ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করায় মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ আপাতত পাবে না বিদেশি সাহায্য

নিউজ ডেস্ক: সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক (home ministry) জানিয়েছিল মাদার টেরিজা প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের (missonaries of charities) কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কেন্দ্র বাজেয়াপ্ত করেনি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক…

Missionaries of Charity

নিউজ ডেস্ক: সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক (home ministry) জানিয়েছিল মাদার টেরিজা প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের (missonaries of charities) কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কেন্দ্র বাজেয়াপ্ত করেনি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এদিন জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় আইনি শর্ত পালন করতে না পারার জন্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের বিদেশে যে সমস্ত অ্যাকাউন্ট আছে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি আপাতত কোনও বিদেশি সাহায্য (foreign help) পাবে না। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি (narendra modi goverment) সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিযোগ উঠেছে। মোদি সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথাকে আদৌ গুরুত্ব দেয় না, এমনও অভিযোগ বারেবারে শোনা গিয়েছে। সেই অভিযোগের প্রমাণ মিলল মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে। যে সংগঠনটি প্রতিনিয়ত দুঃস্থ, অসহায় মানুষের সাহায্য করে চলেছে সেই সংগঠনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিলে তারা যে কতটা সমস্যায় পড়তে পারে সে বিষয়টি ধর্তব্যের মধ্যে আনতে রাজি নয় মোদি সরকার।

সেকারণেই তারা এই অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে দেশের বুদ্ধিজীবি মহল। তাঁরা বলেছেন, মোদি সরকারের উচিত, অবিলম্বে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ত্যাগ করে উদার মনোভাব নিয়ে চলা। মনে রাখতে হবে, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষের সমান অধিকার আছে।

উল্লেখ্য, নোবেল শান্তি সম্মান বিজয়ী মাদার টেরিজা মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংগঠনের সদর দফতর কলকাতায়। দেশের অসহায়, দরিদ্র মানুষের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে থাকে। উল্লেখ্য, বিদেশি সাহায্য পাওয়ার জন্য মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ তাদের অনুমতি পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী সেই আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। পুনর্নবীকরণের জন্য যে সমস্ত আইনি শর্ত পূরণ করতে হয় সংগঠনটি সেই শর্তগুলি পূরণ করেনি। সে কারণেই তাদের অ্যাকাউন্ট পুনর্নবীকরণের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের পর মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ তাদের পুনর্নবীকরণের আবেদনটি খতিয়ে দেখার জন্য কোনও আবেদন জানায়নি। তবে মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ কী ধরনের নিয়ম ভঙ্গ করেছে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কিছু জানায়নি।

অন্যদিকে মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের এফসিআরএ আবেদনটি আপাতত বাতিল হয়েছে। সে কারণে সদর দফতর থেকে তাদের বিভিন্ন শাখাকে জানানো হয়েছে, আপাতত বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে তারা কোন লেনদেন করতে পারবে না। যতদিন না পুরো বিষয়টির সমাধান হচ্ছে ততক্ষণ এই নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে।

তবে দেশের কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিদেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যে এই প্রথম বন্ধ করে দেওয়া হল তা নয়। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার আসীন হওয়ার পর থেকে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিদেশি সাহায্য পাওয়ার জন্য যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতবছর মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও ভারতে তাদের কার্যকলাপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। অ্যামনেস্টির অভিযোগ, ভারত সরকারের তরফ থেকে তাদের নিয়মিত হেনস্থা করা হচ্ছে। এমনকী, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেকারণেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে বলেন, বড়দিনের উৎসবের সময় মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত মোদি সরকার নিয়েছে তা জেনে তিনি মর্মাহত। এই সংগঠনের উপর নির্ভর করে আছেন ২২ হাজার মানুষ। তাঁদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ওষুধপত্র সবই চলে সংগঠনের সাহায্যে। তাই মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে এই সমস্ত মানুষও নতুন করে বিপাকে পড়লেন। যে সংগঠন অসহায় দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কিছুটা শিথিলতা দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু সেই শিথিলতা দেখায়নি মোদি সরকার।