠাবে? জানা গিয়েছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল চন্দ্র এবং অপর দুই কমিশনার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিবের সঙ্গে দেখা করেননি। সরাসরি দেখা না হলেও তাঁরা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। মোদী সরকারের দাবি, নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। সেই বিষয়ে মত বিনিময় করতেই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছে সরকার। এই সংস্কারের মধ্যে আছে গোটা দেশের জন্য একটি অভিন্ন ভোটার তালিকা তৈরি।
যদিও প্রশাসনিক মহল এবং কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, এর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে কাজ হয়েছে দেশে। কিন্তু কখনও কোনও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনের অন্য সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তলব করা হয়নি। বরং উল্টোটাই হয়েছে। অর্থাৎ কমিশনই সরকারি আধিকারিকদের নিজের অফিসে ডেকে পাঠিয়েছে।
ঘটনার জেরে দেশের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি বলেছেন, এ ধরনের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়াই উচিত ছিল। কারণ কমিশনের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা থেকে মনে হয় সরকারের প্রতি কমিশনের আনুগত্য রয়েছে। কমিশনের বিরুদ্ধে সন্দেহের উদ্রেক হয় এমন কোনও কাজ করা কখনওই উচিত নয়। অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন, এ ধরনের বৈঠকের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় জানানোর প্রয়োজন হলে সরকারি অফিসাররা কমিশনকে জানিয়ে দেয়। আবার কমিশনের বক্তব্য অফিসার মারফত সরকারি কর্মীদের জানানো হয়। কমিশনের সব কাজই চলে অফিসারদের মাধ্যমে। কমিশনাররা তাঁদের মতামত অফিসারদের জানিয়ে দেন। অফিসাররা সেই বক্তব্য সরকারি আধিকারিকদের জানিয়ে দেন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলা হলেও আসলে এই বৈঠকে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল উত্তরপ্রদেশের ভোট। কারণ উত্তরপ্রদেশের ভোটে জিততে না পারলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে রীতিমত বেকায়দায় পড়তে হবে। উত্তরপ্রদেশের ভোটে জেতার কৌশল ঠিক করতেই এই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মোদী সরকারের কোনও আলোচনা হয়নি এমনটা কেউই মনে করছেন না ।