বিশেষ প্রতিবেদন: শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত, নবজাগরণে শিশুরাই আগামীর আলো। এই বার্তাকে মাথায় রেখে ভারতে প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর পালিত হয় ‘শিশু দিবস’। শিশুদের আলোর পথে উজ্জীবিত করতে এবং তাদের অধিকার, সুরক্ষা ও শিক্ষার প্রতি জোর দিতে এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা হয়। তবে, শুধুমাত্র শিশুদের উদ্দেশেই এই দিনটি উদযাপন করা হয় না, এই দিনে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকেও স্মরণ করা হয়, কারণ ১৪ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন।
পন্ডিত জওহরলাল নেহরু ১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। শিশুদের প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ ও ভালোবাসার কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি। তাঁর শিশুদের প্রতি ছিল অদম্য স্নেহ ও ভালবাসা। যে কারণে তিনি ‘চাচা নেহেরু’ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত’। তিনি সর্বদা শিশুদের শিক্ষা ও কল্যাণের উপর জোর দিতেন। তাই তাঁকে স্মরণ করে প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনেই ভারতে পালিত হয় ‘শিশু দিবস’। ভারতে এই দিনটি ‘বাল দিবস’ নামেও পরিচিত।
রাষ্ট্রসংঘ ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর শিশু দিবস পালনের জন্যে ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ভারতেও পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ২০ নভেম্বর শিশু দিবস পালিত হত। ১৯৬৪ সালে নেহেরুর মৃত্যুর পর তাঁকে উপযুক্ত সম্মান জানানোর জন্য একটি বিল পাস হয়। যেখানে বলা হয়েছিল, তাঁর জন্মবার্ষিকী এবং শিশু দিবস একসাথে পালন করা হবে। সেই থেকেই ১৪ নভেম্বর ভারতে শিশু দিবস বা বাল দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শিশুদের স্নেহ, ভালবাসার পাশাপাশি তাদের সঠিকভাবে বড় করার ব্যাপারেও জোর দিতেন পন্ডিত নেহেরু। তিনি বলেছিলেন, আজ আমরা যেভাবে শিশুদের বড় করব, কাল সেভাবেই তারা দেশ চালাবে। তাই, শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বিনিময়, বোঝাপড়া এবং বাচ্চাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, তাদের সঠিক পথ দেখানো, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো উচিত।
কিন্তু, আজও দেশের কোথাও কোথাও অবহেলিত থেকে যাচ্ছে শিশুরা, শিশু শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের। হাতে বইয়ের পরিবর্তে তুলে দেওয়া হচ্ছে নানান কাজের সামগ্রী। তাই, এই শিশু দিবসে প্রত্যেক শিশুকে স্কুল মুখি করতে হবে, শিক্ষার আলোয় উজ্বল করতে হবে তাদের ভবিষ্যত, দেখাতে হবে সঠিক পথ, তবেই সফল হবে শিশু দিবস পালন, সফল হবে পন্ডিত নেহেরুর স্বপ্ন।
আজকের এই দিনে স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন সংস্থায় নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিশুদের জন্য থাকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও ইভেন্ট। শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। মিষ্টি, বই, চকোলেট এবং অন্যান্য উপহার বিতরণ করা হয় শিশুদের মধ্যে। এই দিনে শিশুদের জন্য টেলিভিশন এবং রেডিওতে বিশেষ প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়। কোথাও কোথাও শিশুদের চলচ্চিত্র উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও নিজের বাড়িতে পালন করে থাকেন দিনটি।
তবে, শুধুমাত্র বিদ্যালয়গুলিতেই শিশু দিবস পালন হয় না, যেসব শিশুরা রাস্তায় থাকে এবং অনাথ শিশুদের মুখেও হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা হয়।