News Desk: ২০২০-র মে-জুন মাসে দেশ কেঁপে গিয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে (second wave)। দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অকালেই করোনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। সে সময় গঙ্গা নদী হয়ে উঠেছিল মৃতদেহ ফেলার জায়গা। এমনটাই জানালেন ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের প্রধান রাজীব মিশ্র।
নমামি গঙ্গে প্রকল্পের প্রধান রাজীব মিশ্র এবং আইডিএএস আধিকারিক পুষ্কল উপাধ্যায়ের লেখা একটি বই বৃহস্পতিবার দিল্লিতে প্রকাশ হয়েছে। এই বইয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা কলাম লিখেছেন। সেখানেই রাজীব মিশ্র লিখেছেন, দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার যে বিপুল কাজ চলছে তা কয়েক মাসেই সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
করোনাকালে বিহার, উত্তরপ্রদেশ- সহ বিভিন্ন রাজ্যে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসন শ্মশান ও কবরস্থানে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছিল না। তাই গঙ্গাই যেন এক ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে উঠেছিল। যে যার ইচ্ছামত মৃতদেহ ফেলে দিয়েছিল গঙ্গায়।
রাজীব মিশ্র ১৯৮৭ ব্যাচের তেলেঙ্গানা ক্যাডারের আইএএস অফিসার। চলতি মাসের ৩১ তারিখে তিনি অবসর নেবেন। কর্মজীবনে শেষ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ন্যাশনাল মিশন অফ ক্লিন গঙ্গার দায়িত্বে রয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, আমি নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমি গুরুগ্রামের একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় জানতে পারি, গঙ্গায় বহু লাশ ভেসে বেড়াচ্ছে। এটা যে শুধু অভিযোগ ছিল না তা নয়। কারণ ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল গঙ্গাতে ভেসে চলেছে একের পর এক মৃতদেহ। এই দৃশ্য দেখে তাঁর মন ভেঙে গিয়েছিল বলে দাবি করেন রাজীব। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গাকে বিশুদ্ধ করার ও দূষণ কমানোর যে কাজ করছিলাম এক নিমেষেই সেটা একেবারে শেষ করে দেওয়া হল।
রাজীব তাঁর লেখায় করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার ব্যবস্থায় বেশ কিছু ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, কেউই তাঁর নিকট আত্মীয়ের দেহ এভাবে কোনও নদীতে ফেলে দিতে চায় না। কিন্তু প্রশাসন মৃতদেহ সৎকারের যে ব্যবস্থা করেছিল তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। সে কারণেই মানুষ বাধ্য হয়েছিল মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে। রাজীবের দাবি, গঙ্গায় ফেলে দেওয়া মৃতদেহের বেশিরভাগটাই ছিল উত্তরপ্রদেশের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কেন এত বেশি মানুষের মৃত্যু হল তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই আইএএস অফিসার।
তিনি বলেছেন, গ্রামীণ এলাকার মানুষকে করোনা নিয়ে সেভাবে কেউ সচেতন করে তোলেনি। গ্রামের মানুষের কাছে করোনা সংক্রান্ত বিশেষ কোনও তথ্য ছিল না। গ্রামীণ এলাকার মানুষ দারিদ্রের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। তার ওপর করোনা সংক্রান্ত সর্তকতা ও সচেতনতা কোনওটাই তাঁদের ছিল না। সে কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা এতটাই বেশি হয়েছিল।