News Desk: দিল্লি সফরের তৃতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) মুখোমুখি হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিএসএফের (BSF) ক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। একই সঙ্গে রাজ্যের পাওনা ৬৩ হাজার কোটিরও বেশি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বুধবার নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর দফতরে (PMO) আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। প্রত্যাশামতোই বৈঠকের শুরুতেই তিনি রাজ্যের বকেয়া ৬৩ হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চেয়ে বসেন। একই সঙ্গে সম্প্রতি মোদী সরকার বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। সেখানেই মমতা বলেন, দিল্লির কাছ থেকে তাঁর সরকার ৬৩ হাজার কোটিরও বেশি টাকা পাবে। ইয়াস, আম্ফান সহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য যে টাকা পাওনা রয়েছে সেই সমস্ত টাকাও চেয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, বকেয়া টাকা যদি কেন্দ্র আমাদের না দেয় তাহলে আমরা কিভাবে রাজ্য চালাব। প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই অনুরোধ খতিয়ে দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। একইসঙ্গে মমতা বলেন, কেন্দ্র বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্তও প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিএসএফের সঙ্গে আমাদের কোনও রকম তিক্ততা নেই। ওরা সীমান্তে সদা সতর্ক প্রহরা দিয়ে চলেছে। ওদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি আমরা। এভাবে বিএসএফের ক্ষমতা বাড়ানো হলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তৈরি হবে।
মোদী সরকারকে খোঁচা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো আছে। অহেতুক সেই পরিকাঠামোর উপর আঘাত করা উচিত নয়। তাই কেন্দ্রের উচিত বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধির আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া। তাঁর এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন জানতে চাওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের দ্রুত টিকাকরণ শুরু করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, কেন্দ্রকে মনে রাখতে হবে রাজ্যের উন্নতি হলে তবেই কেন্দ্রের উন্নয়ন হবে। বিভিন্ন দলের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব থাকতেই পারে। কিন্তু দেশের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মমতা এদিন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা বলেন, ২০২২ সালের ২০ ও ২১ এপ্রিল বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন হবে। এই সম্মেলনে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ওই সম্মেলনে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এই শিল্প সম্মেলন নিয়ে তাঁর কাছে যথেষ্ট উৎসাহও দেখিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। উল্লেখ্য, সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে চলতি বছরে এই সম্মেলন হয়নি। আগামী বছরও এই সম্মেলন নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার মাস পর হবে। নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলন হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করার জন্যই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।