বিশেষ প্রতিবেদন: ১৯ নম্বর বিধান সরণি। এটি আর্য সমাজ মন্দিরের বাড়ি হিসাবে উত্তর কলকাতার মানুষের কাছে অতি পরিচিত। এই বাড়ির সঙ্গেই যে ভগত সিংয়ের যোগ রয়েছে। তা কি জানা আছে?
এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় উঠে বাঁ-দিকের একটি ঘর রয়েছে। সেই ঘরেই বহুদিন ছদ্মবেশে ছিলেন ভগত সিং। কেউ বুঝতেও পারেনি। বাড়ির অন্দরমহল এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। তবে ঘরটা এখনও আছে। সেই সময় ওটাই ছিল ছাদের ঘর। চিলেকোঠা বললেও ভুল হবে না। দেওয়া ছিল টিনের ছাউনি। ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার স্যান্ডারস হত্যার পরে লাহোর থেকে পালিয়ে সোজা কলকাতা এসেছিলেন ভগত সিং এবং বেশ কিছু মাস এখানেই গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন তিনি।
১৯২৮-এর অক্টোবর মাসের শেষ দিক। সাইমন কমিশনের কালা কানুনের বিরুদ্ধে লাহোরের মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লালা লাজপত রায়। মিছিলে ছিলেন তরুণ ভগৎ সিং। বাপ , কাকার সঙ্গেই এসেছিলেন মিছিলে। চোখের সামনে দেখেন লালার উপরে পুলিশ বেধরক লাঠিচার্জ করছে। ১৭ নভেম্বর ১৯২৮, লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু হয়। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন এর প্রতিশোধ নেবেন। ডিসেম্বর মাসেই নিলেন প্রতিশোধ। তারপর ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন স্যান্ডারসকে হত্যা করে ছদ্মবেশে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিলেন ভগৎ সিং।
জানাজানি হয়ে গিয়েছিল, স্যান্ডারসের হত্যা করেছে এক অবিবাহিত শিখ যুবক। তাই পাগড়ি খুলে দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে নেন বিপ্লবী ভগত সিং। এরপর রইল বিবাহিত সাজা। ভগবতীশরণ বোহরার স্ত্রী দুর্গাদেবী ও তাঁর ছ’মাসের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গৃহস্থের রূপ ধরেন তিনি। লখনৌ পৌঁছে দুর্গাদেবী টেলিগ্রাম করেন তাঁর কলকাতার বান্ধবী সুশীলা দেবীকে। বিপ্লবীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল এই সুশীলা দেবীর। কলকাতার প্রভাশালী ব্যক্তি স্যার ছাঝুরাম চৌধুরীর মেয়ের গৃহ শিক্ষিকা ছিলেন। ছাঝুরাম কে ছিলেন? তিনি কলকাতার আর্য সমাজের অন্যতম কর্তা।
এক রাত হোটেলে রেখে ভগত সিংকে পরের দিনই ছাঝুরামের কাশীপুরের বাড়িতে এনেছিলেন সুশীলা দেবী। কিন্তু সেখানেও ব্রিটিশদের আনাগোনা লেগেই থাকত। একেবারেই নিরাপদ নয় স্থান। তাই এক সপ্তাহ বাদেই স্থান পরিবর্তন। ভগত সিংকে আর্য সমাজ মন্দিরের ছাদ-ঘরে এনে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেই ঘর এখনও বর্তমান।