বিশেষ প্রতিবেদন: এ বাড়ির দুর্গা দালানে পা পড়েছে শ্রী রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, এবং সারদা দেবীর। আর সেই সূত্রেই বাড়ির সদস্য মজেন রামকৃষ্ণ প্রেমে। নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে ধুনি জ্বেলে নেন দীক্ষা। এমনই ইতিহাস আঁটপুরের ঘোষ পরিবারের বড় তরফের বাবুরাম ঘোষের পুজোর।।
হুগলী জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম আঁটপুরের ঘোষ পরিবারের ২৯০ বছরের প্রাচীন দুর্গাপূজা । আঁটপুরের ঘোষ পরিবারের বড় তরফের বাবুরাম ঘোষ সেই ১৮৮৬ খ্রীষ্টব্দের ২৪ শে ডিসেম্বর শীতের রাতে নিজের বাড়ির সামনে অশ্বত্থ গাছের তলায় ধুনি জ্বেলে সংকল্প করেছিলেন শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণদেবের শিষ্যত্ব নেবেন। তিনি একা নন। সঙ্গে ছিলেন আরও আট জন। তাঁরা হলেন — (দীক্ষার পরের নাম) — বিবেকানন্দ, অভেদানন্দ, শিবানন্দ, অখন্ডানন্দ, ত্রিগুণ্যাতীতানন্দ, সারদানন্দ, নিরঞ্জনানন্দ এবং শশি মহারাজ। বাবুরামের পরিচয় হ’ল …. স্বামী প্রেমানন্দ হিসেবে। …তবে সেই… অশ্বত্থ গাছ আজ আর নেই। নেই অবিকল সেই পরিবেশ। কিন্তু সেই পবিত্রস্থানে দাঁড়িয়ে আছি ভাবলে গৌরব বোধের শিহরণে গায়ে কাঁটা দেয়। প্রেমানন্দ তাঁদের অংশের বাড়ি জমিজমা পুকুর সবই দান করে যান রামকৃষ্ণ মিশনকে। তাঁর সেই বাড়িতেই এখন শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ। তৈরি হয়েছে ধুনিমন্ডপ, দুর্গাপূজার নাটমঞ্চ, সাধুদের আবাসন, প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র ইত্যাদি।
এগুলি হবার বহু আগেই শ্রী রামকৃষ্ণ এখানে পদার্পণ করেছিলেন ১৮৫৪ – ৫৫ সালের দুর্গাপূজায়। মা সারদা ১৮৮৯ ও ১৮৯৪ এ। এবং স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৮৬, ১৮৮৭ ও ১৮৮৯ তে। শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের ভক্তজনের কাছে আঁটপুর তাই এক মহাস্মৃতিতীর্থ। ৫০০ বছরের ইতিহাসে যাঁদের সংস্কৃতি দ্যোতনার অজস্র সাক্ষ্য এখনও অসামান্য। বাবুরাম ঘোষ (স্বামী প্রেমানন্দ) এর পরিবার বড় ঘোষ বাড়ি… আজকের রামকৃষ্ণ মিশনের অন্তর্ভুক্ত।।
ছোট ঘোষ বাড়ির ঐতিহ্য পূর্ণ দুর্গাপূজো শুরু হয়েছিল ১১৪৯ বঙ্গাব্দের বা ১৭৩২ খ্রীষ্টাব্দে। রামধন ঘোষ এই পূজোর প্রচলন করেন।প্রথম দিকে কাঠ- বাশ- খড়ের আটচালা য় পূজা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী কালে তাহা জীর্ণ হয়ে যাওয়ার ,১২২২ সালে এই পাকা দালান নির্মিত হয়। এই পরিবারের … স্বর্গীয় রাম সুধীর ঘোষের পুত্র স্বর্গীয় রাম সুনীল ঘোষ অত্যন্ত নিষ্ঠা পুর্বক দায়িত্ব নিয়ে ঐতিহ্য বহন করেছিলেন।স্ব্র্গীয় রামবহ্ম ঘোষের পরিবার ও এই পূজোর সাথে যুক্ত ছিলেন।
বর্তমানে রামতপন, রামশঙ্কর,রাম রতন, রাম অরুণ, রাম দেবব্রত, রাম কমল, রাম রাতুল,রাম রাহুল, রাম গৌরব, রাম অনিন্দ্য, রাম দেবদূত, রাম রুদ্রাদিত্যদের ঐকান্তিক প্রয়াসে পারিবারিক দুর্গোৎসব টিকে ২৯০ বছরের মান্যতায় এনেছেন। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রীরাজরাজেশ্বর ট্রাস্টী তৈরী করে দেবত্তর সম্পত্তির আয় থেকে মহামায়া ফান্ডের মাধ্যমে পুজোর আয়োজন করে আসছেন। প্রায় খন্ডহরে পরিণত ঘোষবাড়ির দরদালান, বাড়ি, ঠাকুরদালান ও কুলবিগ্রহ রাখার দোতলা ভবন ইত্যাদিকে ভবিষ্যতে হেরিটেজ স্পট এবং সুসংস্কৃত রূপ দেওয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে। রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গেও এঁদের নিয়মিত যোগাযোগের ঘাটতি নেই।
কলকাতা, সন্নিহিত শহরাঞ্চল, নানান জেলা, এমনকি বিদেশী প্রবাসীরাও আসেন এবাড়ির শারদীয়া দুর্গোৎসবে। ক্রমবর্ধিষ্ণু থিম পূজোর বংশ যতই রক্তবীজ হচ্ছে, আসল পূজার আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠাও আনুপাতিকভাবে কমছে। সম্প্রতি ঘোষ বাড়ির বিবাহিত মেয়েরা ও জড়িত আছে পূজোর সাথে। জৌলুস না থাকলেও আন্তরিকতার অভাব নেই এই পূজায়।